Saturday 10 April 2010

লন্ডনে আ’লীগ ও ঘাদানিক নেতাদের সঙ্গে বিচারপতির বৈঠকে তোলপাড়




স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি লন্ডনে গিয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আওয়ামী লীগ নেতা এবং আওয়ামী ঘরানার আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক ও আলোচনা সভায় যোগদানের ঘটনায় লন্ডনে তোলপাড় চলছে। বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী (মানিক) লন্ডন সফরে গিয়ে গত ১ এপ্রিল রাতে পূর্ব লন্ডনের ডকল্যান্ড মেমসাব রেস্টুরেন্টে এই বৈঠক করেন। আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান মিনারের সভাপতিত্বে ব্যানার টাঙিয়ে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় বাংলাদেশ পরিস্থিতি, রাজনৈতিক প্রসঙ্গ, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ নানা প্রসঙ্গ স্থান পায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংবাদিক গাফফার চৌধুরী, মুখ্য আলোচক ছিলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি ছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবীর। আলোচনায় অংশ নিয়ে গাফফার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সব হত্যাকাণ্ড ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অনিবার্য। শাহরিয়ার কবীর বলেন, দেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। একাত্তর সালে যারা জাতির সুসন্তানকে হত্যা করেছিল সেই স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
হাইকোর্টের কর্মরত বিচারপতির উপস্থিতিতে এ ধরনের সভার খবর এটিএন বাংলা ও চ্যানেল এসসহ মিডিয়ায় প্রচারের পর এ নিয়ে আলোচনার ঝড় বয়ে যায়। কমিউনিটিতে গত ক’দিন ধরে বিষয়টি আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল বলে লল্ডন থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে। ওই বৈঠকের ছবিও লন্ডন থেকে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ডানের সারিতে সর্বপ্রথমে বসে আছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল হাসেম, এর পরই ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবীর, এরপর বসে আছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি সুলতান শরীফ, চতুর্থ স্থানে গোল চিহ্নিত স্থানে বসে আছেন বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী, বাঁ পাশে প্রথমে বসে আছেন আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি হাফিজুর রহমান মিনার, দূরে টেবিলের অপর মাথায় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনে নিযুক্ত প্রেস মিনিস্টার রাশেদ চৌধুরী প্রমুখকে দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনুকুল তালুকদার ডালটন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীসহ উল্লিখিত ব্যক্তিরা নানা বিষয়ে অনুষ্ঠানে তাদের অভিমত তুলে ধরেন। সভায় অন্যান্যের মধ্যে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জালাল উদ্দিন, ডা. বিবি রায়, অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান, সুজিত সেন, কাউন্সিলর খলি কাজী, চিত্তরঞ্জন দাস, সওগাতুল আনোয়ার খান, রফিকুল ইসলাম মিল্টন, সাইফুদ্দিন মল্লিক খোকন, আলমগীর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় অর্ধশত লোক উপস্থিত ছিলেন। উদ্যোক্তাদের একজন বলেছেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা নিয়েই তারা এ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সভায় বক্তারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সংবিধান সমুন্নত রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সভায় অতীতের সব হত্যা ও সংবিধানবিরোধী কর্মকাণ্ডের আশু বিচার দাবি করা হয়। তবে তিনি স্বীকার করেন, বিভিন্ন বক্তা তাদের বক্তব্যে নানা বিষয় নিয়ে আসেন।
বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের শাসনকালে সুপ্রিমকোর্টে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় হাইকোর্ট বিভাগে সরকার পক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার আগে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিচারপতি হিসেবে অস্থায়ী নিয়োগের মেয়াদ শেষ হলে তাকে স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয়নি। এতে তিনি বিচারপতি পদ থেকে বাদ পড়েন। ফিরে আসেন আইন পেশায়। তবে স্থায়ী নিয়োগ না দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তিনি মামলা করেন। হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/09/26648

No comments:

Post a Comment