Tuesday 6 April 2010

ময়মনসিংহে আ’লীগের এমপিসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাত মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপ-জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুসলেম উদ্দিনসহ ১৪ জনকে আসামি করে ময়মনসিংহের আদালতে যুদ্ধাপরাধের মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আরও ২০/২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা নং-২৯৩/২০১০। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ১০৯/১১৪/১২৩/ ১২৩(ক)/১২৪(ক)/৩০২/২০১/৪৩৬/৩৭৬/৩৭৯/৩৪ ধারা। গতকাল দুপুরে ফুলবাড়িয়া উপজেলার জোরবাড়িয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফুলবাড়িয়া আদালতে এই মামলাটি দায়ের করেন। বিজ্ঞবিচারক লুত্ফর রহমান শিশির মামলাটি আমলে নিয়ে ফুলবাড়িয়া থানার ওসিকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফজলুল হক দুলাল।
এই মামলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এমপি, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ জুবেদ আলী ও খন্দকার আব্দুল মালেক শহিদুল্লাহ, সাবেক এমএলএ আনম নজরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা হযরত আলীসহ ১৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। মামলা অনুযায়ী আসামিরা স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, আলবদর, আলশামস, দালাল, যুদ্ধাপরাধী, দেশদ্রোহী ও আইন অমান্যকারী লোক। আসামি অ্যাডভোকেট মুসলেম উদ্দিন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনীর সমর্থনে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার বাহিনীর কমান্ডে যোগদান করেন এবং জেলা রাজাকার প্রধান আব্দুল হান্নানের সঙ্গে বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন থানার জনসভায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করে পাকিস্তানের পক্ষে জনমত সংগ্রহ করেন। যুদ্ধের সমস্ত গোপন তথ্য পাকবাহিনীর কাছে প্রকাশ করে ফুলবাড়িয়া থানার সব মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের তথ্য-তালিকা সরবরাহ করে তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেন। আসামিরা বহু মা-বোনের ইজ্জত লুটতে পাকিস্তানি সেনাদের লেলিয়ে দিয়ে গুরুতর অপরাধ করেন। পাকবাহিনীসহ বাদীর বাড়িতে এসে বাড়ির মালামাল লুটপাট করে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুস সালাম ও আব্দুল মান্নানের বাড়িসহ আরও ৪/৫টি বাড়ি লুণ্ঠনের পর পুড়িয়ে দেয়। আসামিরা ২০/০৬/১৯৭১ তারিখে বসু চৌধুরীকে উপজেলার কুশমাইলে, ১২/০৬/৭১ তারিখে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদকে ফুলবাড়িয়ায়, ২৯/১১/১৯৭১ তারিখে তালেব আলী, সেকান্দর আলী ও আলতালিকে ভালুকজান এলাকায় হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এছাড়া আসামিরা ২১/১১/১৯৭১ তারিখে ফুলবাড়িয়ার আছিমের যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে এবং ১৪/০৭/১৯৭১ তারিখে শহিদুল্লাহ মাস্টার ও সাবেদ আলীকে হত্যা করে। ১৯৭১ সালে ওই সময়কার পত্র-পত্রিকায় এসব ঘটনা প্রকাশিত হয়। মামলার আসামিরা হলেন—ফুলবাড়িয়া উপজেলার কুশমাইল গ্রামের শুক্কুর আলী মুন্সীর ছেলে মুসলেম উদ্দিন (৭৬) এমপি, ফুলবাড়িয়া গ্রামের ফয়সাল বারী (৬১), এবাদুল্লাহ (৭০) ও মুকছেদ আলী (৮০), চৌধার গ্রামের আব্দুস ছামাদ মাস্টার ওরফে টিক্কা খান (৭৫) ও আব্দুল মণ্ডল (৮০), চর রাধাকানাই গ্রামের আঃ জব্বার (৬০), কুশমাইল গ্রামের মফিজ উদ্দিন ওরফে মফে (৮০) ও ওয়াহেদ আলী মুন্সী (৮০) ও সোহরাব আলী (৭৮), ভালুকজান গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন ফকির (৭২), বাকতা গ্রামের আঃ জব্বার (৬৮), পুুটিজানা গ্রামের মুকছেদ আলী (৭০), পলাশী হাটা গ্রামের আমজাদ আলী হাজীসহ (৭৫) আরও অজ্ঞাত ২০/২৫ জন।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/07/26309

No comments:

Post a Comment