Monday 19 July 2010

হিংসাত্মক রাজনীতির কারণে আইনের শাসনের অবনতি ঘটছে

একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. আকবর আলি খান
রেজা মাহমুদ

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে আইনের শাসন ও মানবাধিকার পরিস্খিতি নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিশিষ্টজনদের ভাবনা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরছে নয়া দিগন্ত। আজ প্রকাশিত হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খানের সাক্ষাৎকার ।
নয়া দিগন্ত : দেশে আইনের শাসন এখন কোন পর্যায়ে আছে বলে মনে করেন?
আকবর আলি খান : দেশে আইনের শাসনের অবনতি ঘটেছে বলা যায়। তবে তা হঠাৎ হয়নি, দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলই এ জন্য দায়ী। যে দলই ক্ষমতায় যায় সে-ই ইটের বদলে পাটকেল নীতি গ্রহণ করে। এর ধারাবাহিকতাই অব্যাহত রয়েছে। তবে আজকের প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড বিশেষভাবে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণíí করছে। এ ছাড়া কিছু ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছে বলে বলা হলেও কার্যত নিখোঁজ রয়েছেন বলে গণমাধ্যমে উঠে আসছে। এটা সমাজে উদ্বেগ ও অস্খিরতা ছড়িয়ে দেবে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য দরকার।
নয়া দিগন্ত : পুলিশ-র‌্যাবের পোশাকে কারো কারো বাসভবনের ভেতরে হামলার ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও অভিযোগ আনছেন অনেকে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
আকবর আলি খান : আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের কারণ হচ্ছে এর গোড়ায়ই গলদ রয়েছে। এ দেশে পুলিশে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে চলে ব্যাপক ঘুষবাণিজ্য। ফলে সৎ লোক পুলিশে আসতে পারে না। অসৎ ও অযোগ্য লোকরা পুলিশে ঢুকে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। এ পর্যন্ত কোনো সরকারই এটা বìধ করতে পারেনি।
নয়া দিগন্ত : উচ্চআদালত গ্রেফতার না করার নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও অনেককে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আইনজ্ঞদের অনেকেই বলছেন এতে আদালতের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখানো হচ্ছে। আপনি কী বলেন?
আকবর আলি খান : আদালতের নির্দেশ যদি অগ্রাহ্য করা হয় সে ক্ষেত্রে আদালতেই এর প্রতিকার চাইতে হবে। পুলিশে সৎ কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যবস্খা করতে হবে, যাতে আদালতের নির্দেশ পালিত হয়।
নয়া দিগন্ত : হরতালকালে বিরোধীদলীয় নেতাদের যৌথভাবে মারধর করেছে ছাত্রলীগ ও পুলিশ। তারপর আবার ওই নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
আকবর আলি খান : হরতাল করাও যেমন দেশের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি হরতালে বাধা দিতে যাওয়াও অন্যায়। এটা দেশের বিরাজমান সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিণতি। রাজনৈতিক দলগুলোকেই এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এক-এগারোর সময় সুশীল সমাজকে দিয়ে এ কাজ করানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।
নয়া দিগন্ত : কোথায়ও কোনো আইনভঙ্গের কাজ ঘটলে তাতে রাজনৈতিক নেতাদের জড়ানো হচ্ছে, প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। এ ধরনের হয়রানি থেকে রেহাই পেতে আইনি কোনো রক্ষাকবচ রয়েছে কি?
আকবর আলি খান : এটাও সাংঘর্ষিক রাজনীতিরই কুফল। রাজনৈতিক বিবেচনাতেই অন্যায়ভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে লেগে আছে। সহিংস রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রধান দু’টি দলের কেউ কারো চেয়ে কম নয়। তবে এই দু’টি দলের বাইরে নতুন কোনো রাজনৈতিক শক্তির অভ্যুদয়ের বিষয়টি এখনো পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। এ কারণে দেশের স্বার্থে দু’টি বড় দলকে হিংসাত্মক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতে সংঘাতমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা না থাকার বিষয়টি কমিউনিটি পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে তুলে ধরতে হবে।
নয়া দিগন্ত : আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও গ্রেফতারকৃতদের সাথে আইনজীবীদের সাক্ষাৎ করতে দেয়া হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছেন?
আকবর আলি খান : আমার মনে হয় আদালতের কাছেই বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। আদালতই এর প্রতিকার করতে সক্ষম।
নয়া দিগন্ত : আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকে বা সাদা পোশাকে বাড়ি থেকে অনেককে তুলে আনার ঘটনা ঘটছে। পরে তাদের আটক বা গ্রেফতারের বিষয় অস্বীকার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে একজন নাগরিকের করণীয় কী?
আকবর আলি খান : কোনো ব্যক্তিবিশেষের বিষয় উল্লেখ না করে বলতে চাই, এ ধরনের ঘটনা উদ্বেগজনক। এটা বেড়ে গেলে দেশের সাধারণ মানুষের মনে ভীতি, উৎকণ্ঠা ও অস্খিরতা ছড়িয়ে পড়বে। সরকারের উচিত বিষয়টি পরিষ্কার করা, কোথায় কী হচ্ছে সে সম্পর্কে জনগণের কাছে স্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরা।
http://www.dailynayadiganta.com/fullnews.asp?News_ID=222851&sec=1

No comments:

Post a Comment