Saturday 3 July 2010

র‌্যাবের (RAB) পোশাকে ছাত্রলীগের তান্ডব

১৩৭০ দিন পর অনুষ্ঠিত হলো দেশ ব্যাপী সর্বাত্মক সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। স্বত:স্ফূর্ত হরতালে পুলিশী ও আওয়ামী লীগের এ্যাকশনে বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমশের মবিন চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপির সাংসদ শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসহ রাজধানীতে বিএনপি জামায়াতের দুই শতাধিক নেতা-কর্মীসহ দেশব্যাপী সহস্রাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হন, গুরুতর আহত হন সাংসদ এ্যানি ও বরিশালে এমপি সরোয়ারসহ ৫ শতাধিক নেতা-কর্মী। হরতাল নিয়ে জনমনে প্রথমে কিছুটা দ্বিধা থাকলেও আওয়ামী লীগ হরতালের বিকল্প সকল গণতান্ত্রিক পথগুলো আগেই বন্ধ করে দেয়ায় হরতাল ভিন্ন কোন গতি ছিল না দেশবাসীর। তাই মন্দের ভালো হিসেবে আওয়ামী অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে স্বতস্ফূর্তভাবে জনগণ সাড়া দেয়, এমনকি জাতীয় সংসদের স্পীকার আবদুল হামিদ এডভোকেটও হরতাল পালন করেন। একদলীয় বাকশালের প্রবর্তক আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের ভাষা বোঝেনা, তবে গণতন্ত্রের সবচেয়ে খারাপ গালি ‘হরতাল’ ভালো বোঝে। তাই আওয়ামী লীগের অপশাসনের বিরুদ্ধে তাদের পরিচিত ভাষায়ই জনতা জবাব দিয়েছে।



কেন এই হরতাল? গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সমস্যার সমাধান, টেন্ডারবাজি-দখলবাজি, সরকার বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন-হয়রানি বন্ধ, বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ, প্রশাসন দলীয়করণ ও চাকুরিচ্যুতি, পক্ষপাতমূলক নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রী লাঞ্ছনার বিচারসহ ১১ দফা দাবিতে সরকারকে সতর্ক করতে এ হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। আর এ হরতালে যুক্তিযুক্ত কারণেই সমর্থন দেয় জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য সমমনা দলগুলো, সমর্থন দেয় সাধারণ মানুষ। তাইতো বিরোধী দলগুলোর তেমন জোড়ালো পিকেটিং না থাকলেও দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ ও স্বত:স্ফূর্তভাবেই পালিত হয় এ হরতাল।

কিন্তু আওয়ামী লীগ বিরোধীতা পছন্দ করে না, বিরোধীদল পছন্দ করে না, তাদের কোন কাজের সমালোচনা হোক তা পছন্দ করে না। তাই আওয়ামী অপশাসনের বিরুদ্ধে যে কন্ঠগুলো উচ্চকিত হয়েছে তা স্তব্ধ করে দিতে চালিয়েছে সন্ত্রাস, বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কয়েকটি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, নির্যাতনে নির্যাতনে জড় পদার্থে পরিণত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে সম্পাদক ও সাংবাদিকদের। আওয়ামী লীগ এতটাই হিংস্র রাজনীতিতে বিশ্বাসী যে গতকাল হরতালে তারা দেখিয়ে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে কি নির্মম পরিণতি হবে। বিরোধীতা যারা করবে শুধু তাদেরই নির্যাতন নয় বরং তাদের আবেগের স্থল মায়েদের উপরও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিল আওয়ামী লীগ করতে পারে না এমন কোন অপকর্ম নেই।

গতকাল হরতালে সকালেই গ্রেফতার করা হয় মীর্জা আব্বাসকে। কিন্তু ওরা তাকে গ্রেফতার করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, আক্রমন করেছে বাড়িতে ঢুকে, নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে নারীপুরুষ নির্বিশেষে যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই। ওদের নির্যাতন থেকে নিস্তার মেলেনি মীর্জা আব্বাসের বৃদ্ধা মায়েরও। এ যেন মনে করিয়ে দেয় বাকশালী নির্যাতনের কথা, যখন সন্তানের মাথা কেটে দিতে পিতাকে বাধ্য করেছিল বাকশালীরা, পিতার সামনেই সন্তানের কাটামুন্ডু দিয়ে ফুটবল খেলেছে রক্ষীবাহিনী। আজ আবারো সেই রক্ষীবাহিনীর পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে বাংলাদেশ। আজো বাকশালের প্রতাত্মাগুলো ছাত্রলীগ আর যুবলীগ ঘাড়ে ভর করে রক্ষীবাহিনীর নির্মমতায় রক্তাক্ত করতে চায় বাংলাদেশ।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় র‌্যাব বেড়ধক পিটিয়েছে মীর্জা আব্বাসের পরিবারের সদস্যদের। অথচ র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মো. সোহায়েল শীর্ষ নিউজ ডটকমকে জানান, মির্জা আব্বাসের বাড়িতে কোনো অভিযান চালানো হয়নি। তাহলে কারা চালালো বর্বরোচিত নীপিড়ন? আওয়ামী লীগের উচ্ছৃংখল গুন্ডাবাহিনী ছাত্রলীগ হরতাল প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়। হরতালের দিন তারা দেশের বিভিন্নস্থানে চালিয়েছে পৈশাচিত তান্ডক। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসে আতংকিত সাধারণ মানুষ হরতালে রাস্তায় বের হতে সাহসী হয় নি, হরতাল সফল হওয়ার এটিও একটি বড় কারণ। ছাত্রলীগের এমন অপকর্মে বিব্রত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্রলীগ, যুবলীগের অকপর্কের দায় নেবে না আওয়ামী লীগ। সবকিছু এ ইংগিতই বহন করে যে, মির্জা আব্বাসের বাড়ীতে র‌্যাবের পোষাকে নির্মম র্নিযাতন চালিয়েছে ছাত্রলীগ।

বিগত সরকারের আমলে সন্ত্রাস দমনে র‌্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন বা র‌্যাব নামে যে এলিট ফোর্সের জন্ম তাকে স্বাগত জানিয়েছিল সকল শ্রেণীর মানুষ। সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকার ২১ ডিসেম্বর ২০০৪ সংখ্যায় একটি লেখা দেখেছিলাম, “মা দূর্গার আবির্ভূত হয়েছেন পৃথিবীতে র‌্যাব রূপে, অসুর নিধনে ব্যস্ত মাকে রুষ্ট করো না” শিরোনামে। অথচ সন্ত্রাস নির্ভর আওয়ামী লীগ বারবার র‌্যাবকে তুলে নেয়ার দাবী জানিয়েছে, এমনকি ক্ষমতায় গেলে র‌্যাব বাতিল করারও ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। বাতিলে প্রতিশ্রতিবদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকার তাই র‌্যাবকে বিতর্কিক করার পায়তারা করছে। আর এরই অংশ হিসেবে গতকাল র‌্যাবের পোষাকে ছাত্রলীগের গুন্ডারা নারকীয় সন্ত্রাস চালালো মির্জা আব্বাসের পরিবারের উপর।

সন্তান সে তো সন্তানই, যত অন্যায় করুর তার প্রতি মমতা থেকেই যায় পিতার মনে। তাইতো বেপরোয়া ছাত্রলীগের অপকর্মে ত্যক্ত-বিরক্ত আওয়ামী লীগ নেতারা তাদেরকে সন্তান পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে। অথচ তাদের কেউ রাস্তাঘাটে বেঘোরে প্রাণ হারালে ঠিকই আবার চিরুনি অভিযানে ঝাপিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের এমন দ্বিচারিনী চরিত্র এটাই প্রমাণ করে তারা ছাত্রলীগের দায় থেকে মুক্তি নিয়ে মূলত ছাত্রলীগকে সর্বপ্রকার অপকর্মের লাইসেন্স দিয়েছে। আসলে বাপকা বেটা বলে যে কথা প্রচলতি আছে তা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ক্ষেত্রে শতভাগ মিলে যায়। চরিত্রহীন ছাত্রলীগের অপকর্মে বিব্রত হলেও এটা সবাই বুঝে যে ভদ্রঘরে সাধারণত অসভ্য সন্তান জন্মে না। তাই ছাত্রলীগের অপকর্মের দায় এড়াতে যতই ফন্দিফিকির আওয়ামী লীগ করুক না কেন, যে পিতার নোংরা চরিত্রের জোরে লাফালাফি করছে ছাত্রলীগ তার দায় শুধুই আওয়ামী লীগের।

Source: http://www.shahriar.info/post-item/1934.html

No comments:

Post a Comment