ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
গুণবান অ্যাটর্নি জেনারেল কোনো রাখঢাক করেননি। সোজা বলে দিয়েছেন যে, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের স্বঘোষিত নেতা সন্তু লারমার সাথে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সন্তু লারমাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া উচিত ছিল। তা না করে নোবেল কমিটি মারাত্মক ভুল করেছে।
সন্তু লারমা একদল সশস্ত্র ঘাতককে এবং পার্বত্য এলাকায় শত শত আদিবাসী বাঙালিকে খুন করতে মদদ দিয়েছে। তা ছাড়া সন্তু লারমা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন। বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকাকে বিচ্ছিন্ন করে নতুন রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্তের হোতাও তিনি। আর এই চুক্তি সম্পাদনের ফলে পার্বত্য এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমন দাবিও কেউ করতে পারে না। এখনো সেটা নিয়ে প্রতিদিন সন্তু লারমার অনুগত বাহিনী ও তার বিরুদ্ধবাদীরা সশস্ত্র হাঙ্গামা করছে। তাতে দু-চার দিন পরপরই প্রাণহানির খবর প্রকাশিত হচ্ছে। আধুনিক কবি শহীদ কাদরী তার এক কবিতায় লিখেছেন, ‘বন্য শূকর খুঁজে পাবে প্রিয় কাদা,/ মাঝরাঙা পাবে অন্বেষণের মাছ,/ প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিকই,/ কিন্তু শান্তি পাবে না পাবে না পাবে না।’ মানুষের জীবনে শান্তি সহজে মেলে না। নোবেল শান্তি পুরস্কারও না।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও এর ব্যবস্খাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে সরকার পানি ঘোলা করতে করতে একেবারে কর্দমাক্ত করে ফেলেছে। এখন বিষয়টি আদালতে গিয়ে ঠেকেছে। গত সপ্তাহে আদালতের ফুল বেঞ্চে সে মামলার শুনানি করার কথা থাকলেও আদালত তা দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বয়সের অজুহাতে ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্খাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করেছে। তার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। ঝুলে আছে। আওয়ামী লীগের সুবিধা হলো এই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলেন, মন্ত্রী, এমপি, উপদেষ্টা ও নেতাকর্মীরা তার সত্যাসত্য যাচাই না করেই একযোগে তার প্রতিধ্বনি করতে থাকেন। আবার শেখ হাসিনা চুপ। অন্যরাও চুপ। ড. ইউনূসকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যখন বলে বসলেন, সুদখোর ও ঘুষখোরে কোনো পার্থক্য নেই। তখন সারা দেশে এক চিল্লানি, ইউনূস সুদখোর। সুদখোর আর ঘুষখোরে কোনো পার্থক্য নেই। প্রধানমন্ত্রী এখন সে কথা আর বলছেন না। ফলে আওয়ামী নেতাকর্মীরা চুপ। এরপর প্রধানমন্ত্রী ইউনূসের বিষয়ে আবারো যখন বললেন, ‘ড. ইউনূস গরিবের রক্ত চুষে খায়।’ আবার তখন সবাই একযোগে বলতে থাকলেন যে, ইউনূস একটা রক্তচোষা। সব আওয়ামী নেতাকর্মী হুক্কাহুয়া রব তুললেন। প্রধানমন্ত্রী এতে শ্লাঘা বোধ করলেও এসব চাটুকারিতার পরিণাম যে ভালো হয় না, প্রধানমন্ত্রী তা উপলব্ধি করেন কি না বলতে পারি না।
একটা বিষয় এখন আর অস্পষ্ট নেই যে, গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। কিছুকাল আগে সরকার সমর্থক কিছু সংবাদপত্র একযোগে খবর প্রকাশ করে গেছে যে, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গচ্ছিত টাকা তুলে নেয়ার জন্য আমানতকরীরা লম্বা লাইন দিয়েছেন। এবং অল্প কয়েক দিনের মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। এর সবই ঘটেছে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্খাপনা পরিচালক পদ থেকে ড. ইউনূসকে অপসারণের ঘটনায়। এর ফলে আমানতকারীরা ব্যাংকটির ওপর থেকে আস্খা হারিয়ে ফেলেছেন। এই খবর প্রকাশের মধ্য দিয়ে আমানতকারীদের টাকা তুলে নিতে উৎসাহিত করা হয়েছে। তারা এমনও লিখেছে যে, ব্যাংকের টাকার কোনো সঙ্কট নেই। তবে কোনো কোনো শাখা আমানত প্রত্যাহারকারীদের চাপের কারণে টাকা দিতে পারছে না। অর্থাৎ গ্রামীণ ব্যাংকে যারা টাকা জমা রেখেছিল, তারা ছুট দাও। দেরি হলে পস্তাবে। এ দিকে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এসএমএস করে দলের ক্যাডারদের জানিয়েছেন, দেশে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতার কোনো জনপ্রিয়তা নেই। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের আমানতকারীদের রক্ষা করতে চান। জয়ের এই বাণী তাৎপর্যহীন নয়।
কিন্তু এক যুগ আগেও এর চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রধানমন্ত্রী এখন যা বলছেন, গ্রামীণ ব্যাংক বা ড. ইউনূস সম্পর্কে আগে তিনি আর কখনো বলেননি। বরং ড. ইউনূস ও তার ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প নিয়ে গর্ববোধ করেছেন। ১৯৯৭ সালে নিউইয়র্কে যে ক্ষুদ্রঋণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ওই সম্মেলনে ভাষণ দিয়েছিলেন। ভাষণে তিনি বলেছিলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে ড. ইউনূস ক্ষুদ্রঋণের যে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, তার জন্য তিনি গর্বিত। এবং ড. ইউনূস আমাদের জাতির জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন। কিন্তু সেই প্রধানমন্ত্রীর লোকেরাই এখন গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংসে লিপ্ত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বা কার স্বার্থে এমন কাজ করা হচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রীর ছেলে কিভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছেন। এ দিকে দেশের শীর্ষস্খানীয় ব্যবসায়ী আবদুল আওয়াল মিন্টু কয়েক দিন আগে বলেছিলেন, নরওয়েজীয় যে টিভি অনুষ্ঠানটি নিয়ে এত কাণ্ড ও বর্তমান সঙ্কট সৃষ্টি হলো, সে অনুষ্ঠানটি তৈরি করার জন্য অর্থের জোগান দিয়েছিল একজন ভারতীয় ব্যবসায়ী। আর এর সব কিছুই দিল্লি থেকে সমন্বয় করা হয়েছে। ড. ইউনূসকে খাটো করার জন্য যে স্খানীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, তার বিরুদ্ধে একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার।
এ দিকে গ্রামীণ ব্যাংক রক্ষার লড়াইয়ে একটি জটিল পর্যায়ে উপনীত হয়েছে হাইকোর্টের রায়ে। ড. ইউনূস তাকে অপসারণের বিরুদ্ধে যে রিট দায়ের করেছিলেন, হাইকোর্ট তা খারিজ করে দিয়েছেন। তবে সরকার যে ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দিয়ে দলীয় কায়েমি স্বার্থবাদীদের হাতে ব্যাংকটি তুলে দিয়ে তা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়, সেটি এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতকি দল এমনকি মহাজোটভুক্ত দলও ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকারের এই বিদ্বিষ্ট মনোভাবের কঠোর সমালোচনা করেছে। আর সুশীলসমাজের একজন হলেও পরজীবী সুশীলরা একেবারে চুপটি করে অবস্খা পর্যবেক্ষণ করছেন।
সরকার সম্ভবত গ্রামীণ ব্যাংককে একটি বড় ধরনের ভোটব্যাংক হিসেবে বিবেচনা করছে। সে কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা দেখাতেও ব্যর্থ হয়েছেন। হাইকোর্টের রায়ের পরপরই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইউনূসের সমর্থনে সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকরা কমিটি গঠন করে বক্তব্য দিতে শুরু করেছেন। তারা এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে, আদালত কেন একজন নিগৃহীতের কথা শুনলেন না। অ্যাটর্নি জেনারেলসহ আওয়ামী ঘরানার অনেকেই এখন বলতে চাইছেন, শেখ হাসিনাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার না দিয়ে সে পুরস্কার ড. ইউনূসকে দিয়ে নোবেল কমিটি এক গর্হিত কাজ করেছে। আর এই পুরস্কার প্রাপ্তির পর থেকেই ইউনূসও তাদের ঈর্ষার আগুনে পুড়তে শুরু করেছেন।
এ দিকে ইউনূস সম্পর্কে এ ধরনের ব্যবস্খা নিতে গিয়ে সরকার দেশ-বিদেশে প্রচণ্ড চাপের সম্মুখীন হয়েছে। তাদের বক্তব্য হলো ইউনূসকে এভাবে অপমান না করে সরকার তার সাথে একটা সমঝোতায় আসুক। সরকারের ভেতর তেমন কোনো মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে নিয্ক্তু মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি বলেছেন, সমঝোতার মাধ্যমে এই সঙ্কটের সমাধান দেখতে চান তারা। প্যারিসের ফেন্সন্ডস অব গ্রামীণ নামের এক সংগঠন ইউনূসের রিট খারিজ হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তারা পরিস্খিতির দিকে নজর রাখছেন এবং এর একটা সন্তোষজনক সমাধান চান। হাইকোর্টে ড. ইউনূসের রিট খারিজ হয়ে যাওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন সর্বশেষ পরিস্খিতি জানতে চেয়ে ড. ইউনূসকে ফোন করেছিলেন। গত ৮ মার্চ ওয়াশিংটনে তার সাথে বৈঠক করার জন্য ড. ইউনূসকে আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন। হিলারি ড. ইউনূসের সাথে আলোচনার সময় গ্রামীণ ব্যাংকের স্বাতন্ত্র্য ও কার্যকারিতা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দেন। ড. ইউনূসের ওপর যে আচরণ করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র তার সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে। ড. ইউনূসকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এত মাথাব্যথা কেন, এ প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেছেন, ‘ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ও কংগ্রেসের স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তি। জনকল্যাণে তার সেবা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত ও বিশ্বব্যাপী তিনি সম্মানিত। বিশ্বের সুশীলসমাজও বাংলাদেশের ও গণতন্ত্রের উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। তিনি যেভাবে এই কাজ সংগঠিত করেছেন এবং গ্রামীণ ব্যাংক যে অবদান রেখেছে তার প্রতি সমর্থন দেয়া জরুরি। এ নিয়ে বাংলাদেশে যে ঘটনা ঘটছে, তাতে উদ্বেগের কারণ ঘটেছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়েছে।’
ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্খাপনা পরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংক যে যুক্তি দেখিয়েছে তা-ও ধোপে টেকে না। এত দিনে ব্যাংক বলছে, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ ১৯৯৯ সালে তাকে ব্যবস্খাপনা পরিচালক পদে যে পুনর্নিয়োগ দিয়েছে সেটি অবৈধ। বাংলাদেশ ব্যাংক তা অনুমোদন করেনি। ফলে ড. ইউনূস বাদ। তবে গ্রামীণ ব্যাংক বলেছে, ড. ইউনূসের পুনর্নিয়োগের পর সরকার গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জনসমক্ষে প্রচার করেছে এবং ২০০১ সালের এক বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা তা অনুমোদন করেন। ফলে ইউনূসের নিয়োগকে যে অবৈধ বলা হচ্ছে তা সত্য নয়। ড. ইউনূসের আইনজীবীরা বলেছেন, এ নিয়োগ যদি অবৈধ হয়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক ১১ বছর ধরে চুপ করে বসেছিল কেন? সমালোচকরা বলছেন, এসব জটিল প্রশ্ন উথাপিত হতে পারে বলে হাইকোর্ট মামলাটির শুনানি না করে খারিজ করে দিয়েছেন।
এ দিকে অর্থমন্ত্রী, সম্ভবত ড. ইউনূসের চেয়ে বয়োবৃদ্ধ, আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, অবৈধভাবে দখল করা পদ থেকে ড. ইউনূসকে তারা সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ইউনূস যদি নিজে নিজে চলে যেতেন তাহলে তাকে বরখাস্ত করার প্রয়োজন হতো না। এর মধ্যেও জনাব মুহিত ২০১০ সালে তাকে লেখা চিঠির বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। ড. ইউনূস সে চিঠিতে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্খাপনা পরিচালকের পদ ছেড়ে দেয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে দু’টি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু মুহিত সে প্রস্তাবে সাড়া দেননি। বরং চিঠি সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ওই চিঠি ছিল অর্থহীন। ড. ইউনূস বিদেশী সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারের বুদ্ধিজীবী শ্রেণী তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে নিকৃষ্ট অপপ্রচার চালাচ্ছে। ফলে তিনি যা-ই বলেন, তারা এর অর্থ বিকৃত করে।
এ বিষয়ে লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকায় ইকোনমিস্ট লিখিছে যে, শেখ হাসিনা ড. ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তির বহু আগ থেকেই মনে করছিলেন যে, তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। ক্ষুদ্রঋণ চালুর জন্য ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পেতে পারেন না। বরং তিনি ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে শান্তিচুক্তি করেছেন তার জন্য তাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া উচিত ছিল। এ কাজে বিশ্বের নানা প্রান্তে সিনিয়র আমলাদের লবিং করতে পাঠিয়েও সফল হননি। কিন্তু নোবেল প্রাপ্তির মাধ্যমে ড. ইউনূস হঠাৎ করে প্রধানমন্ত্রীর বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের চেয়েও বিখ্যাত হয়ে যান। যারা শেখ হাসিনাকে খুব কাছে থেকে জানেন, তাদের মতে এটা মেনে নেয়া শেখ হাসিনার পক্ষে তেতো ওষুধ গেলার চেয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ইকোনমিস্ট আরো লিখেছে, সরকারের প্রসঙ্গ এলে বাংলাদেশের আদালতগুলো ক্রমান্বয়ে সরকারের মুখপানে চেয়ে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই ড. ইউনূসকে তার পদে ফিরিয়ে দেয়ার রায় দিতে হলে খুবই সাহসী কোনো বিচারপতি প্রয়োজন। ইকোনমিস্ট আরো লিখেছে, সম্ভবত পুরো ঘটনার এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক, গ্রামীণ ব্যাংকের পদ থেকে ড. ইউনূসকে সরাতে বাংলাদেশ সরকার তার আন্তর্জাতিক সুনাম কতটা ঝুঁকিতে ফেলতে আগ্রহী হবে? ড. ইউনূসকে অপসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার কতটুকু লাভবান হবে তা অনুমান করা কঠিন। যদি সরকার এ পদক্ষেপে জিতে যায় তাহলে গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নিতে আগ্রহী হবে এবং ব্যাংকটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে।
ইকোনমিস্টের কোনো কোনো আশঙ্কা ইতোমধ্যেই সত্য হয়েছে। শেষ আশঙ্কাটি সত্য হবে কী হবে না, সেটা দেখার জন্য খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে হয় না। তার বিভিন্ন আলামত এই নিবন্ধের শুরুর দিকেই তুলে ধরা হয়েছে। ইউনূস কিংবা গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্খা নিয়ে পৃথিবীর কাছে আমাদের হেয় হওয়া ছাড়া আর কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না। এর মাধ্যমে যতই চাই না কেন শান্তিতে আরেকটি নোবেল পুরস্কার জোগাড় করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক [সূত্রঃ নয়া দিগন্ত]
No comments:
Post a Comment