Friday 31 December 2010

সরকারের ব্যর্থতা ও স্বৈরনীতি রুখতে সর্বত্র আন্দোলনের হাতছানি

মাহাবুবুর রহমান

নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে তেমন কোনো সফলতা নেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের। অসংখ্য ইস্যুতে ব্যর্থতা নিয়ে সরকার পার করতে যাচ্ছে ক্ষমতার মেয়াদের দু’বছর। এসময়ে দেশের সব মানবাধিকার, পেশাজীবী ও আর্থ-সামাজিক প্রতিষ্ঠানে স্বৈরাচারী নীতির ছোঁয়া লেগেছে। হেনস্তা করা হচ্ছে বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে। অস্থির করে তুলেছে সবাইকে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের রাশ টেনে ধরতে সর্বত্রই শোনা যাচ্ছে আন্দোলনের আহ্বান। কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরনীতি রুখতে রাজপথে নামার হাতছানি এখন দিকে দিকে। তবে আন্দোলনের শক্ত কোনো প্ল্যাটফর্ম পাচ্ছে না কেউ।
এদিকে সরকার তাদের চলমান নীতিতেই দেশ পরিচালনায় তত্পর। ‘বিরোধী মত’ রুখতে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা কৌশল। আন্দোলনের সব পথ বন্ধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবহারের পাশাপাশি স্পর্শকাতর পেশাজীবী সংগঠনগুলো দখলের চেষ্টা চলছে। অন্য প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে বিতর্কিত করা এবং আইনের জালে আটকানো হচ্ছে। এ কাজে সরকার গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লিখিত প্রতিশ্রুতির মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলার রায় কার্যকর এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু ছাড়া বড় কোনো সফলতা তারা দেখাতে পারেনি। বিশেষ করে ইশতেহারে ‘অগ্রাধিকারের পাঁচটি বিষয়’ শিরোনামে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা, বিদ্যুত্ ও জ্বালানি সমস্যার সমাধান, দারিদ্র্য ঘুচাও বৈষম্য রোখো এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ থাকলেও এসব ইস্যুতে তেমন কোনো সফলতা নেই।
বরং তাদের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি, প্রচারণা-প্রতিবাদ রুখতে সরকার হার্ডলাইনে রয়েছে। বিরোধীদলীয় নেত্রীকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ থেকে শুরু করে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিতর্কিত করা এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালকে আইনের মারপ্যাঁচে আটকানোর মতো কঠোর চেহারাও দেখিয়েছে সরকার। চ্যানেল ওয়ান ও একাধিক পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে গণমাধ্যমকেও ভয়ের মধ্যে রেখেছে।
শিক্ষাঙ্গন থেকে বিচার বিভাগ পর্যন্ত সর্বত্র নিজেদের লোক বসিয়ে দলের শাসন কায়েম করেছে। সরকারের এমন কঠোরতা রুখতে বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে পেশাজীবী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও মুখ খুলেছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ছোট-বড় কিছু কর্মসূচি পালন করলেও সরকারের হার্ডলাইনের বিরুদ্ধে তারা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নসহ কয়েকটি সংগঠন ইস্যুভিত্তিক প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করলেও তাও তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। সম্প্রতি আরও বেশ ক’টি মানবাধিকার ও শক্তিশালী সামাজিক সংগঠন সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ নির্দলীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও গণতন্ত্র রক্ষায় কঠোর আন্দোলনের আহ্বান এসেছে।
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ সরকার : দ্রব্যমূল্য বিষয়ে ১-এর ১ উপধারায় বলা হয়েছিল, ‘দ্রব্যমূল্যের দুঃসহ চাপ প্রশমনের লক্ষ্যে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। দেশজ উত্পাদন বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সময়মত আমদানির সুবন্দোবস্ত, বাজার পর্যবেক্ষণসহ বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মজুতদারি ও মুনাফাখোরি সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হবে, চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে। ভোক্তাদের স্বার্থে ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলা হবে। সর্বোপরি সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য কমানো হবে ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বলা হয়েছিল, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষমতাধরদের বার্ষিক সম্পদ বিবরণী দিতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরের ঘুষ, দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয়, ঋণখেলাপি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালোটাকা এবং পেশিশক্তি প্রতিরোধ ও নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ৫-এর ২ উপধারায় বলা হয়েছিল, ‘বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন গঠন ও ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘন কঠোরভাবে বন্ধ করা হবে।’ আর ৫-এর ৩ উপধারায় বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন পদ্ধতির চলমান সংস্কার অব্যাহত থাকবে। জাতীয় সংসদকে কার্যকর ও সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সংসদ সদস্য এবং তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উত্স প্রতিবছর জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কতিপয় সুনির্দিষ্ট বিষয় ছাড়া সংসদ সদস্যদের ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার দেয়া হবে।’ ৫-এর ৬ উপধারায় বলা হয়, ‘দলীয়করণমুক্ত অরাজনৈতিক গণমুখী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতা ও মেধার ভিত্তিতে সব নিয়োগ ও পদোন্নতি নিশ্চিত করা হবে। প্রশাসনিক সংস্কার, তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ই-গভর্নেন্স চালু করা হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন করা হবে।’
নির্বাচনী ইশতেহারে এমন নানা আকর্ষণীয় প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও দু’বছরে দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র ছিল বলে বিশিষ্টজনরা মনে করেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ তো দূরে থাক, গত দু’বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে চাল, তেল, রসুন, হলুদ, আটা, ময়দাসহ সব জিনিসের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। এসব রোধ করতে সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। গ্যাস, বিদ্যুত্ ও পানি সঙ্কট নিরসনে গণমাধ্যমে নানা বক্তৃতা-বিবৃতি শোনা গেলেও বাস্তবে শীতের সময়ও লোডশেডিং চলছে দেশব্যাপী। ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় গ্যাস সঙ্কটে রান্নার কাজও বন্ধ থাকছে। সিএনজি স্টেশন বন্ধ রেখে পরিবহনের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করা হয়েছে। ঢাকার যানজট আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জ্বালানি ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা না থাকায় বিনিয়োগ দিন দিন কমছে। নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না। চাঁদাবাজি ও টেন্ডারসন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়েছে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের টেন্ডার ছিনতাই এখন নিত্যদিনের ঘটনা। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চললেও আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতি হচ্ছে।
বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয় স্কেলের অধীনে নেয়ার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। বেকার সমস্যা সমাধানে ফলপ্রসূ কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ন্যাশনাল সার্ভিসের নামে দলীয় কর্মীদের পুনর্বাসনের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে সরকার। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যায় তেমন কোনো প্রতিবাদ কিংবা দৃঢ় মন নিয়ে কোনো আলোচনাও করেনি সরকার।
সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা হলেও বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা সংসদকে ক্রমেই অকার্যকর করে ফেলা। বিরোধী দলের মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণ না করা এবং প্রয়াত নেতাদের নিয়ে বিষোদ্গারের কারণে এখন কার্যত জাতীয় সংসদ অকার্যকর রয়েছে।
স্বৈরনীতিতে চলছে সরকার : শুরু থেকেই সরকার একের পর এক স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিয়ে রাজনীতি, অর্থনীতিসহ জাতীয় স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ভারতের সঙ্গে ৫০ দফার অসম চুক্তি, আলোচনা-পর্যালোচনা এবং জরিপ ছাড়াই ভারতকে ট্রানজিট ও বন্দর ব্যবহারের সুবিধা প্রদান, ভারতের ব্যবহারের জন্য রাস্তা তৈরিতে ঋণ গ্রহণের বিষয়টি এখনও জাতিকে স্পষ্ট করা হয়নি। শুরুতেই সবগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ভিসি নিয়োগ করা হয়। প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে সরকার সমর্থকদের বসানো হয়। সবচেয়ে ন্যক্কারজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় উচ্চ আদালতে। দলীয় নেতাদের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিসহ সচেতন আইনজীবীরা অবস্থান নিলেও সরকার তাদের পদক্ষেপ থেকে পিছপা হয়নি। আইনজীবীদের প্রতিবাদের মুখেও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার ও খসরুজ্জামানকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ভয়াবহতা স্বৈরতান্ত্রিকতাকেও হার মানিয়েছে। সাবেক মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে পত্রিকা সম্পাদকদেরও রিমান্ডে নিয়ে বিবস্ত্র করার উদাহরণ সৃষ্টি করা হয়। দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ.ন.ম. এহছানুল হক মিলনকে রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়।
সরকারের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের তথ্য প্রকাশে বিরত রাখতে গণমাধ্যমের ওপর সরকারি খড়গ এক-এগারোর সেনা সমর্থিত সরকারকেও ছাড়িয়ে যায়। সাজানো মামলার অভিযোগে একদিনের মধ্যেই দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আদালতের রায়ের মাধ্যমে এখন পত্রিকাটি প্রকাশিত হচ্ছে। চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দেয়া হয়। একাধিক টেলিভিশনের টকশো নোটিশ করে বন্ধ করা হয়।
বিরোধীদলীয় নেত্রীকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে হেনস্তা করা হয়। সংসদ সদস্য ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতারের পর অমানবিক নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে।
সরকারের সর্বশেষ স্বৈরতন্ত্রের শিকার নোবেল বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। খোদ প্রধানমন্ত্রীই জাতীয় সংসদে বিষোদ্গার করে ড. ইউনূসকে হেনস্তা করেছেন। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তাকে হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। সরকারের চলমান দুর্নীতি, অনিয়ম ও দলীয়করণ তুলে ধরে রিপোর্ট প্রকাশ করে সরকারি খড়গের মুখে পড়েছে টিআইবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে অধিকাংশ মন্ত্রী, পুলিশ কমিশনারসহ সবাই টিআইবির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার অব্যাহত রেখেছেন। টিআইবি চেয়ারম্যান, নির্বাহী পরিচালক ও গবেষণা কর্মকর্তার বুিরদ্ধে মামলা এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির মাধ্যমে নতুন এক ইতিহাসের সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ টিআইবিকে সুপ্রিমকোর্টে তলব করেও হয়রানি করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে সবাই আতঙ্ক ও উদ্বেগের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে।
সর্বত্রই আন্দোলনের দাবি : সরকারের স্বৈরথাবায় ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় এখন সব শ্রেণী-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে আন্দোলনের আহ্বান আসছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি শুরু থেকেই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছে। দু’বছরে দেশব্যাপী তিনটি হরতাল ও অসংখ্য প্রতিবাদ সভা-সমাবেশ-শোভাযাত্রা করেছে দলটি। নতুন বছরে আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা রয়েছে তাদের। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন আমার দেশকে বলেন, ‘জনগণকে সরকার ক্ষেপিয়ে তুলেছে। স্বাভাবিক জীবন নিয়ে মানুষ বাঁচতে পারছে না। তারা কঠোর আন্দোলন চায়। নতুন বছরে জনগণের এ চাওয়াকে সামনে রেখে বিরোধী দল রাজপথে কঠোর হবে।’
আরেক বিরোধী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ ছয় নেতাকে নানা অভিযোগে গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ রাখা হয়েছে। নেতাদের মুক্তি ও জনদাবি নিয়ে দলটি কিছু কর্মসূচি পালন করলেও নেতাকর্মীদের রাজপথে দাঁড়াতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া চারদলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে। বিরোধী আরও ৮টি রাজনৈতিক দল ছোট ছোট কর্মসূচি পালন করেছে। চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দু’চারটি প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
শিক্ষানীতিতে ধর্মকে অবজ্ঞার প্রতিবাদ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অশ্লীলতার দায়ে মহাপরিচালককে অপসারণের দাবিতে ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ ২৬ ডিসেম্বর হরতাল আহ্বান করেছিল। দাবি পূরণে আশ্বাসের প্রেক্ষিতে পরে হরতাল প্রত্যাহার করা হয়। অবশ্য দাবি বাস্তবায়নের পরিবর্তে ওলামা-মাশায়েখদের অবজ্ঞা করায় নতুন করে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেবে বলে দলটি ঘোষণা দিয়েছে।
বিরোধী দল দমনে আইনের ব্যবহার : এ বিষয়ে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় অধ্যাপক ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে যখন সব মহলের নাভিশ্বাস ওঠে, তখন সবাই মিলেই একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে ওঠে। নির্যাতিতদের এ প্ল্যাটফর্ম থেকেই প্রতিবাদ-প্রতিরোধ শুরু হয়, যা অভ্যুত্থানেও রূপ নেয়। অবশ্য এজন্য দরকার হয় নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এমন আন্দোলন গড়ে তুলতে বিএনপিকে অগ্রভাগে থাকতে হবে। এছাড়া যে যার অবস্থান থেকেও বড় প্রতিবাদ গড়ে তুলতে পারে।’
সরকারের স্বৈরনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত সময়ের শাসনের চেয়ে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকার আইনকে বিরোধী দল দমনের জন্য ব্যবহার করছে। দেশের সিংহভাগ মানুষ অবিচারের শিকার। আইনজীবীদের প্রতিবাদের মুখেও উচ্চ আদালতে দলীয় বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে গণমানুষের আন্দোলনের বিকল্প নেই।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার বলতে কিছুই নেই। সব দিক বিবেচনা করলে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে দেশের পরিস্থিতি এখন খুবই খারাপ। মানুষ জীবন নিয়ে শঙ্কিত ও উত্কণ্ঠিত। শাসক দলের অন্যায়, অত্যাচার ও নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করছে মানুষ। প্রতিবাদ করতে গেলে ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে’র কথা বলে তা স্তব্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ‘মামলা আর রিমান্ড’ বিরোধী মতের লোকদের দমন করার জন্য এই হচ্ছে সরকারের অস্ত্র। সরকারের এ অন্যায়-অত্যাচার রুখতে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) চেয়ারম্যান এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, দেশে অঘোষিত ফ্যাসিজম চলছে। আইনের শাসন তো দূরের কথা, সরকার প্রতি পদে আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করে চলেছে। সরকারের বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবাদ ও আন্দোলন হতে হবে। তা না হলে দেশে ফ্যাসিজম আরও শক্তিশালী হবে। গণতন্ত্র ও বহুমতের ধারাবাহিকতা হারিয়ে যাবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, আমরা দিন দিন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছি। নির্বাচিত স্বৈরাচারের শাসন সামরিক শাসনের চেয়েও ভয়ঙ্কর। বর্তমানে দেশের মানুষ তা উপলব্ধি করতে পারছে। আইনের শাসন বলতে যা বোঝায়, বর্তমানে দেশে তা সম্পূর্ণই অনুপস্থিত। আমরা সবাই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছি। বিচার বিভাগের ওপরও মানুষের কোনো আস্থা নেই। হয়রানি ও নির্যাতনের ভয় থাকা সত্ত্বেও আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, দেশে বর্তমানে যে আইনবহির্ভূত শাসন চলছে—আমি তা মানি না। আমি এ ফ্যাসিজমের অবসান চাই। আজ সবাই আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। সরকারের এ অন্যায় নীতির বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন প্রয়োজন। এজন্য জনমত গঠন করতে হবে।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, সরকার পদে পদে পেশাজীবীদের অধিকার খর্ব করছে। যোগ্য ও জ্যেষ্ঠদের ঢাকার বাইরে বদলি, ওএসডি ও চাকরিচ্যুত করে হয়রানি করা হচ্ছে। এতে চিকিত্সক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিক কেউ তাদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারছেন না। সবক্ষেত্রে দলীয়করণের মাধ্যমে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা পেশাজীবীদের অধিকারের পক্ষে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি। এখন রাজপথে কঠোর আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন বাদ দিয়ে এ সরকার শুধু দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। শিক্ষকসহ গণমানুষ অধিকারহারা। আমাদের কোনো দাবিই সরকার বাস্তবায়ন করছে না। বরং দলীয় এমপিদের বসিয়ে স্কুল-কলেজে লুটপাট চলছে। এসবের প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করছি। ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হবে।
এভাবে সর্বত্র আন্দোলনের আহ্বান থাকলেও রাজপথে কঠোরতা প্রদর্শনে শক্তিশালী কোনো প্ল্যাটফর্ম এখনও খুঁজে পাচ্ছে না তারা। অবশ্য সময়ের আবর্তে বিরোধী মতের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা।
বিরোধী মত রুখতে তত্পর সরকার : এদিকে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরুর আগেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সরকার। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং অধিকার নিয়ে পেশাজীবী ও শ্রমিকদের সব আন্দোলনকে পুলিশ-র্যাব দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার। প্রতিবাদ কর্মসূচি ও হরতালে বিএনপিকে কোনো মিছিলও করতে দেয়া হয়নি। আন্দোলন ঠেকাতে পুলিশ ও র্যাবকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করা হয়েছে।
এদিকে সাধারণত যেসব সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ শুরু হলে তা কঠোর রূপ নেয়, সেসব স্পর্শকাতর স্থানে নিজেদের প্রতিনিধি বসাতে তত্পর রয়েছে সরকার। এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি পদে সরকার সমর্থিত ব্যবসায়ী নেতা এ কে আজাদ নির্বাচিত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদসহ অধিকাংশ পদে জয়ও ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। গত দু’বছরে শতাধিক দলীয় কর্মীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ কাজে প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ভিসি ও প্রশাসন সাজিয়ে রেখেছে সরকার। আবাসিক হলগুলোও ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে রেখে বিরোধী সব ছাত্র সংগঠনকে ক্যাম্পাসের বাইরে রাখা হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাব নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে কলকাঠি নাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সেখানেও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নানা লিফলেট বিতরণ করছে। ঢাকা আইনজীবী সমিতির আগামী নির্বাচন নিয়েও চলছে সরকারের নানা পরিকল্পনা। এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘দখলের মানসিকতা নিয়ে আওয়ামী লীগের পথচলা দীর্ঘদিনের। পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা আইনজীবী সমিতিতেও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে তারা। তবে বিচার বিভাগে সরকারি হস্তক্ষেপ রুখতে সাধারণ আইনজীবীরা এসব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রস্তুত।’

Wednesday 29 December 2010

বছরজুড়ে নানা সঙ্কটে কাটে নগর জীবন



মাহমুদা ডলি

ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ও রাজনৈতিক ঠিকাদারদের কাজ ভাগাভাগি নিয়ে বছর জুড়েই ছিল নানা বিতর্ক ও নানা কেলেঙ্কারি। বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ডিসিসি ছিল সরকার সমর্থক রাজনৈতিক ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের হাতে জিম্মি। তাই অঞ্চলভিত্তিক কোটি কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ হলেও উন্নয়নের সুফল পৌঁছায়নি সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায়।
ডিসিসির রাস্তাঘাটসহ অন্য সেবা সংস্থার প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা না পেয়ে পুরো বছরটাই দুর্ভোগের মধ্যে কেটেছে নগরবাসীর জীবন। কোন অঞ্চলে গ্যাস সংকট, কোন অঞ্চলে পানি, আবার কোন অঞ্চলে লাগাতার লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত ছিল সাধারণ মানুষ।
এমনকি রাজনৈতিক কারণেও সরকার ব্যবসায়ী মহলকেও নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাঁদাবাজরা অতিষ্ঠ করে তুললেও পুলিশ প্রশাসন পালন করে নীরব ভূমিকা। নগরীর বিভিন্ন অঞ্চলে সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র পাওয়া যায়।
বছরের শুরুতেই ‘গ্যাস পানি বিদ্যুত্ চাই’ দাবি নিয়ে সাধারণ মানুষ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামলেও তা দমন করার প্রয়াস চালানো হয়েছে।
ডিসিসি সূত্রে জানা গেছে, অঞ্চলভিত্তিক ছোট বড় ওয়ার্ড অনুযায়ী চলতি অর্থবছর এবং গত অর্থবছরে ৮ কোটি টাকা থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কাজের জন্য। কিন্তু সরেজমিনে ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গ কথা বলে পাওয়া গেছে ভিন্ন চিত্র। কোন কোন অঞ্চলে দুই কিংবা একটি কাজ হলেও অনেক অঞ্চলে দুবছরেও কোন ধরনের উন্নয়ন কাজ হয়নি।
২০১০ সালে অঞ্চল-৪-এ রাস্তা নির্মাণ কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। বছর শেষ হলেও এখনো পর্যন্ত কাজটি শুরুই হয়নি। স্থানীয়রা জানান, তারা টেন্ডারের কথা শুনেছেন কিন্তু কাজ দেখেননি। মুগদার স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার নিজে জানান, তার এলাকায় গত এক বছরে কোন উন্নয়ন কাজ করা হয়নি।
ব্যবসায়ী মহলের ক্ষোভ : অঞ্চল-৩ এবং অঞ্চল-২ এর মধ্যে প্রায় অর্ধশত বড় বড় পাইকারি বাজার রয়েছে। এসব বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি সরকারের বাজার সংক্রান্ত রাজস্ব আয়ের মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ রাজস্ব যোগ হয় পুরান ঢাকার এসব পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে। অথচ ওই দুই অঞ্চলের ব্যবসায়ী মহলসহ এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডিসিসি, পুলিশ প্রশাসন, ওয়াসা এবং তিতাস গ্যাসের প্রতি। তারা জানান, সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তারা।
ভাঙা রাস্তাঘাট, ময়লা আবর্জনার অব্যবস্থাপনায় তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অথচ ডিসিসি সূত্রে জানা যায়, অঞ্চল-৩ এ ২০১০-২০১১ অর্থবছরে প্রায় ৮ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ১ কোটি টাকার ৫৩টি প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গত অর্থবছর এবং চলতি অর্থবছরে ২ ও ৩ অঞ্চলে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ হওয়ার কথা। কিন্তু বাবুবাজার, নয়াবাজার, চকবাজার, ইসলামপুর বস্ত্র মার্কেট, উর্দু রোড মার্কেট, মৌলভীবাজার, সোয়ারিঘাট, শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর একই অভিযোগ। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, ড্রেনেজ সিস্টেম ভেঙে পড়া এবং বিদ্যুত্ ও গ্যাস সংকট।
এছাড়াও ব্যবসায়ীরা জানান, যানজট নিরসনের জন্য সরকার অঞ্চলভিত্তিক একদিন অর্ধ দিবস এবং পরদিন পূর্ণ দিবস মার্কেট হলিডে নির্ধারণ করেছে সরকার। এক্ষেত্রে প্রায় পুরো ২ দিনই হলিডে যায়। একদিন মার্কেট বন্ধ রাখার জন্য ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বাণিজ্যমন্ত্রী, ডিসিসি, সচিবালয়ে একাধিকবার আবেদন জানালেও কোন সুরাহা হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা।
শুধুমাত্র ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতি বছরে প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা সরকারকে ট্যাক্স দেয় বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সমিতি। বর্তমানে নীরব চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ করেন ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা। একই ধরনের অভিযোগ করেন মৌলভীবাজার বণিক সমিতি, চকবাজার ব্যবসায়ী সমিতি, সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতি, ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতি, উর্দু রোড ব্যবসায়ী সমিতি, তাঁতিবাজার ও বাবুবাজার ব্যবসায়ী সমিতিসহ অন্যান্য সমিতির নেতারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, চাঁদাবাজির ধরন এখন পরিবর্তন হয়েছে। দোকানের সামনে টং ঘরে তুলে মোটা অংকের অর্থ আদায় করে টং ঘর সরিয়ে নেয়া হয়।
ইসলামপুর বস্ত্র মার্কেট সমিতির মো. ফরহাদ রানা এবং সদরঘাট হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী ঢালী মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, শাখারি বাজার, শ্যামপুর বাজার, ইসলামপুর ও সদরঘাটসহ এসব এলাকায় গত এক বছরে কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ছিনতাইকারি, অজ্ঞান পার্টি, পকেটমার ও ভাসমান যৌনকর্মীদের আস্তানা হিসেবে গড়ে ওঠা সদরঘাট ফুটওভার ব্রিজটিও অপসারণের উদ্যোগ নেই।
এলাকাবাসী জানান, নির্বাচনের পর এলাকায় স্থানীয় এমপি মিজানুর রহমান দিপুকেও এলাকায় কেউ দেখেননি। তার সন্ত্রাস নির্মূলের প্রতিশ্রুতিরও কোন হদিস নেই। সন্ধ্যার পর সাধারণ মানুষের জন্য স্থানটি বিপজ্জনক হয়ে ওঠেছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
এছাড়াও ধানমন্ডি, শংকর, রায়েরবাজার, গ্রীনরোড, কলাবাগান এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে চলে গেছে। তারে অভিযোগ ইভটিজিংও বেড়েছে। পুলিশ ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে উচ্ছেদের পরিবর্তে বখরা নিয়ে যায়। এমনকি যানজটও বাড়ছে ওসব এলাকায়। শীতে এসব এলাকায় লোডশেডিং থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
জাফরাবাদের এক আইনজীবী ২৪ তারিখে ডেসার কোন নোটিশ বা ঘোষণা ছাড়াই সকাল-সন্ধ্যা লোডশেডিং দিয়েছে। শীতের মধ্যেই লাগাতার লোডশেডিং থাকে এ অঞ্চলে। কয়েকটি রাস্তা ও স্যুয়ারেজ লাইনের সংস্কার করা হলেও অলিগলিতে রাস্তাঘাটের বেহাল দশা।
আলী হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্রালয় ওয়েআনমন্ডি ইউসুফ হাইস্কুলের চারপাশেসুয়োরেজ লাইন না থাকায় বাউন্ডারির মধ্য সামান্য বর্ষাতেই হাট পানি জমে যায় বলে অভিযোগ করেন স্কুল ম্যঅনেজিং কমিটির একটি সদস্য। তারা জানান গত বছর স্কুলের শহিদমিনার উদ্বোধন করতে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক। একটা বছর চলে গেলেও তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। দুটি বিদ্যালয়ের প্রায় ১৮শ’ ছাত্রছাত্রী বর্ষাতে দুর্ভোগের মধ্যে থাকায় এছাড়াও - ধানমন্ডি এলাকায় রাস্তাঘাটের দু’পাশে যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করায় যানযজট শেষ হয় না। পুলিশের কোনো উদ্যোগ নেই। অঞ্চল- ৭এর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ হহারানো। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, পানিয় সঙ্কট, গ্যাস সংকট তা রয়েছেই। গত দুই বছরেও বাউন্ডারী রোড, বিআরটিএ, শেওড়াপাড়া ইস্ট ওয়েস্ট স্কুলের রাস্তার উন্নয়ন কাজ নেই। মোহাম্মদপুরে বিভিন্ন অলিতে গলিতে রিকশা চলে লাফিয়ে লাফিয়ে। নর্দমা ড্রেন পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধে নাক চাপা দিয়ে চলতে হয় এরাকাবাসীর।
অঞ্চল ৭/এ ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে ৮টি ওয়ার্ডে পকেটি ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৩শ’ ২৭টাকা বাজেট বরাদ্দ হয়। তার মধ্যে কাজ হয় ৪ কোটি ৫১ লাখ ২১ হাজার ২৯ টাকা। বর্তমানে ২ কোটি ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার ২শ’ ৯৮ টাকার কাজ প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ বাজেট এলে স্থানীয় এমপিসহ রাজনৈতিকবিদরা কাজ ভাগবাটোয়ারা করে নিযে যায়। কিন্তু রাস্তাঘাটে তার অনেক -- নেই। কাজী পাড়া মাদ্রাসা রোড ও ওয়াসা রোডে ১ কোটি টাকার স্থলে ২০ লাখ টাকার কাজ ও হয়নি। এছাড়া ওয়াসা রোড অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে কয়েককমাস ধরে। স্থানীয় কযেকজন ওয়ার্ড কমিশনার জানান, দু’চারজন মিলে মেয়রকে বলে বেশ কয়েকটি প্রকরআস করিয়ে এনেছেন কিন্তু আঞ্চলিক অফিসে বরাদ্দ আসার পর আর কিছু জানেনান।
মীরপুর ১৪ নম্বর, মীরপুর ১ থেকে চিড়িয়াখানা রাস্তা স্তার কাজ গত এক বছরে হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে স্থানীয় এমপির প্রতিশ্রুতি অনুায়অী পানির পাম্প দেয়ার কথা থাকলেও তা গত দু’বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের মো. মহিউদ্দিন মুন্সি, আবুল বাশারসহ বেশ কযেকজন জানান, রাত ১২ টার পর পানি আসে লোকজনের ঘুম হারাম করে পানি ধরতে হয়। উত্তরা কাফরুল ও দক্ষিণ কাফরুলে রিকশা চলাচল বন্ধ রাস্তাঘাটের বেহাল দশা --স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ অঞ্চলে থাকাটাই যেন বড় পাপ। গ্যাস নেই পানি নেই, যেন দোযক। তবুও পেটের টানে থাকতে হয়।
দয়াগঞ্জ, গেন্ডারিয়া এলাকায় রাস্তাঘাট উন্নয়নের জন্য টেন্ডার হলে ও নানা কারণে তা বাতিল হয়ে গেছে বলে জানান ঠিকাদাররা। গত অর্থ বছরে ৭১টি প্রকল্পের মধ্যে রাস্তাঘাটে কয়েকটা ইটের খোয়া পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
গ্যাস কঙ্কট, রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় বছর জুড়েই ছিল গ্যাস সংকট। তার পরেও শীত আসতেই নতুন নতুন এলাকায় গ্যাসের তীব্র সঙ্কট শুরু হয়। নগরীর মোহাম্মদপুর এলাকাসহ পুরান ঢাকা, লালবাগ, সূত্রাপুর, মিরপুর, মগবাজার, নযাটোলা, হাজিপাড়া, রামপুরা, হাজারীবাগ এলাকায় গত ৩/৪ মাস ধরে সারাবছরই গ্যাস সঙ্কট। সকাল ৯ টায় গ্যাস চলে যায় আর আসে সন্ধ্যা ৭টার পরে। সারাদিনের খাবার রাতেই রান্না করে রাখতে হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য ও ক্ষতিকর বলে অভযোগ করেন এলাকাবাসী। ৬৩, ৬৬ শেখের ট্যাক, এফ ব্লকের ১৯ তলা ভবন, --, শ্যামলী ১। রোকেয়া স্মরণীর ১৩ নম্বর ও ১৪ নম্বর শেওরা পাড়ার বাসিন্দারা জানান পুরো এলাকা জুড়েই গ্যাস সংকট সরা বছর ধরে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার জানয়, তারা তিতাম গ্যাসে একাধিক বার অভিযোগ করেছেন কিন্তু কোনো কর্ণপাত করেনি তিতাস গ্যাস। জাফরাবাদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী জানান, তিনি লিখিত অভিযোগ করার পরেও তিতাস গ্যাস কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ১ নম্বর মিরপুরের বাসিন্দারা জানান, মাত্র ২টা রাইতার দিয়ে দুই এরাকা চলে। চুলা জ্বলে টিপ টিপ করে। কবে ভাত হবে ঠিক নেই। টিফিনও দিয়ে দেয়া যায় না বাচ্চাদের স্কুলে এ এক অসহনীয় দুর্ভোগ। মোহাম্মদপুর এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় এমপিরা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থাকলেও আজ তা গ্যাস সংকট নিরসন হয়নি। এখনো সন্ধ্যা-- তখনো গভীর রাতে সামান্য গ্যাসের দেখা মেলে তখন ঘুমানোর সময় রান্না বা খাওয়ার সময নয়। তবে তারা স্থানীয় এমপির প্রতি পুনরায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তাদের দীর্ঘদিনের সমস্যা নিরসনের জন্য

বিতর্কিত শিক্ষানীতি পাসের বছর : আলোচিত-সমালোচিত বহু পদক্ষেপ

দিলরুবা সুমী

শিক্ষা ক্ষেত্রের বেশকিছু বিষয় ২০১০ সালজুড়ে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে। এর মধ্যে বছরের শেষে বহুল বিতর্কিত প্রথম জাতীয় শিক্ষানীতি সংসদে পাস হয়। বছরের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে ছিল বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়টি। প্রায় ৫ বছর পর এবারই খুলে বহুল প্রতীক্ষিত এ এমপিওভুক্তির জট। এ ছাড়া নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস ও এক বছরের মধ্যে নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের ভর্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টিও অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল।
প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর সব ছাত্রছাত্রীকে এ বছর থেকে প্রথম বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যবই দেয়ার বিষয়টি সারাদেশে ব্যাপক হইচই ফেলে দিয়েছিল। আর পরে বোর্ডের এ বিনামূল্যের কিছু বই ২০১১ সালের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে ছাপিয়ে আনার উদ্যোগও সমালোচিত হয়েছে। এদিকে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরকারি ছাপাখানা থেকেই ফাঁসের ঘটনা দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। অন্যদিকে সরকারি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতার পরিচয় দিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী দেশবাসীর বাহবা পেয়েছেন। কিন্তু সুপারিশ না মানায় দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের বিরাগভাজন হয়েছেন। যদিও ফল প্রকাশের আগে এ নিয়োগের জন্য দেশব্যাপী ব্যাপক অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছিল। আর শিক্ষামন্ত্রী রমজানের শুরুতে হঠাত্ করেই যানজট নিরসনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক মাসের ছুটির ঘোষণা দিয়ে সমালোচিত হন।
এ ছাড়া নামকরা স্কুল, কলেজ, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এমনকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ছাত্রছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম, লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য, সরকারের নীতিমালা ভঙ্গ করে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় বছরের শুরুতে সবমহলে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। এর জন্য ক্ষমতাসীন দলের এমপি থেকে শুরু করে সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসব নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন।
ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল ভিকারুননিসা নূন স্কুল, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল, মণিপুর হাইস্কুল, ইডেন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, যশোর এমএম কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, বিএম কলেজ, কারমাইকেল কলেজ, বিএল কলেজ, এডওয়ার্ড কলেজ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বড় স্কুল-কলেজ।
এ বিষয়ে ‘অনিয়ম বন্ধ’ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন ছাড়া কোনো কিছুই করা সম্ভব হয়নি। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের কলেজগুলোতে বাণিজ্য ঠেকাতে অবশেষে অনলাইনে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। শিশুদের ওপর পড়ার চাপ কমাতে আগামী ২০১১ সালের শিক্ষাবর্ষে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে লটারির মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়া চলতি-২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, টিউশন ফি ও অন্যান্য চার্জসহ যে কোনো ধরনের সেবা এবং সরবরাহের ওপর সরকারের সাড়ে ৪ শতাংশ কর আরোপের বিষয়টি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। এতে করে বর্তমানে শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন শিক্ষাবিদ ও সাবেক ছাত্রনেতারা। বছর বছর ভর্তি ফি ও বেতন-ভাতা বৃদ্ধির সঙ্গে নতুন করে বেতনের ওপর করারোপ করায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এরই চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটে গত ২৪ জুলাই। সেদিন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ আন্দোলনে রাস্তায় নামে। দিনভর সড়ক অবরোধ করে রাখেন। তাদের আন্দোলনে হামলা চালায় পুলিশ। এতে অনেক ছাত্র আহত হয়। গাড়ি ভাংচুরের মতো ঘটনাও ঘটে। ফলে সরকারকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ভর্তি ফি, টিউশন ফির ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল-কলেজে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে আরোপিত ভ্যাটের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।
শিক্ষানীতি: গত ৭ ডিসেম্বর জাতীয় শিক্ষানীতি প্রথম জাতীয় সংসদে পাসের বিষয়টি শিক্ষাখাতের অন্যতম একটি বড় অর্জন বলে মনে করছে সরকার। এর আগে স্বাধীনতার পর আটটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছিল।
এবারের শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি গঠন থেকে শুরু করে সংসদে পাস করা পর্যন্ত এই নীতি সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে। বিশেষ করে মাদ্রাসা শিক্ষা ও অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার নতুন নিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষক সংগঠন ও ইসলামী দলগুলো। সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদ ইসলামী শিক্ষাকে খাটো করার অভিযোগ তুলে ২৬ ডিসেম্বর হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছিল। পরে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হলে ২৫ ডিসেম্বর হরতাল প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
এমপিওভুক্তি : প্রায় পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর গত ৭ মে এক হাজার ২২টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করে তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকা প্রকাশের আগে মন্ত্রী, এমপিসহ সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সুপারিশে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সচিবালয়ের বিভিন্ন স্থানে নোটিশ টানিয়েও কাজ হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে এমপিওভুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সচিবালয়ের বাইরে বসে প্রায় সাত হাজার আবেদন থেকে বাছাই করে তালিকা চূড়ান্ত করেন।
এই তালিকা প্রকাশের পরপরই দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। সরকারি দলের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের তদবির করা কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিও পাননি। বিএনপি-জামায়াত নেতাদের গড়া প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করে, যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তাদের এমপিওভুক্ত করা হয়নি। এমনকি এমপিও প্রদানে নীতিমালা মানা হয়নি এবং ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়ম হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে।
১০ মে মন্ত্রী পরিষদের সভায়ও প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সেখানে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের তোপের মুখে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রী পরিষদের সভায় এমপিও তালিকা পুনরায় যাচাই-বাছাই করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রী ও উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিন আহমেদকে দায়িত্ব দেন। প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী তালিকা পর্যালোচনার কাজ শুরু করেন। পরে গত ১৬ মে শিক্ষামন্ত্রী পুরো দায়িত্ব উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিনের হাতে তুলে দেন। তিনি পুরো বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে নতুন তালিকা প্রকাশ করেন ৩১ মে। এতে আগের তালিকা থেকে প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ে এবং নতুন যোগ হয় প্রায় ৫০০ প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে এমপিও পায় এক হাজার ৪৮৩টি প্রতিষ্ঠান।
বিনামূল্যে বোর্ডের বই বিতরণ : প্রাথমিক পর্যায়ের পাশাপাশি মাধ্যমিক স্তরে সব ছাত্রছাত্রীকে বিনামূল্যে বোর্ডের বই বিতরণকে চলতি বছরের সবচেয়ে বড় সফলতা বলে দাবি করছে সরকার। যদিও ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার হিসাবে গরমিলের কারণে চাহিদার তুলনায় কম বই ছাপানো হয়েছে। কোনো নিবন্ধন করা হয়নি এমন স্কুলগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। তার ওপর বাজারেও কোন বোর্ডের বই বিক্রির জন্য ছাড়া হয়নি। বছরের প্রায় পাঁচ মাস ব্যয় হয়েছে বই বিতরণে। ফলে একটি বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে নতুন বই ছাড়াই প্রথম সাময়িক পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এ নিয়ে বছরজুড়েই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ ছিল।
এছাড়া এ বছরই প্রথম ২০১১ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণীর উন্নতমানের বোর্ডের বই আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে ছাপিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। এ বিষয়টিও ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। এখন দেখার অপেক্ষায় সেই বই সবার কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন : দীর্ঘ পর্যালোচনার পর গত ১১ জুলাই নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংসদে পাস হয়। এ বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মালিকদের মতামত চাওয়া হলে আইন না মানা প্রতিষ্ঠানগুলো শর্তানুযায়ী স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য আরও ১৫ বছর সময় চায় এবং সরকারের কাছ থেকে জমি বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানায়। তাদের দাবি না মেনে সরকার বর্তমান ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আইন না মানা ৪৩টি প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে এবং তাদের সতর্ক সংকেত দেয়। এর মধ্যে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়কে লাল সংকেত দেয়া হয়। সতর্ক সংকেত পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে শর্ত পূরণ করার সময় দেয়া হয়েছে। এই সময়ে শর্ত পূরণ করতে না পারা প্রতিষ্ঠানে সেপ্টেম্বরের পর থেকে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শিক্ষক নিয়োগ : গত ৯ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের অধীনে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। দেশের ১ হাজার ৯৬৮টি সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকা পদের বিপরীতে এ পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলেন সারাদেশের ৯টি শিক্ষা অঞ্চলের মোট ১ লাখ ৩২ হাজার পরীক্ষার্থী। কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন রাতে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার একটি পর্যটন কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্রের অনুলিপিসহ ১৬৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে সরকারি ছাপাখানা বিজি প্রেসের কয়েক কর্মচারীও ছিল। পরবর্তী সময়ে বিজি প্রেসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাত্ক্ষণিকভাবে পরীক্ষাটি স্থগিত করে। কয়েকদিন আগে মাউশি থেকে এ পরীক্ষার নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয় আগামী ৭ জানুয়ারি।
এ বছর আরেকটি আলোচিত বিষয় ছিল সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ১ হাজার ৮৫২ জন প্রধান শিক্ষক ও ৩০ হাজার ৭১২ জন সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ। এ নিয়োগে এমপিদের সুপারিশ মানা হয়নি বলে অভিযোগ তুলে গত ২০ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রায় ২০ এমপির তোপের মুখে পড়েছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. মো. আফসারুল আমীন।
অন্যান্য : নতুন নীতিমালা করেও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। গত বছরও আগের মতোই বহাল তবিয়তে চলছে দুর্নীতি। ব্যবস্থাপনা কমিটির গঠন থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড, ছাত্রছাত্রী ভর্তি, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সহপাঠ্য বই সিলেকশনসহ সব ক্ষেত্রেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই কমিটির অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট ও জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট অভিযোগ সেল গঠন করেছে। বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে এ বিষয়ে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ চেয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার পর এ বছর শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন যোগ হয়েছে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেএসডি) ও জুনিয়র দাখিল পরীক্ষা (জেডিসি)। এ পরীক্ষার সময়সূচি নিয়েও অভিভাবক মহলে ছিল কিছু অভিযোগের সুর। এছাড়া প্রথমবারের মতো এ বছর পঞ্চম শ্রেণী শেষে এবতেদায়ির শিক্ষার্থীরাও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে।
পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা স্বল্প পরিসরে চালু করা হয়েছে ২০১০ সালে। ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রীদের চাপ কমাতে ৮২টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে চলতি শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয় শিফট চালু করা হয়েছে। এসব স্কুলে এন্ট্রি পয়েন্টে অর্থাত্ যে শ্রেণী থেকে স্কুল শুরু হয়েছে সেসব শ্রেণীতে ১০ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছিল। আগামী ২০১১ শিক্ষাবর্ষে এসব স্কুলে ৭০ হাজার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এ বিষয়গুলোকে এ বছর শিক্ষা খাতের ইতিবাচক দিক বলে বিবেচিত হয়েছে।
এছাড়া বছরজুড়েই মাসের শেষে ও ঈদের আগে যথাসময়ে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-বোনাসের সরকারি অংশ না পাওয়ার বিষয়টি শিক্ষক মহলে সমালোচিত হয়েছে।

সরকারের অস্তিত্ব কোথায়



ড. তারেক শামসুর রেহমান

গেল ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার একটি দৈনিকের প্রথম পাতার খবর ‘পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা’। বৃহস্পতিবার সাভার বাজারে দোকানি আমার কাছে চেয়েছিলেন ৭০ টাকা। মাত্র দু’দিন আগে যেখানে পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, হঠাত্ করে দুই দিনের ব্যবধানে ক্ষুদে দোকানিরা তা চাইছেন ৮০ টাকা করে। কী এক অদ্ভুত দেশে আমরা বসবাস করি! সরকারের এখানে কোনো অস্তিত্ব আছে কি? বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কে? বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কি কোনো ভূমিকা নেই? পেঁয়াজের এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে মূলত ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায়। ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত অতিসম্প্রতি। কিন্তু এরই মধ্যে অনেক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, সেখানে তো মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হওয়ার কথা নয়। আসলে একটি অসাধু ব্যবসায়িক চক্র ভারতের সাময়িক রফতানি বন্ধের সুযোগ নিয়ে পেঁয়াজের মূল্য রাতারাতি বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন নয় যে, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে। দোকানে দোকানে পেঁয়াজ; কিন্তু দাম আকাশ ছোঁয়া। এখানে যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দেয়, তা হচ্ছে ভারতে বেশক’টি রাজ্যে, যেখানে পেঁয়াজ উত্পাদন হয় বেশি, সেখানে খরার কারণে আশানুরূপ পেঁয়াজ উত্পাদন হয়নি। ভারত সরকার যেখানে সতর্ক হয়েছিল, সেখানে আমরা সতর্ক হলাম না কেন? এ খবর তো বেশ কয়েক মাস পুরনো। তাহলে সরকার সতর্ক হলো না কেন? কেন টিসিবিকে কার্যকর করা হলো না? এখানেই এসে যায় মূল কথাটি। সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি গোষ্ঠী সিন্ডিকেট করে ভারতের ওপর আমাদের নির্ভরশীল করে তুলেছে। সুযোগ বুঝে তারা পেঁয়াজ গুদামজাত করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। খুচরা দোকানিদের নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে যে যেভাবে পারছে দাম হাঁকাচ্ছে। দেখার কেউ নেই। নিয়ন্ত্রণ করারও কেউ নেই। সাধারণ মানুষ আজ অসহায়। তাদের করার কিছুই নেই। অতিরিক্ত মূল্য দিয়েই পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। আর পেঁয়াজ এমন একটি জিনিস, যা ছাড়া কোনো রান্নাই হয় না। স্বল্প আয়ের মানুষের দুঃখ-কষ্ট বাণিজ্যমন্ত্রী বুঝবেন না। কেননা, তাকে তো বাজার করতে হয় না। তিনি সংবাদপত্রে ছবি ছাপাতে পারছেন। চ্যানেলে ছবি দেখলে খুশি হন। তাই মাঝে-মধ্যে তথাকথিত বাজার পরিদর্শনের আগে সাংবাদিকদের খবর দেন। সাংবাদিক বন্ধুরা তার ছবি তুলে নিয়ে আসেন। এখন কোথায় বাণিজ্যমন্ত্রী? পেঁয়াজ যেখানে কেজি ৮০ টাকায়, তখন বাণিজ্যমন্ত্রীর ছবি আমি আর চ্যানেলে দেখি না।
অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের ব্যর্থতা এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে উন্নীত হয়েছে। এখন পেঁয়াজের মৌসুম। এ সময় কোনো যুক্তিতেই কেজি প্রতি ৮০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হতে পারে না। অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করছেন, এমন সংবাদও পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে; কিন্তু সরকারের উদ্যোগ কৈ? অতীতে এ ধরনের পেঁয়াজ সঙ্কটে থাইল্যান্ড, চীন, তুরস্ক ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল। শুক্রবার পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো টনক নড়েনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যখন বৈঠকে বসবে, সিদ্ধান্ত নেবে এবং তা কার্যকর করবে, তত দিনে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে গিয়ে পৌঁছবে।গণতন্ত্রে একটি সরকার সাধারণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয় বটে; কিন্তু সরকারের দক্ষতা নির্ভর করে ‘গুড গভর্নেন্স’-এর ওপর। অর্থাত্ এটা নির্ভর করে প্রশাসনের ওপর। নির্বাচনে বিজয় আর সুষ্ঠু প্রশাসন এক নয়। একটি দল বিজয়ী হতে পারে; কিন্তু সুষ্ঠু প্রশাসন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হতে পারে। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে এমনটিই হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যর্থ হচ্ছে।
বিটিভিতে সরকারের ‘সাফল্য’ দেখালেও, বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। গেল বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তেল ব্যবসায়ীদের বৈঠকে ঢাকা ও অন্যান্য জেলার জন্য সয়াবিনের সর্বোচ খুচরা দর ঠিক করে দেয়া হয়েছিল কেজি প্রতি ৯০ টাকা এবং পামঅয়েল ৮৬ টাকা; কিন্তু বাজারে এ দামে সয়াবিন বিক্রি হয়নি। তাহলে সরকারের অস্তিত্ব থাকে কোথায়? সরকার যদি মিল মালিক তথা অবৈধ ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে সেই সরকারের অস্তিত্ব তো থাকে না! নিন্দুকেরা বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর ‘অবৈধ সম্পর্ক’ (?) রয়েছে, যে কারণে বাণিজ্যমন্ত্রীর হুঙ্কারের পরও ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যমন্ত্রীর কথাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কেউ যদি আজ বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যর্থ, তাহলে তিনি কি ভুল বলবেন? সম্ভবত তিনি ভুল বলবেন না। কেননা, বাণিজ্যমন্ত্রী গত দুই বছরে তার আওতাধীন একটি সেক্টরেও কোনো সাফল্য দেখাতে পারেননি। শুনছি, প্রধানমন্ত্রী নাকি মন্ত্রীদের ‘পারফরমেন্স’ যাচাই করবেন। উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে ভালো। যদি সত্যিকার অর্থে মন্ত্রণালয়গুলোর ‘পারফরমেন্স’ যাচাই করা হয়, তাহলে প্রথমেই বাদ পড়বেন বাণিজ্যমন্ত্রী; কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন বাণিজ্যমন্ত্রী ‘পতাকাবাহী’ গাড়িতে চড়বেন না, এটা চিন্তা করাও যায় না। আমরা অপেক্ষায় রইলাম, দেখি প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের কীভাবে মূল্যায়ন করেন।
শুধু পেঁয়াজ কিংবা ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের ব্যর্থতা কেন বলি, চালের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতেও সরকার ব্যর্থ। চালের বাজার এখন অস্থির। সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন ধান-চালের বড় বড় মিল মালিকরা। ফলে আমাদের ভরা মৌসুমেও বাজারে চালের দাম না কমে উল্টো প্রতিদিনই বাড়ছে। মধ্যবিত্ত যে চালের ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে মিনিকেট, নাজির শাইল চালের দাম এক সপ্তাহে বেড়েছে কেজিতে ৩ থেকে ৭ টাকা। পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চালের দাম। বিআর-২৮ চালের দাম ৩৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে কেজি প্রতি ৪০ টাকা। আর বিআর-২৯ ৪০ টাকায়, পুরনো স্বর্ণা ৪০ টাকায় উঠেছে। মধ্যবিত্তরা এ চালের ওপরই নির্ভরশীল। আর ৩৫ টাকার নিচে কোনো মোটা চাল নেই। মিল মালিকদের কারসাজিতে সাধারণ মানুষ আজ অসহায়। প্রশ্ন হচ্ছে, মিল মালিকরা এ সাহস পান কোথায়? সরকারের একটা অংশের প্রচ্ছন্ন সমর্থন যদি না থাকে, তাহলে তো দফায় দফায় তারা চালের দাম বাড়াতে পারেন না। এই শীতের মৌসুমে যেখানে বাজারে প্রচুর শাক-সবজির সরবরাহ রয়েছে, সেখানে বৃহস্পতিবার একটা বাঁধাকপির দাম ২০ টাকা, আর ফুলকপি ৩০ টাকা। আমাকে বাজারে যেতে হয়। বাজারের দরদাম সম্পর্কে আমি মোটামুটি জ্ঞাত। প্রতিদিনই বিষয়টি আমার মাথায় খেলে যায়, তাহলে ক্রেতা অধিকার আইন তৈরি হলো কার জন্য? সরকারের কাজটি তাহলে কী? জনগণ ভোট দিয়ে একটি দলকে ক্ষমতায় পাঠিয়েছে। তারা এমপি হয়েছেন। মন্ত্রী হয়েছেন। এমপির সব সুযোগ-সুবিধা তারা নিচ্ছেন। রাষ্ট্র তাদের সব দিচ্ছে। আমজনতার এতে কিছু করার নেই; কিন্তু যার দায়িত্ব বাজার নিয়ন্ত্রণ করা, সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষা করা, তিনি যদি তা করতে না পারেন, তাহলে তার ক্ষমতায় থাকার তো কোনো যুক্তি নেই। আইন আছে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার; কিন্তু সেই আইন কার্যকর করবে কে? সরকারের এ দায় এড়ালে তো হবে না! দুই-একজন মন্ত্রী প্রায়ই বক্তৃতার সময় বিগত চারদলীয় জোট সরকারের তুলনা দেন; কিন্তু চারদলীয় জোট সরকারের প্রথম থেকে শেষ সময় পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কি এ পর্যায়ে ছিল? বাঁধাকপি কি ২০ টাকায় খেতে হয়েছে? এ নিয়ে আমি কোনো তুলনামূলক আলোচনায় যাব না। তবে আমি যা বুঝি, তা হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে চলবে আর সরকার এ ক্ষেত্রে উদাসীন থাকবে, এটা সমর্থনযোগ্য নয়। এর নাম গণতন্ত্রও নয়। সরকারকে অবশ্যই দায়বদ্ধ হতে হবে। বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা হতে পারত। সেখানেও সুযোগ নেই। বিরোধী দল সংসদে যাচ্ছে না। আর অতীতে তারা যখন গেছে, তখন তারা কথা বলতে পারেনি। এই যে গণতন্ত্র, এই গণতন্ত্রকে আমরা কী বলব? লন্ডনের বিখ্যাত ‘দি ইকোনমিস্ট’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্র পর্যালোচনা করেছে। তারা ৪টি ভাগে এই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে ভাগ করেছে। যেমন—‘পূর্ণ গণতন্ত্র’, ‘খুঁতযুক্ত’, ‘হাইব্রিড বা শঙ্কর গণতন্ত্র’ এবং ‘কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা’। বাংলাদেশকে আমরা কোন পর্যায়ে ফেলব। এখানে সরকার আছে। নির্বাচিত সরকার। বিরোধী দলও আছে। বাজারের ওপর সরকারের কর্তৃত্ব নেই। সরকার হয়ে পড়ছে অনেকটা একদলীয়। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে জনগণ ভোট দেয়। সেই ভোটে একটি দল বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে; কিন্তু যে সরকার সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে না, ‘গুড গভর্নেন্স’-এর অভাব যেখানে, সেখানে সেই ব্যবস্থাকেও গণতন্ত্র বলা যায় না। ‘গুড গভর্নেন্স’ আর গণতন্ত্র পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একটি ছাড়া অন্যটি চলে না।

মাদ্রাসার পাঠক্রম পরিবর্তনে সক্রিয় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য



জাহেদ চৌধুরী

সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠক্রম পরিবর্তনে একত্রে কাজ করছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। ‘সামষ্টিক সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলের’ অংশ হিসেবে মাদ্রাসা পাঠক্রমকে প্রভাবিত করতে চায় দেশ দুটি।
উইকিলিকসের ফাঁস করা যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তারবার্তার ভিত্তিতে ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মাদ্রাসার পাঠক্রম পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একত্রে কাজ করছে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ (ডিএফআইডি)। এক তারবার্তায় যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলের বিষয়টি উল্লেখ করেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি। বাংলাদেশে প্রায় ৬৪ হাজার মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার কওমী মাদ্রাসার বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এগুলোকে অনিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসা বলা হয়েছে।
এদিকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ইউরোপসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তোপের মুখে থাকা র্যাবকে যুক্তরাজ্য সরকারের উদ্যোগেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে উইকিলিকস। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক ‘গার্ডিয়ান’ তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদের শিরোনাম করেছে, “বাংলাদেশী ‘ডেথস্কোয়াড’ ট্রেইনড বাই ইউকে গভর্নমেন্ট।” সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম নিয়ে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের কথা
চালাচালিতে লন্ডন সরকারের র্যাবকে প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়টি প্রকাশ্য হয়। অন্য একটি তারবার্তায় মরিয়ার্টি বলেন, যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছেন, ব্রিটিশ পুলিশের বিশেষ বিভাগ ন্যাশনাল পুলিশিং ইমপ্রুভমেন্ট এজেন্সির (এনপিআইএ) কর্মকর্তারা ১৮ মাস ধরে র্যাবকে প্রশিক্ষণ দেয়। অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল সম্পর্কে তাদের প্রশিক্ষন দেয়া হয়।
এছাড়া ফুলবাড়ী কয়লাখনিতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের অনুমতি দিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিয়েছিল বলে উইকিলিকসের ফাঁস করা গোপন নথিতে বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘ভারত-ঘনিষ্ঠতা’ প্রচার বিষয়ে সতর্ক ভারত—উইকিলিকসের ফাঁস করা বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের অপর এক তারবার্তায় একথা বলা হয়েছে।
একটি তারবার্তায় দেখা যায়, মানবাধিকার ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে র্যাবকে প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়নি ওয়াশিংটন। তারা মনে করে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে র্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। ফলে তাদের এ বাহিনীকে অন্য কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের আইন লঙ্ঘন করবে।
র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার সোয়ায়েল গত রাতে আমার দেশ-এর কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমরা জড়িত নই। এ ব্যাপারে বিবিসির কাছে দেয়া বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, যে কোনো ধরনের অপারেশনই আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় করে থাকি। আমাদের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রমাণিত হলে সে ক্ষেত্রে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আমার দেশকে তিনি জানিয়েছেন, উইকিলিকসের তথ্য ও গার্ডিয়ানের রিপোর্ট তিনি দেখেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে র্যাবের প্রশিক্ষণের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বাইরের দেশ থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া নতুন কোনো বিষয় নয়। বিদেশে প্রশিক্ষণে মানবাধিকার রক্ষা করে দায়িত্ব পালন ও ক্রাইম সিন সংক্রান্ত বিষয় তাদের প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে তিনি জানান। উইকিলিকসের ফাঁস করা নথি, গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন, বিবিসি, বিডিনিউজ ও আমার দেশ-এর অনুসন্ধানের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
অনিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসা নিয়ে সচেতন সরকার : শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাদ্রাসা শিক্ষার সিলেবাস পরিবর্তন নিয়ে কথা ওঠে। শিক্ষানীতিতে এর প্রতিফলন ঘটানোর উদ্যোগ নিলে এর প্রতিবাদে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষকরা আন্দোলনেরও নামেন। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে কওমী মাদ্রাসার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তখনকার তার সরকারি বাসভবন যমুনায় বৈঠকও করেন। শিক্ষানীতি নিয়ে ওলামা-মাশায়েখদের মধ্যে এখনও ক্ষোভ রয়েছে। বর্তমান সরকারের ইসলাম ধর্মবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে ওলামা-মাশায়েখরা এখনও সমালোচনায় মুখর। এ নিয়ে আগামী ২৬ ডিসেম্বর তারা দেশব্যাপী হরতালও ডেকেছেন। হরতাল ঠেকানোর জন্য সরকার আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে উকিলিকসের তথ্যের ভিত্তিতে গার্ডিয়ানের রিপোর্ট ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ঢাকায় কওমী মাদ্রসা বোর্ড বেফাকের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি আমার দেশকে জানিয়েছেন, তাদের বোর্ডের অধীনে প্রায় ১৬ হাজার মাদ্রাসা রয়েছে। এবং এর বাইরে অন্য একটি বোর্ডের অধীন আরও প্রায় দেড় হাজার মাদ্রাসা আছে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ১৫ হাজার অনিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসা নিয়ে সচেতন বর্তমান সরকার। এসব মাদ্রাসায় অন্যগুলোর তুলনায় শিক্ষার গড় মান ভালো নয়। মাদ্রাসার বিরুদ্ধে সন্তানদের চরমপন্থী করে তোলার অভিযোগও তুলেছেন কেউ কেউ।
উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতে দেখা যায়, বাংলাদেশের অনিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসাগুলোর জন্য একটি মান পাঠক্রম তৈরি ও প্রয়োগের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কীভাবে দেয়া হবে তা দু’দেশের সমন্বিত পরিকল্পনায় আছে বলে মার্কিন গোপন বার্তায় জানান মরিয়ার্টি।
মাদ্রাসা পাঠক্রম উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইডের দেয়া এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। ডিএফআইডি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে মাদ্রাসার অর্থের উত্স তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সরকার, উল্লেখ করে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরির মাদ্রাসায় ঘাঁটি গাড়ছে—এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।
র্যাবকে ট্রেনিং দিয়েছে যুক্তরাজ্য : ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ যাত্রা শুরু করে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্রসফায়ার/বন্দুকযুদ্ধ/এনকাউন্টারের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূতভাবে প্রায় ১ হাজার মানুষ ‘হত্যা’র অভিযোগ রয়েছে এ বাহিনীর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত যেমন রয়েছে, তেমনি নিরপরাধ লোকও রয়েছে বলে অভিযোগ। র্যাবের পক্ষ থেকে গত মার্চ মাসে জানানো হয়, বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের মোট সংখ্যা ৬২২। গত ক’মাসে গড়ে ২৫-৩০টি ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে। দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো র্যাবের কার্যক্রমের বিরোধিতা করে আসছে। দেশের উচ্চ আদালতও ‘ক্রসফায়ারের নামে মানুষ হত্যা বন্ধে’ র্যাবের প্রতি নির্দেশ দেয়।
ফাঁস হওয়া তারবার্তা থেকে স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য উভয় দেশই বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম শক্তিশালী করতে চায়। এমনকি র্যাবের কার্যক্রমের প্রশংসাও করেছেন দেশ দুটির কর্মকর্তারা। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি তারবার্তায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টিকে র্যাবের ভূয়সী প্রশংসা করতে দেখা যায়। মরিয়ার্টি বলেন, র্যাব এক সময়ে বাংলাদেশী এফবিআইয়ে (যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা) পরিণত হবে।
অন্য একটি তারবার্তায় মরিয়ার্টি বলেন, যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছেন, ব্রিটিশ পুলিশের বিশেষ বিভাগ ন্যাশনাল পুলিশিং ইমপ্রুভমেন্ট এজেন্সির (এনপিআইএ) কর্মকর্তারা ১৮ মাস ধরে র্যাবকে প্রশিক্ষণ দেয়। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা গার্ডিয়ানকে বলেন, মানবাধিকার রক্ষা বিষয়টি ছিল তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়। তবে এ বিষয়ে র্যাবের প্রশিক্ষণ বিষয়ক প্রধান মেসবাহউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি গার্ডিয়ানকে বলেন, গত গ্রীষ্মে দায়িত্ব নেয়ার পর মানবাধিকার বিষয়ে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণের তথ্য তার জানা নেই। ফাঁস হওয়া তারবার্তা অনুযায়ী, তিন বছর আগে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি গত অক্টোবরেও এ প্রশিক্ষণ হয়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, র্যাবের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউমেন রাইটস ওয়াচ র্যাবকে ‘ডেথ স্কোয়াড’ নামে অভিহিত করে আসছে। র্যাবের সমালোচনায় মুখর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও। তবে প্রশিক্ষণে সহায়তার বিষয়ে যুক্তরাজ্যে পররাষ্ট্র দফতরের বক্তব্য, তাদের দেশের আইন মেনেই সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
ফুলবাড়ী নিয়ে চাপ যুক্তরাষ্ট্রের : ফুলবাড়ী কয়লাখনিতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের অনুমতি দিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিয়েছিল বলে উইকিলিকসের ফাঁস করা গোপন নথিতে বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহীর সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি। বৈঠকে বৃটিশ প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল কোল মাইনিং ম্যানেজমেন্টকে ফুলবাড়ীতে কয়লা উত্তোলনের অনুমতি দিতে বলেন মরিয়ার্টি।
২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ীতে এশিয়া এনার্জির কয়লা প্রকল্পের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে সেনাদের গুলিতে তিনজন নিহত ও অসংখ্য আহত হয়। এশিয়া এনার্জিরই পরিবর্তিত নাম গ্লোবাল কোল ম্যানেজম্যান্ট।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের জুলাই মাসে পাঠানো এক তারবার্তায় মরিয়ার্টি জানান, ‘ফুলবাড়ী কয়লা খনিতে সম্পৃক্ত এশিয়া এনার্জির (পরবর্তীতে গ্লোবাল কোল মাইনিং) ৬০ ভাগ বিনিয়োগ মার্কিন’।
মরিয়ার্টি বলেন, এশিয়া এনার্জির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এ প্রকল্প সরকারের অনুমোদন পাবে বলে তারা আশাবাদী।
হাসিনার ভারত-ঘনিষ্ঠতা প্রচার নিয়ে সতর্ক ভারত : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘ভারত-ঘনিষ্ঠতা’ প্রচার বিষয়ে সতর্ক ভারত-উইকিলিকসের ফাঁস করা বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এক তারবার্তায় একথা বলা হয়েছে।
২০০৯ সালের ১৪ জানুয়ারি মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি বাংলাদেশে নিয়ুক্ত তত্কালীন ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য উদ্ধৃত করে এক তারবার্তায় বলেন, পিনাক বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যৌথ টাস্কফোর্স গঠনে হাসিনার প্রস্তাবকে স্বাগত জানাবেন (ভারতের) পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি। এ বিষয়ে ভারত দ্বিপাক্ষিক সহযোতািমূলক কর্মকাণ্ড চায়। তবে ভারত বোঝে যে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক টাস্কফোর্স গঠনে আগ্রহী হতে পারে। এর ফলে হাসিনার বিরুদ্ধে ‘ভারত-ঘনিষ্ঠতা’র যে প্রচার সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারবেন হাসিনা।
পিনাকের এ বক্তব্য উল্লেখ করে মরিয়ার্টি লেখেন, ভারত প্রায়ই দাবি করে, আন্তর্জাতিক ইসলামী জঙ্গিরা বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে; প্রায়ই বাংলাদেশের দুর্বল সীমান্ত পার হয়ে ভারতে ঢুকে বোমা ও অন্যান্য হামলা চালায়।
বাংলাদেশকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহারকারী আসামের ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্টসহ ভারতের চরমপন্থী গ্রুপগুলো দমনে ঢাকাকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে আসছে নয়াদিল্লি।
এ বছর ৮ ফেব্রুয়ারির আগে পাঠানো ওই বার্তায় বলা হয়, জেমস এফ মরিয়ার্টিকে পিনাক চক্রবর্তী জানান, ৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির ঢাকা সফরের পরিকল্পনা রয়েছে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনাই হবে ওই সফরের মূল আলোচ্য বিষয়। তিনি জানান, নিরাপত্তা সহযোগিতার উন্নয়নই হবে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে ভারতের কাজের ক্ষেত্রে প্রধান গুরুত্বের বিষয়।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। ঐতিহাসিকভাবে নয়াদিল্লির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক রয়েছে বলে তারবার্তায় উল্লেখ করেন মরিয়ার্টি।
নতুন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে নিরাপত্তা ও অন্যান্য ইস্যুতে ভারত পারস্পরিক সহযোতািমূলক সম্পর্কের উন্নয়ন চায় বলে জানান পিনাক। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর আঞ্চলিক টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাবে ভারতের সমর্থন রয়েছে বলে জানান হাইকমিশনার। কিন্তু বহুপাক্ষিক সহযোগিতার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ব্যাপারে জোর দেন তিনি

Tuesday 28 December 2010

উইকিলিকসের মার্কিন নথি ফাঁসে অস্বস্তিতে সরকার

ইলিয়াস খান

বাংলাদেশ বিষয়ে উইকিলিকসের প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য নিয়ে সরকার অস্বস্তিতে পড়েছে। একই সঙ্গে সরকার বিব্রত ইসলামী শিক্ষার পাঠক্রম দুই অনৈসলামিক দেশকে দিয়ে তৈরির সুযোগদান, র্যাবের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বাহিনীকে যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষণ দেয়াসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর ঘটনা জনসমক্ষে আসায়। এ বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকার নেতারা বলেছেন, উইকিলিকস শুধু ওয়াশিংটনের নয়, বাংলাদেশ সরকারের মুখোশও উন্মোচন করে দিয়েছে। এ সরকারের ইসলামবিরোধিতা এবং ভারত তোষণনীতি এখন সর্বজনবিদিত।
উইকিলিকসের ফাঁস করা যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তারবার্তার ভিত্তিতে ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠক্রম পরিবর্তনে একত্রে কাজ করছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। ‘সামষ্টিক সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলের’ অংশ হিসেবে মাদ্রাসা পাঠক্রমকে প্রভাবিত করতে চায় দেশ দুটি।
মাদ্রাসার পাঠক্রম পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একত্রে কাজ করছে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ (ডিএফআইডি)। এক তারবার্তায় যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলের বিষয়টি উল্লেখ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি।
উইকিলিকস জানিয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ইউরোপসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তোপের মুখে থাকা র্যাবকে যুক্তরাজ্য সরকারের উদ্যোগেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ খবরটিও প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক ‘গার্ডিয়ান’। তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে, “বাংলাদেশী ‘ডেথস্কোয়াড’ ট্রেইনড বাই ইউকে গভর্নমেন্ট।” সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম নিয়ে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের কথা চালাচালিতে যুক্তরাজ্য সরকারের র্যাবকে প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ে। অন্য একটি তারবার্তায় মরিয়ার্টি বলেন, যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছেন, ব্রিটিশ পুলিশের বিশেষ বিভাগ ন্যাশনাল পুলিশিং ইমপ্রুভমেন্ট এজেন্সির (এনপিআইএ) কর্মকর্তারা ১৮ মাস ধরে র্যাবকে প্রশিক্ষণ দেয়। অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল সম্পর্কেও তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
এ ছাড়া ফুলবাড়ী কয়লাখনিতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের অনুমতি দিতে বাংলাদেশ সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিয়েছিল বলে উইকিলিকসের গোপন নথিতে বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘ভারত-ঘনিষ্ঠতা’ প্রচার বিষয়ে সতর্ক ভারত—উইকিলিকসের ফাঁস করা এ তথ্য পাওয়া গেছে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের অন্য এক তারবার্তা থেকে।
জানা গেছে, সরকার মূলত অস্বস্তিতে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠক্রম তৈরির অনুমতি দেয়া এবং শেখ হাসিনার ভারত-ঘনিষ্ঠতার খবর প্রকাশ হয়ে পড়ায়।
২০০৯ সালের ১৪ জানুয়ারি মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি বাংলাদেশে নিযুক্ত তত্কালীন ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে এক তারবার্তায় জনান, পিনাক বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যৌথ টাস্কফোর্স গঠনে হাসিনার প্রস্তাবকে স্বাগত জানাবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি। এ বিষয়ে ভারত দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড চায়। তবে ভারত বোঝে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক টাস্কফোর্স গঠনে আগ্রহী হতে পারে। এর ফলে হাসিনার বিরুদ্ধে ‘ভারত-ঘনিষ্ঠতা’র যে প্রচারনা সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারবেন হাসিনা।
পিনাকের এ বক্তব্য উল্লেখ করে মরিয়ার্টি লিখেন, ভারত প্রায়ই দাবি করে, আন্তর্জাতিক ইসলামী জঙ্গিরা বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে; প্রায়ই বাংলাদেশের দুর্বল সীমান্ত পার হয়ে ভারতে ঢুকে বোমা ও অন্য হামলা চালায়।
বাংলাদেশকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহারকারী আসামের ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্টসহ ভারতের স্বাধীনতাকামী গ্রুপগুলো দমনে ঢাকাকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে আসছে নয়াদিল্লি।
চলতি বছর ৮ ফেব্রুয়ারির আগে পাঠানো ওই বার্তায় বলা হয়, জেমস এফ মরিয়ার্টিকে পিনাক চক্রবর্তী জানান, ৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির ঢাকা সফরের পরিকল্পনা রয়েছে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনাই হবে সফরের মূল আলোচ্য বিষয়। তিনি জানান, নিরাপত্তা সহযোগিতার উন্নয়নই হবে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে ভারতের কাজের ক্ষেত্রে প্রধান গুরুত্বের বিষয়।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। ঐতিহাসিকভাবে নয়াদিল্লির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক রয়েছে বলে তারবার্তায় উল্লেখ করেন মরিয়ার্টি।
প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকার ইসলামবিরোধী হিসেবে ওলামা-মাশায়েখের কাছে পরিচিত। উইকিলিকস যে তথ্য ফাঁস করেছে তাতে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হলো। একই সঙ্গে মহাজোটের মূল শরিক আওয়ামী লীগ বরাবরই ভারতের তাঁবেদার দল হিসেবে পরিচিত। উইকিলিকস প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ বিষয়ে উইকিলিকস প্রকাশিত তথ্য নিয়ে কথা হয় দেশের কয়েক বিশিষ্টজনের সঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, এ দেশে দীর্ঘদিন যারা মাদ্রাসা পাঠক্রম তৈরি করে আসছেন তারাই প্রয়োজনে তা পরিবর্তন করবেন। বিদেশিরা কেন এখানে হাত দেবেন। তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা তো এক-দুই বছর ধরে চলছে না, ৭০০ বছর ধরে চলে আসছে। মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিকায়নের কথা বলা হচ্ছে। ভালো কথা। মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠক্রমে যেমন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ইত্যাদি থাকবে তেমনি নীতিনৈতিকতার বিষয়টিও থাকা অপরিহার্য। লোকের এমন কী অভাব পড়েছে যে বিদেশিদের পাঠক্রম পরিবর্তন করে দিতে হবে। সরকার যদি এই সুযোগ দিয়ে থাকে তাহলে তা দুর্ভাগ্যজনক।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের মহাসচিব অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান র্যাবকে প্রশিক্ষণ দেয়ায় যুক্তরাজ্যের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশ এ ধরনের মানবাধিকারবিরোধী সংগঠনকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে না। প্রশিক্ষণ দেয়ার আগে তাদের অবশ্যই খোঁজ নেয়া উচিত ছিল এই বাহিনী মানবাধিকার রক্ষায় কতটা কাজ করছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরপরই তত্কালীন সরকার জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠনের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় র্যাব গঠিত হয়েছে। এদের লাগাম অবশ্যই টেনে ধরতে হবে।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ বলেন, সরকার ঘোষিত ২০১০-এর শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন হলে ইসলামী শিক্ষা বলতে আর কিছু থাকবে না। ইমান-আকিদার ওপর আঘাত আসবে। তিনি বলেন, মুসলিম সংস্কৃতি ধ্বংস করার জন্যই সরকারের সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠক্রম তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে। এটা খুব হাস্যকর ব্যাপার। ইসলামবিরোধী দেশগুলো ইসলামী শিক্ষার পাঠক্রম তৈরি করতে চাচ্ছে। উইকিলিকসের এই তথ্য প্রকাশের মধ্য দিয়ে সরকারের ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র উন্মোচিত হলো। এ দেশের ইসলামপ্রিয় জনগণ যে কোনো মূল্যে এই চক্রান্ত রুখে দাঁড়াবে।

প্রধানমন্ত্রীকে মার্কিন সিনেটরের চিঠি : যুদ্ধাপরাধ আইনে স্বচ্ছ বিচারের বিশ্বস্বীকৃত মানদণ্ড অনুপস্থিত

স্টাফ রিপোর্টার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত সিনেটর জন বুজম্যান যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি লিখেছেন। গত ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রেরিত এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ (আদালত) অ্যাক্ট ১৯৭৩ (ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট অব ১৯৭৩) বিষয়ে এ চিঠি লিখছি। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচারের যে উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে সে বিষয়ে আমার সমানুভূতি আছে। আপনার সরকার অতীতের এ অপরাধের বিচার সম্পন্ন করে যে নজির স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে তার সঙ্গে আমি একমত। সে লক্ষ্যে বিশেষ আদালত স্থাপন, বিচারক প্যানেল গঠন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ (আদালত) অ্যাক্টকে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে বিতর্কিত কিছু ধারাও পরিবর্তন করা হয়েছে মর্মে জেনেছি আমি।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বচ্ছ বিচারের যে মানদণ্ড রয়েছে তা বাংলাদেশের আইনটিতে অনুপস্থিত রয়েছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আইনটির বিষয়ে সবচেয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে যেসব সংস্থা থেকে সেগুলো হল—হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এশিয়া বিভাগ, দ্য ওয়ার ক্রাইমস কমিশন অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন, দ্য ওয়ার ক্রাইমস প্রজেক্ট এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না এবং এই আইনের মাধ্যমে তাদের যে সাজা প্রদান করা হবে তার বিরুদ্ধেও তারা কোনো প্রতিকার চাইতে পারবে না—বিদ্যমান সংবিধানে যাই থাকুক না কেন। এ জাতীয় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ (আদালত) আইনে।
অন্যান্য অপরাধ আইনের ক্ষেত্রে যে নিয়ম প্রযোজ্য তা এই অ্যাক্টের ক্ষেত্রে রাখা হয়নি। এ কারণে এ আইনটির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগও রাখা হয়নি যা সংবিধানে স্বীকৃত অধিকার হরণের মাধ্যমে করা হয়েছে। আইনের চোখে সবাই সমান বলে যে মৌলিক বিধান আছে তাও এখানে খর্ব করা হয়েছে। বিচারকে আন্তর্জাতিক মানের এবং স্বচ্ছ করার জন্য এ আইনের সংশোধন খুবই জরুরি। ওই আইন এবং বিচারকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না মর্মে যে সাংবিধানিক সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে তা-ই আইনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ বিচারের পরিপন্থী করে তুলেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির নীরব থাকা, নিজেকে নির্দোষ ঘোষণার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং সাক্ষীর দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে কোনো কিছু বলা হয়নি আইনে। আইনটি যেহেতু যুগোস্লাভিয়া এবং রুয়ান্ডা যুদ্ধাপরাধ আদালত গঠনের (এ আদালতের ধারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন হিসেবে স্বীকৃত) আগে প্রণীত হয়েছে তাই ২০০২ সালে প্রণীত রোম সংবিধি অনুযায়ী আইনটি সংস্কার করা উচিত। বাংলাদেশও রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। প্রয়োজনীয় সংশোধন ছাড়া এই আইনের মাধ্যমে বিচার কাজ চালিয়ে গেলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিতর্ক বাড়বে। উদাহরণস্বরূপ বর্তমান আইন অনুযায়ী যিনি সাধারণ সামরিক আদালতের বিচারক হওয়ার যোগ্য তিনি ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বা মেম্বার হতে পারবেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিধান অনুযায়ী সামরিক আদালতের বিচারকরা কেবল সামরিক বাহিনী সংক্রান্ত বিষয়েই বিচার করতে পারেন। উপরন্তু, এই আইনে রয়েছে ট্রাইব্যুনালের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা যাবে না এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালের কোনো ধারার বিরুদ্ধেও কোনো চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন না। আমার আশঙ্কা, আইনটিকে সংশোধন করে যদি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা না হয় তাহলে এ আইনের মাধ্যমে বিচার কাজ পরিচালনা করা হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির মানবাধিকার রক্ষা অসম্ভব হবে। আইনটি বর্তমানে যে অবস্থায় আছে তাতে দায়মুক্তি থেকে বের হয়ে আসার যে উদ্যোগ আপনার সরকার নিয়েছে তা যেমন চাপা পড়ে যাবে তেমনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এ বার্তা ছড়িয়ে পড়বে যে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই এ আয়োজন করা হচ্ছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ মোতাবেক ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত করার মতো ক্ষুদ্র বিষয়ের সঙ্গে জড়িয়ে জামায়াতের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব অভিযোগে গ্রেফতার করে তাদেরকে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এতে করে আইনটি রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। যেহেতু আপনার সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ দলের একনিষ্ঠ মিত্র জামায়াত। তাই জামায়াতকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে প্রধান প্রতিপক্ষকে দুর্বল করাই হলো ট্রাইব্যুনালের প্রথম কাজ। এ বিশ্বাসই সমাজে এখন বিদ্যমান। আইনটি যথাযথ সংশোধন করে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির জন্য একটি নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত বিচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আপনার সরকার ন্যায় বিচারকে সমুন্নত রাখবে এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার উদ্যোগকে সামনে এগিয়ে নেবে বলে আশা করি। যুদ্ধাপরাধ আদালত গঠনের উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক বিচার অঙ্গনের অনেকেই স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার অনুষ্ঠানে অনাগ্রহের বিষয়ে তারা সবাই উদ্বিগ্ন যে, এর মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হতে পারে। আমি আশা করি আপনার সরকার রোম সংবিধি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ধারা মোতাবেক আইনটি সংশোধনের যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আইনটি যথোপযুক্ত সংশোধন করে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় আনার বিষয়ে আপনার সরকার উদ্যোগ নিলে আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।