Wednesday 31 March 2010

সারা দেশেই আ. লীগে বিশৃঙ্খলা স্বীকার করলেন সৈয়দ আশরাফ

পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য ও পাভেল হায়দার চৌধুরী Kalerkantho ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ চৈত্র ১৪১৬, ১৫ রবিউস সানি ১৪৩১, ১ এপ্রিল ২০১০

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা আগামী মাস থেকে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করবেন। রাজধানীসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিসহ ক্ষমতার দাপট দেখানোর জোরালো অভিযোগ রয়েছে। অন্তর্দলীয় কোন্দল বা সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও হরহামেশা ঘটছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলে তাঁদের নিয়ন্ত্রণহীনতার কথা স্বীকার করে বলেছেন, নিয়মিত কমিটি গঠন হয় না বলেই নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের ঘটনা বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার বাইরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
দলের বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ ক্ষমতাসীন দলের সব সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সূত্র মতে, কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত এসব সংগঠনের মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে তিন-চার বছর আগে। কোনো কোনো জেলায় ৮-১০ বছর সম্মেলন হয় না। আর এর পেছনে রয়েছে দলের নেতৃত্বে আসার প্রতি অতি আগ্রহ।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সম্মেলন না হওয়ার ফলেই সারা দেশে সংগঠনের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা দিচ্ছে। সমস্যা নিরসনে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা আগামী মাস থেকে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রতি সপ্তাহে বৈঠক করবেন। সৈয়দ আশরাফ বলেন, নেত্রী আগে প্রায় ৪০টার মতো জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তখন যাঁরা বাদ পড়েছেন তাঁদের সঙ্গে প্রথমে বসবেন। এ জন্য গণভবনে নতুন জায়গাও প্রস্তুত করা হয়েছে। কবে থেকে কাউন্সিল হবে_এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলেন, জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকা হবে। তারপর তারিখ নির্ধারণ করে প্রথমে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা সম্মেলন করে পরে জেলা সম্মেলন করা হবে।'
বড় নেতাদের বাদ দিয়ে তারুণ্য-নির্ভর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয় আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে। কিন্তু সংগঠনকে চাঙা করার ক্ষেত্রে কোনো চমক দেখাতে পারেনি বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিছু দিবসভিত্তিক অনুষ্ঠান, কেন্দ্রীয় কমিটির সভা বা দলীয় সভা-সমাবেশে বক্তৃতা বা কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়া বাস্তবে সার্বক্ষণিক সাংগঠনিক কাজে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নেই বললেই চলে। এ ক্ষেত্রে এসব নেতার অভিযোগের তীর দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দিকেও।
দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুল জলিল সম্প্রতি একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে মন্তব্য করেছেন এ ব্যাপারে। তাঁর মতে, আওয়ামী লীগের মতো একটা বড় দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা সৈয়দ আশরাফের নেই। দেশব্যাপী দলের অভ্যন্তরে কোন্দল ও খুনোখুনির জন্যও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন আবদুল জলিল। তিনি বিভিন্ন ইউনিটের নেতাদের অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা টেনে বলেন, সাধারণ সম্পাদকের কোনো ভূমিকা এ ক্ষেত্রে লক্ষ করা যাচ্ছে না। সংগঠনের মধ্যে সাধারণ সম্পাদকের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই দল চালাতে ব্যর্থ সৈয়দ আশরাফ।
এ ছাড়া প্রায় সব জেলায়ই তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সঙ্গে স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যানদের সৃষ্টি হয়েছে বিশাল দূরত্ব। তাঁদের কর্মকাণ্ডের মধ্যেও নেই সমন্বয়। গত ৩০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতারা শেখ হাসিনার সামনেই দলীয় এমপিদের বিরুদ্ধে তাঁদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন। তাঁরা দলীয় সভানেত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছিলেন, এমপি না তৃণমূল নেতারা_কারা দলকে নিয়ন্ত্রণ করবে, তা আগে নির্ধারণ করতে হবে। শেখ হাসিনা বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সদস্যদের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটেনি।
এরই মধ্যে বেশ কিছু লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গত ১৮ মার্চ থেকে দেশব্যাপী সফর শুরু করেছে। কিন্তু বাস্তবে এ সফরে কোনো লাভ হচ্ছে না বলে মনে করছেন অনেক তৃণমূল নেতা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সফরে জেলাপর্যায়ে জনসভা হলেও উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড বা গ্রামপর্যায়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব-কোন্দল মীমাংসায় এ সফর তেমন কাজে আসছে না বলেই মন্তব্য করেন তৃণমূল নেতারা।
নীলফামারীতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১৮ মার্চ। কিন্তু সেখানে জনসভার আগে কোনো বৈঠক হয়নি বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক। তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বৈঠক হয়নি। সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনাও ছিল না আমাদের প্রতি। তাঁরা শুধু জনসভায় বক্তৃতা করেছেন।'
অবশ্য রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী তাঁর জেলার সফরকে সম্পূর্ণ সফল দাবি করেছেন। তাঁর মতে, দল ক্ষমতায় আসার ১৫ মাস পর সব এমপি, জেলা ও থানার নেতারা এক মঞ্চে উঠে বক্তব্য রাখাটা কম নয়। তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় নেতারা জনসভায় যে বক্তৃতা দিয়েছেন সেটাই আমাদের প্রতি কেন্দ্রের নির্দেশনা।'
তবে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী তৃণমূলের এই দাবি মানতে নারাজ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়তো হচ্ছে না। তবে যাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে, তাদেরকেই ভবিষ্যতের করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সৈয়দ আশরাফ কালের কণ্ঠকে বলেন, সদস্য সংগ্রহ অভিযানকে শক্তিশালী করাই সাংগঠনিক সফরের মূল উদ্দেশ্য।

সরকারের ইশারায় চলছে দুদক : সরকারের কারও বিরুদ্ধে হুট করে কিছু করা ঠিক হবে না : চেয়ারম্যান



অলিউল্লাহ নোমান
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিরোধী দলকে দলনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আইনে স্বাধীন বলা হলেও সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও ইশারায় পরিচালিত হচ্ছে দুদক। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও দুদক নীরব। এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের মন্তব্য হচ্ছে, সরকারের কারও বিরুদ্ধে হুট করে কিছু করা ঠিক হবে না। কাউকে জোর করে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাই না। বিনা টেন্ডারে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ৩৭০ কোটি টাকার কাজ বিদেশি কোম্পানিকে বরাদ্দ দেয়া, মত্স্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অধীনস্থ পরিদফতরে ডিজির দুর্নীতির অভিযোগ, নিয়ম লঙ্ঘন করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের ব্যবহার—এর কিছুই দুদকের নোটিশে নেই।
দুদক চেয়ারম্যানের ভাষায় সরকারের কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দুদকে নেই। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্যভিত্তিক অভিযোগ পেলে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। গত মঙ্গলবার সেগুন বাগিচায় তার কার্যালয়ে আমার দেশ-এর সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
এদিকে দুদক বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের অনেক নেতার বিরুদ্ধে একের পর এক অনুসন্ধান, তদন্ত, মামলা দায়ের ও চার্জশিট দিয়ে চলছে। বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা যেসব মামলা হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের নির্দেশে স্থগিত আছে সেগুলো পুনরায় শুনানির উদ্যোগও নিয়েছে দুদক। নতুন করে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ভৈরব সেতু নির্মাণে অনিয়মের কথিত অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য বার বার চিঠি দিচ্ছে দুদক। জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের প্রথম সারির নেতা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপি নেতা হাফিজ ইব্রাহিমসহ অনেকের বিরুদ্ধে দুদক বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত করছে। দুদকের তদন্ত-অনুসন্ধান থেকে বাদ নেই দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানও। তার বিরুদ্ধেও বেনামি অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অনুসন্ধান করছে।
দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম রহমান দায়িত্ব গ্রহণের আগে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে বর্তমান সরকার কর্তৃক নিয়োগ পান। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব ছিলেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বর্তমান পদে নিয়োগ লাভের পর ২০০৯ সালে ৪৭৫টি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে ২৩৪টি। এই চার্জশিট দাখিলের মধ্যে রয়েছে বেগম খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা, আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের কথিত অভিযোগে দায়ের করা মামলাসহ বিরোধী দলের অনেক নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা। গত ১৩ মাসে সরকারের অনেক মন্ত্রী ও উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও দুদক নীরব। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত এসব অভিযোগ আমলে না নিলেও বেনামি অভিযোগ আমলে নিয়ে সরকারের সমালোচনাকারীদের নানাভাবে হয়রানি করছে দুদক।
দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলছেন সরকারের মন্ত্রী ও এমপি কারও বিরুদ্ধে দুদকের কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক তদন্ত-অনুসন্ধান চালায় বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান। গত মঙ্গলবার বিকালে দুদক কার্যালয়ে চেয়ারম্যানের দফতরে আমার দেশ-এর প্রশ্নের জবাবে গোলাম রহমান বলেন, বিরোধী দল থেকে দুর্নীতির অভিযোগ শুধু মিডিয়ায় বললেই চলবে না। ঢালাওভাবে দুর্নীতির অভিযোগ করলেই হবে না। সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তসহ দুদকের কাছে সরকারের কোনো মন্ত্রী বা কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করা হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। তবে সরকারের কারও বিরুদ্ধে হুট করে কিছু করা ঠিক হবে না। কাউকে জোর করে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতেও চাই না। দুদক শুধু বিরোধী দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত-অনুসন্ধান ও মামলা দায়ের করছে এই অভিযোগ সত্য নয় উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এটি হলে ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর হাইকোর্ট বিভাগে মামলায় জয়ী হওয়ার পর দুদক আপিল করত না। দুদকের মামলায় আদালতে আপত্তির কারণে সরকারি দলের নেতা ডা. এইচবিএম ইকবালকে কারাগারে যেতে হয়েছে। কিন্তু এগুলো হচ্ছে জরুরি অবস্থার সরকারের সময়ে দায়ের করা মামলা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুদক সরকারি দলের কারও বিরুদ্ধে মামলা করেছে এমন নজির তিনি দেখাতে পারেননি।
বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিল, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করা হবে। বর্তমান তদন্ত-অনুসন্ধান ও মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে দুদক সরকারের একটি আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে গোলাম রহমান বলেন, দুদক আইন সংশোধনীর জন্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছিল এতে অনেক জায়গায় আপত্তি দেয়া হয়েছে। সরকারের প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলোর আপত্তিকর জায়গাগুলোতে দুদকের নিজস্ব অভিমত দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আশা করছি কেবিনেটে এই অভিমতগুলোসহ আইনের খসড়া সংশোধনীর প্রস্তাবনাটি উপস্থাপন করা হবে। এছাড়া দুদক নিজে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাখে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুদকে যারা আসেন তারা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে নয়, সরকারের মনোনীত ব্যক্তি হিসেবে দুদকে নিয়োগ পান। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে জাতীয় সংসদে প্রণীত আইনের দ্বারাই দুদক পরিচালিত হয় বলে উল্লেখ করেন দুদক চেয়ারম্যান।
দুদক প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত-অনুসন্ধান এবং সম্পদের হিসাব চাইছে। কিন্তু বর্তমান সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সংসদ সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উত্স প্রতি বছর জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। সরকারি দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের এই প্রতিশ্রুতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের মন্ত্রী, এমপিদের সম্পদের হিসাব চাওয়ার এখতিয়ার দুদকের নেই। এই প্রতিশ্রুতির বিষয়ে ভালো জবাব দিতে পারবেন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও সরকারির দলের সাধারণ সম্পাদক। তাদের জিজ্ঞাসা করুন। অথবা নির্বাচনী ইশতেহারে প্রকাশিত প্রতিশ্রুতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের করণীয় কিছু থাকলে তারা করতে পারেন বলে উল্লেখ করেন দুদক চেয়ারম্যান।
অপর দিকে দুদকের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী দুদক এখনও তদন্ত-অনুসন্ধান এবং মামলা দায়েরের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। মইন উ আহমদের নিয়ন্ত্রিত জরুরি অবস্থার সরকারের সময়ও দুদক চলত তাদের ইশারা এবং নির্দেশে। সূত্রটি জানায়, দুদকের অভিযোগের মূল ভিত্তি হচ্ছে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনা।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/01/25335

Sunday 28 March 2010

আতাউস সামাদের প্রতিবাদ : আমার সম্পর্কে সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য সঠিক নয়

স্টাফ রিপোর্টার
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গত শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দলের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদের একটি লেখা নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন গতকাল এক বিবৃতিতে আতাউস সামাদ তার উত্তর দিয়েছেন। সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য সঠিক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, কোনো দল বা কোনো গোষ্ঠীর সমর্থনের কথা চিন্তা করে তিনি বা তার মতো কোনো পেশাদার সাংবাদিক লেখেন না। দেশের মানুষ এই মুহূর্তে কী ভাবছেন, কী চাইছেন, কেমন আছেন এ বাস্তবতার আলোকেই তারা লিখে থাকেন।
গতকাল ওই বিবৃতিতে আতাউস সামাদ বলেন, আমার একটি লেখা সম্পর্কে আজ (২৮ মার্চ, রোববার) আমার দেশ পত্রিকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাহেবের কিছু মন্তব্য পড়লাম। তার মন্তব্যগুলো সঠিক নয়। যেমন—তিনি আমাকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাংবাদিক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আমার লেখা কোন দল বা কোন গোষ্ঠী সমর্থন করবে, তা চিন্তা করে কিন্তু আমি লিখি না। কোনো পেশাদার সাংবাদিকই তা করেন না। দেশের মানুষ এই মুহূর্তে কী ভাবছেন, কী চাইছেন, কেমন আছেন বাস্তবতার আলোকে আমরা তাই লিখি। দ্বিতীয়ত আমি এখন যে চারটি বাংলা দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লিখছি সেগুলোর সম্পাদকদের তিনজনেরই বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। বস্তুতপক্ষে তাদের একজন মহাজোটের অংশীদার জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দু’জনের সুসম্পর্ক বিদ্যমান। বাকি একজনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক আছে। তবে তিনি এ দলের কোনো পদে নেই। আমি সৌভাগ্যবান যে, দেশের প্রায় সব পত্রিকার সম্পাদকই আমার লেখাকে ছাপানোর যোগ্য মনে করেন। যেমন—বিএনপি’র ঘোর সমালোচক এবং আওয়ামী লীগের নিখাদ সমর্থক দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক তাদের স্বাধীনতা দিবস সংখ্যায় আমার লেখা প্রকাশ করেছেন। তৃতীয়ত আমার যে লেখাটি সম্পর্কে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মন্তব্য করেছেন তা গত শনিবার কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে ‘তবু একাত্তরের অপরাধীদের বিচার হোক’ এই শিরোনামে। আমি বরাবরই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছি এবং ১৯৯২তে এ বিষয়ে আমি শহীদ জননী মিসেস জাহানারা ইমামকে সহযোগিতাও করেছি। সে সময় বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন আমাকে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৯৩’ বুঝিয়ে দিলে আমি তার (ড. কামাল হোসেন) কাছ থেকে ওই আইনের কপি চেয়ে নিয়ে মিসেস ইমামকে পৌঁছে দিই। কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত আমার আলোচ্য লেখায়ও আমি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সমর্থন করেছি এবং এর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগবে বলে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যে মন্তব্য করেছেন, আমি আমার বিশ্লেষণ দিয়ে তা সমর্থন করেছি। লেখাটির একেবারে শেষ প্যারাগ্রাফে আমি দেশের বিরাজমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে তার প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছি, ‘এর সমাধান আশু প্রয়োজন’। কিন্তু আমি এই কর্তব্য পালনকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পূর্বশর্ত হিসেবে কোথাও উল্লেখ করিনি, এমন কী ইঙ্গিতও করিনি। আমার মনে হয়, মাননীয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আমার আলোচ্য লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়েননি। ফলে তিনি নিজেও ভুল করেছেন এবং তার শ্রোতাদেরকে বিভ্রান্ত করেছেন।
তবে আমি আজকে এই সুযোগে বলব যে, একটা সরকারের অনেক ভালো কাজ ম্লান হয়ে যেতে পারে একটিমাত্র ব্যর্থতা বা ভুলের জন্য। সেদিক থেকে বর্তমান সরকার নিজের মঙ্গল করবেন যদি পক্ষপাতহীনভাবে এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির লাগাম টেনে ধরেন।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/29/24897

দেশে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই : শওকত মাহমুদ

চাঁদপুর (দক্ষিণ) প্রতিনিধি
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেছেন, দেশে আজ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। পদে পদে বিপন্ন হচ্ছে মানবতা। প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে স্বাধীন সাংবাদিকতায়। সাংবাদিকরা জনমতের প্রতিনিধি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাংবাদিকদের অবদান অনেক। সাংবাদিকদের রোখার চেষ্টা মানেই জনমতকে অসম্মান করা।
গতকাল বিকালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) চাঁদপুর জেলা শাখা কর্তৃক স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ৫ দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উত্সবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চাঁদপুর শহরের জেএম সেনগুপ্ত রোডে মুনিরা ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা জাসাস সভাপতি গোলাম মোস্তফা রতন।
শওকত মাহমুদ বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার হচ্ছে। তবে মিথ্যাচার দিয়ে প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করা যাবে না। স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান যে স্বাধীনতার ঘোষক—তা সেক্টর কমান্ডারদের বক্তব্যে প্রমাণিত। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় লাখ লাখ মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধীদের বিচারের নামে যেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কিংবা নিরপরাধ রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানি করা না হয়। উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণসহ বিচার স্বচ্ছ হতে হবে।
সাংস্কৃতিক উত্সবের সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আঃ হামিদ মাস্টার, জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোতাহার হোসেন পাটওয়ারী, মোস্তফা খান সফরী, জাসাস চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হারুন আল রশীদ।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/29/24800

Saturday 27 March 2010

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি—০১

সৈয়দ আবদাল আহমদ

একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে গ্রেফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বাধীনতার কোনো ঘোষণা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেননি। তাজউদ্দীন আহমদ ওই রাতেই স্বাধীনতার ঘোষণার ছোট্ট একটি খসড়া তৈরি করে টেপরেকর্ডারে ধারণ করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে পড়তে দেন। বঙ্গবন্ধু খসড়াটি পড়ে নিরুত্তর থাকেন এবং এড়িয়ে যান। তাজউদ্দীন আহমদ ঘোষণাটি দিতে অনুরোধ জানালে বঙ্গবন্ধু উত্তর দেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে একটি দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে।’ ইপিআর সিগন্যালসের মাধ্যমে শেখ সাহেব স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন সেটাও বোধহয় অবাস্তব কথা। চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন বলে যে কথা বলা হয়, তাও সঠিক নয়। ভারত সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার সময় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও অন্য প্রধান নেতাদের জিজ্ঞাসা করেছে যে, স্বাধীনতার ঘোষণার ব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমান কাউকে কিছু বলে গেছেন কিনা। এর মধ্যে জহুর আহমদ চৌধুরীও ছিলেন। ভারত সরকারকে প্রত্যেকেই বলেছেন, কাউকেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণার কথা বলে যাননি। জহুর আহমদ চৌধুরী নিজে তাজউদ্দীনকে বলেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণার ব্যাপারে তাকে কিছুই বলা হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে খন্দকার, মঈদুল হাসান ও এস আর মীর্জার কথোপকথন নিয়ে প্রথমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন’ শীর্ষক বইয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এই ঐতিহাসিক তথ্য স্থান পেয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ কে খন্দকার ছিলেন মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান সেনাপতি, বর্তমানে তিনি সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী এবং সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি। মঈদুল হাসান ছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও মূলধারা ’৭১ গ্রন্থের লেখক এবং এস আর মীর্জা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গঠিত যুবশিবিরের মহাপরিচালক।
তিন বীর মুক্তিযোদ্ধার কথোপকথনে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টিও বিস্তারিতভাবে স্থান পেয়েছে। এ কে খোন্দকার বলেন, রেডিও কর্মীদের প্রচেষ্টায় ২৬ মার্চ দুপুর ২টার সময় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। ২৭ মার্চ সন্ধ্যার কিছু আগে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। অবশ্য মেজর জিয়া কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে এসে প্রথমেই যে ঘোষণাটি দেন, সেটি ভুলভাবে দেন। সেই ঘোষণায় তিনি নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছিলেন। ২৬ মার্চ দুপুরে স্বাধীনতার ঘোষণা এম এ হান্নান সাহেব যেটা পড়েছিলেন এবং ২৭ মার্চ সন্ধ্যার দিকে মেজর জিয়া যেটা পড়েন, তার মধ্যে কিন্তু একটা পার্থক্য ছিল। ২৬ মার্চেরটা অনেকে শুনতে পাননি। অন্যদিকে যুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীর একজন বাঙালি মেজরের কথা শোনা সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার। আমি নিজে জানি, যুদ্ধের সময় জানি, যুদ্ধের পরবর্তী সময়ও জানি যে, মেজর জিয়ার এ ঘোষণাটি পড়ার ফলে সারাদেশের ভেতরে এবং সীমান্তে যত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাদের মধ্যে এবং সাধারণ মানুষের মনে সাংঘাতিক একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করল যে, হ্যাঁ, এবার বাংলাদেশ একটা যুদ্ধে নামলো। জিয়ার ২৭ মার্চ ঘোষণা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে যারা ছিল, তাদের মধ্যে যে একটা প্রচণ্ড উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়, সে সম্পর্কে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়।
মঈদুল হাসান বলেন, অন্যের কথা কী বলব, মেজর জিয়ার বেতার ঘোষণা শুনে আমি নিজে মনে করেছিলাম যে, না, সত্যি তাহলে সামরিক বাহিনীর বিপুল সংখ্যক লোক বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। এটা আমার মনে বিরাট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং আমি উত্সাহিত বোধ করি। আমি আশপাশে যাদের চিনতাম, তারাও এই ঘোষণায় উত্সাহিত হন। সুতরাং জিয়ার সেই সময়টুকুর সেই অবদান খাটো করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
এস আর মীর্জা বলেন, ২৫ মার্চের পর আমি সবসময় রেডিও সঙ্গে রেখেছিলাম। এম এ হান্নান সাহেবের ঘোষণাটি আমি শুনিনি। ২৭ মার্চ বিকালে পরিষ্কার শুনলাম, বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। এই ঘোষণা শুনে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম এই ভেবে যে, হ্যাঁ, এখন মানুষ স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কারণ, তাদের সঙ্গে বাঙালি সেনারাও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে। শেখ মুজিব যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন এ নিয়ে কোনো কথা কেউ উত্থাপন করেননি বা বিতর্ক হয়নি। এমনকি জিয়াউর রহমানের শাসনকালেও এ ব্যাপারে কথা ওঠেনি। এটা শুরু হলো সম্ভবত ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর কয়েক বছর পর। ১৯৯১ সালে বিএনপি নতুন করে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ জিয়াকে খাটো করার চেষ্টা করে। এরপর থেকেই বিবাদটা প্রকট আকার ধারণ করে।
তিন বীর মুক্তিযোদ্ধার কথোপকথন হুবহু নিচে দেয়া হলো :
মঈদুল হাসান : বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে, এ সম্পর্কে আমরা আলোচনা করতে পারি।
এ কে খোন্দকার : আসলে, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে কোনো রকম আলোচনা কিংবা দ্বিমত কিংবা বিভাজন মুক্তিযুদ্ধের সময় কিন্তু ছিল না। এটা শুরু হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে। ২৫ মার্চ রাতে যখন পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের আক্রমণ করল, সেই রাতেই শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে গ্রেফতার করা হয়। তাহলে কথা হচ্ছে, স্বাধীনতার ঘোষণাটা কীভাবে এলো? ২৬ মার্চ তারিখে সারাদেশেই সান্ধ্য আইন ছিল। চট্টগ্রামে সেই সান্ধ্য আইনের মধ্যেও সেখানকার বেতার কেন্দ্রে কিছু বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে কয়েকজনের নাম আমার মনে আছে—তখন তাঁদের ঠিক কার কী পদ ছিল এখন আমার মনে নেই। তাঁরা মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন যে কিছু না কিছু বেতারে বলা দরকার। তখন তাঁরা সবাই মিলে একটা স্বাধীনতার ঘোষণার খসড়া তৈরি করলেন এবং সেই খসড়াটি তাঁরা ২৬ মার্চ দুপুর দুইটার সময় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে গিয়ে নিজেরা তা চালু করে প্রচার করেন। সেই ঘোষণা চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান পাঠ করেন। ধারণ করা এই ভাষণ সেদিন পুনরায় সাড়ে চারটা-পাঁচটার দিকে প্রচার করা হয়। তাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়েছে—এমন কথাগুলো ছিল।
এদিকে বেতার কেন্দ্রটি খোলা হয়েছে এবং কার্যক্রম চালু হয়েছে, সুতরাং এটাকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা ছিল। এ অবস্থায় তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, মেজর জিয়া নামের একজন ঊর্ধ্বতন বাঙালি সামরিক কর্মকর্তা অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অন্যান্য কর্মকর্তা ও সৈনিকসহ পটিয়ায় রয়েছেন।
তখন ২৭ মার্চ তারিখে সকাল ১০টার দিকে এইসব বেতারকর্মী পটিয়ায় যান। তাঁরা সেখানে গিয়ে যে আলোচনা শুরু করেন, তাতে কিন্তু ঘোষণার কোনো বিষয় ছিল না। তাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তার প্রশ্নে কথা বলতে। তাঁরা মেজর জিয়াকে বেতার কেন্দ্র রক্ষার জন্য কিছু বাঙালি সেনাসদস্য দিয়ে সাহায্য করার অনুরোধ জানান। মেজর জিয়া সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যাপারে সম্মতি দেন এবং বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি আমার সৈনিক দিয়ে সাহায্য করব।’ এরপর হঠাত্ তাঁদের কারও একজনের মনে হলো যে, যদি এই ঘোষণাটি একজন সেনা কর্মকর্তাকে দিয়ে বেতারে বলানো যায়, তাহলে এর একটা প্রভাব সারাদেশে ভালোভাবে পড়বে। এই চিন্তা থেকেই মেজর জিয়াকে অনুরোধ করা হয়, তিনি এই ঘোষণাটি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে পড়তে রাজি আছেন কিনা। আমি পরে শুনেছি, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এম আর সিদ্দিকী তখন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং এম এ হান্নান সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মেজর জিয়াকে প্রস্তাব দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাজি হন এবং বেশ আগ্রহের সঙ্গেই রাজি হন। মেজর জিয়া কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে এসে প্রথম যে ঘোষণাটি দিলেন, সেটা ভুলভাবেই দিলেন। সেই ঘোষণায় তিনি নিজেকেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। এই ঘোষণায় সবাই হতবাক হয়ে যান। এমন ঘোষণা তো তাঁর দেয়ার কথা নয়! এরপর তা সংশোধন করা হয়। ঘোষণা আগে থেকেই যেটি তৈরি ছিল, সেটি আবার জিয়ার কণ্ঠে টেপে ধারণ করা হয় এবং সেটি জিয়া পড়েন ২৭ মার্চ সন্ধ্যার কিছু আগে। এভাবে বঙ্গবন্ধুর নামে এই ঘোষণাটি ২৬ মার্চ দুপুর দুইটা-আড়াইটার দিকে প্রথম পড়া হয় এবং সেদিন বিকাল চারটা-সাড়ে চারটায় তা পুনরায় প্রচার করা হয়। আর ২৭ মার্চ সন্ধ্যার কিছু আগে জিয়ার কণ্ঠে প্রথম ঘোষণা হয়। এটি হচ্ছে প্রকৃত সত্য ঘটনা।
মঈদুল হাসান : ২৫ মার্চ সন্ধ্যাবেলা, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যখন চলে যান এ দেশ থেকে, তখন একটা চরম সঙ্কটপূর্ণ অবস্থার মতো হয়। সবাই ভাবতে থাকেন, তাহলে এখন কী করণীয়। এসময় তাজউদ্দীন আহমদসহ আরও কিছু নেতা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে, অর্থাত্ শেখ মুজিবের বাড়িতে সমবেত ছিলেন। সেখানে এক ফাঁকে তাজউদ্দীন আহমদ একটি টেপরেকর্ডার এবং ছোট্ট একটা খসড়া ঘোষণা শেখ সাহেবকে দিয়ে সেটা তাকে পড়তে বলেন। এ ঘটনা তাজউদ্দীন আহমদের কাছ থেকে আমার শোনা। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই আমি যখন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি, তখন তাজউদ্দীন আহমদকে এ ব্যাপারে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম। ঘোষণাটা তাজউদ্দীন আহমদের নিজের লেখা। লেখাটা ছিল এমন—পাকিস্তানি সেনারা আমাদের আক্রমণ করেছে অতর্কিতভাবে। তারা সর্বত্র দমননীতি শুরু করেছে। এ অবস্থায় আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এবং আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলাম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে। এই খসড়া ঘোষণাটা শেখ মুজিবুর রহমানকে দেয়ার পর সেটা তিনি পড়লেন। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কিছুই বললেন না, নিরুত্তর রইলেন। অনেকটা এড়িয়ে গেলেন।
তাজউদ্দীন আহমদের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি যখন তাকে বললেন, ‘মুজিব ভাই, এটা আপনাকে বলে যেতেই হবে; কেননা কালকে কী হবে, আমাদের সবাইকে যদি গ্রেফতার করে নিয়ে যায়, তাহলে কেউ জানবে না কী তাদের করতে হবে। এ ঘোষণা কোনো না কোনো জায়গা থেকে কপি করে আমরা জানাব। যদি বেতার মারফত কিছু করা যায়, তাহলে সেটাই করা হবে।’ শেখ সাহেব তখন উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে একটা দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে।’ এ কথার পিঠে তাজউদ্দীন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে সঙ্গে সঙ্গে রাত সম্ভবত ৯টার পরপরই ৩২ নম্বর ছেড়ে চলে যান।
পরবর্তীতে এ ব্যাপারে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা আবদুল মোমিনকে। তিনি ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তখন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। আবদুল মোমিন আমাকে বলেন, তিনি যখন ৩২ নম্বরে যান, তখন দেখেন যে তাজউদ্দীন আহমদ খুব রেগে ফাইলপত্র বগলে নিয়ে সেখান থেকে চলে যাচ্ছেন। ফাইলগুলো তিনি সব সময় সঙ্গেই রাখতেন। ঘোষণা, পরিকল্পনা এবং অন্য জরুরি কিছু কাগজপত্র এর মধ্যে থাকত। তিনি যেখানেই যেতেন, সেটা সঙ্গে নিয়ে যেতেন, কাছছাড়া করতেন না। তিনি যখন রেগে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখন ৩২ নম্বর বাড়ির দরজার বাইরে তাজউদ্দীনের হাত ধরে আবদুল মোমিন বললেন, ‘তুমি রেগে চলে যাও কেন।’ তখন তাজউদ্দীন তার কাছে ঘটনার বর্ণনা করে বললেন, ‘বঙ্গবন্ধু এইটুকু ঝুঁকি নিতেও রাজি নন। অথচ আমাদের ওপর একটা আঘাত বা আক্রমণ আসছেই।’
এরপর ৩২ নম্বর থেকে তাজউদ্দীন তার বাড়িতে ফিরে যান। রাত ১০টার পর কামাল হোসেন ও আমীর-উল-ইসলাম যান শেখ সাহেবের বাড়িতে। শেখ সাহেব তাদের তত্ক্ষণাত্ সরে যেতে বলেন। শেখ সাহেব নিজে কী করবেন, সেটা তাদের বলেননি। সেখান থেকে তারা দু’জন যখন তাজউদ্দীন আহমদের বাড়িতে গেলেন, তখন রাত বোধহয় ১১টার মতো হয়ে গেছে। সে সময় পাকিস্তানিদের আক্রমণ শুরু হতে যাচ্ছে। ওখানে তারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন, তাজউদ্দীনকে নিয়ে তারা দু’জন অন্য কোথাও যাবেন।
যাই হোক, ওই ঘোষণার খসড়া তাজউদ্দীন আহমদ ২৫ মার্চের কয়েক দিন আগেই তৈরি করে রেখেছিলেন এ জন্য যে, এমন একটা অনিশ্চিত বা আকস্মিক অবস্থা হতে পারে। তার কথা, আমি আমার ডাইরিতে টুকে রেখেছিলাম ১৯৭২ সালেই। তিনি বলেন, ‘আমীর-উল ইসলাম ও কামাল হোসেন যখন এসে বলল যে, বাড়ি থেকে এখনই সরে যাওয়া দরকার, তখন আমি তাদের বলিনি; তবে আমার মনে হয়েছিল আমার কোথাও যাওয়া উচিত নয়।’ তাজউদ্দীন আহমদ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘যেখানে আন্দোলনের সর্বোচ্চ নেতা—যাকে এতবার করে বলেছি, আজকে সন্ধ্যাতেও বলেছি, তিনি কোথাও যেতে চাইলেন না এবং তাকে স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য যে সংক্ষিপ্ত একটা ঘোষণা বা বার্তা টেপরেকর্ডে ধারণ বা ওই কাগজে স্বাক্ষর করার জন্য বলায় তিনি বললেন, এটাতে পাকিস্তানিরা তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করতে পারবে! তিনি এতটুকুও যখন করতে রাজি নন, তখন এ আন্দোলনের কি-ই বা ভবিষ্যত্?’ এদিকে আমীর-উল ইসলামদের সঙ্গে আলাপ শেষ না হতেই চারদিকের নানা শব্দ থেকে বোঝা গেল যে, পাকিস্তানি সৈন্যরা সেনানিবাস থেকে বের হয়ে আক্রমণ শুরু করেছে। তারপর তারা তিনজন বেরিয়ে পড়লেন। কামাল হোসেন গেলেন ধানমন্ডি ১৪ নম্বরের দিকে এক অজ্ঞাত উদ্দেশ্যে। অন্যদিকে আমীর-উল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে তাজউদ্দীন যান লালমাটিয়ায়।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/27/24643

Thursday 25 March 2010

বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ৩০ জন আ. লীগের: হাসিনা

Wed, Mar 24th, 2010 8:13 pm BdST


চট্টগ্রাম, মার্চ ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ৩০ সেনাকর্মকর্তা আওয়ামী লীগ পরিবারের বলে জানিয়েছেন দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ-মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে এক সভায় প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ৩০ সেনা কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ পরিবারের উল্লেখ করে হাসিনা বলেন, "যাদের আমরা ক্ষমতায় এসে এসএসএফসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।"

গত বছরের ২৫-২৬ ফেব্র"য়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা নিহত হন।

বুধবারের সভায় জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মদদ দিয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অভিযোগ আনেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, "জিয়াউর রহমান খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরষ্কৃত করেছে। এর পর এরশাদ এসে খুনি কর্নেল ফারুককে প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যান্ডিডেট করলো রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য।"

"পরবর্তীতে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে খুনি কর্নেল রশিদকে এমপি বানিয়ে পার্লামেন্টে বসিয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে" অভিযোগ করে তিনি বলেন, "তারা একের পর এক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মদদ দিয়েছে।"

এছাড়া বিএনপি বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলায় নিু আদালতের রায় ঘোষণার দিন হরতাল ডেকেছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বিগত জোট সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদনে কার্যকর কোন ব্যবস্থা না নিয়ে লুটপাটে ব্যস্ত ছিল। চারদলীয় জোট সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন করলে এখন দেশের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।

দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য বিগত সরকারকে দায়ী করেন হাসিনা। তিনি বলেন, "সন্ত্রাসীদের মদদাতা যে দলেরই হোক সরকার তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।"

পার্বত্য চট্টগ্রামে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "গত জোট সরকার শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না করে উল্টো পথে চলায় পার্বত্য চট্টগ্রামে অনভিপ্রেত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।"

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, "হামলার পরে প্রচার করা হয়েছিল- আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে হামলা করেছিলাম। বিডিআর বিদ্রোহের পরও একই ধরণের প্রচারণা চালাচ্ছে।"

এরপর হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী সার্কিট হাউজে চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়ন বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমসি/পিডি/২০০৭ ঘ.

http://www.bdnews24.com/bangla/details.php?id=123113&cid=3

যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু

তথ্য সংগ্রহই প্রথম কাজ'

কাজী আব্দুল হান্নান | shamokal শুত্রুবার | ২৬ মার্চ ২০১০ | ১২ চৈত্র ১৪১৬ | ৯ রবিউস সানি ১৪৩১
বহু প্রতীক্ষিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করতে সরকারের প্রধান করণীয় স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন সম্পন্ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন, অপরাধ তদন্তের জন্য তদন্তকারী সংস্থা নিয়োগ এবং রাষ্ট্রের পক্ষে আইনজীবীর দায়িত্ব পালনে প্রসিকিউশন টিম ঘোষণার পর স্বাভাবিকভাবেই সবাই জানতে চান, কবে কখন কীভাবে বিচার কাজ শুরু হচ্ছে। এ সম্পর্কে নবগঠিত তদন্তকারী সংস্থার অন্যতম সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর এএসএম শামসুল আরেফিন সমকালকে বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এত বছর পর এতবড় একটা কাজ শুরুর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা সম্পন্ন করা অতি সহজ কোনো ব্যাপার নয়। একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। সবার আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া যা সম্ভব নয়। প্রথমেই দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা
তথ্য সংগ্রহ করা হবে। তথ্য একত্রীকরণের পর তা বাছাই করে নামতে হবে তথ্য যাচাইয়ের কাজে। এরজন্য টিম গঠন করে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার পর শুরু হবে আসল তদন্ত। এ তদন্তের ভিত্তিতে জড়িতদের বিষয়ে কীভাবে কী করা যায়_ সে বিষয়ে প্রসিকিউশনের সঙ্গে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।
প্রসিকিউশন টিমের প্রধান দেশের অন্যতম প্রবীণ অভিজ্ঞ আইনজীবী রাজশাহীর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু জানান, রোববার ঢাকায় পেঁৗছে টিমের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে আগ্রহী তিনি। গতরাতে তিনিও সমকালকে বলেন, সবার কাছ থেকে আগে তথ্য সংগ্রহ করে এরপর তদন্তের পথে অগ্রসর হতে হবে। তদন্তের পর ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ যাবে। অভিযোগের পর শুরু হবে বিচারের প্রক্রিয়া।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা একান্তই বাংলাদেশি আইনে। গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির আটক বিচার ও শাস্তির বিধানের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট ১৯৭৩ নামে আইনটি প্রনয়ন করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত জাতিগত নিপীড়ন, নির্যাতন, অগি্নসংযোগ, ধর্ষণ, আটক রাখা, গণহত্যার মতো বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচার করার জন্য এ আইনে ব্যবস্থা রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বলে অভিহিত করা হলেও আসলে এর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে এদেশে মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ করা হয়েছিল তার বিচারের উদ্যোগ। ট্রাইব্যুনালের বিচার পদ্ধতিসহ তদন্ত পরিচালনা সম্পর্কিত বিধিবিধানও এ আইনে নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। আইনটির আওতায় অপরাধীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড থেকে শুরু করে অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী যে কোনো শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা এই ট্রাইব্যুনালকে দেওয়া আছে।
আইনটি এমনভাবে তৈরি যে এর আওতায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো অপরাধের বিচারে বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধি কিংবা সাক্ষ্য আইনের প্রয়োগ হবে না। এর বিচারপদ্ধতি হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য যে কোনো পদ্ধতিই অনুসরণ করার স্বাধীনতা ট্রাইব্যুনালের আছে। এমনকি আইনটির যে কোনো বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্যকোনো আইন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। অপরাধ প্রমাণের জন্য দেশে প্রচলিত সাক্ষ্য আইন এবং ফৌজদারি কার্যবিধির মধ্যে আবদ্ধ না রেখে আইনেই ট্র্রাইব্যুনালের ক্ষমতা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সাক্ষীর ব্যক্তিগত সাক্ষ্যের পাশাপাশি ছবি, সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক দলিলপত্রকেও সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করতে পারবে ট্রাইব্যুনাল। এগুলো সংগ্রহ করার জন্যই তদন্তকারী সংস্থা সর্বসাধারণের কাছ থেকে তথ্য চেয়ে সর্বপ্রথম একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। তদন্তের প্রয়োজনে যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করার ক্ষমতা রয়েছে তদন্তকারী সংস্থার যে কোনো সদস্যের। কেউ কোনো অজুহাতে জিজ্ঞাসাবাদের জবাব এড়িয়ে যেতে পারবেন না, কিংবা প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে তদন্তকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে যে কোনো প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট তাকে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা জরিমানা করতে পারবেন।
বিচার কাজের শুরু হবে তদন্তকারী সংস্থার দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র থেকে। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর আদালত বিচার শুরুর তারিখ নির্ধারণ করবেন। নির্দিষ্ট তারিখের তিন সপ্তাহ আগে আসামির বিরুদ্ধে মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে যেসব দলিলপত্রের ওপর ভিত্তি করা হবে তার এবং সাক্ষীদের একটি তালিকা আদালতে দাখিল করা হবে। এর কপি আসামিরাও পাবেন। আসামিদের গ্রেফতার করতে ওয়ারেন্ট দেওয়া, হাজতে আটক রাখা কিংবা ডিটেনশনে রাখার নির্দেশ দেওয়ার এখতিয়ার এই ট্রাইব্যুনালের রয়েছে।
'আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহ (ট্রাইব্যুনালস্) অ্যাক্ট, ১৯৭৩'-এ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে আইনটি প্রণয়ন করা হলেও আইনটির ব্যবহার বাংলাদেশে আজও হয়নি। আইনটির প্রয়োগে অভিজ্ঞ কোনো আইনজীবী কিংবা বিচারকও দেশে নেই। এই বাস্তবতায় বিশ্বের এ ধরনের বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসকে বিবেচনায় রেখে সরকার অগ্রসর হয়েছে।
কাজটি যে কত কঠিন অন্যান্য দেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পরিসংখ্যান থেকে তার ধারণা পাওয়া যেতে পারে। ১৮৮৬ সালে জেনেভা কনভেনশনে যুদ্ধাপরাধীর সংজ্ঞা নির্ধারণের পর আরও কয়েকটি কনভেনশনের মাধ্যমে এদের বিচারের আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২০ সালে যুদ্ধাপরাধের ৪৫টি মামলায় 'লাইপজিগ ট্রায়ালে' মাত্র ১২ জনের বিচার হয়। এতে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে দুটি বড় ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যুগান্তকারী আদালত বসেছিল জার্মানির নুরেমবার্গে। ১৯৪৫ সালে গঠন করা এ নুরেমবার্গ ট্রায়ালের পাশাপাশি জাপানের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত হয় 'টোকিও ট্রাইব্যুনাল'। যুদ্ধাপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের তিনটি শ্রেণীতে এসব ট্রাইব্যুনালে অপরাধের বিচার করা হয়। নুরেমবার্গ ট্রায়ালে ১৭৭ জনের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল। দু'বছরের বেশি সময় ধরে বিচার চলে এবং বিচারে ২৫ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ২০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে মাত্র ১০ জনের ফাঁসি হয়েছিল। যদিও দু'জন আত্মহত্যা করে। টোকিও ট্রাইব্যুনালে প্রায় আড়াই বছরে ২৭ জন অপরাধীর বিচার হয়। জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তোজো এবং জেনারেল ইয়ামাসিতাসহ মোট সাতজনের মৃত্যুদণ্ড হয়।
প্রায় অভিন্ন অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে ১৯৯৩ সালের সাবেক যুগোশ্লাভিয়ার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল এবং ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনালের স্ট্যাটুটের আওতায় গঠিত ট্রাইব্যুনালে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এসব ইতিহাস সামনে রেখেই বাংলাদেশকে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। বিশেষ করে বিশ্বে মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে জনমত গড়ে উঠছে এমনই এক সময়ে। তারপরও আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত মানবতার বিরুদ্ধে ইতিহাসের এক জঘন্য নারকীয় ঘটনার বিচারে ন্যায়বিচারের সাধারণ নীতি অনুসরণ করার এখতিয়ার এই ট্রাইব্যুনালের রয়েছে।

র্যাবের প্রেস ব্রিফিংয়ে শিবির নেতা গোলাপ : রাবির ঘটনায় জামায়াত নেতাদের সম্পৃক্ততার প্রশ্নই আসে না

স্টাফ রিপোর্টার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা ও ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যা মামলায় শিবির সভাপতি শামসুল আলম গোলাপকে গতকাল র্যাব-১’র কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। সাংবাদিকরা রাবিতে হত্যা ও হামলার ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে কি-না জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিবির সভাপতি শামসুল আলম গোলাপ বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার কথা বিশ্বাস না হলে মোবাইল ফোন ট্র্যাক করুন সব সত্য বেরিয়ে আসবে।’
এর আগে গত বুধবার দিবাগত রাত ২টায় টাঙ্গাইল জেলার ভুয়াপুর উপজেলার পাতালকান্দি এলাকা থেকে র্যাব গোলাপকে গ্রেফতার করে। এরপর গতকাল বেলা ৩টায় তাকে গ্রেফতারের ব্যাপারে জানাতে র্যাব-১ কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সম্মেলনে র্যাবের মিডিয়া অ্যান্ড লিগ্যাল উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল বলেন, গত ৮ ফেবু্রয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ন্যক্কারজনক ছাত্রহত্যা, হল দখল, ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ৯ তারিখে রাজশাহীর মতিহার থানায় একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। মামলার আসামিরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে থাকে। তাদের ধরতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও অভিযান চালাতে থাকে। সেই অভিযানের একপর্যায়ে বুধবার দিবাগত রাতে দুটি মামলার অন্যতম আসামি রাবির শিবির সভাপতি শামসুল আলম গোলাপকে গ্রেফতার করা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গোলাপ আরও বলেন, ‘মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ হচ্ছেন বাংলাদেশ জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল। আর আমি হচ্ছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সামান্য একজন ছাত্রনেতা। আমার সঙ্গে তাদের কথা বলার প্রশ্নই আসে না। আর যদি কথা বলার প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে অনেক ধাপ পার হয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। রাবির ঘটনার ব্যাপারে আমি নিজেই তেমন কিছু জানি না। তিনি আরও বলেন, বর্তমান আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। আমার কথা আপনাদের বিশ্বাস না হলে মোবাইল ট্র্যাক করুন। সব সত্য বেরিয়ে আসবে।’
একথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই র্যাবের কর্মকর্তারা গোলাপকে কথা বলতে নিষেধ করেন। পরে কয়েকজন টিভি সাংবাদিক র্যাব কর্মকর্তা সোহায়েলকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আগে যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা এবং র্যাব কর্মকর্তারা বলেছিলেন, এ ঘটনার মূল নায়ক গোলাপ। তার সঙ্গেই জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের মোবাইলে কথা হয়েছে। গোলাপকে ধরতে পারলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। কিন্তু গোলাপ এখন যা বলছে তাতে নিজামী-মুজাহিদ বা জামায়াতের কেউ এর সঙ্গে জড়িত নয়। এ ব্যাপারে আপনাদের বক্তব্য কী? এ সময় সোহায়েল বলেন, গোলাপ র্যাবকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে তবে সেটা প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। একপর্যায়ে কয়েকজন টিভি সাংবাদিকের পিড়াপিড়িতে সোহায়েল বলেন, এ ঘটনায় আগে গ্রেফতারকৃতরা যে তথ্য দিয়েছে তার সঙ্গে গোলাপের দেয়া তথ্যের কিছুটা অমিল রয়েছে।
গোলাপসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি : এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবির সভাপতি শামসুল আলম গোলাপসহ আটক সব নেতাকর্মীকে অবিলম্বে মুক্তি এবং গ্রেফতার ও নির্যাতন বন্ধসহ সরকারের কাছে ৬ দফা দাবি জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল পুরানা পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. ফখরুদ্দিন মানিক এ দাবি জানান। শিবির সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, বুধবার ভোরে নওগাঁ থেকে শ্যামলী পরিবহনে ঢাকায় আসার পথে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর বাস থামিয়ে র্যাব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিবির সভাপতি শামসুল আলম গোলাপ ও শিবির নেতা নূর ইসলামকে গ্রেফতার করে অজানার উদ্দেশে নিয়ে যায়। বাসযাত্রীদের তথ্যমতে, গ্রেফতারের সময় পুলিশের দুটি, র্যাবের একটি ও সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি ব্যবহার করা হয়। এর আগে র্যাব শিবির নেতা রাইজুল ইসলামকে গ্রেফতারের দুদিন পর সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত করে। তিনি বলেন, অন্যায়ভাবে শিবির নেতাকর্মী গ্রেফতারের প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিবিরের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রশাসন বাধা দিচ্ছে। গত দুদিনে ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী গ্রেফতার করা হয়েছে।
শিবির সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ছাত্রশিবির একটি দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে দেশের স্বার্থবিরোধী সরকারের কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। গণতান্ত্রিক প্রতিবাদী কণ্ঠ রোধ করতে সরকারের নির্যাতনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় শিবির। শিবিরের বিরুদ্ধে কুত্সা রটনা ও নানা অপপ্রচার চলতে থাকে। এমনই একপর্যায়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী হত্যার সঙ্গে শিবিরকে জড়ানো এবং জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চলতে থাকে। শিবির নেতা বলেন, রাবির ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় সরকারের মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, শিবিরকে নির্মূল ও উত্খাত করা হবে। আর এ ঘটনার দিনকয়েক আগে ঢাবির মেধাবী ছাত্র আবুবকর, যে সদ্যপ্রকাশিত পরীক্ষার ফলে প্রথম স্থান লাভ করেছে, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রাণ হারান। তার মৃত্যুকে এই মন্ত্রীরা স্বাভাবিক ঘটনা বলে অভিহিত করেন। সরকারের মন্ত্রীদের মন্তব্য পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয় যে, আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে জামায়াত-শিবিরকে ঘায়েল করতে নানা ইস্যু সৃষ্টি করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় দেশব্যাপী চিরুনি অভিযান পরিচালনার মধ্য দিয়ে সরকারের অসত্ উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়। গণগ্রেফতারে আটককৃত নেতাকর্মীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে সরকারের শিখিয়ে দেয়া স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে জোর করে স্বীকারোক্তি ও সাজানো বক্তব্য আদায় মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লিখিত ৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে রাবি শিবির সভাপতি শামসুল আলম গোলাপের নিঃশর্ত মুক্তি, অবিলম্বে শিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি মিজানুর রহমানসহ গ্রেফতারকৃত সব নেতাকর্মীর মুক্তি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা, শিবিরের বিরুদ্ধে পরিচালিত গণগ্রেফতার, দমন-নিপীড়ন ও নির্যাতন বন্ধ করা এবং গ্রেফতারকৃতদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় বন্ধ করা। প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদ সদস্য এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ, শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মুহাম্মদ আতাউর রহমান সরকার, কেন্দ্রীয় কলেজ ও ক্রীড়া সম্পাদক মিয়া মুজাহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মুহাম্মদ সোহেল খান, কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক আল মুত্তাকী বিল্লাহ প্রমুখ।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/26/24483

একই ধরনের ঘটনায় দুই নীতি : বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে এখন কিছু নেই : বিশিষ্ট আইনজীবীদের মন্তব্য

স্টাফ রিপোর্টার
একই ঘটনায় আদালতে দুই ধরনের সিদ্ধান্ত। একই ধরনের মামলা কারওটা গ্রহণ করা হয়, আবার কারওটা খারিজ করে দেয়া হয়। একই ধরনের ঘটনায় কারও মামলায় বিবাদীর বিরুদ্ধে সমন, এমনকি ওয়ারেন্টও জারি করা হয়। কারও মামলা গ্রহণ না করে সরাসরি খারিজ করে দেয়া হয়। সংক্ষুব্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি না হওয়ায় গত বুধবার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দায়ের করা একটি মামলা গ্রহণ করা হয়নি। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সরাসরি মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন। অন্যদিকে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি না হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ নেতাদের দায়ের করা একের পর এক মামলা গ্রহণ করছেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ করায় আওয়ামী লীগ নেতাদের দায়ের করা ২৪টি মামলা গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন জেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। একই ঘটনায় পৃথকভাবে আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন জেলায় মামলাগুলো দায়ের করেন। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ভিওআইপি ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রকাশ করায় তার বিরুদ্ধেও এরই মধ্যে ১২টির বেশি মামলা দায়ের করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। দুটি মামলায় ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে জয়নাল আবদিন ফারুকের বিরুদ্ধে। বাকি মামলাগুলোতে আদালত সমন জারি করেছেন।
আমার দেশ সম্পাদকের বিরুদ্ধেও একটি মামলায় ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছিলেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। বাকি ২৩ মামলায় সমন জারি করা হয়।
সরকারের একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধেও দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলা দুটি গ্রহণ করে সমন ইস্যু করেছেন।
আইনজীবীরা বলছেন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এ ঘটনা প্রমাণ করছে আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে যা বোঝায় তা এখন নেই। সরকারের ইচ্ছায়ই যে আদালতগুলো চলছে এসব ঘটনায়—সেটাই প্রকাশ পাচ্ছে।
এক সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এ প্রসঙ্গে আমার দেশকে বলেন, মানহানি মামলা কেবল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি দায়ের করতে পারেন। ক্ষতিগ্রস্ত বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি না হয়ে অন্য কেউ মানহানি মামলা দায়ের করলে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু ফৌজদারি আইনে আমলযোগ্য অপরাধে কেউ থানায় এজাহার অথবা আদালতে নালিশি দরখাস্ত করার এখতিয়ার রাখেন। কারণ কোনো ফৌজদারি ঘটনা কারও সামনে ঘটলে সেটা থানা অথবা আদালতে না জানালে সেই ব্যক্তি অপরাধী বলে গণ্য হবেন। তিনি বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাবেক রাষ্ট্রপতি, সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক সেনাপ্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যে মামলাটি দায়ের করেছিলেন, সেটা সরাসরি ফৌজদারি অপরাধ। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেই পবিত্র সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, তাকে জরুরি অবস্থার সময় খাদ্যে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে স্লো পয়জন দেয়া হয়েছিল। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধের ঘটনা। হত্যা প্রচেষ্টার অপরাধে ফৌজদারি ও দণ্ডবিধি আইনে বিচার্য বিষয়। তিনি বলেন, এ ধরনের অপরাধের ঘটনা জানার পর যিনি মামলা করা থেকে বিরত থাকবেন, তিনি আইন লঙ্ঘন করছেন। তিনি বলেন, দেশের ফৌজদারি আইন অনুযায়ী খুনের ঘটনা বা খুন করার চেষ্টার ঘটনা কারও সামনে ঘটলে সেই ব্যক্তি মামলা দায়েরের এখতিয়ার রাখেন। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে তাকে হত্যা প্রচেষ্টার ঘটনাটি প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় তিনি নিজে মামলা দায়ের না করলেও যে কোনো ব্যক্তি মামলা দায়ের করার এখতিয়ার রাখেন। কারণ এ অপরাধ দেশের আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তিনি বলেন, আমলযোগ্য অপরাধ কেউ জানার পরও যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে না জানিয়ে থাকেন—সেটাই একটা অপরাধ। কারণ যেখানে সরকার প্রধান নিজে অ্যাফেক্টেড সেখানে প্রতিটি নাগরিক অ্যাফেক্টেড। এ ঘটনায় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কেন, যে কোনো নাগরিক মামলা দায়ের করতে পারেন।
অন্যদিকে মানহানি মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের স্বার্থের বিষয় জড়িত। সুতরাং যিনি ক্ষতিগ্রস্ত বা সংক্ষুব্ধ হবেন, তিনিই কেবল মানহানি মামলা দায়ের করতে পারেন। অন্য কেউ করলে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়।
সাবেক আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমার দেশকে বলেন, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুকের বিরুদ্ধে একের পর এক মানহানি মামলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলো গ্রহণ করছেন। শুধু গ্রহণই করেননি, যে মামলায় ওয়ারেন্ট দেয়ার বিধান নেই, সেই মামলায় ওয়ারেন্ট দিচ্ছেন। আবার সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দায়ের করা মামলাও খারিজ করে দিচ্ছেন আদালত। এসব ঘটনা প্রমাণ করে, আইনের শাসন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে যা বোঝায় সেটা দেশে নেই। সরকারের ইচ্ছায় আদালত চলছে—এটাই এসব ঘটনার মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে প্রকাশ পাচ্ছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আদালতের এ ধরনের দ্বৈত ও বৈষম্যমূলক নীতি অব্যাহত থাকলে আইনের শাসন ও মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হবে। আদালত সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে প্রমাণিত হলে বিচার বিভাগের ওপর থেকে মানুষের আস্থা চলে যাবে। এমনটি হলে দেশে অরাজকতা তৈরি হবে। তিনি বলেন, বিচারকদের উচিত আইন অনুযায়ী বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত দেয়া।
সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটার একটাই উত্তর, আইন কোনো দেশে দুই ধরনের হতে পারে না। আইন সবার জন্য এক ধরনের হবে। একই আইনের দুই ধরনের প্রয়োগ হলে বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা থাকবে না।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/26/24484

মন্ত্রিসভায় স্বাধীনতাবিরোধী রয়েছে : ’৭৫-এ ব্যর্থতার জন্য কয়েকজনকে ফাঁসি দেয়া উচিত : কাদের সিদ্দিকী

স্টাফ রিপোর্টার
বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় স্বাধীনতাবিরোধী রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাধীনতার অন্যতম সংগঠক বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের কার্যক্রমের ব্যাপারে তিনি বলেন, তাদের কারণেই গোলাম আযম এদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম গঠন করে তারা গত নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়েছেন, মন্ত্রীও হয়েছেন। এ ফোরামের শীর্ষ কয়েকজনকে ৭৫-এর ব্যর্থতার জন্য ফাঁসি দেয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি। এছাড়া বিচারের আগে কাউকেই যুদ্ধাপরাধী বলা উচিত নয় বলেও মনে করেন তিনি। এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সহযোগীদেরও নয়।
গতকাল দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মাসিক সহজ কথা আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সহজ কথা সম্পাদক আমিরুল মোমেনীন মানিক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। নির্বাহী সম্পাদক নয়ন মুরাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বর্তমান প্রেক্ষাপটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সহ-সভাপতি আজমল হক হেলাল, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার খোকা এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক পথিক সাহা।
এ সময় তিনি চলতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের ব্যাপারে ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, সুযোগ থাকার পরেও স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেয়নি তাদের আজ স্বাধীনতা পদক দেয়া হচ্ছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় লন্ডনে কোনো একটি সংগঠনে কিছু চাঁদা দিয়েছে এমন ব্যক্তিরা আজ চাঁদার রসিদ দেখিয়ে স্বাধীনতা পদক নিচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধী প্রসঙ্গে কাদের সিদ্দিকী বলেন, পাকিস্তানের পক্ষে থাকলেই তাকে যুদ্ধাপরাধী বলা যাবে না। রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিয়ে যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত করতে হবে। রেডিও কিংবা টেলিভিশনে যুদ্ধাপরাধীদের নাম চাওয়াটাও সঠিক মনে করেন না তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন আর সেই অবস্থা নেই। তবে এখনও মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক নেতা জীবিত রয়েছেন, বিচার শুরুর আগে তাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করা উচিত।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, বড় দুই দলেই স্বাধীনতাবিরোধী রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাফর উল্লাহ, সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলিমের নাম উল্লেখ করেন। সরকার তাদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। তবে তিনি উপযাচক হিসেবে কিছু করতে চান না।
যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচার অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের হওয়া উচিত। প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিয়েই এ বিচার কাজ শুরু করা উচিত। প্রয়োজনে আরও সময় নেয়ার পক্ষেও মত দেন তিনি। কেননা, বিচার শুরু হওয়ার পরপরই পাকিস্তানের মিত্রদেশগুলো থেকে অপরাধীদের বাঁচাতে প্রচেষ্টা চালানো হবে। একইসঙ্গে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যাতে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি এ অভিযোগে অভিযুক্ত না হন সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান তিনি।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/26/24491

Tuesday 23 March 2010

ছাত্রলীগ টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে: ওবায়দুল



Tue 23 Mar 2010 9:50 PM BdST

rtnnঢাকা, ২৩ মার্চ (আরটিএনএন ডটনেট)-- টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির সঙ্গে ছাত্রলীগের জড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার করে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে কিছু লোক এসব টেন্ডারবাজ ও চাঁদাবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে।

ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ বাবুর ৩১তম নিখোঁজ দিবস উপলক্ষে মাহফুজ বাবু স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত এক সাধারণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে ওবায়দুল বলেন, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ। কিন্তু আজ ছাত্রলীগ অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ জেলায় জেলায় কমিটি গঠন নিয়ে সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।

টেন্ডারবাজ ও চাঁদাবাজ ছাত্রলীগ কর্মীদের আড়ালে থাকা আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারীদের মুখোশ উন্মোচনেরও আহ্বান জানান তিনি।

সভায় আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ছাত্রলীগকে সব ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

প্রসঙ্গত, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাহফুজ বাবু। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৮০ সালের ২৩ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন তিনি। এরপর আর তার খোঁজ মেলেনি।

আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অভিযোগ, জিয়া সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

আরটিএনএন ডটনেট/এমইউএ/এমআই_ ২০৪৯ ঘ.

http://rtnn.net/details.php?id=22914&p=1&s=1

বর্তমান সময়ের মত রাজনীতিকদের অবমাননা পাকিস্তান আমলেও হয়নি: মোশাররফ

Tue 23 Mar 2010 8:20 PM BdST

rtnnঢাকা, ২৩ মার্চ (আরটিএনএন ডটনেট)-- স্বাধীন দেশে যেভাবে রাজনীতিকদের অবমাননা করা হচ্ছে তা পাকিস্তান আমলেও হয়নি জানিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, জাতীয় সংসদে জাতীয় নেতাদের অবমাননা করায় ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে রাজনীতিকদের জবাবদিহি করতে হবে।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

এনডিপি সভাপতি খোন্দকার গোলাম মোর্তজার সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ) মহাসচিব আব্দুল লতিফ নিজামী, ভাসানী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মমতাজ চৌধুরী প্রমুখ।

মোশারফ বলেন, পরমতসহিষ্ণুতা অর্জন করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও গণতন্ত্র রক্ষা করা যাবে না। এখন রাজনীতিকদের যেভাবে অবমাননা করা হচ্ছে পাকিস্তান আমলেও এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হতে হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রকৃত গণতন্ত্র চর্চার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন প্রয়োজন উল্লেখ করে বিএনপি নেতা আরো বলেন, গণতন্ত্রকে কাঙ্ক্ষিত মানে ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হলে ডিজিটাল কেন কোন উন্নয়নই হবে না।

অনুষ্ঠানে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুত গেলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, অনেক সময় যুদ্ধকেই শান্তির পূর্ব শর্ত হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু যারা যুদ্ধের সময় লুট করেছে, নিরীহ লোকদের হত্যা করেছে, নারী ধর্ষণ করেছে তাদের বিচার হওয়া প্রয়োজন।

প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারেরও দাবি জানান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এ নেতা।

আরটিএনএন ডটিনেট/এমইউএ/এমআই_ ১৯১৮ ঘ.

http://rtnn.net/details.php?p=1&s=16&id=22907

Sunday 21 March 2010

ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল কাজে কয়েক মন্ত্রীর ইন্ধন আছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
Kalerkantho | ঢাকা, রবিবার, ৭ চৈত্র ১৪১৬, ৪ রবিউস সানি ১৪৩১, ২১ মার্চ ২০১০

ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণহীন কর্মকাণ্ডের পেছনে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সারির কিছু নেতা এবং কয়েকজন মন্ত্রীর ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের। সেই নেতাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এই নেতা। তবে তিনি ইন্ধনদাতা নেতাদের নাম জানাতে রাজি হননি।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষ, সন্ত্রাস, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, খুন, ভর্তিবাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করেই চলেছে। ছাত্রলীগের এই কর্মকাণ্ডে শিক্ষাঙ্গনের পাশাপাশি সমাজেও অস্থিরতা বিরাজ করছে। ক্ষুণ্ন হচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি।
ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জিরো-টলারেন্স দেখানোর কথা বললেও ছাত্রলীগকে থামানো যাচ্ছে না। কারণ কয়েকজন মন্ত্রী, বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু নেতা, সেটা জেলা পর্যায়েরও আছেন, আবার কেন্দ্রীয় নেতাও আছেন_যারা ছাত্রলীগকে মদদ দিচ্ছেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। এর ফলে বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের জন্য গ্রেপ্তার হলেও পরে জামিনে বেরিয়ে আসছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। তিনি বলেন, 'না হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষিত হয় কিভাবে?'
কাদের বলেন, গুটিকয়েক নেতার কারণে পুরো দল ও সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুতরাং, এই নেতাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, এ ধরনের নেতার সংখ্যা খুব কম।
দলের পক্ষ থেকে এক সময় ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন ওবায়দুল কাদের। তাঁর এই মন্তব্যের বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা এ বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

ছাত্র ও যুবলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

ছাত্র ও যুবলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় : বেশিরভাগই থানায় রেকর্ড হয় না : সন্ত্রাসীরাও দলীয় ছত্রছায়ায় : পুলিশ র্যাবের কাছে দিনে চারশ’র বেশি অভিযোগ
ফকরুল আলম কাঞ্চন
ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন প্রায় ৪ শতাধিক অভিযোগ আসছে থানা পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তাব্যক্তিদের কাছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী হওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে ফৌজদারি অপরাধ করলেও স্থানীয় থানা-পুলিশ ‘ওপরের’ নির্দেশে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। থানা পুলিশের কর্মকর্তারা তাদের অসহায়ত্বের কথা জানান ভুক্তভোগীদের। অভিযোগকারীরা কর্তাব্যক্তিদের কাছে ধরনা দিয়ে বিফল হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে থানায় অভিযোগ জানালেও রোষানলে পড়তে হয় ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার বাহিনীর। আবার অনেক সময় অভিযোগ দিয়েও স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে আপস করতে বাধ্য হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
দেশের বিভিন্ন স্থানে যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হুমকি, ধমকি, হামলা, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অবৈধ নিয়ন্ত্রণ এবং জবরধ্বস্তির মতো শত শত অভিযোগ আসছে স্থানীয় থানা পুলিশ এবং র্যাব কর্মকর্তাদের কাছে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই থানা পুলিশ এসব অভিযোগ রেকর্ড করতে পারেন না। এ ব্যাপারে স্থানীয় থানার ওসি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রায়ই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ মানতে হয়। অনেক সময় থানার কর্মকর্তারা অভিযোগকারীদের মামলা না করতে পরামর্শ দেন। অভিযোগকারীকে আপসরফারও প্রস্তাব দেয় থানা পুলিশ। জানা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিকটিম ক্ষমতাসীনদের ভয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে সাহস করেন না। অনেক সময় অভিযোগ দায়ের করলেও কাজ হয় না। এভাবে প্রতিদিনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নানা ধরনের অভিযোগ আসে। কিন্তু অপরাধীরা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী হওয়ায় তা আমলে নেয়া হয় না। একটি সূত্র জানায়, প্রতিদিন গড়ে থানা পুলিশ এবং র্যাবের কাছে ভুক্তভোগীরা ৪ শতাধিক অভিযোগ করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা আমলে নিতে পারছে না পুলিশ ও র্যাব। আবার অনেক সময় আমলে নিলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনি পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকছে রাজনৈতিক চাপে। এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের এক সিনিয়র কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগের কথা স্বীকার করলেও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। বেশিরভাগ অভিযোগই যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ব্যতিক্রমও রয়েছে। স্থানীয় বখাটে মাস্তান চাঁদাবাজি, দখলবাজি করে রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে থাকছে। ক্ষমতাসীন দলের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে ইচ্ছা থাকলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। কোনোমতেই তাদের সামাল দেয়া যাচ্ছে না। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখল, বাড়ি দখল, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা এখন অতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও হামলা, দখল বা সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছেই। আর এসব ঘটনায় মদত দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। শুধু দখলবাজি, চাঁদাবাজিই নয়, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টি, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বাণিজ্য, হল দখল, কেন্টিন-ডাইনিং দখল, টেন্ডার সন্ত্রাসসহ এমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই, যা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা করছে না। শিক্ষাঙ্গনের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দাপটে অসহায় স্থানীয়রা। ব্যবসা-বাণিজ্য, হাট-বাজার থেকে শুরু করে খেলার মাঠ পর্যন্ত তারা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এসব নিয়ে প্রায়ই বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। দখল এবং নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ, হামলা ও খুনের মতো ঘটনাও ঘটছে। শুধু যে প্রতিপক্ষের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে তা-ই নয়, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন দল এবং উপদলের মধ্যেও দখলবাজি নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। চাঁদার ভাগবাটোয়ারা, টেন্ডারবাজি নিয়ে খুন-খারাবি এখন প্রায়ই সংবাদপত্রের শিরোনাম হচ্ছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রী ও মহিলারাও পিছিয়ে নেই। কয়েকদিন আগেই ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের খবর সংবাদপত্রে ফলাও করে প্রচার হয়েছে। ছাত্রলীগের একাংশের নেত্রীরা অপর অংশের বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্য, সিট দখল এবং ছাত্রীদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করার যে অভিযোগ করেছে তাতে সুধীমহল হতবাক। ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর ইডেন কলেজে এখনও অস্থিরতা বিরাজ করছে। অনেক ছাত্রী নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় হল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সুষ্ঠু পরিবেশের দাবিতে ছাত্রীরা মানববন্ধন, মৌন মিছিল, অধ্যক্ষের কাছে স্মারকলিপি পেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব আর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কয়েকশ’ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণেও হামলা, মামলা, পাল্টা মামলা ও হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। ছাত্র সংঘর্ষের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হয়। এর মধ্যে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান একাধিকবারও বন্ধ হয়েছে। এ সরকারের আমলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ১৫ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি নেই। এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক নিগৃহীত হয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, রাজশাহী পলিটেকনিক্যাল, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় বড় কলেজ, ইনস্টিটিউটগুলোতে একাধিকবার সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও হয়েছে। গত ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে ছাত্রমৈত্রীর নেতা রেজানুল ইসলাম চৌধুরী সানিকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় মারা যান মেধাবী ছাত্র আবু বকর। গত বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হাতে ছাত্রশিবির হল শাখার সভাপতি শরিফুজ্জামান নোমানী মারা যান। কিছুদিন আগে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের হাতে মারা যান ফারুক হোসেন নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী। গত ১৪ মার্চ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে যশোর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রিপন হোসেন দাদা নিহত হন। তার আগে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মারা যান ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগ নেতা আবুল কালাম আসাদ, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা পলাশ জমাদ্দার। বিভিন্ন ঘটনায় আহত হয় হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী।
গত ১১ মার্চ আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা যশোরের সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম ও ইউসুফ আলীকে বেধড়ক পিটিয়েছে। হামলার শিকার হয়েছেন প্রধান শিক্ষক আবদুর কাদেরও। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয় আবদুল কাদেরকে। এমন বহু ঘটনা ঘটিয়েছে যুবলীগ-আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/22/23876

Saturday 20 March 2010

জনজীবন বিপর্যয়ের মুখে: জন্মদিনে এরশাদ




Sat 20 Mar 2010 11:48 PM BdST

rtnnঢাকা, ২০ মার্চ (আরটিএনএন ডটনেট)-- ভবিষ্যতে পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ বলেছেন, বর্তমানে জনজীবন বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। দেশে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি কমেনি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

শনিবার বনানীতে এরশাদের নিজ কার্যালয়ে জন্মদিন উপলক্ষে দলের নেতা-কর্মীরা ফুল দিতে আসে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।

এরশাদ বলেন, ‘আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, এদেশে কোন একদিন প্রাদেশিক ব্যবস্থা চালু হবে। ঢাকা শহরকে মানুষের বাসযোগ্য করতে হলে এই ব্যবস্থা চালু করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি কমেনি। জনজীবন এখন বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে।’

এ সময় ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।

এর আগে ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে সকাল ৯টায় পল্লীবন্ধু ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্ক ভবনে এরশাদকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান দলের নেতা-কর্মীরা।

এরপর দলের পক্ষে জন্মদিন উপলক্ষে সকাল ১০টায় গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন এরশাদ।

এছাড়া জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে দুপুর ১২টায় জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে ৮০ পাউন্ডের কেক কাটেন এরশাদ।

এ সময় প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ জাতীয় পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে একটি স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন তিনি।

আরটিএনএন ডটনেট/এসআই/এমআই_ ২২৪৬ ঘ.

http://www.rtnn.net/details.php?id=22800&p=1&s=1

মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারী জামায়াতীরা ফাঁসির দড়ি এড়াতে পারবে না: মতিয়া



Sat 20 Mar 2010 11:08 PM BdST

rtnn ঢাকা, ২০ মার্চ (আরটিএনএন ডটনেট)-- কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, জামায়াতকে শুধু নিষিদ্ধ নয়, জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের বিচারও করা হবে।

মহানবী হযরত মুহাম্মাদকে (স:) এর সঙ্গে জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে তুলনার অভিযোগে শনিবার রাজধানীতে মহানগর আওয়ামী লীগের এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘জামায়াত রাসূলে পাকের সঙ্গে নিজামীর তুলনা করে। এরা ধর্মের নামে ব্যবসা করে। ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং ধর্মের চরম অবমাননা করে।’

জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের নিন্দা করে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতেই তারা এখন উঠে পড়ে লেগেছে।

মতিয়া বলেন, ‘বাংলা ভাই ফাঁসির দড়ি এড়াতে পারেনি। আর মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারী এবং মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্টকারী জামায়াত নেতারাও আইনের ওই দড়ি এড়াতে পারবে না। সেদিন আর বেশি দূরে নয়।’

প্রতিবাদ সভা শেষে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে তাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করে।

এছাড়া অনুষ্ঠানে মহানবী হযরত মুহাম্মাদকে (স:) এর সঙ্গে নিজামীর তুলনা এবং ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানায় আওয়ামী লীগ নেতারা।

আরটিএনএন ডটনেট/এমইউএ/এমআই_ ২২০৬ ঘ.

http://www.rtnn.net/details.php?id=22797&p=1&s=1

জামায়াতের অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে: কামরুল



Fri 19 Mar 2010 4:09 PM BdST

rtnn ঢাকা, ১৯ মার্চ (আরটিএনএন ডটনেট)-- জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতা দানকারীরা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে জানিয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী ও জঙ্গিবাদের অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারী নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদেরকে প্রথম আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে বলেও জানান তিনি।

শুক্রবার ঢাকা মহানগর ১৪ দলের সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

যুদ্ধাপরাধ বিচার ঠেকাতে জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বড় অংকের টাকা নিয়ে মাঠে নামবে উল্লেখ করে আইন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যে সব প্রতিষ্ঠান জঙ্গিবাদ ও জামায়াতের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় অর্থের যোগান দেয় তাদেরকে অবশ্যই সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।’

তিনি বলেন, ’৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধ যেই করে থাকুক না কেন তাকে বিচারের আওতায় আনা হবে।

সরকারের প্রতি যুদ্ধাপরাধ বিচারে দেশি-বিদেশি সমর্থন রয়েছে জানিয়ে কামরুল বলেন, এতদিন যারা জামায়াতের রাজনীতিতে পৃষ্ঠপোষকতা দিত এখন তারা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের শাসনামলেই যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হবে এতে কোন সংশয়ের অবকাশ নেই। এ বিচারে প্রথমেই একটা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। সেখানে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের সর্ব প্রথমে বিচার করা হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজ জামায়াত যাতে ব্যাহত করতে না পারে সেজন্য তাদের অর্থের উৎস বন্ধ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।

সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে এদেশে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব কিছু মিলে জামায়াত এখন দিশেহারা অবস্থায় রয়েছে।

অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আরটিএনএন ডটনেট/আইএইচ/এমআই_ ১৫০৩ ঘ.

http://www.rtnn.net/details.php?id=22754&p=1&s=1

Thursday 18 March 2010

পিরোজপুরে আটক বোরখা পরা তিন তরুণী জামিনে মুক্ত : জেলগেটে ছাত্রলীগের ভাঙচুর

২২ জুলাই, বুধবার (আরটিএনএন)- পিরোজপুরে আটক বোরখা পরা তিন তরুণী আজ বুধবার সন্ধ্যায় জামিনে মুক্তি পেয়েছে। দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে জেলা জজ তাদেরকে জামিনে মুক্তি দেয়ার আদেশ দেন।

এরা হলেন- ছাত্রী সংস্থার সদস্য ও কলেজ ছাত্রী সৈয়দা ফৌজিয়া আক্তার ও জেসমিন নাহার এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ও স্থানীয় জামায়াত নেতার মেয়ে তানিয়া আক্তার।

তাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করতে কারাগারের সামনে অসংখ্য মানুষ ভীড় জমায়। এ সময় সদ্য মুক্তিপ্রাপ্তরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তাদেরকে পুলিশ প্রহরায় বাসায় পৌছে দেয়া হয়। এসময় জেলগেটে ছাত্রলীগ কর্মীরা ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এতে ৩ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এরআগে দুপুরে আদালতের এ আদেশের ফলে আটক তিন তরুণীর মুক্তি পেতে আর কোন বাঁধা নেই বলে জানিয়েছিলেন তাদের আইনজীবীরা।

গত ৩ জুলাই স্থানীয় ছাত্রলীগের বখাটে কর্মীদের প্ররোচনায় পুলিশ এ তিন পর্দানশীল তরুণীকে ৫৪ ধারায় আটক করে। পরে তাদের বিরুদ্ধে জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়। এমনকি আদালতের অগচোরে আটক তিন তরুণীকে ঢাকায় এনে টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার কোন অভিযোগের সত্যতা পায়নি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরে পুলিশ চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করে।

এদিকে বিনা দোষে ছাত্রী সংস্থার এ তিন কর্মীকে কারাগারে আটক রাখা কেন অবৈধ হবেনা তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ আজকের (বুধবার) মধ্যে এই তিন তরুণীকে জামিন দিতে নিম্ন আদালতকে নির্দেশনা দেন। একইসঙ্গে তাদের আটক করাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, সৈয়দা ফৌজিয়া আক্তার ও জেসমিন নাহার ও তানিয়া আক্তারকে গত ৩ জুলাই পথিমধ্যে উত্যক্ত করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের স্থানীয় বখাটে কর্মীরা। এসময় তারা ছাত্রলীগ কর্মীদের হাত থেকে রেহাই পেতে এক মাদ্রাসায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরে তাদেরকে জঙ্গি বলে স্থানীয় পুলিশ অফিসারকে দিয়ে গ্রেপ্তার করায় ছাত্রলীগের ওই বখাটে কর্মীরা।

এই তিন তরুণকে গ্রেপ্তারের পর থেকে দেশের আলেম সমাজ পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। তারা অবিলম্বে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের নেতাকে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

http://www.rtnn.net/details.php?id=16592&p=1&s=1

যুদ্ধাপরাধ কি, কারা যুদ্ধাপরাধী?

Somewhereinblog | ০৫ ই নভেম্বর, ২০০৭ সকাল ৯:২১

এই ব্লগে এবং বাংলাদেশের রাজনীতির সাম্প্রতিক একটা বিষয় হল যুদ্ধাপরাধ। একদল মানুষকে অহড়হ যুদ্ধাপরাধ নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। তাঁরা সব সময় একবার অমুককে আরেকবার তমুককে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কেউ কেউ তাদের বিচারের দাবী করেন, যার সাথে আমি নিজেও একমত পোষণ করি। কারণ যুদ্ধাপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধ। এ ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একবার হয়ে গেলে তখন আর ময়দানে এ বিষয়টা নিয়ে হাউ-কাউ করাও বন্ধ হবে, যা স্থিতিশীল সমাজের জন্য খুবই জ়রূরী। একবার বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে গেলে তখন স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক শিকারীরা তা আর ময়দান ঘোলা করার কাজে ব্যবহার করতে পারবেনা।

আবার কিছু মানুষ আছেন - যারা ফ্যাসিস্ট চরিত্রের অধিকারী - তারা কোন বিচারের দাবী-টাবী করেননা। তাদের অবস্থা হলো কিছু মানুষকে তারা নিজেরা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিহিত করবেন অথবা কোথাও কিছু মানুষ সম্পর্কে পড়েছেন যেখানে তাদেরকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারপর পারলে নিজেরা গিয়েই এদের হত্যা করে আসেন। আসলেই কেউ যুদ্ধাপরাধী কিনা এটা জানা এরা প্রয়োজন বোধ করেন না, এবং বিচার শালিসের দরকারও তাদের অভিধানে নেই। কারন এরা মনাব সভ্যতাকে পিছনের দিকে চালানোর আকাঙ্খী অসভ্য। তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাউকে যুদ্ধাপরাধের তকমা লাগিয়ে নিজেরাই রায় দিয়ে দেন, অপরাধ প্রমাণের কোন প্রয়োজনীয়তা এদের নেই। এ পক্ষটা যুদ্ধাপরাধীদের চেয়েও ক্ষতিকর, কারণ এরা সমাজে ঘৃণা-এবং বিদ্বেষ জিইয়ে রেখে তাকে শতগুনে বাড়াতে সাহায্য করে। সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করে দেয়।
যার যা মত থাকুকনা কেন এ ব্যাপারে কতগুলো বিষয় জানা দরকার সবার। যুদ্ধাপরাধ কি? যুদ্ধে শুধু কোন একটা পক্ষে অংশ নিলেই কি কেউ যুদ্ধাপরাধী হয়ে যায়? যুদ্ধাপরাধী কি শুধু বিজিতদের মধ্যে থাকে, নাকি বিজয়ীদের মাঝেও যুদ্ধাপরাধী থাকতে পারে? এছাড়াও যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবী করেন তারা আসলেই তা আন্তরিকতার সাথে করেন না ময়দান ঘোলা করার জন্য করেন? তারা কি সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার চান? তাদের এই বিচার চাওয়া কি মানবতার ও সুবিচারের স্বার্থে নাকি শুধু তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে?

যুদ্ধাপরাধ কি?
যুদ্ধকালীন সময়ে যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক যুদ্ধের নীতিমালা লংঘন করাই হল সংক্ষেপে যুদ্ধাপরাধ। যুদ্ধের নীতিমালা হল যুদ্ধ সংক্রান্ত ঐ সমস্ত আন্তর্জাতিক আইন যা জেনেভা কনভেনশন সমুহের মাধ্যমে বিশ্বের জাতিসমূহ গ্রহন করতে সম্মত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হল যুদ্ধবন্দী হত্যা, বেসামরিক জনগন হত্যা, ধর্ষণ, আত্মসমর্পনকারী শত্রু সৈন্য হত্যা, গণহত্যা, ইত্যাদি।

যুদ্ধাপরাধী কে?
যে কেউ যুদ্ধকালীন সময়ে উপরোক্ত অপরাধগুলো করবে সেই যুদ্ধাপরাধী।

যুদ্ধে কোন একটা পক্ষে অংশ নিলেই কি কেউ যুদ্ধাপরাধী হয়ে যান বা যুদ্ধাপরাধ থেকে মুক্ত হয়ে যান?
উত্তর হচ্ছে না। শুধুমাত্র কোন একটা পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহন করলেই কেউ যুদ্ধাপরাধী হয়ে যায়না। সুস্পষ্ট ভাবে চিহ্নিত অপরাধ করা ব্যতিরেকে কাউকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা যেতে পারেনা। আবার কোন একটা পক্ষে থাকলে তাকে যুদ্ধাপরাধ করার পরও নিরপরাধ বলা যেতে পারেনা। যুদ্ধাপরাধী যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী সব দল বা গোষ্ঠির মাঝে থাকতে পারে।

স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী কি এক?
না! শুধুমাত্র স্বাধীনতা বিরোধিতা যুদ্ধাপরাধ নয়। আবার স্বাধীনতার পক্ষে থাকা মানেই যুদ্ধাপরাধ মুক্ত থাকা নয়। যুদ্ধের নীতিমালা লংঘন করে যে যুদ্ধ করেছে সেই যুদ্ধাপরাধী।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত কিনা?
হ্যাঁ। কারন এতে করে মানবতা বিরোধী অপরাধের শাস্তি বিধান করা যাবে এবং এধরণের অপরাধ প্রবণদের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করা যাবে। এ বিচার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য নয়, বরং নিতান্তই মানবতা ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে।

এ বিচার কি শুধু এক পক্ষের যুদ্ধাপরাধীদের করতে হবে?
না। সব পক্ষের যুদ্ধাপরাধীরাই সমান অপরাধী। তাদের অপরাধের ধরণের উপর ভিত্তি করে তাদের সবার শাস্তি নির্ধারিত করা উচিত। তারা কোন পক্ষে যুদ্ধ করেছিল এটা বিবেচ্য বিষয় নয়, অপরাধ করেছিল সেটাই বিবেচ্য।

বিঃদ্রঃ যারা মন্তব্য করবেন তাদের জন্য - আমি কোন ধরণের অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য বরদাশ্ত করতে পারিনা। ব্যক্তি আক্রমন আর গালাগালির অভ্যেস যাদের আছে তারা এ ব্লগে অনাকাংখিত।



লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): যুদ্ধাপরাধ?, যুদ্ধাপরাধ? ;
প্রকাশ করা হয়েছে: বিভাগে । সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০০৭ সকাল ৯:২১

Taken from : http://www.somewhereinblog.net/blog/abusamihahblog/28742802

2009 Human Rights Report: Bangladesh:U.S. Department of State



2009 Human Rights Report: Bangladesh
Bureau of Democracy, Human Rights, and Labor
2009 Country Reports on Human Rights Practices
March 11, 2010

Link: http://www.state.gov/g/drl/rls/hrrpt/2009/sca/136085.htm

Wednesday 17 March 2010

সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজের তালিকায় ছাত্রলীগের ২৬০ নেতা-কর্মী

Kalerkantho| ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ চৈত্র ১৪১৬, ১ রবিউস সানি ১৪৩১, ১৮ মার্চ ২০১০
পারভেজ খান
রাজধানীসহ সারা দেশে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের ভাষায়, ছাত্রলীগ এখন বেসামাল। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের মতো তাঁদেরও এখন বড় মাথাব্যথা 'ছাত্রলীগ'। সারা দেশ থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ অভিযোগ আসছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। সারা দেশে অবৈধ অস্ত্রধারী, চাঁদাবাজ ও দখলবাজের গোপন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ২৬০-এর বেশি ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর নাম। গতকাল বুধবার এই তালিকার এক নেতা ঢাকা কলেজের গালিবকে (ছাত্রলীগ, রিপন গ্রুপ) ৫৭ রাউন্ড গুলিসহ পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, সরকার ও দলের উচ্চপর্যায় থেকে কাউকে ছাড় না দেওয়ার কথা বলা হলেও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের কারণে থানা পুলিশের পক্ষে তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ তাদের সামাল দিতে না পারলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে। আর ব্যর্থতার অভিযোগে 'বলির পাঁঠা' হবে পুলিশ। গত কয়েক দিনে পুলিশের বিশেষ শাখা ও সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গোপন তালিকায় উঠে আসা ২৬০-এর বেশি নামের মধ্যে অন্তত ২০ জন রয়েছেন, যাঁরা নেতৃত্বপর্যায়ের। সংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর ক্রমানুসারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও শেরে বাংলানগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
থানা পুলিশের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এবং আরো একটি গোয়েন্দা সংস্থা। থানায় কী ঘটছে না ঘটছে, সে বিষয়ে একটি সংস্থা সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ প্রতিদিনই গোপন প্রতিবেদন দাখিল করে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে। এসব প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয় পুলিশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে। আবার এমন কিছু বিষয় থাকে, যেগুলো অতি গোপনীয় হওয়ায় খোলা আলোচনায় না তুলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ শাখায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এটা পুলিশ ও ওই গোয়েন্দা সংস্থার রুটিন-কাজ।
গত জানুয়ারি পর্যন্ত এসব প্রতিবেদনে উঠে আসা গোপন তথ্য বিশ্লেষণ করে পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, সারা দেশের প্রায় সব বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ছাত্রলীগ দুই ভাগে বিভক্ত। এক গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করেন সভাপতি, আরেক গ্রুপ সাধারণ সম্পাদক। আর এই দুই গ্রুপেরই দল চালানোর খরচ জোগাতে হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। এক কথায় চাঁদাবাজিই ছাত্রলীগ নেতাদের আয়ের একমাত্র উৎস। আর এর বাইরে বিভিন্ন জেলা, থানা ও ওয়ার্ড শাখার কমিটি তো রয়েছেই।
ওই কর্মকর্তাদের মতে, বেশি চাঁদাবাজি আর দখল-সন্ত্রাস হচ্ছে রাজধানী, বিভাগীয় শহর আর জেলা শহরগুলোতে। বিশেষ করে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হোস্টেল বা হল আছে, সেসব এলাকায় চাঁদাবাজিও অনেক বেশি। এতে অতিষ্ঠ সেখানকার ব্যবসায়ীরা। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করারও সাহস নেই তাঁদের। অনেকে থানায় মৌখিক অভিযোগ করেন। কেউ কেউ সাহস করে লিখিত দিলেও থানার ওসি সেটা গ্রহণ না করে বরং আপস করে চলার পরামর্শ দেন। এ ক্ষেত্রে পুলিশের বক্তব্য স্পষ্ট। ইচ্ছে থাকলেও তাদের কিছু করার নেই। কিছু করতে গেলে উল্টো তাদের ওপর নানা ঝামেলা এসে পড়বে। ঝয় আছে চাকরি হারানোরও। কারণ, এ ধরনের উদ্যোগ নিতে গিয়ে গত ১০ বছরে পুলিশের কমপক্ষে ২০০ কর্মকর্তা শাস্তি ভোগ করেছেন এবং করছেন বলে কর্মকর্তারা জানান।
কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, পুলিশ বিভাগে যে অসৎ কর্মকর্তা নেই, তা নয়। পুলিশ যে সব ক্ষেত্রে সঠিক দায়িত্ব পালন করছে, তাও নয়। আবার পুলিশ যে ভালো কিছুই করছে না, সেটাও বলা যাবে না। কিন্তু দেখা যায়, ভালো কিছু করতে গিয়েই বলির পাঁঠা হতে হয় পুলিশকে। এ প্রবণতা আজকের নয়, স্বাধীনতার পর থেকেই চলে আসছে_কখনো কমে, কখনো বাড়ে। গত বিএনপি সরকারের সময় দলীয় সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা চরমে উঠেছিল। বর্তমান সরকারের প্রথম সাত-আট মাস যা ছিল, সেটাকে না হয় সহনীয় ধরে নেওয়া যায়; কিন্তু বর্তমানে যা চলছে, তা সহ্যসীমার বাইরে। কিন্তু ব্যবস্থা নিতে গেলেই ওই পুলিশ সদস্যের পরিচয় গিয়ে দাঁড়াবে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের লোক হিসেবে। আবার ব্যবস্থা না নিলে সরকার পরিবর্তন হলে এ পুলিশের পরিচয় হবে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের লোক হিসেবে।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সাব স্টেশন নির্মাণের টেন্ডার নিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শফিক গ্রুপ ও দেলোয়ার গ্রুপ পরস্পরবিরোধী অবস্থান নেয়। পরে রিপন পোদ্দার নামে এক ছাত্রনেতার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে আছে ছাত্রলীগ মুহসীন হল শাখার সাবেক সভাপতি শফিক আর বরিশাল গ্রুপের মোশারফ। এক-এগারোর পর এই মোশারফ দেশের বাইরে পালিয়ে ছিল। আরেক গ্রুপের নেতা শফিক একসময় শিবির করত বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের তালিকাভুক্ত ২৬০ জনের অন্যতম এফ রহমান হলের ছাত্রলীগ সভাপতি ফারুক সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছে। তারও একটি চাঁদাবাজ গ্রুপ আছে। ফারুক গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক দিন আগে নীলক্ষেতে এক বিরিয়ানির দোকানে গিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় মারধর করে ৮০ বছরের এক বৃদ্ধকে। পরে দোকানমালিক ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও থানাকে জানায়। এ রকম আরো অসংখ্য অভিযোগ আছে ফারুকের বিরুদ্ধে। কিন্তু পুলিশ তাকে সে সময় ওই অভিযোগে গ্রেপ্তার করেনি। পরে সে গ্রেপ্তার হয় এফ রহমান হলের সংঘর্ষের ঘটনায়।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অবস্থা দেখে নিজেই ছাত্রলীগের সাবেক তিন নেতাকে (বর্তমানে আওয়ামী লীগের তিন সাংগঠনিক সম্পাদক) ছাত্রলীগকে গোছানোর দায়িত্ব দিয়েছেন। তাঁদেরই একজন বি এম মোজাম্মেল হক কালের কণ্ঠকে জানান, আজ কেন এ অবস্থা, সে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। খুব শিগগির আগের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা কালের কণ্ঠকে বলেন, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সংঘর্ষ, বন্দুকযুদ্ধ, হল দখলসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ছাত্রলীগ যেভাবে জড়িয়ে পড়ছে, তা দুঃখজনক। বিএনপির শাসনামলে এ সমস্যা ছাত্রদলেও ছিল। অর্থাৎ যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের ছাত্র সংগঠনই এসব করে। বলা যায়, এটা ছাত্ররাজনীতির একটা কলঙ্কিত ঐতিহ্য। এ দূষিত অবস্থা থেকে বের হতে পারছে না তারা। এ জন্য দায়ী অসৎ রাজনীতিবিদ আর লেজুড়বৃত্তির মনোভাবসম্পন্ন কিছু পুলিশ কর্মকর্তা। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন এখানে বেশি। শুধু পুলিশকে দায়ী করে লাভ নেই। কারণ, যে পুলিশ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মতিন চৌধুরীকে আঘাত করেছিল, পরে সেই পুলিশই লাঞ্ছিত করে মোহাম্মদ নাসিমকে। আসলে পুলিশকে দিয়ে করানো হয় এসব।
এই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের নামে যারা সন্ত্রাস করে, তাদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে গ্রেপ্তারের কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু নিজেদের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর এই সদিচ্ছাকে কাজে লাগাচ্ছেন না স্থানীয় নেতারা। আর পুলিশও ওই স্থানীয় নেতাদের কারণে সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী পুলিশের টাইম স্কেল দিয়েছেন, বেতন-বৈষম্য দূর করেছেন, জনবল বাড়াচ্ছেন। এগুলো নিঃসন্দেহে ভালো দিক। কিন্তু এই জনবলের পাশাপাশি মনোবলও বাড়ানো দরকার বলে অভিমত দেন আশরাফুল হুদা।
ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে নাম-পরিচয় প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি নন কোনো পুলিশ কর্মকর্তাই। তাঁদের কথা, চেয়ারে বসে সেটা সম্ভব নয়।
এর পরও কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হয় পুলিশের আইজি নূর মোহাম্মদ এবং র‌্যাবের ডিজি হাসান মাহমুদ খন্দকারের সঙ্গে। দুজনের একই কথা। সন্ত্রাসী যে-ই হোক, সে সন্ত্রাসীই। পুলিশের দৃষ্টিতে তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ নেতারাও গ্রেপ্তার হচ্ছে বলে তাঁরা জানান।

মন্তব্য প্রতিবেদন : এই না হলে দিনবদলের সরকার!

মাহমুদুর রহমান
২০০৮ সালের ২৩ নভেম্বর ডিজিটাল নির্বাচনের আগে আমার দেশ পত্রিকায় ‘নবরূপে বাকশাল’ শিরোনামে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছিলাম। সেই লেখাটির শেষ কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করলে মহাজোট সরকারের ১৫ মাস শাসনকালের চরিত্রটি জনগণের বুঝতে সুবিধা হতে পারে। লিখেছিলাম, ‘দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতায় মার্কিন-ভারত অক্ষশক্তির কাছে এখন বাংলাদেশের গণতন্ত্র কিংবা নাগরিকের মৌলিক অধিকার কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। প্রয়োজন হচ্ছে যে কোনো মূল্যে সর্বাবস্থায় মাথা নাড়াতে প্রস্তুত একটি পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা। কাজেই দুঃসংবাদ হচ্ছে, এবারের একদলীয় সরকারের ১৯৭৫ সালের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কাই অধিক। জরুুরি আইনকে ব্যবহার করে একটি পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে এই অনৈতিক এবং দেশের স্বার্থবিরোধী প্রক্রিয়াকে আওয়ামী লীগের মতো বৈধতা দান করবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত চারদলীয় জোটের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। তবে দেশপ্রেমিক, স্বাধীনতাকামী জনগণকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এবং তা এখনই।’
বিগত ১৫ মাসে প্রমাণিত হয়েছে যে, আমার আশঙ্কা অনুযায়ী এদেশে গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে প্রকৃতই একটি চরম ফ্যাসিবাদী সরকার দেশ চালাচ্ছে। এ সময়কালে নাগরিকের মৌলিক অধিকার যেভাবে হরণ করা হয়েছে তার তুলনা কেবল ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ এবং এক-এগারো’র সরকারের শাসনের সঙ্গে হতে পারে। গত সপ্তাহে ব্যবসায়িক কাজে লন্ডন যাওয়ার দিনেই আমার যে লেখাটি ছাপা হয়েছিল, সেখানেই সরকারের নানারকম অত্যাচারের উল্লেখ থাকায় আজ আর তার পুনরাবৃত্তি থেকে বিরত থাকছি। আমাদের পশ্চিমা মুরুব্বিরা যে নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশে প্রতিদিনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়কে উপেক্ষা করার নীতি গ্রহণ করেছে, তারও উল্লেখ গত লেখাতে রয়েছে। অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রকাশিত সাম্প্রতিক বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ভয়ঙ্কর অবস্থার কিঞ্চিত্ চিত্র স্থান পেয়েছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ। ক’দিন আগেই এই সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী এবং তাদের স্থানীয় তাঁবেদাররা বিএনপিকে সংসদে ফেরানোর জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিল। এদের সম্মিলিত প্রচারণায় মনে হচ্ছিল বিএনপির সংসদে যোগদান না করাটাই বুঝি বাংলাদেশের উন্নয়নে একমাত্র বাধা। বিদেশিদের চাপেই হোক কিংবা সদস্যপদ রক্ষার খাতিরেই হোক, শেষ পর্যন্ত বিএনপি সংসদে ফিরেছে। সাকল্যে আড়াই ডজন সংসদ সদস্যসংখ্যার বিরোধী দল সংসদে ফেরায় দেশ ও জনগণের কী উপকার সাধিত হয়েছে, সেই মূল্যায়নে আমার কোনো গরজ নেই। তবে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে গালিগালাজ করার যে নোংরা সংস্কৃতি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে চালু করেছিলেন, তার জবাবে অপর মরহুম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানও যে এখন একইভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন, এটি প্রকৃতিরই এক ধরনের প্রতিশোধ। বিএনপির সংসদে ফেরার ফলে শেখ হাসিনার নিক্ষিপ্ত ইটের বদলে অন্তত বিএনপির পাটকেল মারার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সেই সত্য অস্বীকারের উপায় নেই। ঠেলায় পড়ে মাননীয় স্পিকার আবদুল হামিদকেও অবশেষে বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তার প্রয়াত নেতার চরিত্রহনন ঠেকানোর জন্য নানা ধরনের কৌশলের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং তার চাটুকাররা যখন অসংসদীয় ভাষায় মরহুম জিয়া ও তার লাশ নিয়ে খিস্তিখেউড় করেছেন, তখন টেলিভিশনের পর্দায় স্পিকারকে বেশ স্মিতমুখেই উপভোগ করতে দেখা গেছে। শেখ মুজিবের একদলীয়, স্বৈরশাসনকে শেষ পর্যন্ত বিএনপির সংসদ সদস্যরা সমালোচনা করার সাহস সঞ্চয় করাতেই এখন স্পিকারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। জনাব আবদুল হামিদ উপায়ান্তর না পেয়ে সংসদের মর্যাদা এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মূল্য উপলব্ধি করতে বাধ্য হয়েছেন এবং সংসদ সদস্যদের মুখের লাগাম টেনে ধরার জন্য মাইক বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তবে বিরোধী দল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের শায়েস্তা করার নিত্যনতুন কৌশল আবিষ্কারে বাংলাদেশে অন্তত আওয়ামী লীগের জুড়ি নেই। অবস্থার চাপে অনেকটা নিরুপায় হয়েই স্পিকার যেহেতু সংসদে জিয়াউর রহমানের চরিত্রহনন প্রকল্প বাস্তবায়নে আগের মতো সহায়তা করতে পারছেন না, সেই মহান দলীয় দায়িত্ব পূরণে এগিয়ে এসেছেন ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী। তার সভাপতিত্বকালীন সরকারি দলের সদস্যবৃন্দ চুটিয়ে গাল দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন স্বাধীনতার এই মহান ঘোষককে। যুক্তি হলো, ডেপুটি স্পিকার তো আর অসংসদীয় বক্তব্য প্রদানের জন্য মাইক বন্ধের সিদ্ধান্ত নেননি। সুতরাং স্পিকার যে ভদ্রলোকের চুক্তি করেছেন সেটি মেনে চলার তার তরফ থেকে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। শেখ হাসিনা বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার মনোনীত করার প্রতিশ্রুতি থেকে কেন সরে এসেছিলেন, শওকত আলীর ভূমিকা দেখার পরও যদি বাংলাদেশের জনগণ সেটি মালুম করতে না পেরে থাকে, তাহলে সেই ব্যর্থতার দায় তাদেরই। মরহুম জিয়াউর রহমানের প্রতি ক্ষমতাসীনদের প্রচণ্ড আক্রোশ এবং তার অব্যাহত চরিত্রহননের উদ্দেশ্য বোঝা দরকার। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমান দুই বিপরীতমুখী ধারার রাজনীতির অবিসংবাদিত প্রতীক। জিয়াউর রহমানকে ঘিরেই এ দেশে স্বতন্ত্র জাতিসত্তা ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী এবং উপনিবেশবাদবিরোধী, আত্মমর্যাদাশীল জনগোষ্ঠীর রাজনীতি আবর্তিত হয়। এই রাজনীতির চর্চা যতদিন এদেশে অব্যাহত থাকবে ততদিন আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারতের বাংলাদেশকে আশ্রিত রাষ্ট্রে পরিণত করার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন যে কোনোভাবেই সম্ভব হবে না, এই সত্যটি আওয়ামী লীগ এবং তাদের বিদেশি মিত্রশক্তি জানে বলেই জিয়াউর রহমানের সত্, দেশপ্রেমিক এবং বীরত্বপূর্ণ ভাবমূর্তি তাদের সকল আক্রমণের নিশানা। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো, জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করে বিএনপি নামক যে দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারা এই মহান ব্যক্তিত্বের দেশপ্রেম, বীরত্ব, সততা এবং রাজনৈতিক দর্শনকে নিজেদের মধ্যে আত্মস্থ তো করেইনি, উপরন্তু জনগণের মধ্যে প্রচার করা থেকেও বিস্ময়করভাবে বিরত থেকেছে। বিএনপির সংসদে ফেরার সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাত্র কিছুদিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকজন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার মধ্যাহ্নের আহার গ্রহণের বিরল সুযোগ হয়েছিল। সেখানে শুনছিলাম এক-এগারোর সমর্থনকারী রাষ্ট্রদূতরা কেমন সমস্বরে একপেশেভাবে সংসদ বর্জনের জন্য বিএনপির নীতিনির্ধারকদের দোষারোপ করছিলেন। সেই মধ্যাহ্নভোজে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও উপস্থিত ছিলেন। আশা করি, সংসদে আওয়ামী লীগের অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ ভূমিকার পর রাষ্ট্রদূতদের সেদিনের সমালোচনার যথোপযুক্ত জবাব এতদিনে বিএনপির নেতারা দিতে পেরেছেন। অবশ্য এটাও সত্য যে, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো তাদের দ্বিমুখী নীতির জন্য সারাবিশ্বেই বিশেষভাবে পরিচিত এবং নিন্দিত। বাংলাদেশ সেক্যুলার রাজনীতির কট্টর সমর্থক এই একচোখা কূটনীতিকরা যে যুক্তি বুঝতে চাইবেন না, সেটাই স্বাভাবিক।
মইনউদ্দিনের জেলখানায় বন্দি অবস্থায় শেখ হাসিনার খাদ্যে ‘স্লো পয়জনিং’ তত্ত্ব এতদিন আমরা তার ব্যক্তিগত চিকিত্সক ডা. মোদাচ্ছের আলী এবং সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর কাছ থেকে শুনেছি। গত বৃহস্পতিবার সংসদে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাকে স্লো পয়জনিং করে হত্যার প্রচেষ্টার অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। এই দাবির পর বিষয়টিকে কেবল রাজনৈতিক প্রচারণা হিসেবে দেখার আর সুযোগ নেই। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার জনসভায় বোমা হামলার মামলায় বহুসংখ্যক ব্যক্তিকে তদন্তের নামে দীর্ঘদিন ধরে বিনাবিচারে আটক রাখা হয়েছে, বারবার রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হচ্ছে, বিভিন্ন সুশীল(?) মিডিয়ায় প্রচারণা চালিয়ে কোনোরকম সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই এই মামলায় বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দকে জড়ানোর অপচেষ্টা চলছে এবং সর্বশেষ একটি মুখোশধারী দলবাজ সংগঠনের অনুষ্ঠানে প্রধান অভিযুক্ত আসামি মুফতি হান্নানের কথিত জবানবন্দির সিডি তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের সহায়তায় প্রদর্শিত হয়েছে, যার মাধ্যমে তারেক রহমানকেও বোমা হামলার ষড়যন্ত্রে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী, ২১ আগস্ট বোমা হামলার মূল লক্ষ্য ছিলেন শেখ হাসিনা, যদিও মহান আল্লাহতায়ালার মেহেরবানিতে কানের কিছু সমস্যা তৈরি হওয়া ছাড়া তিনি অক্ষত থাকতে পেরেছেন। আইন কী বলবে জানি না, তবে খাদ্যে বিষপ্রয়োগ এবং বোমা হামলা উভয়ই আমার দৃষ্টিতে হত্যাপ্রচেষ্টা। একটি হত্যাপ্রচেষ্টার রহস্য উদ্ঘাটনে সরকার অতিমাত্রায় সচেষ্ট হলেও অপর হত্যাপ্রচেষ্টার ব্যাপারে এতটা চুপচাপ কেন, সংসদে শেখ হাসিনার দাবির পর এই প্রশ্ন জনমনে উত্থাপিত হতে বাধ্য। তত্কালীন সরকারপ্রধান ড. ফখরুদ্দীন, সেনাপ্রধান জেনারেল মইন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেনারেল এমএ মতিনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই হত্যাপ্রচেষ্টার অভিযোগের দায় এড়াতে পারেন না। কাজেই সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের বিশ্বস্ততা প্রমাণের জন্য অনতিবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিষপ্রয়োগে হত্যাপ্রচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের হওয়া উচিত। আর ক্ষমতাসীনরা তাদের ডিজিটাল নির্বাচনী আঁতাতের বাধ্যবাধকতায় যদি তাদের জরুরি মিত্রদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়, তাহলে বিরোধী দলের কাছ থেকে জনগণ প্রত্যাশা করবে যে অন্তত তারা ঘোষণা করবে ভবিষ্যতে কখনও বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ লাভ করলে একজন জাতীয় নেতাকে হত্যার হীন প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই বিচার করা হবে।
নিজমুখে স্লো পয়জনিংয়ের মতো গুরুতর অভিযোগ আনার দিনেই সংসদে শেখ হাসিনা আরও দাবি করেছেন, বিএনপি তাদের শাসনামলে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বাজারে ছেড়ে দিয়ে নাকি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এই অভিযোগের জবাব দেয়ার দায়িত্ব প্রধান বিরোধী দলের নীতিনির্ধারকদের। তবে অর্থনীতিবিদ না হলেও প্রায় তিন দশক ধরে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিজ্ঞতা থেকে শেখ হাসিনার এই নতুন তত্ত্ব প্রসঙ্গে আমার মনে কয়েকটি প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়লে মুদ্রাস্ফীতি যে বৃদ্ধি পাবে এটা অত্যন্ত খাঁটি কথা। প্রশ্ন হলো, বিএনপি কোন পদ্ধতিতে টাকা ছাড়ছে? তারা কি রাতের আঁধারে লোকের হাতে হাতে নগদ টাকা বিলি করছে? নাকি দুর্নীতিলব্ধ টাকা দিয়ে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বাজার থেকে কিনে নিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে মূল্যবৃদ্ধি ঘটাচ্ছে? যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করেই থাকে, তাহলে সেই বিপুল পরিমাণ পণ্য কোথায় গুদামজাত করছে? এত গুদাম বাংলাদেশে কোথায়? শেষ প্রশ্ন হলো, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বিএনপির এই অপতত্পরতা উদ্ঘাটন অথবা আটকাতে পারছে না কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর এ-জাতীয় বায়বীয় অভিযোগ উত্থাপন সরকারের ব্যর্থতা ঢাকার দুর্বল প্রচেষ্টা ও দেশের দারিদ্র্যক্লিষ্ট জনগণের সঙ্গে তামাশা হিসেবেই বিবেচিত হবে। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ১৯৭২ সাল থেকেই এদেশের জনগণের দারিদ্র্য এবং সরলতাকে পুঁজি করে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে অব্যাহতভাবে প্রতারণা করেই চলেছে।
এবার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে আসা যাক। পেট্রোবাংলা কর্তৃক শেভরনকে বিনা টেন্ডারে ৩৭০ কোটি টাকার কাজ প্রদানসংক্রান্ত দুর্নীতির খবর আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার অপরাধে বিগত তিন মাস ধরে রাষ্ট্রযন্ত্র এবং ক্ষমতাসীন দলের সবধরনের নির্মম নির্যাতনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছি। এ প্রসঙ্গে ‘সততায় পারবেন না, প্রধানমন্ত্রী’ এবং ‘দুদক নামের পুতুল’ শিরোনামে দুটি মন্তব্য প্রতিবেদনও লিখেছি। দেরিতে হলেও উচ্চআদালতের সংবিধান প্রদত্ত মানবাধিকার রক্ষায় যথাযথ ভূমিকার কারণে আমার বিদেশযাত্রা আটকাতে না পেরে, সরকার তার সর্বশেষ অস্ত্রটি নিক্ষেপ করেছে। এ মাসের ৮ তারিখে আদালতের রায় নিয়ে লন্ডনযাত্রার একদিন পর ১০ তারিখে সরকারের আজ্ঞাবহ দুদক পত্রবাহক মারফত একটি অভিযোগপত্র আমার বাসায় প্রেরণ করে। সর্বৈব মিথ্যা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এখতিয়ারবহির্ভূত বিচিত্রসব অভিযোগ সংবলিত সেই পত্রে আমাকে ১৬ তারিখে দুদক কার্যালয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। পত্রের অভিযোগগুলো সবই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ১৭ জানুয়ারি তারিখের তদন্ত-প্রতিবেদনে যে কল্পকাহিনী বয়ান করা হয়েছে, তারই পুনরুল্লেখমাত্র। প্রতিটি অভিযোগের জবাব এই আমার দেশ-এর পাতাতে আমি আগেই দিয়েছি। সরকার হয়তো ধারণা করে নিয়েছিল, বিদেশে অবস্থানরত সময়ে দুদকের আনুষ্ঠানিক নোটিশ পেলে আমি আর দেশে না ফিরে এই সরকারের বাকি সময়টা প্রবাসী জীবনযাপন করার সিদ্ধান্ত নেব। বর্তমান সরকারপ্রধানসহ অন্যান্য কর্তাব্যক্তি জরুুরি সরকারের আমলে যেভাবে বিদেশে পালিয়ে ছিলেন, সম্ভবত আমাকেও তারা একই ধাতুর তৈরি ভেবে নিয়েছেন। তাদের বোঝা উচিত ছিল দুর্নীতি না করলে বুকের পাটা একটু চওড়াই হয়ে থাকে। প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়ে গেল, যে কোম্পানিতে চাকরি করার বিনিময়ে প্রাপ্ত বেতনাদি নিয়ে দুদক আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা সাজাতে গলদঘর্ম হচ্ছে, সেই একই প্রতিষ্ঠান থেকেই বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং সরকারের অন্যান্য কর্তাব্যক্তির অর্থকড়িসহ নানারকম সুবিধা চাকরিরত অবস্থায় স্বচক্ষে নিতে দেখেছি। সময়-সুযোগমত সেসব কাহিনী জনগণকে জানানো যাবে। এক-এগারোর সময় এসব কাহিনী তথ্যপ্রমাণসহ বিশেষ স্থানে জানিয়ে সামরিক জান্তার বিশ্বাসভাজন হওয়া অত্যন্ত সহজ ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের মতো এতটা নিচে নামতে রুচিতে বেধেছিল। যা-ই হোক, দুদকের চিঠি দেয়ার সংবাদ পাওয়ার পর আমি না পালিয়ে বরং প্রত্যাবর্তনের নির্ধারিত দিনের একদিন আগেই অর্থাত্ ১৪ মার্চ দেশে ফিরেছি এবং দুদকের নোটিশের যথাযথ জবাবও ইতোমধ্যে প্রেরণ করেছি। সরকারের আজ্ঞাবহ দুদকের কর্তাব্যক্তিদের জন্য আমি একপ্রকার করুণাই বোধ করি। এদের অবস্থা এতটাই নতজানু যে, তথাকথিত স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের ভড়ং দেখানোর সাহসও আর অবশিষ্ট নেই। শেখ হাসিনার একসময়ের সচিব যেদিন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, সেদিনই প্রকৃতপক্ষে দুদকের কফিনে শেষ পেরেকটি মারা হয়ে গেছে। বিভিন্ন উত্স থেকে শুনতে পাই যে, বিশেষ সংস্থায় কর্মরত বিদেশি তাঁবেদার গোষ্ঠীই নাকি সেই এক-এগারোর সময়কালীন অবস্থার মতোই পেছন থেকে দুদক চালিয়ে থাকে। একসময়ের দেশপ্রেমিকদের আত্মা কত সহজেই না শয়তানের কাছে বিক্রি হয়ে গেল! বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি এখন বিদেশি শক্তির স্বার্থে বিদেশি শক্তির দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে। এই বৈরী পরিস্থিতিতে যারাই জনগণ ও রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করবে, তাদেরই অবধারিত নির্যাতনের শিকার হতে হবে। এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমি এক-এগারোর পর আমার কর্তব্য স্থির করেছিলাম। আল্লাহ যতদিন হায়াত দিয়েছেন, ততদিন সাম্রাজ্যবাদী এবং আধিপত্যবাদী শক্তির বিরোধিতা করে যাব সর্বশক্তি দিয়ে। বাংলাদেশকে নিয়ে কাছের ও দূরের পরাশক্তির সব যড়যন্ত্র মোকাবিলা করে তাদের প্রতিরোধের জন্য জনগণের কাছে ডাক দিয়ে যাব। সাধ্যমত চেষ্টা করব তাদের সচেতন করে তুলতে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/18/23323

Thursday 11 March 2010

সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার কারণে বিটিভিতে ৪০ মিনিট পরে এশার আজান

স্টাফ রিপোর্টার
জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতার কারণে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) এশার আজান ৪০ মিনিট দেরিতে প্রচার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সংসদে গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিট থেকে ৮টা ১০ মিনিট পর্যন্ত বক্তৃতা করেন। তার এ বক্তৃতা বিটিভি সরাসরি প্রচার করছিল। বিটিভির সময়সূচি অনুযায়ী গতকাল রাত সাড়ে ৭টায় এশার আজানের নির্ধারিত সময় থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার পর বিটিভি এ আজান প্রচার করে। সংশ্লিষ্টরা জানান, জরুরি যে কোনো অনুষ্ঠান থাকলেও বিটিভি যথাসময় আজান প্রচার করে থাকে। এ বিষয়ে বিটিভি প্রোগ্রাম সেকশনে জানতে চাইলে দায়িত্বরতা জানান, বিটিভি সব নামাজের আজানই যথা সময় প্রচার করে থাকে। দিনে চারবার আজান প্রচার করা হয়। জোহর ১২টা ৪৫ মিনিটে, আসর সাড়ে ৪টায়, মাগরিব ৬টা ১২ মিনিটে এবং এশা সাড়ে ৭টায় প্রচার হয়। তবে গতকাল সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের কারণে আজান কিছু সময় পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/12/22398

Wednesday 10 March 2010

আইনি হাতের বেআইনি মার!: থানার হেফাজতে বন্দির মৃত্যু

পারভেজ খান, Kalerkantho, ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফাল্গুন ১৪১৬, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৩১, ১১ মার্চ ২০১০
ঢাকার রমনা থানার হেফাজতে গত মঙ্গলবার জাকির নামে এক বন্দি মারা যাওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগের ঘটনা। মতিঝিল থানার পুলিশ মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবককে ধরে থানায় নিয়ে হাজতে আটকে রাখে। তাঁর কাছে দাবি করা হয় ২৫ হাজার টাকা। অভিযোগ, যুবকের মোটরসাইকেল একটি প্রাইভেটকারকে আঘাত করে খানিকটা ক্ষতি করেছে। ওই প্রাইভেটকারটিও পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। মালিককে মামলা করতে বলে। কিন্তু মালিক পুলিশের মনোভাব আঁচ করতে পেরে মামলা না করে থানা থেকে চলে যান। যাওয়ার আগে নিছক দুর্ঘটনা মেনে নিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন মোটরসাইকেলচালককে।
ভদ্রলোক চলে গেলেও পুলিশ নাছোড়বান্দা। যুবককে টাকা দিতেই হবে। দুই ঘণ্টা সময় আর শ্রম নষ্ট করেছে পুলিশের। যুবকও নাছোড়বান্দা। তিনি কোনো টাকা দেবেন না। ব্যস। চটে যান থানার সেকেন্ড অফিসারসহ তিন পুলিশ সদস্য। বেধড়ক মারধর করা হয় যুবককে। মাটিতে ফেলে বুট দিয়ে থেঁতলানো হয় শরীর। থানার ভেতরে হাজতে পুরে লাঠি দিয়ে তুলোপেটা করা হয় আরেক দফা। শেষে পুলিশের হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করে প্রাণভিক্ষা চান যুবক। খবর পেয়ে যুবকের এক পরিচিত পুলিশ সদস্যও থানায় আসেন। তিনি পল্টন থানার এসআই। শেষ পর্যন্ত তাঁর অনুরোধে এবং নগদ আট হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয় যুবককে। যুবক এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কথা বলতে ও শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর।
এ ঘটনাটি মতিঝিল থানার একটি খণ্ডচিত্র মাত্র। এ রকম ঘটনা কোন থানায় না ঘটছে! রাজধানীর যেকোনো থানার সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে বা কিছু সময় কান পেতে থাকলে আর্তনাদ ভেসে আসতে শোনা যাবে। ডিবি বা সিআইডি পুলিশের ভেতরের খবরও এক। পুলিশের এই বেপরোয়া আচরণের কারণে থানা বা কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে চলেছে। যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের পরিবার থেকে অভিযোগ তোলা হয়, পুলিশের নির্যাতনেই এই মৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু পরে পুলিশি ও আইনি ঝামেলার ভয়ে অনেকেই মামলা করেন না। তবে অনেক সময় ঘটনাগুলো প্রচারমাধ্যমে চলে আসে। ছাপা হয়, তোলপাড় হয় কিন্তু পরিবর্তন আসে না পুলিশের ওই আচরণের। পুলিশের সাফ কথা_জিজ্ঞাসাবাদে মারধরের কোনো বিকল্প নেই। মারধর করলে টাকা আর তথ্য দুটোই সহজে মেলে। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেই এসব তথ্য জানা গেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাব মতে, প্রতি বছর পুলিশ ও কারা হেফাজতে মারা যাচ্ছে ৭০ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত মারা গেছে ১০ জন। গত ২৮ জানুয়ারি শাহবাগ থানার এক বন্দি মারা যান আদালতের এজলাস কক্ষে। এর আগে কেরানীগঞ্জ থানায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্দহত্যা করেন এক রিকশাচালক। দুটি মৃত্যুর ঘটনায়ই অভিযোগ ছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। সব শেষ রমনা থানা হেফাজতে মঙ্গলবার জাকিরের মৃত্যু।
পুলিশ আইনে নেই : অথচ এই মারধরের ব্যাপারে পুলিশ আইনে স্পষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা আছে। মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্দিকে মারধরের বিন্দুমাত্র অধিকার কোনো পুলিশের নেই। বন্দির কাছ থেকে তথ্য বের করতে হবে ঘটনার সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে, প্রকাশ্যে বা গোপনে তদন্ত করে। মারধর দূরে থাক, কাউকে ভয়-ভীতিও দেখানো যাবে না। এ সবের আইনগত বিধান নেই। তিনি বলেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে, সবাই আইনের সমান আশ্রয়ের অধিকারী। মানবাধিকার সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের পাঁচ অনুচ্ছেদে বলা আছে, কাউকে নির্যাতন করা যাবে না কিংবা কারো প্রতি নিষ্ঠুর অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবে পুলিশ এর কোনোটাই মানছে না।
এলিনা খান আরো বলেন, বরং বলা যায়, পুলিশের এই আচরণের কারণে বিচার চলাকালে মামলাটির আরো ক্ষতি হয়। মামলা থেকে মূল আসামি বা অপরাধী রেহাই পেয়ে যায়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসক এবং কয়েকজন কর্মচারী জানান, প্রতিদিন কম করে হলেও ২৫-৩০ জন বন্দিকে পুলিশ আহত অবস্থায় এখানে নিয়ে আসে। আসে র‌্যাব সদস্যরাও। আহতরা সবাই মারধরের শিকার। হাসপাতালে তাদের জরুরি চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কখনো কখনো ভর্তিও করা হয়।
মারের বিকল্প নেই! : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, পুলিশ প্রবিধান, সংবিধান, মানবাধিকার, আইন-কানুন যাই বলুন, মারধরের কোনো বিকল্প নেই। সেটা টাকার জন্যই হোক, আর তথ্য আদায়ের জন্যই হোক। ভালো ব্যবহার করলে কোনোটাই আসবে না। তা ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এখন পর্যন্ত আধুনিক কোনো ব্যবস্থা আসেনি। পুলিশ সৃষ্টির পর সেই যে হাতে লাঠি তুলে দেওয়া হয়েছে, এখনো সেই লাঠিই জিজ্ঞাসাবাদের প্রধান অস্ত্র।
পুলিশ কর্মকর্তারা আরো জানান, তাঁরা আইনগতভাবে পরিষ্কার থাকার জন্য কাউকে ধরে থানায় এনে হাজতে ঢোকানোর আগেই এক দফা ধোলাই দিয়ে নেন। এরপর থানায় জিডি করে রাখা হয় যে, গ্রেপ্তারের সময় ধস্তাধস্তি বা পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে সে আহত হয়েছে। অনেক সময় আসামি গণধোলাইয়ে আহত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। জিডি করে বন্দিকে নেওয়া হয় কোনো সরকারি হাসপাতালে। সেখানেও তাঁকে একইভাবে নথিভুক্ত করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থানায় আনা হয়। এভাবেই পুলিশ রক্ষাকবচ হিসেবে তার হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয় থানার জিডি আর চিকিৎসকের সার্টিফিকেট। এরপর বন্দিকে থানায় এনে যত খুশি পেটাও, কারো কিছু বলার নেই। মরে গেলেও সমস্যা নেই। গণধোলাই বা ধ্বস্তাধ্বস্তিতে আহত হওয়ার কথা আগেই বলা আছে। আছে চিকিৎসকের সনদ।
আহত বললেই বিপদ : পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, কোনো বন্দিকে থানা হেফাজত থেকে আদালতে নেওয়া হলে জেলহাজত কর্তৃপক্ষ বন্দিকে জিজ্ঞাস করে, সে অসুস্থ কি না বা তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন আছে কি না। বন্দি আঘাতের কথা বললে তাঁকে আর আদালতে হাজির না করে চিকিৎসার জন্য পুলিশ পাহারায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। ফলে ওই দিন আর বন্দির জামিনের কোনো সুযোগ থাকে না। বরং উল্টো সে চলে যায় আবার পুলিশ হেফাজতে। এ কারণে বন্দি অসুস্থ হলেও তা সে ভয়ে গোপন রাখে। এ কারণেই পুলিশের হাতে প্রহৃত হয়ে অনেকে কারাগারে মারা যান।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আসামিকে মারধর করা হয় রিমান্ডে নিয়ে। এ কারণে বিচারকও অনেক সময় রিমান্ডের আদেশ দিয়ে পুলিশকে মারধর না করা বা সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেন। অনেক ক্ষেত্রে তো আসামিকে রিমান্ড না দিয়ে কারাফটকে এসে পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত।
পেটানোর কত পদ্ধতি : পুলিশ আসামিদের সাধারণত লাঠি দিয়ে বেপরোয়া পেটায়। এর বাইরে মারধরের যেসব পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে সেগুলো হচ্ছে_ হাত-পা একসঙ্গে বেঁধে, মাঝখানে লাঠি দিয়ে বাদুড়ের মতো করে ঝুলিয়ে পায়ের তলায় লাঠিপেটা করা। আরেক ধরনের নির্যাতন পুলিশে বহুল প্রচলিত। পুলিশ এই পদ্ধতিকে ওয়াটার থেরাপি বলে। হাত-পা বেঁধে মাটিতে ফেলে বুকের ওপর পা চেপে মুখে গামছা বেঁধে তার ওপর পানি ঢালা হয়। এই নির্যাতনটি খুবই কষ্টকর। অনেক সময় বন্দিদের ২৪ ঘণ্টা চোখ বেঁধে মাটিতে ফেলে রাখা হয়। আরেকটি নির্যাতন হচ্ছে_বৈদ্যুতিক শক। এই নির্যাতনে ব্যবহার করা হয় পুরনো দিনের হাতাওয়ালা টেলিফোন সেট। এ ছাড়া হাতের আঙুলে সুঁই ফোটানো, প্লাস দিয়ে নখ উপড়ে ফেলা, পায়ুপথে গরম ডিম দেওয়া, হাত বেঁধে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখাসহ নানা কিসিমের নির্যাতন তো রয়েছেই। পুলিশের বাইরে অন্য সংস্থাগুলোর কাছে আছে বৈদ্যুতিক চেয়ারসহ আরো কিছু আধুনিক যন্ত্র। এর সবই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অতিমাত্রায় হলে তা মৃত্যুও ডেকে আনে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক আফসার উদ্দিন ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফিরোজ আহমেদ বলেন, বৈদ্যুতিক শক ও গামছা বেঁধে মুখে পানি ঢালা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এতে হৃদরোগ বা ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯০ শতাংশ। তাছাড়া পুলিশের এই জ্ঞান নেই যে, কোথায় আঘাত লাগলে মৃত্যু ঘটতে পারে। তাই বেপরোয়া লাঠিচার্জও অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

নাম বদলে আমজনতার কী লাভ

সোহরাব হাসান | তারিখ: ১১-০৩-২০১০

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসকেরা নাকি উত্তরসূরিদের জন্য তিনটি সিলবদ্ধ খাম রেখে যেতেন এবং নির্দেশ দিয়ে যেতেন কখন কোন খামটি খুলতে হবে। প্রথম খামটি খুলতে হবে মেয়াদের প্রথম বছরে। এতে লেখা থাকত, পূর্বসূরিদের ভ্রান্তনীতির কারণে দেশের এত দুরবস্থা। দ্বিতীয় খামটি খুলতে হবে মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে এসে। তাতে লেখা থাকত, গত সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলো বাতিল করে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে হবে। আর শেষ খামটিতে থাকত, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে কাজ শেষ করা সম্ভব হলো না। দেশ ও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে তাদের আরো দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকা জরুরি জনগণের দায়িত্ব।
বাংলাদেশেও যারা বর্তমানে ক্ষমতায় আছেন বা অতীতে ছিলেন, তারা কমবেশি এই নীতি অনুসরণ করে চলেছেন। ভবিষ্যতে যারা আসবেন, তাদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হবে না বলেই ধারণা করি। তবে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর ক্ষমতাসীনদের আরেকটি ফরজ কাজ হয়ে দাঁড়ায় পুরোনো নামফলক তুলে নতুন নামফলক বসানো। প্রবাদ আছে—নামে কী বা আসে যায়। কাজই নাকি আসল পরিচয়। কিন্তু আমাদের জনদরদি নেতা-নেত্রীরা কাজের চেয়ে নামকেই বেশি গুরুত্ব দেন। ক্ষমতায় থাকাকালে সরকারি বেতার-টিভিতে হররোজ তাঁদের নাম ও মহিমা প্রচার হয়। পত্রিকার পাতায় নিজেদের ছবি দেখে তাঁরা যারপরনাই আহলাদিত হন। আবার বিরোধী দলে গেলে সরকারি বেতার-টিভিতে কারও চেহারা দেখা যাবে না, কথাও শোনা যাবে না। এই হলো কথিত গণতান্ত্রিক শাসনের অদ্ভুত নীতি। এ কারণেই ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকার জন্য মরিয়া তাঁরা। বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ মঙ্গলবার সংসদে আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, আগামী নির্বাচনে তাঁরা ক্ষমতায় আসবেন এবং আওয়ামী লীগের বদলে দেওয়া নাম তাঁরা আবার বদলে ফেলবেন। এই যে বারবার সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম বদল করা হচ্ছে তাতে আমজনতার কী আসে যায়?
নির্বাচনের আগে নেতা-নেত্রীরা জনগণের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর তাঁরা জনগণের কথা খুব একটা মনে রাখেন না। নির্বাচনের আগে নেতা-নেত্রীরা বড় বড় বুলি কপচান। কেউ বাংলাদেশকে ইমার্জিং টাইগার হওয়ার খোয়াব দেখান, কেউ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর থাকেন। কিন্তু সেসব স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে রূপ নিতে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগরের স্থান পৃথিবীর মন্দ শহরের তালিকার দ্বিতীয় শীর্ষে। রাস্তায় ভয়াবহ যানজট। গ্রীষ্ম না আসতেই ঘন ঘন লোডশেডিং। ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ। বাড়ছে মশার উপদ্রব। সেসব নিয়ে কারও মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। সংসদে জনগণের অভাব-অভিযোগ, সমস্যা-সংকট নিয়ে কথা হয় না। জনপ্রতিনিধিরা ব্যতিব্যস্ত মৃত নেতাদের মুরদাবাদ ও জিন্দাবাদে।
গত ৩৯ বছরে বাংলাদেশে কোনো উন্নতি হয়নি তা বলব না। উন্নতি অবশ্যই হয়েছে। রাজনীতিকদের ভাগ্যের বদল হয়েছে। সামরিক-বেসামরিক আমলাদের ভাগ্যের বদল হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ভাগ্যের বদল হয়েছে। ধনীরা আরও ধনী হয়েছেন। যাঁরা আগে গলি-ঘুপচিতে ভাড়া বাসায় থাকতেন, তাঁরা গুলশান-বনানীর আলিশান বাড়িতে উঠে গেছেন। কিন্তু ভাগ্যের বদল হয়নি সাধারণ মানুষের। এখনো তাঁরা খোলা বাজার থেকে ২২ টাকা কেজি চাল কেনার জন্য লাইনে দাঁড়ান, জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদপিষ্ট হন। তৈরি পোশাক কারখানায় দৈনিক ১০/১২ ঘন্টা শ্রম দিয়েও নিয়মিত বেতন পাননা। দারিদ্র্য কমাতে সরকারি-বেসরকারি এত উদ্যোগ-আয়োজন, এত সভা-সেমিনার, দাতাদের এত ঋণ-অনুদান; তার পরও দেশের শতকরা ৪০ ভাগ লোক মনবেতর জীবন যাপন করছে। জনসংখ্যার অর্ধেক শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। শিশুদের বড় অংশ বেঁচে থাকার জন্য শ্রম দিতে বাধ্য হয়। গ্রামগঞ্জে ফতোয়াবাজির শিকার হচ্ছেন অসংখ্য নারী। এর প্রতিকার ও প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেই।
নেতা-নেত্রীরা বর্তমান নিয়ে ভাবেন না। তাঁরা অতীত চর্চায় জীবন ও রাজনীতির অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দেন। শুনেছি, ভূত নাকি পেছনের দিকে হাঁটে, আমাদের নেতা-নেত্রীদের অবস্থাও তা-ই। মীমাংসিত বিষয় নিয়ে তাঁরা ঝগড়া-ফ্যাসাদে আনন্দ পান। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দেখে নেওয়ার এবং দেখিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ ঝগড়াটি ব্যক্তিগত বা দলীয় পর্যায়ে সীমিত থাকলে আমজনতার কিছু যায় আসে না। কিন্তু যখন রাষ্ট্রকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তখনই ঝামেলা বাধে। এক পক্ষ নাম বদলে মরিয়া হয়ে ওঠে, অন্য পক্ষ সেই বদল ঠেকাতে মাঠে নামে। নাম নিয়ে এত কাদা ছোড়াছুড়ি অন্য কোনো দেশে হয় বলে জানা নেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বাংলাদেশের স্থপতি, সে ব্যাপারে কারও দ্বিমত নেই। দীর্ঘ সংগ্রাম ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছেন, তাও অস্বীকার করা যাবে না। তাই বলে যত্রতত্র তাঁর নাম ব্যবহার করতে হবে কেন? এতে কি তাঁর মর্যাদা বাড়ে না কমে? একটি সাফারি পার্কের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থপতির নাম যুক্ত করারই বা কী যুক্তি থাকতে পারে? জিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা পদক দিয়ে বিএনপি একটি খারাপ নজির স্থাপন করেছিল, তেমনি আওয়ামী লীগ সরকারও সবকিছু থেকে জিয়ার নাম মুছে দিয়ে সংকীর্ণতার পরিচয় দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারাই বলছেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জিয়ার তুলনা হতে পারে না। সেই তুলনা যারা করেন নিঃসন্দেহে তারা মতলববাজ। কিন্তু এও মানতে হবে ২৮ বছর পর জিয়া বিমানবন্দরের নাম বদলানো ঠিক হয়নি। স্পিকার বলেছেন, দুই দলই সওয়াব কামাচ্ছে। আসলে তারা সওয়াব কামাচ্ছে না, নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছে। মওদুদ আহমদের দাবি অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনে বা পরের যে কোন নির্বাচনে যদি ক্ষমতায় এসে তাঁরা নাম বদলের প্রতিশোধ নেন, তখন কী হবে? জিয়াউর রহমানের যতই দোষ থাকুক, এরশাদের চেয়ে খারাপ লোক তিনি নন। জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে কূটনীতিকের চাকরি দিয়েছেন। এ অভিযোগ অসত্যনয়। তবে ১৫ আগষ্ট হত্যাকান্ডের অন্যতম হোতা সৈয়দ ফারুক রহমানকেদেশে এনে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করার কাজটি করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বর্তমানে মহাজোট সরকারের শরিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশের সহযাত্রী। এখানে সুবিধা না তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গেই জোট বাধতেন। ক্ষমতার রাজনীতি কাকে কখন কোথায় নিয়ে যায় বলা কঠিন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপির আমলে দুই থেকে আড়াই শ প্রতিষ্ঠানের নাম বদল করা হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম তারা বদল করেছে সিদ্ধান্ত নিয়ে, আরবাকিগুলো করেছে গায়ের জোরে। যেমন—বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু, চট্টগ্রাম এম এ হান্নান বিমানবন্দর, জলযান এসটি শহীদ শেখ কামাল, জলযান এসটি শেখ জামাল, জলযান এসটি শেখ রাসেল, এসটি শহীদ সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, চন্দ্রিমা উদ্যান, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, শহীদ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমি, শহীদ এম মনসুর আলী অডিটরিয়াম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র, শেখ ফজলুল হক স্মৃতি মিলনায়তনের নাম বদলের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামফলকও তারা তুলে ফেলার চেষ্টা করেছিল। সফল হয়নি। অন্যদিকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্টেডিয়াম, সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়াম ইত্যাদির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে সিদ্ধান্ত নিয়ে। এসব সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যক্তি ও দলীয় বিদ্বেষ যেমন কাজ করেছে, তেমনি কাজ করেছে নগদ নারায়ণও। প্রতিটি নামফলক বদলাতে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। নতুন করে সাইনবোর্ড লেখানো হয়েছে, প্যাড ছাপাতে হয়েছে, মনোগ্রাম বদলাতে হয়েছে। এ নাম বদলের মাহাত্ম্য ফাঁস করে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে কর্মরত এক বন্ধু। তিনি জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক যে রাতারাতি লিমিটেড কোম্পানি করা হলো, তাতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় কোনো পরিবর্তন না এলেও নতুন নামফলক ও প্যাড-সিল-মনোগ্রামের ঠিকাদারি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে একটি শ্রেণী। ১৯৭২ সাল থেকে পুলিশের যে মনোগ্রাম চালু ছিল, বিএনপি নেতাদের হঠাত্ মনে হলো—এতে মান-ইজ্জত আর থাকে না। মনোগ্রামে নৌকা থাকলে যদি পুলিশের জাতীয়তাবাদী চরিত্র নষ্ট হয়ে যায়! হায়রে সংকীর্ণ রাজনীতি। তবে পুলিশের মনোগ্রাম বদলের পেছনে যেমন নৌকাবিদ্বেষ ছিল তেমনি ডান্ডি ডায়িংকে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দিয়ে উপরি আয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ সরকার ভৈরবে মেঘনা সেতুর নামকরণ করেছিল মক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে। তারা কাজটি শেষ করে যেতে পারেনি। সেতু উদ্বোধন হয় বিএনপি আমলে এবং যথারীতি নাম বদল করা হয়। বিভিন্ন মহল থেকে তার প্রতিবাদও হয়। জবাবে তত্কালীন অর্থমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা সাইফুর রহমান তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলেছিলেন, কোথাকার কোন নজরুল ইসলাম, তাঁর নামে সেতুর নাম রাখতে হবে কেন? সাইফুর রহমান মারা গেছেন। মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে গিবত গাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু যে কথাটি বলা প্রয়োজন—বাংলাদেশের ইতিহাসে সৈয়দ নজরুল ইসলামের যে স্থান, অর্থমন্ত্রী হিসাবে রেকর্ড সৃষ্টিকারী সাইফুর রহমান কখনোই তার ধারে কাছে যেতে পারবেন না।
বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম বদল করে বিএনপি খারাপ নজির স্থাপন করেছিল। অওয়ামী লীগকেও একই কাজ করতে হবে কেন? জনগনকে যারা ডিজিটাল বাংলাদেশের খোয়াব দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তাদের অতীত আশ্রয়ী হলে চলেনা, দৃষ্টি সামনে রাখতে হয়।
নাম বদল নিয়ে এর আগেও লিখেছি। তবে এবারে পুরনো কথা এড়িয়ে নতুন কিছু বলার চেষ্টা করেছি। আশা করতে চাই, এ বিষয়ে এটাই শেষ লেখা হবে। নাম বদল নিয়ে ভবিষ্যতে লিখতে হবেনা। আর সরকারের যদি সুমতি না হয় তা হলে আবারও লিখতে হবে। বার বার গাইতে হবে পুরনো গীত।
সোহরাব হাসান: কবি ও সাংবাদিক।
sohrab03@dhaka.net
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-03-11/news/47942