Thursday 25 March 2010

র্যাবের প্রেস ব্রিফিংয়ে শিবির নেতা গোলাপ : রাবির ঘটনায় জামায়াত নেতাদের সম্পৃক্ততার প্রশ্নই আসে না

স্টাফ রিপোর্টার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা ও ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যা মামলায় শিবির সভাপতি শামসুল আলম গোলাপকে গতকাল র্যাব-১’র কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। সাংবাদিকরা রাবিতে হত্যা ও হামলার ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে কি-না জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিবির সভাপতি শামসুল আলম গোলাপ বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার কথা বিশ্বাস না হলে মোবাইল ফোন ট্র্যাক করুন সব সত্য বেরিয়ে আসবে।’
এর আগে গত বুধবার দিবাগত রাত ২টায় টাঙ্গাইল জেলার ভুয়াপুর উপজেলার পাতালকান্দি এলাকা থেকে র্যাব গোলাপকে গ্রেফতার করে। এরপর গতকাল বেলা ৩টায় তাকে গ্রেফতারের ব্যাপারে জানাতে র্যাব-১ কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সম্মেলনে র্যাবের মিডিয়া অ্যান্ড লিগ্যাল উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল বলেন, গত ৮ ফেবু্রয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ন্যক্কারজনক ছাত্রহত্যা, হল দখল, ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ৯ তারিখে রাজশাহীর মতিহার থানায় একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। মামলার আসামিরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে থাকে। তাদের ধরতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও অভিযান চালাতে থাকে। সেই অভিযানের একপর্যায়ে বুধবার দিবাগত রাতে দুটি মামলার অন্যতম আসামি রাবির শিবির সভাপতি শামসুল আলম গোলাপকে গ্রেফতার করা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গোলাপ আরও বলেন, ‘মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ হচ্ছেন বাংলাদেশ জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল। আর আমি হচ্ছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সামান্য একজন ছাত্রনেতা। আমার সঙ্গে তাদের কথা বলার প্রশ্নই আসে না। আর যদি কথা বলার প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে অনেক ধাপ পার হয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। রাবির ঘটনার ব্যাপারে আমি নিজেই তেমন কিছু জানি না। তিনি আরও বলেন, বর্তমান আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। আমার কথা আপনাদের বিশ্বাস না হলে মোবাইল ট্র্যাক করুন। সব সত্য বেরিয়ে আসবে।’
একথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই র্যাবের কর্মকর্তারা গোলাপকে কথা বলতে নিষেধ করেন। পরে কয়েকজন টিভি সাংবাদিক র্যাব কর্মকর্তা সোহায়েলকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আগে যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা এবং র্যাব কর্মকর্তারা বলেছিলেন, এ ঘটনার মূল নায়ক গোলাপ। তার সঙ্গেই জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের মোবাইলে কথা হয়েছে। গোলাপকে ধরতে পারলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। কিন্তু গোলাপ এখন যা বলছে তাতে নিজামী-মুজাহিদ বা জামায়াতের কেউ এর সঙ্গে জড়িত নয়। এ ব্যাপারে আপনাদের বক্তব্য কী? এ সময় সোহায়েল বলেন, গোলাপ র্যাবকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে তবে সেটা প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। একপর্যায়ে কয়েকজন টিভি সাংবাদিকের পিড়াপিড়িতে সোহায়েল বলেন, এ ঘটনায় আগে গ্রেফতারকৃতরা যে তথ্য দিয়েছে তার সঙ্গে গোলাপের দেয়া তথ্যের কিছুটা অমিল রয়েছে।
গোলাপসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি : এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবির সভাপতি শামসুল আলম গোলাপসহ আটক সব নেতাকর্মীকে অবিলম্বে মুক্তি এবং গ্রেফতার ও নির্যাতন বন্ধসহ সরকারের কাছে ৬ দফা দাবি জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল পুরানা পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. ফখরুদ্দিন মানিক এ দাবি জানান। শিবির সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, বুধবার ভোরে নওগাঁ থেকে শ্যামলী পরিবহনে ঢাকায় আসার পথে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর বাস থামিয়ে র্যাব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিবির সভাপতি শামসুল আলম গোলাপ ও শিবির নেতা নূর ইসলামকে গ্রেফতার করে অজানার উদ্দেশে নিয়ে যায়। বাসযাত্রীদের তথ্যমতে, গ্রেফতারের সময় পুলিশের দুটি, র্যাবের একটি ও সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি ব্যবহার করা হয়। এর আগে র্যাব শিবির নেতা রাইজুল ইসলামকে গ্রেফতারের দুদিন পর সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত করে। তিনি বলেন, অন্যায়ভাবে শিবির নেতাকর্মী গ্রেফতারের প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিবিরের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রশাসন বাধা দিচ্ছে। গত দুদিনে ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী গ্রেফতার করা হয়েছে।
শিবির সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ছাত্রশিবির একটি দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে দেশের স্বার্থবিরোধী সরকারের কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। গণতান্ত্রিক প্রতিবাদী কণ্ঠ রোধ করতে সরকারের নির্যাতনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় শিবির। শিবিরের বিরুদ্ধে কুত্সা রটনা ও নানা অপপ্রচার চলতে থাকে। এমনই একপর্যায়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী হত্যার সঙ্গে শিবিরকে জড়ানো এবং জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চলতে থাকে। শিবির নেতা বলেন, রাবির ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় সরকারের মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, শিবিরকে নির্মূল ও উত্খাত করা হবে। আর এ ঘটনার দিনকয়েক আগে ঢাবির মেধাবী ছাত্র আবুবকর, যে সদ্যপ্রকাশিত পরীক্ষার ফলে প্রথম স্থান লাভ করেছে, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রাণ হারান। তার মৃত্যুকে এই মন্ত্রীরা স্বাভাবিক ঘটনা বলে অভিহিত করেন। সরকারের মন্ত্রীদের মন্তব্য পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয় যে, আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে জামায়াত-শিবিরকে ঘায়েল করতে নানা ইস্যু সৃষ্টি করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় দেশব্যাপী চিরুনি অভিযান পরিচালনার মধ্য দিয়ে সরকারের অসত্ উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়। গণগ্রেফতারে আটককৃত নেতাকর্মীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে সরকারের শিখিয়ে দেয়া স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে জোর করে স্বীকারোক্তি ও সাজানো বক্তব্য আদায় মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লিখিত ৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে রাবি শিবির সভাপতি শামসুল আলম গোলাপের নিঃশর্ত মুক্তি, অবিলম্বে শিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি মিজানুর রহমানসহ গ্রেফতারকৃত সব নেতাকর্মীর মুক্তি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা, শিবিরের বিরুদ্ধে পরিচালিত গণগ্রেফতার, দমন-নিপীড়ন ও নির্যাতন বন্ধ করা এবং গ্রেফতারকৃতদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় বন্ধ করা। প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদ সদস্য এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ, শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মুহাম্মদ আতাউর রহমান সরকার, কেন্দ্রীয় কলেজ ও ক্রীড়া সম্পাদক মিয়া মুজাহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মুহাম্মদ সোহেল খান, কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক আল মুত্তাকী বিল্লাহ প্রমুখ।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/26/24483

No comments:

Post a Comment