Wednesday 31 March 2010

সারা দেশেই আ. লীগে বিশৃঙ্খলা স্বীকার করলেন সৈয়দ আশরাফ

পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য ও পাভেল হায়দার চৌধুরী Kalerkantho ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ চৈত্র ১৪১৬, ১৫ রবিউস সানি ১৪৩১, ১ এপ্রিল ২০১০

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা আগামী মাস থেকে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করবেন। রাজধানীসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিসহ ক্ষমতার দাপট দেখানোর জোরালো অভিযোগ রয়েছে। অন্তর্দলীয় কোন্দল বা সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও হরহামেশা ঘটছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলে তাঁদের নিয়ন্ত্রণহীনতার কথা স্বীকার করে বলেছেন, নিয়মিত কমিটি গঠন হয় না বলেই নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের ঘটনা বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার বাইরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
দলের বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ ক্ষমতাসীন দলের সব সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সূত্র মতে, কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত এসব সংগঠনের মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে তিন-চার বছর আগে। কোনো কোনো জেলায় ৮-১০ বছর সম্মেলন হয় না। আর এর পেছনে রয়েছে দলের নেতৃত্বে আসার প্রতি অতি আগ্রহ।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সম্মেলন না হওয়ার ফলেই সারা দেশে সংগঠনের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা দিচ্ছে। সমস্যা নিরসনে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা আগামী মাস থেকে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রতি সপ্তাহে বৈঠক করবেন। সৈয়দ আশরাফ বলেন, নেত্রী আগে প্রায় ৪০টার মতো জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তখন যাঁরা বাদ পড়েছেন তাঁদের সঙ্গে প্রথমে বসবেন। এ জন্য গণভবনে নতুন জায়গাও প্রস্তুত করা হয়েছে। কবে থেকে কাউন্সিল হবে_এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলেন, জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকা হবে। তারপর তারিখ নির্ধারণ করে প্রথমে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা সম্মেলন করে পরে জেলা সম্মেলন করা হবে।'
বড় নেতাদের বাদ দিয়ে তারুণ্য-নির্ভর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয় আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে। কিন্তু সংগঠনকে চাঙা করার ক্ষেত্রে কোনো চমক দেখাতে পারেনি বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিছু দিবসভিত্তিক অনুষ্ঠান, কেন্দ্রীয় কমিটির সভা বা দলীয় সভা-সমাবেশে বক্তৃতা বা কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়া বাস্তবে সার্বক্ষণিক সাংগঠনিক কাজে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নেই বললেই চলে। এ ক্ষেত্রে এসব নেতার অভিযোগের তীর দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দিকেও।
দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুল জলিল সম্প্রতি একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে মন্তব্য করেছেন এ ব্যাপারে। তাঁর মতে, আওয়ামী লীগের মতো একটা বড় দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা সৈয়দ আশরাফের নেই। দেশব্যাপী দলের অভ্যন্তরে কোন্দল ও খুনোখুনির জন্যও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন আবদুল জলিল। তিনি বিভিন্ন ইউনিটের নেতাদের অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা টেনে বলেন, সাধারণ সম্পাদকের কোনো ভূমিকা এ ক্ষেত্রে লক্ষ করা যাচ্ছে না। সংগঠনের মধ্যে সাধারণ সম্পাদকের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই দল চালাতে ব্যর্থ সৈয়দ আশরাফ।
এ ছাড়া প্রায় সব জেলায়ই তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সঙ্গে স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যানদের সৃষ্টি হয়েছে বিশাল দূরত্ব। তাঁদের কর্মকাণ্ডের মধ্যেও নেই সমন্বয়। গত ৩০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতারা শেখ হাসিনার সামনেই দলীয় এমপিদের বিরুদ্ধে তাঁদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন। তাঁরা দলীয় সভানেত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছিলেন, এমপি না তৃণমূল নেতারা_কারা দলকে নিয়ন্ত্রণ করবে, তা আগে নির্ধারণ করতে হবে। শেখ হাসিনা বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সদস্যদের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটেনি।
এরই মধ্যে বেশ কিছু লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গত ১৮ মার্চ থেকে দেশব্যাপী সফর শুরু করেছে। কিন্তু বাস্তবে এ সফরে কোনো লাভ হচ্ছে না বলে মনে করছেন অনেক তৃণমূল নেতা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সফরে জেলাপর্যায়ে জনসভা হলেও উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড বা গ্রামপর্যায়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব-কোন্দল মীমাংসায় এ সফর তেমন কাজে আসছে না বলেই মন্তব্য করেন তৃণমূল নেতারা।
নীলফামারীতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১৮ মার্চ। কিন্তু সেখানে জনসভার আগে কোনো বৈঠক হয়নি বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক। তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বৈঠক হয়নি। সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনাও ছিল না আমাদের প্রতি। তাঁরা শুধু জনসভায় বক্তৃতা করেছেন।'
অবশ্য রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী তাঁর জেলার সফরকে সম্পূর্ণ সফল দাবি করেছেন। তাঁর মতে, দল ক্ষমতায় আসার ১৫ মাস পর সব এমপি, জেলা ও থানার নেতারা এক মঞ্চে উঠে বক্তব্য রাখাটা কম নয়। তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় নেতারা জনসভায় যে বক্তৃতা দিয়েছেন সেটাই আমাদের প্রতি কেন্দ্রের নির্দেশনা।'
তবে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী তৃণমূলের এই দাবি মানতে নারাজ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়তো হচ্ছে না। তবে যাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে, তাদেরকেই ভবিষ্যতের করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সৈয়দ আশরাফ কালের কণ্ঠকে বলেন, সদস্য সংগ্রহ অভিযানকে শক্তিশালী করাই সাংগঠনিক সফরের মূল উদ্দেশ্য।

No comments:

Post a Comment