Thursday, 22 September 2011

মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তিকারী শিক্ষক মদন মোহন পুরস্কৃত

রিয়াজ চৌধুরী
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং পবিত্র হজ নিয়ে কটূক্তিকারী শিক্ষক মদন মোহন দাসকে শাস্তির আড়ালে আসলে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা এ শিক্ষককে গণবিক্ষোভের মুখে রাজধানীর ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। সেখানে শিক্ষক মদনের চাকরিচ্যুতি ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি তীব্র হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সে সময় তাকে বরখাস্ত করেছে বলে সবাইকে জানায়। কিন্তু বরখাস্তের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বোকা বানিয়ে উত্তেজিত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাউশি মহাপরিচালকের নির্দেশক্রমে সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-১) সাখায়েত হোসেন বিশ্বাস স্বাক্ষরিত ১ আগস্ট এক অফিস আদেশে বলা হয়, মাউশি ঢাকার স্মারক নং-৭এ/২৯-সম (পার্ট-১)/২০০৬/ ৪৫৪৪/১২-সম তারিখ ৩১ জুলাই ২০১১ মোতাবেক ঢাকার ধানমন্ডি গভ. বয়েজ হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মদন মোহন দাসের পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে বদলির আদেশ বাতিল করা হলো। তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫-এর বিধি-৩ ও বিধি-১১ মোতাবেক ১ আগস্ট অপরাহপ্ত থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন সরকারি বিধি মোতাবেক তিনি খোরপোশ ভাতা পাবেন। মদন মোহনকে মাউশি অধিদফতরের উপ-পরিচালকের (মাধ্যমিক) সঙ্গে সংযুক্তির আদেশ জারি করা হলো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষের ক্ষোভের মুখে শিক্ষক মদন মোহনকে মাউশি কর্তৃপক্ষ বরখাস্ত করেছে বলে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এতে মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হয়। মানুষকে বোকা বানিয়ে মাউশি কর্তৃপক্ষ গোপনে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে উপ-পরিচালকের (মাধ্যমিক) সঙ্গে সংযুক্ত করে প্রকৃতপক্ষে তাকে পুরস্কৃত করেছে। যেখানে মাউশি কর্তৃপক্ষের তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার কথা, সেখানে তাকে পদোন্নতি দিয়ে তার ক্ষমতাই আসলে বৃদ্ধি করেছে। সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, মদন মোহন স্কুলশিক্ষক। এ ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার কারণে তাকে ঢাকায় এসে মাউশি’র কাছে বার বার কৈফিয়ত দেয়ার কথা। কিন্তু তাকে আর এ কষ্টটুকু করতে হলো না। স্কুল থেকে সরাসরি মাউশি’তে স্থান পাওয়ায় তিনি এখন দেশের সব স্কুলশিক্ষকের ওপর খবরদারি করার ক্ষমতা পেয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক প্রফেসর মো. নোমান উর রশীদ আমার দেশকে বলেন, শিক্ষক মদন মোহনের বিষয়টি জানার পর তার বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিকভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট শাখায় নির্দেশ দিই। তিনি জানান, একজন সরকারি কর্মকর্তাকে সরাসরি বরখাস্তের বিধান নেই। একটি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার প্রাপ্ত সাজা কার্যকর করতে হয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। প্রফেসর নোমান জানান, সৃষ্ট ঘটনার সময় দেশের যে প্রতিষ্ঠানেই তাকে পোস্টিং দেয়া হতো, সেখানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। বিক্ষোভ মিছিল ও সভা-সমাবেশ হতো। তাই মদন মোহনকে সাময়িক বরখাস্ত করে মাউশি’তে এনে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাকে কোনো শিক্ষকের ওপর খবরদারি করার ক্ষমতা দেয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকাকালে ২৬ জুলাই মদন মোহন দাস তার সহকর্মী শিক্ষকদের এক সভায় মন্তব্য করেন, ‘এক লোক সুন্দরী মহিলা দেখলেই বিয়ে করে। এভাবে বিয়ে করতে করতে ১৫-১৬টি বিয়ে করে। মুহাম্মদও ১৫-১৬টি বিয়ে করেছে। তাহলে মুসলমানরা মুহাম্মদের হজ করা স্থান মক্কায় গিয়ে হজ না করে ওই ১৫-১৬টি বিয়ে করা লোকের বাড়িতে গিয়ে হজ করলেই তো হয়।’—এমন মন্তব্যে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। এর প্রতিবাদে স্কুল ক্যাম্পাসে ব্যাপক বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভকালে শিক্ষক মদন মোহন দাসকে চাকরি থেকে অপসারণ ও তার বিচার দাবি করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মাউশি অধিদফতরের ডিজিকে ঘটনা তদন্ত করে খুব দ্রুত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। গণবিক্ষোভের মুখে ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে গত ৩১ জুলাই তাকে পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। সেখানে গিয়ে জনরোষের মধ্যে পড়েন তিনি। তার চাকরিচ্যুতি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ওঠে। বিক্ষোভ তীব্র হতে থাকলে মাউশি অধিদফতর ১ আগস্ট অপরাহপ্ত থেকে মদন মোহনকে বরখাস্ত করেছে বলে সবাইকে জানানো হয়। ফলে মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হয়।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের অধিবাসী মদন মোহন দাস ২০১০ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি বিভিন্ন সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কটূক্তি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রসঙ্গত, ১৫ জুলাই গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জিটি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক শঙ্কর বিশ্বাস মণ্ডল মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করেন। দশম শ্রেণীর ক্লাসে শিক্ষক শঙ্কর মণ্ডল বিশ্বাস দাড়ি রাখা নিয়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ছাগলের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। এতে জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

No comments:

Post a Comment