Friday 7 January 2011

ভারতীয় ভাষ্যকারের মন্তব্য : দু’বছরে তেমন সাফল্য নেই শেখ হাসিনা সরকারের

স্টাফ রিপোর্টার

শেখ হাসিনা তার দুই বছরের শাসনামলে তেমন কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেননি। ফলে আগামীতে যে কারও ক্ষমতায় আসার সুযোগ আছে। দিল্লি থেকে প্রকাশিত ‘দ্য পাইওনিয়ার’ পত্রিকার একটি কলামে ভাষ্যকার অশোক কে মেহতা এ মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছেন। বিরোধী দল পেয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি আসন, কিন্তু নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের এই বিপর্যয় প্রমাণ করে না যে তাদের যুগের অবসান হয়ে গেছে। ভাষ্যে মেহতা বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সম্পর্কে নানা রকম মন্তব্য করে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছে। শেখ হাসিনা বিডিআর বিদ্রোহকে কঠোরভাবে দমন করেছেন। পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে একাত্তরের গণহত্যার সঙ্গে তুলনা চলে। ক্ষমতাসীন সরকার ৭-৮ হাজার বিডিআর সদস্যের বিচার করছে। নিরাপত্তা বাহিনীতে সংস্কার চলছে। এরই মধ্যে নিরাপত্তা দলটির (বিডিআর) নাম পাল্টানো হয়েছে। তিনি বলেন, গোয়েন্দা বিভাগগুলোর সাফল্য এবং সন্ত্রাস দমনে ২০০৪ সালে র্যাব গঠন ছিল উল্লেখ করার মতো বিষয়। এরপর থেকে অর্থাত্ ২০০৫ সাল থেকে হরকাতুল জিহাদ এবং জেএমবির মতো দলের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসী হামলা চালানো সম্ভব হয়নি। এইসব দল এখন নেতাহীন হয়ে গেছে। কিন্তু আশঙ্কা করা হচ্ছে বর্তমান সরকার র্যাবকে ভেঙে দিতে পারে। কারণ খালেদা জিয়ার শাসনামলে র্যাব গঠিত হয়।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিষয়ে তিনি লিখেন, নিরাপত্তা খাতে ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের উষ্ণ সম্পর্ক হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কোনো ভারতীয় বিদ্রোহী দল তাদের তত্পরতা পরিচালনা করতে পারছে না। বাংলাদেশ সরকার ভারতের সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী যে সহযোগিতা করে যাচ্ছে তা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভারতের পক্ষ থেকে কিছু প্রশিক্ষণ ছাড়া বাংলাদেশকে সামরিক দিক থেকে অন্য সহযোগিতার বিষয়টি সবসময় উপেক্ষিত হয়েছে। গত বছর প্রথমবারের মতো আসামের জোড়ঘাটে উভয় দেশের কমান্ডো প্লাটুন যৌথ প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছে। এ বছর এই প্রশিক্ষণ কোম্পানি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ ভারতকে শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ডিজিএফআইর সঙ্গে আইএসআইর সম্পর্ক রয়েছে বলে বাজারে গুজব আছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শত্রু ছাড়া প্রকৃত কোনো শত্রু নেই। এই কারণে বাংলাদেশ উদারভাবে সামরিক কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে জাতিসংঘ শান্তি বাহিনীতে দেশটির প্রায় ১০ হাজার সৈন্য আছে। যারা পেশাগত উত্কর্ষের কারণে প্রশংসা পেয়েছেন।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিষয়ে তিনি লিখেছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলকে এ সম্পর্কে আরও বিকশিত করার ক্ষেত্রে সহযোগিহতা দিতে সৃষ্টিশীল কূটনীতির এটাই উপযুক্ত সময়। প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি পর্যায়ের সফরের সুযোগ নষ্ট করা ঠিক হবে না। ভারতের অর্থনৈতিক সাফল্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া উচিত। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে উভয় দেশের জনগণের পারস্পরিক ভাব আদান-প্রদান খুব বেশি নয়। ভারত কি বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশীদের আস্থা অর্জনের উদ্যোগ নেবে?
তিনি লিখেছেন, ’৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জিত হলেও নতুন জন্ম নেয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে দুঃখজনকভাবে কৌশলগত সম্পর্ক বিনির্মাণের সুযোগ হারানো হয়েছে। আর এই ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশের মতো একটি সম্পদ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার দায় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ২০০৪ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এটা স্বীকার করে নিয়েছেন যে পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো নয়। এই সম্পর্ক ঝালাই করে নেয়ার সময় আবার এসেছে। কিন্তু নয়াদিল্লি এই জটিল কাজ সম্পন্ন করতে খুবই ধীরপন্থা অবলম্বন করে।

No comments:

Post a Comment