Sunday 25 April 2010

ভোলায় মা-মেয়েকে গণধর্ষণের অভিযোগ : বিএনপি নেতাকর্মীরা ভয়ে এলাকা ছাড়ছেন

কাজী জেবেল/সাইফ বাবলু, ভোলা থেকে
ভোলা-৩ নির্বাচনী এলাকার লালমোহনের কচুয়াখালী গ্রামে বিএনপি কর্মী সফি মাঝির স্ত্রী ও মেয়েকে আওয়ামী লীগ ক্যাডারা পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষকরা এ ঘটনা প্রকাশ এবং কোনো মামলা দায়ের না করতে পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিয়েছে। ক্যাডাররা সফি মাঝিকে বেঁধে রেখে তার স্ত্রী ও মেয়েকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। নির্বাচনের দিন শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। প্রাণের ভয়ে গণধর্ষণের শিকার পরিবারটি চুপ থাকলেও খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে সফি মাঝি ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার ও বর্বরতার বর্ণনা দেন। সাংবাদিকদের কাছে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করায় ধর্ষণকারী আওয়ামী ক্যাডাররা আবার ধর্ষণের শিকার মা ও মেয়েকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বর্তমানে ওই পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। বিএনপি প্রার্থী মেজর হাফিজও গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মা-মেয়েকে গণধর্ষণের অভিযোগ করেছেন।
গতকাল সরেজমিন গেলে বিএনপি কর্মী সফি মাঝি সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনের আগের দিন রাতে এক নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ও বিএনপি নেতা নান্নুর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নান্নু মেম্বারের বাড়িতে আগুন লাগানোর পর বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থক এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। বিএনপি কর্মী সফি মাঝি তার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে নির্বাচনের আগের রাতে হামলার ভয়ে বড় ভাই আবদুল মুনাফের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরদিন ওই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা ছালাম হাওলাদারের সঙ্গে কথা বললে তিনি সফি ও তার পরিবারকে বাড়ি গিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে বলেন। আওয়ামী লীগ নেতার কথায় ভরসা পেয়ে সফি মাঝি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে চলে যান। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরুন্নম্নবী শাওন জয়ী হওয়ার পর নান্নু মেম্বারের বাড়িতে আগুন লাগানো আওয়ামী লীগ ক্যাডারাই রাতে এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খুঁজতে থাকে। এ সময় আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী সিরাজ, সাইফুল, সোহাগ ও আবদুলসহ আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা সফি মাঝির বাড়িতে ঢোকে। সফি মাঝি তখন স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ঘরে ছিলেন। এ সময় ক্যাডারার সফি মাঝির ঘরে ঢুকে তাকে বেঁধে ফেলে। আওয়ামী লীগ ক্যাডার সাইফুল ও জুয়েল সফি মাঝির মাদ্রাসা পড়ুয়া নবম শ্রেণীর ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ সময় মা তার মেয়ের ইজ্জত রক্ষায় এগিয়ে এলে তাকে ধর্ষণ করে সোহগ ও আবদুল। ধর্ষণের পর ক্যাডাররা এ ঘটনা চাপা রাখতে তাদের হুমকি দিয়ে যায়।
নান্নু মেম্বারও ধর্ষণের ঘটনার সত্যতার কথা জানিয়েছেন। গতকাল দিন পার হওয়ার পর সন্ধ্যায় পুলিশ সুপারের নির্দেশে লালমোহন থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
মা ও মেয়েকে গণধর্ষণের খবরে এলাকাজুড়ে তোলপাড় চলছে। অথচ পুলিশ বলছে ঘটনা সম্পর্কে তারা কিছুুই জানে না। এ ঘটনার পর বিএনপি কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ পরিবারগুলো মাঝে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে লালমোহন থানার ওসি দেলোয়ার হোসেনকে ফোন করলে তার সরকারি ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে পুলিশ সুপার বশির আহম্মেদকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমার দেশকে জানান, এ ঘটনা তিনি জানেন না। তবে তিনি এ ঘটনাকে নির্বাচনী কোনো ঘটনা নয় বলে বিষয়টি সত্য হলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, তারা যদি অভিযোগ দেয় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগ না দিলে তো পুলিশের কিছুই করার নেই।
পরে লালমোহন থানার ওসিকে ফোন করা হলে তার নম্বর খোলা পাওয়া যায়। ওসি এ বিষয়ে জানান, নির্বাচনের আগের দিন ওই বাড়িতে লোকজন ভোট চাইতে গেলে হইচই হয়। সেখানে দুজন অফিসার গেছেন। ধর্ষণের ঘটনা সত্য নয়। তবে আমরা ঘটনার আরও খোঁজ নিচ্ছি।
এলাকায় আতঙ্ক, বিএনপি কর্মীরা বাড়িঘর ছাড়া : ভোলা-৩ আসনে উপনির্বাচনের পরদিন গতকাল লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর সশস্ত্র আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা হামলা চালিয়েছে। তাদের মারধর থেকে বাদ যায়নি এই আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মেজর (অব.) জসিমের অনুসারিরাও। তাদের ‘বিএপির দালাল’ আখ্যায়িত করে মারধর করেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে নির্বাচনের আগ থেকে সৃষ্টি হওয়া সহিংসতার আতঙ্ক আরও ঝেঁকে বসেছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্বাচন পরবর্তী নির্যাতনের ভয়ে লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বাজারগুলোতে দোকানপাট খোলা থাকলেও ছিল না ক্রেতাদের ভিড়। যানবহন চলাচলও ছিল কম। শনিবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরুন্নবী শাওনকে বিজয়ী ঘোষণা করার পরই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আনন্দ-উল্লাসের পাশাপাশি প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি-ঘরে হানা দেয়া শুরু করে। বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে এলাকা ছাড়তে হুমকি দেয়া হয়েছে। অনেকে ভয়ে আগেই এলাকা ছেড়ে গেছে। আওয়ামী লীগ দুই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী কোনো সহিংস ঘটনায় না জড়াতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিলেও তা শুনছে না তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। সরেজমিন ঘুরে এসব চিত্র পাওয়া গেছে।
এছাড়া গতকাল দুই উপজেলার বিভিন্ন এলকায় ২০-২৫ নেতাকর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেছে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা। বড় ধরনের হামলা বা সহিংসতার ঘটনা না ঘটলেও সাধারণ ভোটার ও বিএনপি নেতাকর্মীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। নির্বাচনী ফল ঘোষণার পরই লালমোহনের বিএনপি কর্মী কালু মিয়াকে পিটিয়ে আহত করে আওয়ামী লীগ কর্মী মাসুদ, রুবেল, সোহাগসহ কয়েকজন। এছাড়া পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের বিএনপি কর্মী শাহে আলম, দলীগৌরনগর ইউনিয়নের কামালকে পিটিয়ে আহত করা হয়। গতকাল দিনব্যাপী লালমোহন ও তজুমদ্দিনের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আতঙ্কে ছিলেন।
এদিকে ভোলা-৩ আসনের নির্বাচন পরবর্তী সহিসংতা জেলার অন্য উপজেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনের আগে লালমোহনে তোফায়েল আহমেদের ওপর হামলা হয়েছে এমন অভিযোগে দৌলতখান উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর সিরিজ হামলা শুরু করেছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা। লাঠি হাতে নিয়ে বিএনপি কর্মীদের খুঁজে ফেরে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা আমজাদ, তুহিন, বাবুর নেতৃত্বে দৌলতখানে বিএনপি নেতা বাবুল, আকবর হাজি, সেলিম, মইনুদ্দিসহ ৭ বিএনপি নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ সময় পিটিয়ে আহত করা হয় বিএনপির আলম মেম্বার, মোশারেফ হোসেন, গজনবী, মোঃ ইউনুছ, ভাসানি, জাফর, মিলন, দিনকালের সাংবাদিক কাজী জামালসহ ২০-২৫ জনকে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক চলছে।
ভোলা-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মেজর (অব.) জসিমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত তজুমদ্দিন উপজেলার কেয়ামউল্লাহ গ্রামের সিরাজ, আরিফ, রিয়াজ, সালাউদ্দিন, নসুমিয়া, বাবুল ও জামালকে ‘বিএনপির দালাল’ আখ্যায়িত করে মারধর করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এদের মধ্যে গুরুতর আহত নসু মিয়াকে হাসপাতালে নিতেও বাধা দেয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এদিকে গতকালও লালমোহনে মেজর (অব.) হাফিজের বাসায় বেশকিছু আহত নেতাকর্মীকে আসতে দেখা যায়।
এদিকে ভোলার বিভিন্ন হাসপাতালে নির্বাচনী সহিংসতা আহত বিএনপি নেতাকর্মীরা চিকিত্সা নিতেও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মুজিবুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ‘আমার বুড়ো মা’র গায়ে লাথি না মেরে আমারে মেরে ফেললেও কোনো দুঃখ থাকত না। ওরা আমার মারে কিল-ঘুষি মারার পরও কুপিয়েছে। মারে মারার কষ্টে আমি থাকতে পারছি না।’ এ সময় তিনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে ছিলেন। তখনও তার চোখে-মুখে ছিল অজানা শঙ্কা। হাসপাতালে নিরাপদে চিকিত্সা নিতে পারবেন তো! আওয়ামী লীগের কর্মীরা এখনও তাকে মোবাইলে হত্যার হুমকি দেয়। নির্বাচনের আগে তারাই মুজিবুর রহমানকে বেধড়ক মারধর করে দু্ই পায়ের রগ কেটে দিয়েছিল। স্বজনরা জানান, চরসকিনা গ্রামের বাসিন্দা মুজিবুর ঢাকায় থাকতেন। জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে গত ১ এপ্রিল তিনি লালমোহনে যান। ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাওয়ায় নির্বাচনের আগে বৃহস্পতিবার বড় ভাই খোকন গাজীকে মারার লক্ষ্যে সশস্ত্র অবস্থায় বাড়িতে প্রবেশ করে কামাল, নুরনবী, মিজান হাওলাদার, ইউনুস, লোকমানসহ অর্ধশত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। এ সময় গোসলরত মুজিবুর ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগ কর্মীরা তার দুই পায়ের রগ কেটে দেয় এবং বেধড়ক মারধর করে।
হামলার ভয়ে অনেক বিএনপির কর্মী-সমর্থক ও ছোটখাটো নেতারা আতঙ্কে এলাকা ছাড়ছেন। মূলত তারা নির্বাচনের দিন থেকেই পালাতে শুরু করেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোটের দিন বিকালে পাতারহাট-১ নামের লঞ্চযোগে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের কবির, জাকির, সিদ্দিক, মাসুম, জুয়েল, মেহের, পারভেজ, শিবলু, কাসেম, হারুন, মিজান হাওলাদারসহ প্রায় ২০ থেকে ২৫ নেতাকর্মী ঢাকায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীরা ট্রলারযোগে তাদের ধাওয়া করে।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের অপর এক গ্রুুপ তাদের ধরার জন্য লালমোহনের নাজিরপুর ঘাটে ওঁত্ পেতে আছে খবর পেয়ে লঞ্চটি মুন্সিরচরে ভিড়িয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা নেমে পড়েন। অবশেষে তারা ট্রলারযোগে পটুয়াখালীর বাউফলে চলে যায়।
অপর সূত্র জানায়, লালমোহন পৌরসভার সাবেক কমিশনার আবদুল মান্নান নির্বাচনের দিন বেলা ১১টার দিকেই লালমোহন ত্যাগ করেন। এছাড়া ছাত্রদলের লালমোহন থানা সম্পাদক মিজান হাওলাদার, সাবেক সভাপতি সামসুদ্দিন জসিম, বিএনপি নেতা ফজলু চেয়ারম্যানের ছেলে নয়ন, বদরপুর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল হোসেন, আবদুল মালেক, দেবিরচরের কবির হোসেনসহ অপর একটি গ্রুুপও গোপনে লালমোহন ত্যাগ করে।
আনুষ্ঠানিকভাবে শাওনকে বিজয়ী ঘোষণা : ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল গতকাল দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। ভোলা জেলা পরিষদ কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও বিএনপি প্রার্থী হাফিজউদ্দিন আহমেদকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ করা হয়। শাওন অনুষ্ঠানে থাকলেও ছিলেন না মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ।
রিটার্নিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, নির্বাচনী এলাকার ৮৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৭টি কেন্দ্রের ভোট গণনা হয়েছে। এতে নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন পেয়েছেন ৯৩ হাজার ৮৭৩ ভোট। হাফিজউদ্দিন আহমেদ পেয়েছেন ৪২ হাজার ৬৫৮ ভোট। স্থগিত ৯টি কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩১ হাজার ২৭৭টি। বিএনপির নির্বাচন বাতিলের দাবির ব্যাপারে তিনি বলেন, এসব অভিযোগের ভিত্তি নেই। অভিযোগের ভিত্তিতেই ৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/26/29218

Saturday 24 April 2010

উপহার : বাংলাদেশকে ২৫০ বুদ্ধমূর্তি দিল থাইল্যান্ড



Shamokal চট্টগ্রাম ব্যুরো | ঢাকা | ২৫ এপ্রিল ২০১০
থাইল্যান্ডের ধস্মকায়া ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাংলাদেশকে দেওয়া ২৫০টি মূল্যবান অষ্টধাতুর তৈরি বুদ্ধমূর্তি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড় করে নগরীর পলোগ্রাউন্ড স্কুল মাঠে রাখা হচ্ছে। আগামী ৭ মে মহামানব গৌতম বুদ্ধের ২৫৭৩তম বুদ্ধ জয়ন্তীতে এগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের বিভিন্ন মন্দিরে হস্তান্তর করা হবে।
বুদ্ধজয়ন্তী উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তা পান্নালাল বড়ূয়া, অমিরণ বড়ূয়া, কাঞ্চন বড়ূয়া, বিপ্লব বড়ূয়া, বিকাশ কুমার চৌধুরী বুদ্ধমূর্তিগুলো প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করেছেন।

কেন্দ্র দখল করে প্রহসনের নির্বাচন হলো যেভাবে | বিএনপি এজেন্টদের বের করে দিয়ে ফাঁকা কেন্দ্রে বাক্স ভর্তি : আ’লীগের হামলায় আহত দুই শতাধিক

কেন্দ্র দখল করে প্রহসনের নির্বাচন হলো যেভাবে



সাইফ বাবলু, লালমোহন
সরকার ও ইসির পক্ষ থেকে ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও ভোটগ্রহণ শুরুর আগ থেকেই লালমোহন ও তজুমদ্দিনের ৮৬ কেন্দ্র দখলের মহোত্সবে মেতে উঠে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে সকাল ৮ থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় শেষ হওয়ার কথা; কিন্তু সরকার সমর্থকরা সকাল ৭টা থেকেই লালমোহন ও তজুমদ্দিনের অধিকাংশ কেন্দ্র দখল করে নেয়। কেন্দ্র দখলের পর আওয়ামী ক্যাডাররা বিএনপির নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দেয়। এ সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। অনেক কেন্দ্র দখল করে প্রিসাইডিং অফিসারের সামনে সাধারণ ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করেন আওয়ামী লীগ কর্মীরা। ফলে অনেক ভোটার তাদের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেননি।
গতকাল প্রথমে দখল করা হয় লালমোহন পৌরসভার ৩টি কেন্দ্র। লালমোহন বালক বিদ্যালয়, পাবলিক লাইব্রেরি কেন্দ্র, ওয়েস্টার্নপাড়া মাদ্রাসা কেন্দ্র। এ সময় বিএনপি এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। লালমোহনের ফরাজগঞ্জ, পশ্চিমচর উমেদ, রমাগঞ্জ, লর্ডহার্ডিঞ্জ, দলীগৌরনগর, চরভুতা লালমোহন, বদরপুর কালমা ইউনিয়নের মোট ৫৬ কেন্দ্র ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই দখল করে নেয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। দলীগৌরনগর ইউনিয়নের চতলা বাজার কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে কেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এ সময় বিএনপির এজেন্টদের পিটিয়ে বের করে দেয়া হয়। ওই ইউনিয়নে বিএনপি প্রধান এজেন্ট ফরহাদ মিয়া জানান, ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আওয়ামী লীগ কর্মীরা বিএনপির এজেন্টদের কাছ থেকে ভোটার তালিকা কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। এ সময় এজেন্ট হওয়ার কাগজও কেড়ে নিয়ে মারধর করে তাদের বের করে দেয়া হয়। এ সময় বিএনপির এজেন্ট ফরহাদ একটি কক্ষে অবরুদ্ধ অবস্থায় পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে পাননি। অবরুদ্ধ অবস্থায় তিনি পালিয়ে আসেন। ফরাশগঞ্জ ইউনিয়নের আশ্রাফিয়া কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একেএম নজরুল ইসলাম প্রবেশ করার পরপরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কেন্দ্রের পরিবেশ। তিনি বের হয়ে যাওয়ার পরপরই আওয়ামী ক্যাডাররা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে বেশ কয়েকজনকে আহত করে। এ সময় এজেন্টদের পিটিয়ে বের করে দিয়ে দখল করে নেয় ভোটকেন্দ্র। পরে ইউনিয়নের সব কেন্দ্র দখল করে নিজেদের ইচ্ছামতো ভোট দেয় আওয়ামী ক্যাডাররা। রমাগঞ্জ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা তোফায়েল আহমেদ যাওয়ার পরপরই র্যাবের উপস্থিতিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী ক্যাডাররা। এ সময় বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের একটি কেন্দ্র ছাড়া বাকি সব কেন্দ্র দখল করে নিজেদের ইচ্ছামতো ভোট দেয় আওয়ামী লীগ। এভাবে লালমোহন ও তজুমদ্দিনের ৮৬ কেন্দ্র ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের আসতে না দিয়ে দিনব্যাপী নিজেরা ভোট পরিচালনা করে। প্রিসাইডিং অফিসারের সামনে আওয়ামী লীগ কর্মীরা সরাসরি বুথের মধ্যে অবস্থান করে ভোট নৌকায় দিতে ভোটারদের বাধ্য করে। তজুমদ্দিনেও একইভাবে কেন্দ্র দখলে নিয়ে ভোট দেয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভূমিকায় প্রিজাইডিং অফিসার : ভোলা-৩ আসনের নির্বাচনে নিয়োগ করা অফিসাররা অনেক কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভূমিকা পালন করেছেন। লালমোহন পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডে মধ্য পেশকার হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের অফিসারের দায়িত্বে থাকা ভোলা সদর উপজেলার শিক্ষা অফিসার হারুন অর রশিদ নিজেই নৌকা প্রতীকে সিল মেরে বাক্সে ফেলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত ভোটার আরিফ অভিযোগ করেন, অফিসার নিজেই ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারেন। এছাড়া মহিলা কলেজ কেন্দ্রে অফিসারের দায়িত্বে থাকা পটুয়াখালী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের উপস্থিতিতে বুথের মধ্যে অবৈধভাবে প্রবেশ করে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। ওই কেন্দ্রে অওয়ামী লীগ নেতা তুহিন পঞ্চায়েতের স্ত্রী রিনা বেগম তার সামনে এক ভোটারকে নৌকায় ভোট দিতে বলেন। কিন্তু ওই ভোটার এর প্রতিবাদ করেন। যদিও পরে ওই কেন্দ্রর ভোট বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। এরকম চিত্র লালমোহন ও তজুমদ্দিনের বেশিরভাগ কেন্দ্রে ঘটেছে বলে বিএনপি এজেন্টরা অভিযোগ করেছেন।
সাংবাদিক পরিচয়ে আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের অবাধ বিচরণ : ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে সাংবাদিক পরিচয়ের স্টিকার ব্যবহার করে লালমোহন ও তজুমদ্দিনে শতাধিক আওয়ামী লীগ ক্যাডার অবাধ বিচরণ করে। ঢাকাসহ বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এসব ক্যাডার সাংবাদিক পরিচয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে মহড়া দেয়। যেসব কেন্দ্রে বিএনপির ভোটারদের উপস্থিতি বেশি সেসব কেন্দ্রে ওই সাংবাদিক পরিচয়ধারী তাদের সহযোগীদের পাঠিয়ে দিয়ে ভোটারদের পিটিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দিত। এসব ক্যাডার সাংবাদিক স্টিকার ব্যবহার করা গাড়িতেও ঘুরে বেড়ায়।
অস্ত্র নিয়ে ভোটারদের প্রকাশ্যে হুমকি : ভোটগ্রহণ শুরুর পরপরই লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের ৩০-৩৫ বহিরাগত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে নিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দেয়া শুরু করে বলে বিএনপির স্থানীয় নেতারা অভিযোগ করেন। সকাল ১১টায় সন্ত্রাসীরা বিএনপি-সমর্থিত ভোটারদের অস্ত্র নিয়ে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দিলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ভোটাররা। এসময় পুলিশ ও র্যাবের সহযোগিতা চাওয়া হলেও পাওয়া যায়নি। যেসব ইউনিয়নে বিএনপির ভোটের সংখ্যা বেশি ছিল সেসব ইউনিয়নে এসব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ঘুরে বেড়ালেও এদের আটক করেনি পুলিশ।
ভোট দেয়ার অপরাধে আঙুল কেটে নেয়া হলো : ভোট দেয়ার অপরাধে আঙুল কেটে নেয়া হলো নুরুল ইসলাম নামে এক ভোটারের। নুরুল ইসলামের অপরাধ, ভোট দিতে আওয়ামী লীগ ক্যাডাদের নিষেধ অমান্য করে তিনি ভোট দিয়েছেন। লোমহর্ষক বর্বরোচিত এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে নির্বাচনী এলাকা লালমোহনের পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের ২নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। আঙুল হারিয়ে নুরুল ইসলামের অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক। তাকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
লালমোহন পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের ইলিশা গ্রামের দরিদ্র কালু বেপারীর ছেলে বিএনপি সমর্থক নুরুল ইসলাম। অভাবের তাড়নায় কয়েক বছর আগে বিদেশে পাড়ি দেন তিনি। দেশে নির্বাচন চলছে। ভোট দেয়ার জন্য বিদেশ থেকে চলে আসেন প্রবাসী নুরুল ইসলাম। আগে থেকেই বিএনপিকে ভালোবাসতেন তিনি। বিএনপি সমর্থক হওয়ার কারণে তাকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে নিষেধ করে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা। কেন্দ্রের মধ্যে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা নুরুল ইসলামকে ফলো করে। এসময় আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, কিরে বেটা, তোকে তো বলেছিলাম তোর ভোট দেয়ার দরকার নেই। ঠিক আছে ভোট যখন দিয়েছিস, এখন মর। এভাবে বলার পর তাকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। প্রকাশ্যে হাতের ৩টি আঙুলে কোপ দিলে বাঁ হাতের শাহাদত অঙুল সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার। আরও ২টি আঙুল বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো। পুলিশের সামনেই তার হাতের আঙুল কেটে নেয় ক্যাডাররা।
থমথমে অবস্থায় লালমোহন ও তজুমদ্দিন : ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর নির্বাচনী এলকাজুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিএনপিসহ সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। অনেক ভোটার ও বিএনপির নেতাকর্মী এলাকা ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন। গতকাল বিকালে র্যাবের লাঠিচার্জ শুরু হলে শহরের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। শহরের রাস্তায় সাধারণ মানুষের ওপর এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ শুরু হলে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় মানুষ চারদিকে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। একপর্যায়ে বেশকিছু পথচারী আহত হয়। ভয়ঙ্কর এ পরিবেশ দেখে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা সংবাদকর্মীরা নিবাচর্নী এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/25/29077

----------------------------------------------------------------------
ভোলায় নির্বাচনী তামাশা : শাওনকে বিজয়ী ঘোষণা : বিএনপি এজেন্টদের বের করে দিয়ে ফাঁকা কেন্দ্রে বাক্স ভর্তি : আ’লীগের হামলায় আহত দুই শতাধিক



জি. এম বাবর আলী/কাজী জেবেল, ভোলা থেকে
ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া ও বেশিরভাগ কেন্দ্র থেকে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের জোরপূর্বক বের করে কেন্দ্র দখলে নিয়ে একতরফা জাল ভোট প্রদান, হাঙ্গামা ও মারধরের মধ্য দিয়ে গতকাল ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহায়তায় তামাশার এই উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনকে বিজয়ী করা হয়েছে। ষোল মাস আগে আওয়ামী লীগের ব্যাপক বিজয়ের সাধারণ নির্বাচনে এই আসনে ১৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে মেজর হাফিজ সরকারদলীয় প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু এবার স্থগিত ৯টি কেন্দ্রের মোট ৩১ হাজার ২৭৭ ভোট বাদ দিয়েই ৫০ হাজার ৭১৫ ভোটের ব্যবধানে হাফিজকে পরাজিত দেখানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে ইসির ‘এসিড টেস্ট’ খ্যাত এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পুরো সময় বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়া হয় ভোটার ও বিএনপি নেতাকর্মীদের। চরম অনিয়ম ও গোলযোগের কারণে ৯টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে ইসি। এসব ঘটনায় দু’শতাধিক বিএনপি কর্মী ও সাধারণ ভোটার আহত হয়েছেন। মেজর (অব.) হাফিজের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লাহ আমানের ওপর হামলা করে স্থানীয় যুবলীগ নেতাকর্মীরা। তারা পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে লাঞ্ছিত করে। এছাড়া নির্বাচনের আগের রাতে পুরো নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের ভোটারদের কেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দেয়া হয়।
বিএনপি ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দুই নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছে। নতুন নির্বাচনেরও দাবি জানিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ। বিএনপির পক্ষ থেকে ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবেও নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশে করেছে বিএনপি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস বিদ্যুত্ পানি সঙ্কট, আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে ষোল মাসে সরকারের জনপ্রিয়তা যখন নিম্নমুখী তখন ভোলার উপনির্বাচনের এই ফল অবিশ্বাস্য এবং অগ্রহণযোগ্য বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে ফলাফল মেনে নেয়ার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কোনো আন্দোলনের চেষ্টা হলে আওয়ামী লীগও বসে থাকবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এর আগে বেলা ২টার দিকে নির্বাচন কমিশন ৯টি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করলেও বেসরকারিভাবে দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ৫০ হাজার ৭১৫, এই ৯ কেন্দ্রে ৩১ হাজার ভোটের ব্যবধান হওয়ায় কোনো কেন্দ্রেই আর পুনর্নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে দাবি করে ফলাফল মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল সরেজমিন লালমোহন ও তজুমদ্দিন ঘুরে দেখা যায়, দুই উপজেলার ৮৬টি কেন্দ্রে সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শেষ হয় বিকাল ৪টায় এবং বিএনপির এজেন্টদের অনুপস্থিতিতেই ভোট গণনা করা হয়। সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও দুপুরের পরেই অনেক ভোটকেন্দ্র ফাঁকা হয়ে যায়। দুপুর ১২টার পর ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। বেলা আড়াইটার পর অনেক কেন্দ্র ভোটারশূন্য হয়ে পড়ে। স্থানীয় জনগণ ও সাধারণ ভোটাররা জানান, ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথগুলোর মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয়। তারা নারী ও বিএনপি সমর্থিত পুরুষ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধার সৃষ্টি করে। ভোটের আগের রাতে গ্রামে গ্রামে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়েছে সরকারি দলের ক্যাডাররা। কোথাও কোথাও মাইকিং করেও ধানের শীষে ভোট না দেয়ার জন্য হুমকি দেয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে ভোটার আইডি কার্ড কেড়ে নেয়া হয়েছে। অনুসন্ধানে এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। ভোটগ্রহণের কিছুক্ষণ পর হতে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে দুপুরেই সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, সকাল ১১টার মধ্যে দুই উপজেলার ৮৬টি কেন্দ্রের ৩৬টি থেকে তাদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়েছে সরকারি দলের ক্যাডাররা। তাদের অনেককে মারধর করা হয়। এছাড়া দুপুরের পর কোনো কেন্দ্রেই তাদের কোনো এজেন্ট থাকতে দেয়া হয়নি। এ সুযোগে বেশকিছু কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্টের সহযোগিতায় নেতাকর্মীরা ব্যাপক জালভোট দিয়েছে। পুলিশ ও র্যাব এ সময় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলেও অভিযোগ তাদের।
সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বদরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চটরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, ১০নং পশ্চিম চরটেটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মধ্য বদরপুর সেনের হাওলা কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, কোথাও বিএনপির এজেন্ট ছিল না। এ ইউনিয়নের অপর পাঁচটি কেন্দ্রের চারটিতেও কোনো এজেন্ট ছিল না বলে জানা গেছে। উল্লিখিত তিনটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসাররা জানান, বিএনপির কোনো এজেন্ট দায়িত্ব পালন করতে আসেনি। তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের অব্যাহত হুমকি ও হামলার কারণে তারা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেননি। লালমোহন উপজেলা সদরে অবস্থিত পাবলিক লাইব্রেরি সংলগ্ন কেন্দ্র থেকে বিএনপি এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। সাতানী কেন্দ্রের বিএনপির এজেন্ট পারভীন আক্তার বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদের বের করে দিয়ে ব্যালট পেপারে নৌকা মার্কায় ইচ্ছেমতো সিল মেরেছে। একইভাবে কিশোরগঞ্জ, আশরাফিয়া ও ডা. আজহার স্কুলসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র থেকেও পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। এছাড়া লালমোহন ও তজুমদ্দিনের একাধিক কেন্দ্র ঘুরে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের পাওয়া যায়নি।
নয়টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত : ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি ও সরকারদলীয় পোলিং এজেন্ট এবং নেতাদের তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে দুপুরের পর লালমোহনের ৯টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। কেন্দ্রগুলো হলো ডা. আজহার উদ্দিন রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভেদুরিয়া সেরাজিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (ধলী গৌরনগর), সাতানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সংলগ্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ফরাশগঞ্জ), ডা. আজহার উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (ফরাশগঞ্জ), উত্তর অন্নদা প্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (লর্ড হার্ডিঞ্জ), লর্ড হার্ডিঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (লর্ড হার্ডিঞ্জ), লর্ড হার্ডিঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসা ও সৈয়দাবাদ ফোরকানিয়া মাদ্রাসা।
পথে পথে বাধা ও হামলা : ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত ভোটাররা যাতে ধানের শীষে ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে না পারে সেজন্য প্রস্তুতির কমতি ছিল না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথে পথে বসানো হয় ব্যারিকেড। এছাড়া ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে আওয়ামী লীগ কর্মী ও ক্যাডাররা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়। সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ ভোটকেন্দ্র থেকে বিপুল সংখ্যক ভোটারকে তাড়িয়ে দেয় শাওনের কর্মীরা। এ সময় তাদের হামলায় মনছুর, মোতালেব, নুর নবী, শাহাবুদ্দিন, কানু ও লিটনসহ ৮-১০ জন আহত হন। লালমোহন পৌরসভার দালালবাড়ি ও গাজী বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার মোড়ে আওয়ামী লীগের ৮/১০ জনের একটি দল মহিলাদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়। তাদের বাধার মুখে অনেক মহিলাকে ভোট না দিয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়। তবে নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ভাড়া করা রিকশায় যেসব নারী ভোট দিতে গেছেন তাদের বাধা দেয়নি তারা। আওয়ামী লীগ কর্মীদের বাধায় ভোট দিতে না পারা ঝরনা বেগম জানান, তারা লালমোহন কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সন্ত্রাসীরা ভোট দিতে না দেয়ায় ফিরে যাচ্ছি। ছুটিতে থাকা ওমান প্রবাসী নুরুল ইসলাম সকাল ১০টায় পশ্চিম চরউমেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে আওয়ামী লীগ কর্মীরা তার হাতের দুটি আঙ্গুল কেটে নেয়। সকাল সাড়ে ৯টায় আশরাফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে মোঃ ফারুক, আব্বাস উদ্দিন, আলী আজগর, আবুল কাশেম, জাহাঙ্গীর, খোকনসহ ২০ জনকে আহত করা হয়। ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মোঃ ফারুক অভিযোগ করেন, এ সময় বিএনপি সমর্থক পাঁচ শতাধিক ভোটারকে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। অন্নদা প্রসাদ স্কুল কেন্দ্রে বিএনপি কর্মী সাদেকুর রহমান, নজরুল ইসলাম, নীরব, জামান, তৈয়ব, রহিমা, ইউসুফ ও সাইদুল হককে পিটিয়ে আহত করা হয়। লালমোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবদুল হাই হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, সন্ত্রাসীরা পথে পথে ব্যারিকেড দিয়ে ভোটারদের বাধা দিয়েছে। লালমোহন ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বিএনপি’র এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। এসব বিষয় পুলিশকে জানালেও তারা অ্যাকশনে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে। চরভূতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান টিটো জানান, তার ইউনিয়ন পরিষদের ৬টি কেন্দ্র থেকেই বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে পথে পথে বাধা দেয়া হয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসারকে এ ঘটনাগুলো জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। এছাড়াও লালমোহন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ফিরোজ, হাজীগঞ্জে ফারুক, দক্ষিণ কালমায় আমির হোসেন, উত্তর ফুলবাগিবা বাজারে লিটু, গজারিয়ায় কামাল হোসেন, পাঙ্গাসিয়ায় ইকবালসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়।
তজুমদ্দিন প্রতিনিধি জানান, ভোলা-৩ উপনির্বাচন এলাকা তজুমদ্দিনের ৩০টি কেন্দ্রের সকাল ৮টায় শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছিল। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আ’লীগ কর্মীরা বিএনপি সমর্থকদের পথে পথে বাধা সৃষ্টি করে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকে। প্রথমদিকে পুলিশ ও র্যাবকে বিষয়গুলো অবহিত করলে তারা স্ট্রাইকিং ফোর্সের টহলের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। ভোটকেন্দ্রে আসার পথে বিএনপি সমর্থক মতিন, রহিমা, আঃ সালামকে সকাল ৭টায় আ’লীগ কর্মীরা বাধা দেয়। তারা চাঁদপুর ইউনিয়নের মধ্য চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেয়ার উদ্দেশে কেন্দ্রে আসছিল। চাঁদপুর ইউনিয়নের কাজীকান্দি গ্রামের জামাল, মনির, মিজান কালুসহ বিএনপি সমর্থকদের সকাল ৮টায় বাধা দেয় আ’লীগ কর্মীরা। ৮টার দিকে ঘোষের হাওলা গ্রামে বিএনপি সমর্থক আলমগীর, ইয়াছিন, মফিজকে মারপিট করে তারা। সকাল সাড়ে ৮টায় শম্ভুপুর ইউনিয়নের নতুন হাট বাজারে বিএনপি কর্মী মোস্তাফিজকে মারপিট করে দুটি রিকশা ভাংচুর করে আ’লীগ কর্মীরা। এসব ঘটনায় গোটা তজুমদ্দিনে বিএনপি সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভোটগ্রহণকালে প্রশাসনের তরফ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ায় বিএনপি সমর্থিত ভোটাররা কেন্দ্র থেকে চলে যেতে শুরু করে। ফলে বেলা ১২টা বাজার আগেই উপজেলার ভোটকেন্দ্রগুলো ভোটার শূন্য হয়ে পড়ে। এদিকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর ফলে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টরা ১৫/২০টি কেন্দ্র ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, তজুমদ্দিনের কোনো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়নি।
এদিকে উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর কাওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রে আ’লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ৬ জন আহত হয়। ওই কেন্দ্রে বেলা ১১টায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান মাকসুদুর রহমান ভোট দিতে আসেন। এ সময় আ’লীগ কর্মী নূরনবী তাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় আ’লীগ কর্মী রিপন ও রুবেল অপর আ’লীগ কর্মী নূরনবীকে প্রতিহত করার চেষ্টা করলে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে নূরনবী, বশার মাঝি, নাছির, রিপন, রুবেল নীরবসহ ৬ জন আহত হয়। স্থানীয় সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এদিকে ভোটের আগের রাতে আ’লীগ কর্মীরা রাতভর লাঠিসোটা নিয়ে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে বিএনপির প্রায় ১৫ জন কর্মীকে মারপিট করে। বেলা ১২টার মধ্যেই উপজেলার ভোটকেন্দ্রগুলো ভোটার শূন্য হয়ে পড়ে। এদিকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর ফলে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টরা ১৫/২০টি কেন্দ্র ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, তজুমদ্দিনের কোনো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়নি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভোট গননা চলছে।
এদিকে ভোটের আগের রাতে আ’লীগ কর্মীরা রাতভর লাঠিসোটা নিয়ে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। বিএনপির প্রায় ১৫ জন কর্মীকে মারপিট করে। স্থানীয় সাংবাদিক এমএ হান্নান শিবপুর খাসেরহাট বাজারে গেলে আ’লীগ কর্মী মোবারক, ভুট্টো, জামালসহ ৫/৭ জন তার হামলা চালায়। তাকে আহত অবস্থায় ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভোলার ভোটকেন্দ্র দুপুরেই ফাঁকা : ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলো বেলা ১২টার মধ্যেই ফাঁকা হয়ে যায়। দুপুর ১২টার পর থেকে ভোটারদের ভিড় দেখা যায়নি। বেলা আড়াইটার পর কোনো কোনো কেন্দ্র ভোটারশূন্য হয়ে পড়ে। নির্বাচনী এলাকার লালমোহন-তজুমদ্দিনের ৮৬টি কেন্দ্রের ৫৭৪টি বুথে সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। সকালে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের কিছুটা ভিড় ছিল। কিন্তু বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ভোটার সংখ্যা কমতে থাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভয়ভীতির কারণে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে আসার সাহস করেননি।
লালমোহন-তজুমদ্দিনে ভোটারসংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯২৬। ভোট গ্রহণে সেখানে প্রতি কেন্দ্রে একজন প্রিজাইডিং অফিসার ও ৩৪৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করেন। প্রতি কেন্দ্রে র্যাব-পুলিশের কঠোর নিরাপত্তাবলয়ে চলে ভোট গ্রহণ। কয়েকটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কমিশন বসিয়েছে সিসি ক্যামেরা। প্রতি কেন্দ্রে ১৮ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকছে। আর ঝুঁকিপূর্ণ ৫২টি কেন্দ্রে রয়েছে ২৪ জন করে। ঝুঁকিপূর্ণ প্রতি কেন্দ্রেই একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। র্যাব-পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত স্ট্রাইকিং ফোর্সে ২১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন।
ভোলায় ভোটকেন্দ্রে আমানের ওপর যুবলীগের হামলা : উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়কারী আমানউল্লাহ আমানের ওপর হামলা চালায় যুবলীগ ক্যাডাররা। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তজুমদ্দিন উপজেলার আড়ালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে আমান তজুমদ্দিনের ৭২নং আড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। কেন্দ্রে ঢোকার পথে যুবলীগ নেতা শহীদুল্লাহ কিরণের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ আমানের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ গুলি করার প্রস্তুতি নিলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে হামলাকারীরা।
এরপর তাত্ক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে আমানউল্লাহ আমান বলেন, আড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রবেশের সময় যুবলীগ কর্মীরা তাকে হত্যার চেষ্টায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশ এগিয়ে এলে তিনি প্রাণে রক্ষা পান। পুলিশ-র্যাব হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এদিকে তজুমদ্দিন থানার ওসি খান মোঃ এরফান সাংবাদিকদের জানান, আড়ালিয়া কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। তবে পুলিশ সাহসী ভূমিকা পালন করে। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এতে বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আমান অভিযোগ করেন, নির্বাচনী এলাকায় ৪০টি কেন্দ্র দখল করেছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া বিএনপির ২০০ নেতাকর্মীকে মারধর করেছে। ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাল

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/25/29075

Friday 23 April 2010

ভীতিকর পরিস্থিতিতে ঢাবি শিক্ষকরা : প্রশাসন বিভক্ত, কট্টরপন্থী অংশ ভিন্নমত দমনে লিপ্ত, নির্যাতিত হচ্ছেন শিক্ষকরা

আসাদুজ্জামান সাগর ও খোমেনী ইহসান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভীতিকর পরিস্থিতির শিকার হয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে শিক্ষকদের। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাদের ব্যক্তিগত, একাডেমিক ও নাগরিক সম্পর্কের ওপর নজরদারি করছে। এমন ঘটনার শিকার হয়ে শিক্ষকরা মনে করছেন পরিস্থিতি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ মাস ও এক/এগারোর দু’বছরের জরুরি অবস্থার মতোই শ্বাসরুদ্ধকর। ওই সময় শিক্ষকদের যেভাবে অপমানিত ও আহত করা হতো, এখনও তারই পুনরাবৃত্তি ঘটছে। কিছু শিক্ষক পরিস্থিতিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানি ও ইতালিতে বিরাজিত ফ্যাসিবাদী পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করছেন। তাদের মতে, ওই সময় দুটি দেশে এক দল ও এক মত চাপিয়ে দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের গোয়েন্দা নজরদারিতে এনে ভিন্নমতাবলম্বীদের চিহ্নিত করে গোপন পুলিশ বাহিনী দিয়ে বেছে বেছে দমন করা হতো।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষকরা লাঠিপেটা, চপেটাঘাত ও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। ছাত্রলীগ ক্যাডার, আওয়ামীপন্থী শিক্ষক কেউই শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলতে বাদ রাখছেন না। এমনকি ভিন্নমতাবলম্বী হওয়ায় শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের সময় বিভাগে-হলে কাজ করতে গিয়ে বিব্রতকর কুিসত বাক্যবাণের টিজিংয়েরও শিকার হতে হচ্ছে। ফলে ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষকদের জন্য ক্যাম্পাস কারাগারে পরিণত হয়েছে। এ পরিস্থিতির উত্তরণে প্রশাসন থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারপন্থী কিছু ‘জ্যেষ্ঠ শিক্ষক’ ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষকদের একটি তালিকা করে। তালিকাটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলসহ সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে পাঠায় কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত ওই ‘জ্যেষ্ঠ শিক্ষক’রা। তারা তালিকাভুক্ত শিক্ষকদের কর্মকাণ্ডের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি চালানোর সুপারিশ করে। এছাড়াও তারা তালিকাভুক্ত শিক্ষকদের সামাজিক ক্ষমতার উত্স হ্রাস করতে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানায়।
সূত্র জানায়, এই তালিকা পাঠানোর পরও সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কিন্তু ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষকরা বিভিন্ন গোলটেবিল বৈঠক, বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো, সেমিনার ও আলোচনা সভায় বিডিআর বিদ্রোহ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধ, ভারতের স্বার্থে এশিয়ান হাইওয়ের রুট নির্ধারণ, সমুদ্রসীমা বিরোধ ও ভারত-বাংলাদেশ চুক্তিসহ বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য রাখলে এবং সংবাদপত্রে কলাম লিখলে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল তালিকাটি আমলে নেয়। এরপর তালিকাটিকে ‘প্রফেশনাল মেথডে’ চূড়ান্ত করতে গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তালিকাটি ১১ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়।
জানা গেছে, তালিকা চূড়ান্ত করতে কট্টর সরকারপন্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে একটি গোয়েন্দা সংস্থা যোগাযোগ করে। ওই শীর্ষ কর্মকর্তা তালিকাটি দেখে ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষকদের প্রভাব ও গুরুত্ব অনুসারে তাদের হলুদ কালিতে চিহ্নিত করেন। তার মতামতের ভিত্তিতে ভিন্নমতাবলম্বী ২শ’ শিক্ষকের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। তালিকাভুক্ত শিক্ষকদের নাম-ঠিকানাসহ জীবনবৃত্তান্তও ওই শীর্ষ কর্মকর্তা গোয়েন্দা সংস্থাটিকে সরবরাহ করেন। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্তির জন্য শিক্ষকদের দাখিলকৃত কাগজপত্রের সহায়তা নেয়া হয়। পরে তালিকাটি গোয়েন্দা সংস্থা সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ে পাঠিয়ে দেয়।
সূত্র নিশ্চিত করেছে, এরই মধ্যে তালিকা মোতাবেক শিক্ষকদের তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম পর্যায়ে আছেন ৩৪ জন ভিন্নমতাবলম্বী জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। ‘অত্যন্ত প্রভাবশালী’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে শ’খানেক অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপককে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে যোগদানকারী প্রভাবশালী প্রভাষকদের রাখা হয়েছে।
এদিকে গত বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও ক্যাম্পাসে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দার উপস্থিতি বেশি। দর্শনার্থীর বেশ ধরে তারা মধুর কেন্টিন, টিএসসি, কলাভবন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব, ফুলার রোড ও গিয়াসউদ্দিন আবাসিক এলাকায় নজরদারি করছে। সাদা পোশাকধারী হলেও ক্যাম্পাসে নিয়মিত যাতায়াতকারীরা অপরিচিত মুখ হিসেবে তাদের গোয়েন্দা হিসেবেই চিহ্নিত করেছে। এব্যাপারে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির এক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা নিয়মিত গোয়েন্দাগিরি করে, তাদের আমরা সবাই চিনি।’ তার মতে, ডিজিএফআই, এনএসআই, সিআইডি, ডিবি, এসবির ৩০-৩৫ জন গোয়েন্দা ক্যাম্পাসে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে মধুর কেন্টিনসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে অনেক অপরিচিত ব্যক্তি আড্ডা দিচ্ছে। বিভিন্নজনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে টুকটাক খোঁজ-খবর নিচ্ছে। এদিকে গিয়াস উদ্দিন আবাসিক এলাকার নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইদানীং এ এলাকায় কিছু অপরিচিত ব্যক্তির আনাগোনা বেড়েছে। তারা বেশিরভাগ সময় আসেন গিয়াস উদ্দিন আবাসিক এলাকার মসজিদে জামাত শুরু হওয়ার সময়।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের নজরদারির জন্য বিভিন্ন সংস্থার অর্ধশতাধিক গোয়েন্দা সদস্য নতুন করে কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, সাংবাদিক ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কোন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে জিজ্ঞেস করলে সূত্র জানায়, নজরদারির তালিকাভুক্ত শিক্ষকদের আদ্যোপান্তই জানার চেষ্টা করা হয়। বিশেষ করে ক্লাসে লেকচার দেয়ার সময় শিক্ষকরা কী পড়ান ও বলেন, বিভাগীয় কার্যালয়ে তাদের সঙ্গে কোন ধরনের ব্যক্তি সাক্ষাত্ করেন, তারা ক্যাম্পাসের বাইরে কোথায় যান, তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে, মাসিক আয় ও ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে কিনা, বাড়ি-গাড়ি আছে কিনা, শিক্ষক লাউঞ্জ ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে বসে তারা সরকারের সমালোচনা করেন কিনা ইত্যাদি বিষয়ে গোয়েন্দারা নজর রাখে। এসব বিষয়ের কোনো ক্ষেত্রে নজরদারি সম্ভব না হলে সোর্সের সহায়তা নেয়া হয়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষকদের ব্যাপারে কি কি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে, তা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সুপারিশ আকারে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলে পাঠিয়ে দেয়। আর সুপারিশের ভিত্তিতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর মধ্যে এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রানজিট নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য প্রদানকারী ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের এক শিক্ষকের বেসরকারি টেলিভিশন টকশো ও সভা-সেমিনারে বক্তব্যদানে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।
শিক্ষক নির্যাতন : এদিকে সরকারপন্থী শিক্ষক এবং ছাত্রলীগ ক্যাডারদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষকরা। এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় না। দু’একটি ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে সাময়িক বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হলেও পরে গোপনে তা তুলে নেয়া হয়। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৪ মাসে বেশ কয়েকজন শিক্ষক নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন। এসব ঘটনার বিচার চেয়েও বিচার পাচ্ছেন না শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্যাতকদের পক্ষাবলম্বন করে বেশিরভাগ ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে ১৪ এপ্রিল স্যার এএফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি রেজা সেকান্দার। কিন্তু এ ঘটনার প্রতিকার করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এর আগে গত ৭ মার্চ চারুকলা অনুষদে শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীপন্থী নীল দলের প্রভাবশালী শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক নাহিদ আখতার আরেক সহযোগী অধ্যাপক শেখ মনির উদ্দিনকে থাপ্পড় মারেন এবং নারী শিক্ষক সাবরিনা শাহনাজকে ‘শুয়রের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা’ বলে গালাগাল করেন। এর আগে ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে ভুয়া পরীক্ষা দিতে সহায়তা না করায় হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাজহারুল আনোয়ারকে লাঞ্ছিত করে সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ সভাপতি সাঈদ মজুমদার। কিন্তু এ ঘটনায়ও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এর আগে সিনেট নির্বাচনের সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাবেক প্রভোস্ট অধ্যাপক নূরুল ইসলামসহ দুই শিক্ষক। বস্তুনিষ্ঠ কারণ ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মাহমুদ ওসমান ইমাম ও শামসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ইউএবি রাজিয়া আক্তার বানুকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অবরুদ্ধ করে রেখে অশোভন আচরণ করে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। এছাড়াও প্রায়ই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অকথ্য গালাগালের শিকার হন ফজলুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মোজাম্মেল হক ও স্যার এএফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আবদুস সাত্তার।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্লাস-পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে গত ১৬ মাসে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক এবং ছাত্রলীগ কর্মীদের অকথ্য গালাগাল ও টিজিংয়ের শিকার হয়েছেন অর্ধশত শিক্ষক। নিপীড়িত এসব শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের সময় কোনো বিষয়ে কথা বলতে গেলে মাঝে মাঝে বর্তমান সরকারের নীতির আলোচনা করা দরকার হয়। এসময় সরকারের নীতিকে বেঠিক বা জাতীয় স্বার্থবিরোধী বললে শিক্ষার্থীদের সামনেই ‘বিএনপির দালাল’ এমন গালি ও নাজেহালের শিকার হতে হয়। শিক্ষকদের এভাবে নির্যাতিত হওয়ার ঘটনাকে প্রফেসর ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অত্যন্ত দুঃখজনক আখ্যায়িত করে এ ধরনের সংস্কৃতি থেকে সবাইকে বের হওয়ার আহ্বান জানান। উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, মূল্যবোধের অবক্ষয় ও ক্ষমতার দাপটের কারণে শিক্ষকরা নির্যাতিত হচ্ছেন।
এদিকে শিক্ষকদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি ও নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়েই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ও জরুরি অবস্থার দু’বছর ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ভীতিকর পরিস্থিতি কখনই আসেনি। এ পরিস্থিতিকে ’৫২, ’৬৯, ’৭১, ’৯০ ও ২০০৭ সালে ভাষা, স্বাধীনতা, মুক্তি ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামকারী শিক্ষক সমাজের জন্য চরম অবমাননাকর বলে আখ্যায়িত করেছেন সরকারপন্থী ও ভিন্নমতাবলম্বী সব মতের শিক্ষক। এ ব্যাপারে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ’৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী শিক্ষকরা যে কোনো মতাদর্শের অনুসারী হতে পারেন। আমার বোধগম্য নয় রাষ্ট্র কেন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নজরদারি করবে। ওই সংবাদ সত্য হয়ে থাকলে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তাদের ওই কাজে সহায়তা নিন্দনীয় কাজ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক বজলুল হক বলেন, শিক্ষকদের প্রতি গোয়েন্দা নজরদারির বিষয়টিকে আমি অবশ্যই খারাপভাবে দেখছি। পুরো বিষয়টি শিক্ষকদের মধ্যে ধূম্রজাল সৃষ্টি করছে। শিক্ষকরা কেন নজরদারিতে থাকবেন? এটা অবিশ্বাস্য মনে হওয়ার মতো। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানানো হবে। এজন্য গতকাল রাতে শিক্ষক সমিতির সভায় সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা।
বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম বলেন, শিক্ষকরা ভীতিকর অবস্থায় রয়েছেন। আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে ভিসির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, এর সঙ্গে প্রশাসনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটা হাস্যকর সংবাদ বলেও ভিসি মন্তব্য করেছেন।
নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের শিক্ষকতা পেশায় স্বাধীন। কোনো এক সময় আমাকেও গোয়েন্দা নজরদারি করা হতো। শিক্ষকদের প্রতি গোয়েন্দা নজরদারি অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। তবে যুদ্ধাপরাধী বা রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজে যদি কোনো শিক্ষক জড়িত থাকেন, তবে তাকে রাষ্ট্র গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখতে পারে।
অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে যে কোনো শিক্ষক যে কোনো মত ও দলের অনুসারী হতে পারেন। এজন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের তথ্য সরবরাহ করা এ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাজ নয়। কেউ যদি এ ধরনের তথ্য চেয়ে থাকে, তা সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিতে হয়। তিনি বলেন, আমি জানি না কারা শিক্ষকদের তথ্য সরবরাহ করছে এবং কেন গোয়েন্দা সংস্থা শিক্ষকদের ওপর নজরদারি করছে। এ সংবাদ সত্য হয়ে থাকলে সরকারের এ ধরনের কাজ বেআইনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খবরদারির অধিকার কারও নেই। সরকারের এ কাজের উদ্দেশ্য হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্যমান্য জ্ঞানি ব্যক্তিদের মধ্যে ভীতি ও ত্রাস সৃষ্টি করা, যাতে কেউ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে না পারে। তার মতে, এ ঘটনা দ্বারা সরকারের আসল উদ্দেশ্য ফাঁস হয়ে গেছে।
জানা গেছে, গোয়েন্দা নজরদারি নিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষকদের সামলাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারদলীয় প্রশাসন দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। উদারপন্থীরা এ ঘটনাকে নিন্দা জানিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাচ্ছে। কিন্তু কট্টরপন্থী অংশ গোয়েন্দা নজরদারির ব্যাপারে অনড় অবস্থান নিয়েছে। এ অংশকে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরাও প্রকাশ্যে সমর্থন করছেন। গোয়েন্দা নজরদারি ইস্যুতে প্রশাসনের এই বিভক্তি বুধবার অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় প্রকাশিত হয়ে যায়। সভায় বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম শিক্ষকদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি এবং তালিকা হওয়ার ব্যাপারে ভিসির দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দাবি করেন। তিনি সভায় গোয়েন্দা নজরদারির ব্যাপারে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করলে ভিসি তা গ্রহণ করেন। কিন্তু এসময় আওয়ামীপন্থী নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে বেশ ক’জন শিক্ষক একাডেমিক সভা ছেড়ে চলে যান। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম শীর্ষ এক কর্মকর্তার ইন্ধনে গোয়েন্দা নজরদারি নিয়ে ভিসির অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
গোয়েন্দা নজরদারির ব্যাপারে প্রো-ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ আমার দেশকে বলেন, ক্যাম্পাসে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কি করে, এ ব্যাপারে আমাদের অবহিত করা হয় না। আমরা শিক্ষকদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারির কোনো তথ্য জানি না। তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আমার ওপর নজরদারি করে কিনা, তাও তো আমি জানি না। শিক্ষকদের তালিকা করতে গোয়েন্দা সংস্থাকে সহায়তার তথ্য তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তালিকা করতে সহায়তা করার তথ্য ভিত্তিহীন। অপরদিকে ভিসি অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় শিক্ষকদের গোয়েন্দা নজরদারির বিষয়টিকে হাস্যকর ও ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/24/28909

Thursday 22 April 2010

যুদ্ধাপরাধের বিচার স্বচ্ছ হওয়া উচিত: স্টেইনবার্গ

Thu 22 Apr 2010 8:04 PM BdST

ঢাকা, ২২ এপ্রিল (আরটিএনএন ডটনেট)-- যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সফররত মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস বি স্টেইনবার্গ। বলেছেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

স্টেইনবার্গ বলেন, সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মার্কিন সরকার বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানে আশাবাদী।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশের জনগণই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

এসময় দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও ভারতের বর্তমান উদ্যোগের প্রশংসা করেন স্টেইনবার্গ।

বাংলাদেশের বিদ্যুত সমস্যা সমাধানে মার্কিন ব্যাবসায়ীদের বিনিয়োগের আগ্রহ রয়েছে বলেও তিনি জানান।

অবশ্য এজন্য দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ গড়ে তোলার তাগিদ দেন সফররত মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ঢাকা সফর সম্পর্কে তিনি সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি।

প্রসঙ্গত, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দ্বিতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস বি স্টেইনবার্গ দুই দিনের সফরে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা এসেছেন।

সফরের প্রথম দিনে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেন।

http://rtnn.net/details.php?id=23855&p=1&s=3

নরসিংদীতে জাপা মহাসচিব : টেন্ডারবাজি বন্ধ না হলে মহাজোট ছাড়বো

নরসিংদী প্রতিনিধি
জাতীয় পার্টির মহাসচিব সাবেক মন্ত্রী এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার এমপি বলেছেন, আমরা বড় আশা করে মহাজোটে গিয়েছিলাম। কিন্তু মহাজোটের শরিক হিসেবে আমাদের সঙ্গে দেয়া প্রতিশ্রুতি আজও পূরণ হয়নি। সারাদেশে যেভাবে টেন্ডারবাজি শুরু হয়েছে তা অবিলম্বে বন্ধ না হলে জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে সরে দাঁড়াবে। গতকাল বিকালে নরসিংদী কালীকুমার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা জাতীয় পার্টির কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নরসিংদী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আলহাজ শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) কাজী মাহমুদ হাসান, জিয়াউল হক মৃধা এমপি, কাজী মজিবুল হক চুন্নু এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি ও নুর ই হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মোস্তফা জামাল বেবী, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আঃ মতিন ভূঁইয়া, নরসিংদী পৌর মেয়র লোকমান হোসেন, জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য জিয়াউর রহমান জয় প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভাশেষে শফিকুল ইসলামকে সভাপতি, হাবিবুর রহমান ভূঁইয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১১ সদস্যবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা জাতীয় পার্টির কমিটি ঘোষণা করা হয়।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/21/28442

ঢাবির ছাত্রলীগ ক্যাডার আরিফ রিভলবারসহ গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ক্যাডার আরিফকে রিভলবারসহ আটক করেছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ সূর্যসেন হলে থাকে। গতকাল বিকালে তাকে রাজধানীর কোতোয়ালি থানার বাবুবাজার ব্রিজের কাছ চেকপোস্ট থেকে আটক করা হয়।
কোতোয়ালি থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) রকিবুল ইসলাম জানান, বিকাল সোয়া ৪টার দিকে কেরানীগঞ্জ থেকে মোটরসাইকেলে আসার সময় বাবুবাজার ব্রিজের চেকপোস্টে আরিফকে থামানো হয়। এ সময় তার কোমরে তল্লাশি চালিয়ে একটি রিভলবার পাওয়া যায়। অস্ত্রটি কোন দেশে তৈরি তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। আরিফের মোটরসাইকেল ও দুটি মোবাইল ফোনসট পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সে নিজেকে পুলিশের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা বলে দাবি করেছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে পুলিশ জানায়।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/20/28301

দুদক হচ্ছে নিধিরাম সর্দার



শরীফুল ইসলাম | সমকাল ২৩ এপ্রিল ২০১০
অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাল-তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দারে পরিণত হচ্ছে। দুদক আইন-২০০৪ যেভাবে সংশোধন হচ্ছে, তাতে এ সংস্থাটির স্বাধীনতা খুব সামান্যই থাকছে। সংশোধিত আইনে কমিশনের সব কার্যক্রমে সরকারের নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এই আইন অনুযায়ী প্রত্যেকটি কাজে কমিশনকে রাষ্ট্রপতির কাছে দায়ী থাকতে হবে। পাশাপাশি সরকারি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে সরকারের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেলে দুদক যে কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে পারত। আইনটি সংশোধন হলে সেই স্বাধীনতা আর থাকবে না। দুদক আইন-২০০৪ সংশোধনের একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই খসড়া অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। দুদক চেয়ারম্যান অনেক আগে থেকেই এ রকম আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, দুদকের নখ-দাঁত ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। এটি না করার জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগও করেছিলেন তিনি। অনুরোধ করেছিলেন যাতে দুদকের ক্ষমতা ও স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া না হয়। এই অনুরোধে কোনো কাজ হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতে সমাজে দুর্নীতি আরও বেড়ে যাবে। এ ব্যাপারে টিআইবির সাবেক চেয়ারম্যান মোজাফফর আহমেদ বলেন, দুদকের সব কাজ রাষ্ট্রপতির কাছে দায়বদ্ধ রাখার বিধান রেখে আইন সংশোধন করা হলে এটা একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। রাজনৈতিক প্রভাবে প্রতিষ্ঠানটি প্রভাবিত হবে। এতে প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে। দেশে দুর্নীতিও চরমভাবে বাড়বে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান সমকালকে বলেন, দুদক আইন সংশোধনের ব্যাপারে এখনও কিছুই হয়নি। মন্ত্রিসভায় পাঠালে হয়তো সেটা নীতিগত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হচ্ছে। নীতিগত অনুমোদনই শেষ কথা নয়। দুদকের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে_ এ কথা মানতে নারাজ মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবদুল আজিজ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, দুদককে শক্তিশালী করতেই এই আইন সংশোধন করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে কয়েকটি বিষয় অস্পষ্ট ছিল। সংশোধনের মাধ্যমে এটা দূর করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সংশোধনী আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আগামী মন্ত্রিসভার বৈঠকে এটা অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। জানা গেছে, সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনকে একটি শক্তিশালী, গণমুখী, জবাবদিহি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে দুদক আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। এই লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের
একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে আইন সংশোধনে সুপারিশ করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি ছয়টি বৈঠক করে আইন সংশোধনের সুপারিশ করে। এই আইনের কিছু ধারা সংশোধনে কমিশন দ্বিমত পোষণ করে। কমিশনের দ্বিমতের পরও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশোধনী আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
সংশোধিত আইনে কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার সুপারিশ করা হয়েছে। পরে এটা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করার বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি কমিশনের যে কোনো কাজের দায় এবং কমিশনারদের জবাবদিহিতা রাষ্ট্রপতির কাছে রাখার বিধান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তি দেখানো হয়েছে, বিগত সময়ে কমিশন অন্যায়ভাবে অনেক কাজ করেছে। কারও কাছে জবাবদিহিতা না থাকার কারণে দুদক এগুলো করতে পেরেছে। এখন রাষ্ট্রপতির কাছে দায়ী থাকলে কমিশন স্বেচ্ছায় এ ধরনের কাজ আর করতে পারবে না।
সংশোধনী খসড়া মতে, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনভাবে কমিশন আর মামলা করতে পারবে না। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে সরকারের অনুমতি গ্রহণের বিধান চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংশোধিত আইনে দুদকের নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে না। এক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সরকারের সর্বোচ্চ কোনো কর্মকর্তার কাজ সম্পর্কে শুধু দুদকের সমমানের কর্মকর্তাই অনুসন্ধান বা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন।
সংশোধিত আইনে কমিশনের সঙ্গে দেশি-বিদেশি সংস্থার বিভিন্ন ধরনের চুক্তি করার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কমিশন তাদের প্রয়োজনে দেশি বা বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যে কোনো চুক্তি করতে পারে। সংশোধিত আইনে এই সুযোগ থাকছে না। কমিশনের সচিব নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশোধিত আইনে কমিশনের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
খসড়া আইনে কমিশনের পূর্বে স্বশাসিত শব্দটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তি দেখানো হয়েছে, স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান নিজের আয় থেকে ব্যয় নির্বাহ করে থাকে। দুদকের নিজস্ব কোনো আয় নেই। এ প্রতিষ্ঠানটি সরকারের অর্থ দিয়েই চলে। তাই প্রতিষ্ঠানটি স্বশাসিত হবে না। কোনো সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান তাদের গোপন তথ্যাদি কমিশনকে না দিলে এক্ষেত্রে কমিশন তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না। সংশোধিত আইনে কমিশনের মামলা কমিশনের পাশাপাশি পুলিশের মাধ্যমে তদন্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।

স্বাধীনতাবিরোধীসহ বিএনপির বিতর্কিতরা এখন আ.লীগে

ওয়াসেক বিল্লাহ্ ও নেয়ামত উল্যাহ | Prothom-alo তারিখ: ২০-০৪-২০১০

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছিলেন ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাচড়া ইউনিয়নের গোলাম মাওলা। মুক্তিযুদ্ধের পর দালাল আইনে জেলও খাটেন তিনি। এত দিন তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ভোলা-৩ আসনে উপনির্বাচনের আগে তিনি এবার আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
গোলাম মাওলার মতো লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী সম্প্রতি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে আছে বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ ছিল। ২০০৪ সালে তোফায়েল আহমেদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় ছিলেন—এমন ব্যক্তিরাও আছেন এঁদের মধ্যে।
চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধীর দলে যোগ দেওয়াকে ভালো চোখে দেখছেন না আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী। তজুমদ্দিন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক থানা কমান্ডার আবুল কাসেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোলাম মাওলা ডাইরেক্ট রাজাকার আছিল।’
গোলাম মাওলা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর পটুয়াখালী জেলে ছিলাম। কোনো অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় পরে জেল থেকে বের হয়েছি।...আমি দলে যোগ দেওয়ায় অনেকে এলাকায় নেতৃত্ব হারাবেন। এ কারণে তাঁরা নানা কথা বলছেন।’
তবে স্থানীয় রাজনীতিকদের অনেকেই বলছেন, জোট সরকারের আমলে নানা অপকর্ম করা এই ব্যক্তিরা বাঁচার জন্য এখন আওয়ামী লীগে ভিড়েছেন। আর ‘ভোটের রাজনীতির’ কারণে আওয়ামী লীগও তাঁদের দলে ঠাঁই দিয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নূরনবী চৌধুরী প্রথম আলোর কাছে দাবি করছেন, বিএনপির প্রার্থী হাফিজউদ্দিন আহমেদের অপরাজনীতির কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি থেকে প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন।
যাঁরা যোগ দিলেন: মলংচড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল হাই চৌধুরী, একই ইউনিয়নের ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক নেতা নূর মোহাম্মদ ও মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, চাচড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক দুই যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম মাওলা, মাহমুদউল্লাহ প্রমুখ ১১ এপ্রিল তজুমদ্দিনে তোফায়েল আহমেদের উপস্থিতিতে এক জনসভায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
এর মধ্যে গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা, আবদুল হাই চৌধুরীর বিরুদ্ধে নদী দখল করে মাছ ধরা, নূর মোহাম্মদ ও জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির (কাবিখা) চাল-গম আত্মসাত্ এবং এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ আছে। কয়েক বছর ধরে তাঁদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে আসছিল আওয়ামী লীগ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তজুমদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওহিদুল্লাহ জসিম বলেছেন, যাঁরা দলে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা ভোট বাড়াবেন। তবে স্বাধীনতাবিরোধী ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের দলে নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এখন অবশ্য বিএনপি বলছে, যাঁরা আওয়ামী লীগে গেছেন, তাঁরা বিতর্কিত। তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাহমুদউল্লাহ্, আবদুল হাইরা সব সময় সুবিধাবাদী। ক্ষণে ক্ষণে তাঁরা দল পাল্টান। আর গোলাম মাওলা চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী। এঁদের চলে যাওয়ায় বিএনপির কোনো ক্ষতি হবে না।
তোফায়েলের ওপর হামলাকারী: ২০০৪ সালে লালমোহনে আওয়ামী লীগের নেতা তোফায়েল আহমেদের ওপর হামলা ও তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করেছিল বিএনপির ক্যাডাররা। ওই হামলায় অন্যান্যের সঙ্গে লালমোহন বিএনপির তৎকালীন নেতা জহিরুল ইসলাম মাসুদ পাটোয়ারি, জাকির হাওলাদার, বাবুল পাটোয়ারি প্রমুখ যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যৌথ বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলাকালে এরা সবাই ছিলেন পলাতক। সম্প্রতি এই তিনজনই যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে।
অবশ্য জহিরুল ইসলাম দাবি করেছেন, ‘তোফায়েল আহমেদের ওপর আমার নেতৃত্বে হামলা হয়নি। যারা বলেছে তারা ভুল বলেছে।’
লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা মিয়া বলেন, ‘ওই ঘটনায় মাসুদ পাটোয়ারির সম্পৃক্ততা ছিল। কিন্তু আমরা মামলা করতে গেলে তখন থানা মামলা নেয়নি।’ এঁদের দলে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাসুদ পাটোয়ারি অনেক দিন ধরে হাফিজউদ্দিনের (বিএনপির প্রার্থী) বিরোধিতা করে আসছেন। এ কারণেই তাঁকে দলে নেওয়া হয়েছে।
কালমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মৃধার বিরুদ্ধে বিগত জোট সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তাঁর ভাই বজলু মৃধাকে দিয়ে ত্রাণের চাল বিক্রির অভিযোগও আছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চাল বিক্রির সময় যৌথ বাহিনীর কাছে হাতেনাতে ধরাও পড়েন মোতাহার হোসেনের ভাই বজলু মৃধা। এই মোতাহার হোসেনও যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে।
মোতাহার হোসেন বলেন, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তিনি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন বলেও দাবি করেন।
ধলিগৌরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক তাঁর নির্বাচনের আগে খুব একটা সচ্ছল ছিলেন না। বিগত জোট সরকারের আমলে বিএনপির প্রভাব খাটিয়ে ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হন। তিনি রাজধানীতে বাড়ি করেছেন, লালমোহন বাজারেও করেছেন আরেকটি বাড়ি। যৌথ বাহিনীর অভিযান চলাকালে তিনি বেশ কিছুদিন আত্মগোপন করেন। তিনিও এখন আওয়ামী লীগে।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ঢাকায় বাড়ি করতে কয় টাকা লাগে? আর লালমোহনে তো করেছি একটি একতলা বাড়ি।’ তিনিও দাবি করেন, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তিনি ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়েছেন।
ধলিগৌরনগর ইউনিয়নের বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া, পশ্চিম চরউমেদের আবদুল খালেক, মোস্তফা মিয়া ও কালমা ইউনিয়নের ইয়াকুব আলী বিএনপি থেকে এখন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এঁদের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল পঞ্চায়েত বলেন, ‘এরা ব্যাপক দুর্নীতি করেছে। দল থেকে চলে যাওয়ায় বিএনপির লাভই হয়েছে। আমরা ভোটারদের বলি, এরা আগেও লুটপাট করেছে, এখন আবার লুটপাট করার জন্য আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। এদের কথা যেন কেউ না শোনে।’

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-04-20/news/57664

আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে এসপিকে বদলি করা হয়েছে

Prothom-alo নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১৯-০৪-২০১০

ভোটগ্রহণের মাত্র পাঁচ দিন আগে ভোলার পুলিশ সুপারকে (এসপি) বদলি করার ঘটনা ভালো চোখে দেখছে না বিএনপি। দলটির অভিযোগ, আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে শেষ মুহূর্তে এসপিকে বদলি করা হয়েছে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ সোমবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, এর ফলে নিরপেক্ষ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি একে সরকারের রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের মিশন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই নির্বাচন সরকারের জন্য এসিড টেস্ট। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে, জনগণের ভোট ছিনিয়ে নেওয়া হলে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার নীল নকশার নির্বাচন করতে চায়। তাই প্রশাসনের কর্মকর্তারাও সরকারদলীয় ক্যাডারদের মতো আচরণ করছেন।
ওই আসনে বিএনপির প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী নাজিমউদ্দিন আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বিএনপির নেতা বলেন, এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, গতকাল রোববার নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ব্যবহূত বিএনপির প্রার্থীর গাড়িবহর চার ঘণ্টা আটক রাখে পুলিশ। অথচ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ১৪টি গাড়ি নিয়ে প্রচারণা চালালেও তাঁকে বাধা দেওয়া হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী নূরনবী নিজেই একজন সন্ত্রাসী। মালিবাগে ডা. ইকবালের মিছিল থেকে গুলির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নূরনবী আসামি। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঢাকা থেকে অন্তত ২০০ সন্ত্রাসী নিয়ে বিএনপির ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। তিনি প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।
সংবাদ ব্রিফিংয়ের সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দপ্তর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ের পর দলীয় কার্যালয়ের সামনে খুলনায় খালেদা জিয়ার মহাসমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের জন্য গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-04-19/news/57514

সত্তরের দশকের প্রায় প্রতিটি আন্দোলনে জামায়াত আওয়ামী লীগের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করেছে



স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত সকল আন্দোলন সংগ্রামে জামায়াত ও আওয়ামী লীগের দাবী এক হয়েও জামায়াত দেশ বিরোধী। অথচ ষাট হতে সত্তরের দশকের প্রায় প্রতিটি আন্দোলনে জামায়াত আওয়ামী লীগের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করেছে। ১৯৭০ সালে নির্বাচনে অবিসম্বাদী জয়ের পর যখন পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠি যখন টালবাহানায় লিপ্ত ছিল, তখন বারংবার জামায়াতের পক্ষ থেকে বিজয়ী শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পনের জোর দাবী জানানো হয়েছে। কেননা সকলেই জানতেন এর অন্যথা হলে দেশ অবশ্যম্ভাবী বিভক্তির দিকে এগিয়ে যাবে, যা আওয়ামী লীগ নিজেও চাইত না।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে পুর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে না দেয়ায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এমন এক অবস্থায় ১৯৭১ সালে ৭মার্চ রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ জনতার মাঝে শেখ মুজিব এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ওই ভাষণে তিনি ঘোষণা করেন-
'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।'
ওই ভাষণে শেখ মুজিব যে চারটি দাবী জানান সেগুলো হলো-

১.সামরিক আইন মার্শাল 'ল' তুলে নিতে হবে।
৩.সমস্ত সেনাবাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে।
৩. যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে।
৪.আর জন প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

কেউ কেউ দাবি করেন মার্চের ভাষণে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু কথা হল, তিনি যদি সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণাই দেবেন তাহলে পাকিস্তানী সরকারের উদ্দেশ্যে দাবী-দাওয়া পেশ করলেন কেন? এমনকি ভাষনের শেষে তিনি 'পাকিস্থান জিন্দাবাদ' বলে ভাষন সমাপ্ত করেন।এসব দাবী পর্যালোচনা করেই অনেকে বলে থাকেন যে, শেখ মুজিব ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। কারণ ১৩ মার্চের পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহইয়ার সাথে ঢাকা বৈঠকে সমঝোতা যদি সফল হত, শেখ মুজিবুর রহমানই হতেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আদৌ কোন সম্ভাবনা ছিল না। শেখ মুজিব স্বাধীনতার চিন্তা করেননি, তা ২৪শে মার্চে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সভায় প্রদত্ত বক্তব্য থেকে প্রমাণ মেলে। সেদিন তিনি দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিলেন,
"আমার ম্যান্ডেট স্বায়ত্ত্বশাসনের জন্য, স্বাধীনতার জন্য নয়।"
(সাংবাদিক আশরাফের প্রতি কৃতজ্ঞতা)
২৫ মার্চের আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টা ছিল দেশের অখন্ডতার পক্ষে। এ কারনে বিভিন্ন সময়ে হুমকি ধামকি দিয়ে চেষ্টা করেছেন পাকিস্থানী ম্বেরাচার শাসকদের কাছ থেকে অধিকার টুকু আদায় করতে। এমনকি ২৫ মার্চ রাতেরও গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে তিনি দেশকে বিভক্ত করার পক্ষে ছিলেন না।
''একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে গ্রেফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বাধীনতার কোনো ঘোষণা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেননি। তাজউদ্দীন আহমদ ওই রাতেই স্বাধীনতার ঘোষণার ছোট্ট একটি খসড়া তৈরি করে টেপরেকর্ডারে ধারণ করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে পড়তে দেন। বঙ্গবন্ধু খসড়াটি পড়ে নিরুত্তর থাকেন এবং এড়িয়ে যান। তাজউদ্দীন আহমদ ঘোষণাটি দিতে অনুরোধ জানালে বঙ্গবন্ধু উত্তর দেন,
''এটা আমার বিরুদ্ধে একটি দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে।''
ইপিআর সিগন্যালসের মাধ্যমে শেখ সাহেব স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন সেটাও বোধহয় অবাস্তব কথা। চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন বলে যে কথা বলা হয়, তাও সঠিক নয়। ভারত সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার সময় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও অন্য প্রধান নেতাদের জিজ্ঞাসা করেছে যে, স্বাধীনতার ঘোষণার ব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমান কাউকে কিছু বলে গেছেন কিনা। এর মধ্যে জহুর আহমদ চৌধুরীও ছিলেন। ভারত সরকারকে প্রত্যেকেই বলেছেন, কাউকেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণার কথা বলে যাননি। জহুর আহমদ চৌধুরী নিজে তাজউদ্দীনকে বলেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণার ব্যাপারে তাকে কিছুই বলা হয়নি।'' (আমার দেশ এবং প্রিয় ডটকম http://priyo. com/forum/ 2010/mar/25/37599. html)

কিন্তু এত সবের পরেও আজ সত্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষক, আওয়ামী লীগ স্বাধীসতার সোল এজেন্ট আর দীর্ঘ আন্দোলনে পাশে থেকেও জামায়াত স্বাধীনতা বিরোধী। ভাষা আন্দোলনের ইশতেহার পাঠকারী অধ্যাপক গোলাম আযম দেশদ্রোহী। ছবি নাকি ইতিহাসের কথা বলে। বহু বচর আহে ছাপা হওয়া একটি বইয়ের দুর্লভ কিছু ফটো পেয়ে গেলাম। রীতিমতো চমকে দেবার মতো। দেখা যাক ইতিহাস কি বলে।

১---পূর্ব পাকিস্থানের অধিকার আদায়ে দাবী দাওয়া তৈরীতে প্রায়শই একত্রিত হয়েছেন তৎকালীন জাতীয় নেতারা। এমনি একটি সভায় ডান থেকে অধ্যাপক গোলাম আযম, পীর মোহসেন উদ্দীন দুদু মিয়া (ইংরেজ বিরোধী বিপ্লবী হাজী শরীয়াতউল্লাহর ছেলে), মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ (আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা ও পরবর্তীতে অস্থায়ী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী)।

২----পূর্ব পাকিস্থানের অধিকার আদায়ে আয়োজিত সভা সমাবেশে উপস্থিত থেকেছেন অধ্যাপক গোলাম আযম। এমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাউন্ড টেবিল কনফারেন্সে বাম হতে ২য় অবস্থানে তাকে দেখা যাচ্ছে।

৩-----প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান (সর্ববামে) বিভিন্ন দাবী দাওয়ার প্রেক্ষিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে মিলিত হন। ডান থেকে অধ্যাপক গোলাম আযম, পীর মোহসেন উদ্দীন দুদু মিয়া (ইংরেজ বিরোধী বিপ্লবী হাজী শরীয়াতউল্লাহর ছেলে), মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ (আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা ও পরবর্তীতে অস্থায়ী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী), মাওলানা মুফতি মাহমুদ, চৌধুরী মোঃ আলী (পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী)

৪---আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সকল দলকে নিয়ে সম্মিলিত আন্দোলনে তৎকালীন জামায়াতের আমীর অধাপক গোলাম আযমের ভূমিকাও ছিল অগ্রগণ্য। প্রায় প্রতিটি জোট বদ্ধ আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রগামী, আওয়ামী লীগ এটি ভালোভাবেই বুঝত। শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আন্তরিক পরিবেশে সভা করছেন অধ্যাপক গোলাম আযম (ডান থেকে ৩য়)

৫---স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের এক পর্যায়ে সকল বিরোধী দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় ডাক জোট। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে আওয়ামী লীগ এতে সবার উপরে ছড়ি ঘোরানোর সম্ভাবনা না থাকায় যোগ দেয়নি। পরে অন্যতম পুরোধা ছিলেন অধ্যাপক গোলাম আযম। সর্বদলীয় সভায় অন্যতম মধ্যমনি হিসাবে দেখা যাচ্ছে তাকে।

৬---জাতীয় নির্বাচনের দাবীতে সকল বিরোধী দল ছিল একাট্টা। প্রতিটি দলের দাবী ছিল এক এবং সম্মুখে থেকে জামায়াতে পক্ষে ভূমিকা রেখেছেন তৎকালীন আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম। সর্বদলীয় সভায় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে।

৭-- দুর্লভ পেপার কাটিং। এর পরেও কি বলা হবে জামায়াত আগা গোড়া দেশদ্রোহীতায় লিপ্ত ছিল? ডান পাশের বিবৃতি প্রকাশ হয় দৈনিক আজাদের ১০ মার্চ ১৯৭১ সংখ্যায় ডাতে শেখ মুজিবকে ৭ মার্চের ভাষনের জন্য জামায়াত অভিনন্দন জানিয়েছিল এবং অবিলম্বে বিজয়ী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তাস্তরের জোর দাবী জানিয়েছিলেন তৎকালীন জামায়াত নেতারা। ডান পাশের বিবৃতিটি প্রকাশিত হয় ১৭ মার্চ ১৯৭১। দেশকে চুড়ান্ত বিভক্তি থেকে রক্ষার জন্য শেখ মুজির-ইয়াহইয়ার বৈঠকের সফলতা কামনা করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহইয়াকে দ্রুত শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী জানান অধ্যাপক গোলাম আযম। বোধগম্য করবার জন্য পুরাতন কাটিং এর ভেতরের কথাই এর সত্যতার জন্য যথেষ্ট।

৮---শেখ মুজিবর রহমানের সাথে জাতীয় নেতৃবৃন্দের অন্তরঙ্গ আলাপচারিতার এবটি বিশেষ মুহূর্তে অধ্যাপক গোলাম আযমকে দেখা যাচ্ছে। দেশের স্বাধীনতার আড়াগোড়া বিপক্ষে তথাকথিতঅবস্থানকারীর সাথে স্বাধীনতার স্থপতির আন্তরিকতার এ ছবিটি সত্য নাকি স্বাধীনতার পর হতে বাকী অপপ্রচার সত্য?

৯----প্রতিটি দাবী দাওয়ার সাথে জামায়াত আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয় ভাবে একাত্মতা ঘোষনা করেছে। শুধু অধ্যাপক গোলাম আযম নয় বরং তৎকালীন জামায়াতের সর্বোচ্চ নেতা মাওলানা মওদূদীও ছিলেন স্বৈরাচার বিরোধী ন্যায় সঙ্গত অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোগী।

স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আগাগোড়া সব কিছুর সাক্ষী। বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের পর হতে ১৫ আগস্ট মুত্যুর আগ পর্যন্ত অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোন কথা বলেননি। চ্যালেঞ্জ রইল যদি কেউ প্রমাণ দেখাতে পারেন, আমার এই মন্তব্য ডিলিট করে দেব।



পূর্ব পাকিস্থানের অধিকার আদায়ে দাবী দাওয়া তৈরীতে প্রায়শই একত্রিত হয়েছেন তৎকালীন জাতীয় নেতারা। এমনি একটি সভায় ডান থেকে অধ্যাপক গোলাম আযম, পীর মোহসেন উদ্দীন দুদু মিয়া (ইংরেজ বিরোধী বিপ্লবী হাজী শরীয়াতউল্লাহর ছেলে), মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ (আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা ও পরবর্তীতে অস্থায়ী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী)।

পূর্ব পাকিস্থানের অধিকার আদায়ে আয়োজিত সভা সমাবেশে উপস্থিত থেকেছেন অধ্যাপক গোলাম আযম। এমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাউন্ড টেবিল কনফারেন্সে বাম হতে ২য় অবস্থানে তাকে দেখা যাচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান (সর্ববামে) বিভিন্ন দাবী দাওয়ার প্রেক্ষিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে মিলিত হন। ডান থেকে অধ্যাপক গোলাম আযম, পীর মোহসেন উদ্দীন দুদু মিয়া, মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, মাওলানা মুফতি মাহমুদ, চৌধুরী মোঃ আলী (পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী)

আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সকল দলকে নিয়ে সম্মিলিত আন্দোলনে তৎকালীন জামায়াতের আমীর অধাপক গোলাম আযমের ভূমিকাও ছিল অগ্রগণ্য। প্রায় প্রতিটি জোট বদ্ধ আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রগামী, আওয়ামী লীগ এটি ভালোভাবেই বুঝত। শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আন্তরিক পরিবেশে সভা করছেন অধ্যাপক গোলাম আযম (ডান থেকে ২য়)

স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের এক পর্যায়ে সকল বিরোধী দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় ডাক জোট। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে আওয়ামী লীগ এতে সবার উপরে ছড়ি ঘোরানোর সম্ভাবনা না থাকায় যোগ দেয়নি। পরে অন্যতম পুরোধা ছিলেন অধ্যাপক গোলাম আযম। সর্বদলীয় সভায় অন্যতম মধ্যমনি হিসাবে দেখা যাচ্ছে তাকে।

জাতীয় নির্বাচনের দাবীতে সকল বিরোধী দল ছিল একাট্টা। প্রতিটি দলের দাবী ছিল এক এবং সম্মুখে থেকে জামায়াতে পক্ষে ভূমিকা রেখেছেন তৎকালীন আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম। সর্বদলীয় সভায় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে।

দুর্লভ পেপার কাটিং। এর পরেও কি বলা হবে জামায়াত আগা গোড়া দেশদ্রোহীতায় লিপ্ত ছিল? ডান পাশের বিবৃতি প্রকাশ হয় দৈনিক আজাদের ১০ মার্চ ১৯৭১ সংখ্যায় ডাতে শেখ মুজিবকে ৭ মার্চের ভাষনের জন্য জামায়াত অভিনন্দন জানিয়েছিল এবং অবিলম্বে বিজয়ী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তাস্তরের জোর দাবী জানিয়েছিলেন তৎকালীন জামায়াত নেতারা। ডান পাশের বিবৃতিটি প্রকাশিত হয় ১৭ মার্চ ১৯৭১। দেশকে চুড়ান্ত বিভক্তি থেকে রক্ষার জন্য শেখ মুজির-ইয়াহইয়ার বৈঠকের সফলতা কামনা করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহইয়াকে দ্রুত শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী জানান অধ্যাপক গোলাম আযম। বোধগম্য করবার জন্য পুরাতন কাটিং এর ভেতরের কথাই এর সত্যতার জন্য যথেষ্ট।

শেখ মুজিবর রহমানের সাথে জাতীয় নেতৃবৃন্দের অন্তরঙ্গ আলাপচারিতার এবটি বিশেষ মুহূর্তে অধ্যাপক গোলাম আযমকে দেখা যাচ্ছে। দেশের স্বাধীনতার আড়াগোড়া বিপক্ষে তথাকথিতঅবস্থানকারীর সাথে স্বাধীনতার স্থপতির আন্তরিকতার এ ছবিটি সত্য নাকি স্বাধীনতার পর হতে বাকী অপপ্রচার সত্য?

প্রতিটি দাবী দাওয়ার সাথে জামায়াত আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয় ভাবে একাত্মতা ঘোষনা করেছে। শুধু অধ্যাপক গোলাম আযম নয় বরং তৎকালীন জামায়াতের সর্বোচ্চ নেতা মাওলানা মওদূদীও ছিলেন স্বৈরাচার বিরোধী ন্যায় সঙ্গত অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোগী।


পূর্ব পাকিস্থানের অধিকার আদায়ে দাবী দাওয়া তৈরীতে প্রায়শই একত্রিত হয়েছেন তৎকালীন জাতীয় নেতারা। এমনি একটি সভায় ডান থেকে অধ্যাপক গোলাম আযম, পীর মোহসেন উদ্দীন দুদু মিয়া (ইংরেজ বিরোধী বিপ্লবী হাজী শরীয়াতউল্লাহর ছেলে), মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ (আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা ও পরবর্তীতে অস্থায়ী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী)।

পূর্ব পাকিস্থানের অধিকার আদায়ে আয়োজিত সভা সমাবেশে উপস্থিত থেকেছেন অধ্যাপক গোলাম আযম। এমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাউন্ড টেবিল কনফারেন্সে বাম হতে ২য় অবস্থানে তাকে দেখা যাচ্ছে।


প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান (সর্ববামে) বিভিন্ন দাবী দাওয়ার প্রেক্ষিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে মিলিত হন। ডান থেকে অধ্যাপক গোলাম আযম, পীর মোহসেন উদ্দীন দুদু মিয়া, মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, মাওলানা মুফতি মাহমুদ, চৌধুরী মোঃ আলী (পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী)



আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সকল দলকে নিয়ে সম্মিলিত আন্দোলনে তৎকালীন জামায়াতের আমীর অধাপক গোলাম আযমের ভূমিকাও ছিল অগ্রগণ্য। প্রায় প্রতিটি জোট বদ্ধ আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রগামী, আওয়ামী লীগ এটি ভালোভাবেই বুঝত। শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আন্তরিক পরিবেশে সভা করছেন অধ্যাপক গোলাম আযম (ডান থেকে ২য়)

স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের এক পর্যায়ে সকল বিরোধী দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় ডাক জোট। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে আওয়ামী লীগ এতে সবার উপরে ছড়ি ঘোরানোর সম্ভাবনা না থাকায় যোগ দেয়নি। পরে অন্যতম পুরোধা ছিলেন অধ্যাপক গোলাম আযম। সর্বদলীয় সভায় অন্যতম মধ্যমনি হিসাবে দেখা যাচ্ছে তাকে।

প্রতিটি দাবী দাওয়ার সাথে জামায়াত আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয় ভাবে একাত্মতা ঘোষনা করেছে। শুধু অধ্যাপক গোলাম আযম নয় বরং তৎকালীন জামায়াতের সর্বোচ্চ নেতা মাওলানা মওদূদীও ছিলেন স্বৈরাচার বিরোধী ন্যায় সঙ্গত অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোগী।


দুর্লভ পেপার কাটিং। এর পরেও কি বলা হবে জামায়াত আগা গোড়া দেশদ্রোহীতায় লিপ্ত ছিল? ডান পাশের বিবৃতি প্রকাশ হয় দৈনিক আজাদের ১০ মার্চ ১৯৭১ সংখ্যায় ডাতে শেখ মুজিবকে ৭ মার্চের ভাষনের জন্য জামায়াত অভিনন্দন জানিয়েছিল এবং অবিলম্বে বিজয়ী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তাস্তরের জোর দাবী জানিয়েছিলেন তৎকালীন জামায়াত নেতারা। ডান পাশের বিবৃতিটি প্রকাশিত হয় ১৭ মার্চ ১৯৭১। দেশকে চুড়ান্ত বিভক্তি থেকে রক্ষার জন্য শেখ মুজির-ইয়াহইয়ার বৈঠকের সফলতা কামনা করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহইয়াকে দ্রুত শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী জানান অধ্যাপক গোলাম আযম। বোধগম্য করবার জন্য পুরাতন কাটিং এর ভেতরের কথাই এর সত্যতার জন্য যথেষ্ট।

Sunday 18 April 2010

খুলনার জনসমুদ্রে খালেদা জিয়া



ব্যর্থ রাষ্ট্র করার আগেই সরকারকে বিদায় দিতে হবে : আ’লীগের হাতে দেশ ও মা-বোনের সম্ভ্রম নিরাপদ নয় : পিলখানা ট্র্যাজেডির জন্য প্রধানমন্ত্রী, মইন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একদিন কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে : ভোলার নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সরকার ও ইসির বিরুদ্ধে আন্দোলন

আতিয়ার পারভেজ/এহতেশামুল হক শাওন, খুলনা থেকে
বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে জনগণের কাছে দেয়া কোনো ওয়াদা পূরণ করতে পারেনি। তারা কেবল বিদেশিদের কাছে দেয়া ওয়াদা পূরণে ব্যস্ত রয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতকে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ট্রানজিটের নামে তাদের করিডোর দিচ্ছে। টিপাইমুখ বাঁধ দিতে বাংলাদেশেরে আপত্তি নেই বলে দিয়ে এসেছে। সীমান্তে প্রতিনিয়িত মানুষ হত্যা করা হলেও এর প্রতিবাদ পর্যন্ত করছে না। অন্যের বাজার সৃষ্টি করে দেশকে পরনির্ভরশীল করছে। দেশে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না। প্রতিদিন মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে; কিন্তু সরকার নীরব। সর্বত্র ছাত্রলীগ, যুবলীগের টেন্ডারবাজি ও দখলের উত্সব চলছে। বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। একদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর দখল করা হচ্ছে। অন্যদিকে দাড়ি-টুপি দেখলেই জঙ্গি বলা হচ্ছে। সত্য কথা লিখলে, বললেই সাংবাদিকদের হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। মা-বোনের ইজ্জত-সম্ভ্রম কিছুই তাদের দলীয় ক্যাডারদের হাতে নিরাপদ নয়। দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালের বাইরে। বিদুত্-গ্যাস-পানি নেই। মানুষ এ অবস্থার অবসান চায়। এদের হাত থেকে মুক্তি চায়। তিনি বলেন, পিলখানা ট্র্যাজেডির মাধ্যমে সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে দুর্বল করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসারদের চাকরি থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা ভেবেছে দেশকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেবে। তাদের সে স্বপ্ন পূরণ করতে দেয়া হবে না। দেশকে ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্র করার আগেই এ সরকারকে বিদায় দিতে হবে। এজন্য গণঅন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আজকে দেশ টিকে থাকবে কি থাকবে না, তাঁবেদার হবে না স্বাধীন থাকবে, তা সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব আপনাদের। যারা যুদ্ধ করেনি, তারা তাঁবেদার থাকতে চায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, রক্ত দিয়ে হলেও বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা রক্ষা করবে।
বিএনপি আয়োজিত বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গতকাল বিকালে খুলনার বাবরি চত্বরের জনসমুদ্রে খালেদা জিয়া প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টার বক্তৃতায় তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নয়, মইনুদ্দিন ও ফখরুদ্দীনের সঙ্গে আঁতাত করেই মহজোট ক্ষমতায় এসেছে। অবৈধ সরকারের আদলেই তারা দেশ চালাচ্ছে। দেড় বছরে আমরা কোনো হরতাল-ধর্মঘট দেইনি। শুরু থেকেই আমরা সহযোগিতা করার কথা বলে আসছি। কিন্তু সরকার সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মানে দুর্ভিক্ষ। চুয়াত্তরে তারা এদেশে ভাত-কাপড়ের দুর্ভিক্ষ এনেছিল। এবার পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। স্বয়ং অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে এখন দুর্ভিক্ষ চলছে। মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ মন্ত্রী-এমপিরাই তুলছেন। দুর্ভিক্ষ ও লুটপাটের দায় নিয়ে এ সরকারকে বিদায় নিতে হবে। দ্রব্যমূল্য কমানো ও টেন্ডারবাজি বন্ধের দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এসব বিষয়ে জনগণ আপনাদের ওপর অতিষ্ঠ। জনগণের সমস্যা সমাধান করুন, নইলে গদি ছেড়ে দিন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, হামলা-নির্যাতন, টেন্ডারবাজি, ঘুষ, দুর্নীতি তারা করছে আর মামলা দিচ্ছে আমাদের নেতাকর্মীদের নামে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন শেখাচ্ছেন। আমরা শিখছি। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দায়ের করার কথা উল্লেখ করে সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যেসব দুর্নীতি, লুটপাট, অত্যাচার করছেন সবকিছুর তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে আপনাদের নামেও মামলা হবে। তখন আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হবে।
পিলখানার ঘটনায় সরকারি দলের সম্পৃক্ততা ও হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তত্কালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে ভবিষ্যতে তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ঘোষণাও দেন বিরোধীদলীয় নেত্রী। ভোলা-৩ আসনের নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশন মিলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী প্রার্থীকে জয়ী করার অপচেষ্টা করছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করুন। অন্যথায় ভোলা থেকেই কঠোর আন্দোলন শুরু করা হবে। নির্বাচন কমিশনকে আর ছেড়ে দেয়া হবে না বলে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, আমরা এতদিন আন্দোলন করিনি। গত ২৯ মার্চ চট্টগ্রামের জনগণের কষ্টের কথা শুনেছি। আজ খুলনার জনগণের সমস্যা জানলাম। অন্য শহরগুলোতেও যাব। সরকারকে জনগণের চাহিদা পূরণের দাবি জানাব। সরকার মনোযোগী না হলে জনগণকে নিয়ে কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।
খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার গত দেড় বছরে জনগণের কাছে দেয়া একটি ওয়াদাও পূরণ করতে পারেনি। নির্বাচনের আগে তারা বলেছিল ১০ টাকা কেজি চাল, বিনামূল্যে সার ও ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। এখন তারা তাদের ওয়াদার কথা অস্বীকার করছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মানেই দুর্ভিক্ষ। এরা লুটেরা। অতীতে তাদের নেতাই বলেছিলেন, সবাই পায় সোনার খনি, আমি পেলাম চোরের খনি। এদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। বর্তমানে এক নম্বর মন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই লুটপাটে ব্যস্ত।
সাংবাদিক নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার সাংবাদিক নির্যাতনের মাধ্যমে তাদের অপকর্ম ঢেকে রাখতে চায়। এজন্য তারা দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত মাহমুদ, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবিরসহ সারাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা-মামলা চালাচ্ছে।
খুলনা সমাবেশে যোগ দিতে আসার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে আগামীকাল শোক দিবস ও গায়েবানা জানাজা পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় সমাবেশ থেকে।
মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে মহসমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ড. আবদুল মইন খান ও বেগম সারোয়ারী রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বেগম রাজিয়া ফয়েজ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম নূরুল ইসলাম দাদু, অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম, শামসুজ্জামান দুদু, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুক, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, শরিফ শাহ কামাল তাজ, মুক্তিযোদ্ধা দলের অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কবির মুরাদ, আমজাদ হোসেন, বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, সাবিরুল ইসলাম সাবু, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মোজাম্মেল হোসেন, অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম, কেএম ফরিদী, আজিজুল হাসান দুলু, অ্যাডভোকেট বজলার রহমান, মুজিবর রহমান, শেখ সাদী, শামীম কবির প্রমুখ।
সমাবেশে ভিডিও প্রজেক্টরের মাধ্যমে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ১০ টাকা কেজি চাল, বিনামূল্যে সার ও ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার ওয়াদার বিষয়ে দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভার ভাষণ উপস্থিত মানুষকে দেখানো ও শোনানো হয়।
এর আগে দুপুরে বেগম জিয়া খুলনা পৌঁছেন। তিনি খুলনা সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সমাবেশ স্থলে যান। এর আগে তিনি মাগুরা সার্কিট হাউসে যাত্রাবিরতি করেন। সেখানে বেগম জিয়াকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এদিকে খুলনার শিববাড়িতে আয়োজিত বিএনপির মহাসমাবেশে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মী-সমর্থকদের গাড়িবহরে হামলা, ভাংচুর ও বাধা প্রদান করা হয়েছে।
এর আগে সকাল ৮টায় বিরোধীদলীয় নেত্রীর গাড়িবহর ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ জাহাঙ্গীর গেট থেকে খুলনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। খুলনা যাওয়ার পথে মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাগুরা ও যশোরের বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ রাস্তার দুই পাশে সমাবেত হয়ে বেগম জিয়াকে নানা স্লোগানের মাধ্যমে স্বাগত জানান। রাস্তার দুই পাশে নির্মাণ করা হয় কয়েকশ’ তোরণ।

মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গোটা খুলনা নগরী মিছিলের শহরে পরিণত হয়। খুলনা বিভাগের জেলাগুলো থেকে লক্ষাধিক মানুষ শিববাড়ি বাবরি চত্বরে সমাবেশ স্থলে জড়ো হয়। তারা এ সময় ‘গ্যাস নাই, পানি নাই, বিদ্যুত্ নাই এ সরকারের দরকার নাই, এই মুহূর্তে দরকার, খালেদা জিয়ার সরকার, লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাইসহ নানা ধরনের স্লোগান দেয়।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মইনকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে : বিডিআরের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিলে এত দক্ষ অফিসার মারা যেত না উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলেন, এটা শুধু আমার কথা নয়। এখানে তাদের শরিক একজন আছেন। জেনারেল এরশাদ। তিনিও বলেছেন, তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নিলে এদের বাঁচানো যেত। বিডিআর প্রধান সেদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানকে ফোন করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাঁচানোর অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ৪৬ ব্রিগেড পিলখানার সামনে গিয়েছিল, কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেয়ার অনুমতি দেয়া হযনি। এই যে ৫৭ অফিসার হারালাম, এটা কম কথা নয়। বোনদের আমরা কি জবাব দেব? সাহায্য চাইল, কিন্তু সেনাপ্রধান গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে বসে রইলেন। প্রধানমন্ত্রী বেলা দেড়টায় বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন। তিনি তাত্ক্ষণিক নির্দেশ দিলে এদের বাঁচানো যেত। আমাদের সন্দেহ হয়, এরা কোন দেশের লোক? এরা বাংলাদেশের হলে এভাবে হত্যা করতে পারত? তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী, মইন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ জন্য এক সময় বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। নিজে সেনা পরিবারের সদস্য হওয়ায় এ ব্যথা বুঝেন উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, তাদের স্বামী হারানোর ব্যথা আমি বুঝি। শুধু সান্ত্বনা দিয়ে বলতে চাই, আমরা আছি আপনাদের পাশে। ভালো ভালো সেনা অফিসারকে বিদায় করে দেয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকার মনে করে, অভিজ্ঞ অফিসারদের বিদায় করে দিলে তারা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে ক্ষমতায় থাকতে পারবে। আমরা বলতে চাই, জনতার আদালতে এসবের জবাব দিতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, সীমান্ত সম্পূর্ণ অরক্ষিত। পরিকল্পিতভাবে বিডিআরকে ধ্বংস করা হয়েছে। এটা একটি ষড়যন্ত্র, নীলনকশা। সীমান্তে প্রতিনিয়ত ঢুকে বিএসএফ গ্রামবাসীর গরু, ছাগল ও ধান নিয়ে যাচ্ছে। মানুষ হত্যা করছে। কিন্তু এ সরকার তার কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে ওঠাননি। তিনি সাহস পাননি। যে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষ হত্যার প্রতিবাদ করতে পারেননি, তাকে দিয়ে দেশ রক্ষা করা যাবে? খালেদা জিয়ার এ প্রশ্নের জবাবে জনগণ ‘না’ বলে জবাব দেন।

দ্রব্যমূল্য নিয়ে মিথ্যাচার করছে সরকার : খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি সরকারের সময় চালের কেজি ছিল ১৬ থেকে ১৮ টাকা। জরুরি সরকার এসে করেছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আর এ সরকারের সময় এখন মোটা চালের কেজি ৩০ টাকা। ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন আওয়ামী লীগের সরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলছেন মইন-ফখরুদ্দীনের সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল। ফখরুদ্দীনের শপথ অনুষ্ঠানে তারা ছিলেন। আওয়ামী লীগ সবসময় বিশ্বাস ভঙ্গকারী। তাদের বিশ্বাস করা যায় না। গত দেড় বছরে তারা কি কোনো উন্নয়ন করেছে? এ সময় উপস্থিত জনতা সমস্বরে বলে ওঠে—‘না’। আওয়ামী লীগ বলেছিল তারা দ্রব্যমূল্য কমাবে। ১০ টাকায় চাল, ৫ টাকায় কাঁচামরিচ দেবে, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। আমি জানতে চাই, এ সরকারের দেড় বছরে কতজনের চাকরি হয়েছে? এখন তাদের মন্ত্রীরা বলেন, ঘরে ঘরে চাকরি দেয়া সম্ভব নয়।
আজকে দ্রব্যমূল্য যেভাবে বেড়ে চলেছে, মানুষ দিশেহারা। যে ডালের কেজি বিএনপির সময় ছিল ৪৫ টাকা, তা এখন ১২০ টাকা। ডিমের হালি বিএনপির সময় ১২ টাকা ছিল। বর্তমান সরকারে সময় তা ৩২ টাকায় বিকাচ্ছে। ৫৪ টাকা লিটারের সোয়াবিন তেল এখন ১০০ টাকা। তাহলে দেশবাসীকে কত শান্তিতে রেখেছেন আমাদের এ আপাজান? তিনি বলেন, তেলের লিটার ৫৪ টাকা হয়ে যাওয়ায় তখন স্লোগান দেয়া হয়েছিল, খালেদা জিয়ার কাছে জবাব চাওয়া হয়েছিল। এখন কেন ১০০ টাকা হলো? বুবুর কাছে জবাব চাইতে হবে। বেগম জিয়া বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়লেও আমরা ভর্তুকি দিয়ে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতায় রাখতাম। এরপরও তারা সিন্ডিকেট বলে লাফালাফি করত। এখন তাদের একজন বাণিজ্যমন্ত্রী আছেন। তিনি তার এক আত্মীয়কে বাজারের চেয়ে চড়াদামে টিসিবিকে ডাল সরবরাহ করার কাজ দিয়েছেন। আর এ চড়াদামের মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
মন্ত্রীরা বড় চোর উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, একদম এক নম্বর থেকে শেষ নম্বর পর্যন্ত সবাই লুটপাটে ব্যস্ত। মানুষের কাছে দেয়া ওয়াদা পূরণের চিন্তা তাদের নেই। শুধু কোনদিক থেকে টাকা বানানো যাবে তা নিয়েই ব্যস্ত।


বিদ্যুত্ নিয়ে মিথ্যাচার চলছে :
বিরোধীদলীয় নেত্রী ২০০৬ সালের ২৬ নভেম্বর মেঘনাঘাটে ৪৫০ মেগাওয়াট, ২০০৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জে ২১০ মেগাওয়াট, ২০০৫ সালের ২৮ মার্চ টঙ্গীতে ১০৫ মেগাওয়াট, ২০০৬ সালের ৩১ জানুয়ারি বড় পুকুরিয়ায় ২৫০ মেগাওয়াট, একই বছরের ২ জুন আরপিসিএলএ ৭০ মেগাওয়াটসহ তার সরকারের আমলে ১৫০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুত্ উত্পাদনের বিবরণ দিয়ে বলেন, অথচ এক মেগাওয়াট বিদ্যুত্ও জোট সরকার উত্পাদন করেনি বলে বর্তমান সরকার প্রতিনিয়িত মিথ্যাচার করছে। তারা ব্যর্থ হয়ে অন্যের ওপর দোষ চাপাতে চায় আজকে দেশে বিদ্যুতের কি অবস্থা। খুলনা শহরে আপনারা কি বিদ্যুত্ পান? এ প্রশ্নের জবাবে জনতা সমস্বরে বলেন—‘না’। বিদ্যুতের দুর্ভিক্ষ চলছে বলছেন তাদের অর্থমন্ত্রী। আসলে কি জানেন, আওয়ামী লীগ মানেই দুর্ভিক্ষ। চুয়াত্তর সালে এদেশের মানুষ দুর্ভিক্ষ দেখেছেন। ভাতের দুর্ভিক্ষ, কাপড়ের দুর্ভিক্ষ। বাসন্তীরা জাল পরে লজ্জা নিবারণ করেছেন। এ দুর্ভিক্ষ আর দেখতে চায় না জনগণ। তাই এ দুর্ভিক্ষকে বিদায় দেয়া উচিত। আর এ বিদায়ের মাধ্যমেই দুর্ভিক্ষ দূর করতে হবে।


মা-বোনের ইজ্জত হরণ করছে ছাত্রলীগ :
আজকে মা-বোনেরা কোথায় যাবে? বদরুন্নেছা ও ইডেন কলেজের ছাত্রীদের কীভাবে লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগ। আজকে সবাই ইডেন কলেজের নাম বলতে লজ্জা পায়। আনন্দমোহন কলেজে ছাত্রলীগের ছেলেরা মেয়েদের নিয়ে কি করেছে? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরি করেছে। আপনাদের মা-বোন আছে না। এরপরও আপনারা বলতে পারবেন, আওয়ামী লীগের হাতে মা-বোন নিরাপদ? সবাই জবাব দেয়, ‘না’।
আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে আজ সংখ্যালঘুরা প্রশ্ন করছে, নৌকায় ভোট দিয়েই কি ভুল করেছি? হাজার হাজার সংখ্যালঘু ঘুরে বেড়াচ্ছে। সম্ভ্রম হারাচ্ছে। মুসলমানরা দাড়ি-টুপি রাখলেই জঙ্গি হয়ে যাচ্ছে। দাড়ি-টুপি থাকলেই জঙ্গি বলা বাদ দিতে হবে। দেখেছেন, কিছুদিন আগে মসজিদে জুতা নিয়ে ঢুকে কী নির্যাতন করা হয়েছে।


ভারতকে সব দিয়ে এসে বললেন সফর সফল হয়েছে :
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ও চুক্তির সমালোচনা করে বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, তিনি চুক্তি করলেন। তিনি বললেন, তিনি নাকি সফল। আমাদের রাস্তা এবং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে এলেন। এত কিছু দেয়ার পরও আমাদের তিন বিঘা করিডোর আনতে পারলেন না। শুধু ব্যর্থতা। ব্যর্থতা। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে সারাদেশের মানুষ আন্দোলন করছে। এমনকি ভারতের একটি অংশের মানুষও আন্দোলন করছে। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও চাটাররা বলছেন, টিপাইমুখে বাঁধ হলে নাকি আমাদের ক্ষতি হবে না। এ বাঁধ হলে সারা বাংলাদেশ মরুভূমিতে পরিণত হবে। এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। সমাবেশে উপস্থিত যুবতী ও যুবকদের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তারাই আমাদের ভবিষ্যত্। আশা-ভরসা। তারা আগামীতে দেশের নেতৃত্ব দেবে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/19/28152

অনুষ্ঠান বর্জন করলেন আপিল বিভাগের বিচারপতিরা

সমকাল প্রতিবেদক | ঢাকা | ১৯ এপ্রিল ২০১০
হাইকোর্টে নতুন নিয়োগ পাওয়া ১৭ বিচারপতির ১৫ জন গতকাল রোববার শপথ নিয়েছেন। প্রধান বিচারপতির চিঠি না পাওয়ায় দু'জন শপথ নিতে পারেননি। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা যোগ দেননি। আপিল বিভাগের বিচারপতিদের শপথ অনুষ্ঠান বর্জনের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করাকে দেশের বিচার বিভাগের জন্য নজিরবিহীন ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে।
আপিল বিভাগের বিচারপতিদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়া কিংবা নবনিযুক্ত দু'জনকে শপথ না পড়ানোর কোনো কারণের ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার দফতর থেকে পাওয়া যায়নি। এমনকি প্রধান বিচারপতির এ সিদ্ধান্তের কারণ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার উদ্দেশ্যে কোনো চিঠিও গতকাল বিকেল পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয়ে পেঁৗছেনি। এ পরিস্থিতিতে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ আশা প্রকাশ করে বলেছেন, এ ধরনের কোনো চিঠি রাষ্ট্রপতিকে দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে না আসায় ধারণা করা যায়, প্রধান বিচারপতির ভিন্নতর কোনো সিদ্ধান্ত নেই। সে ক্ষেত্রে যে কোনো দিন তিনি অবশিষ্ট দু'জনকে শপথ গ্রহণের জন্য ডাকতে পারেন। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন দু'জনকে বাদ দিয়ে ১৫ বিচারপতিকে শপথ করানোয় প্রধান বিচারপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি
সাংবাদিকদের
বলেন, প্রধান বিচারপতি বিতর্কিত ব্যক্তিদের শপথ না দিয়ে বিচার বিভাগের মর্যাদা ও সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি রক্ষা করেছেন। প্রধান বিচারপতির ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। নবনিযুক্ত দু'জন বিচারপতির নিয়োগ বাতিল করার দাবি জানিয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ভবিষ্যতে এদের শপথবাক্য পাঠ করানো হলে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে কঠিন কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে নবনিযুক্তদের শপথ পড়ান। শপথ অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা বরাবরই হাইকোর্টের অন্যান্য বিচারপতির সঙ্গে উপস্থিত থাকেন। নবনিযুক্তরা সুপ্রিম কোর্টেরই অন্যতম বিভাগ হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ায় উভয় বিভাগের বিচারপতিদের উপস্থিতি রেওয়াজ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত। আপিল বিভাগের বিচারপতিদের গতকাল শপথ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিতিকে 'বিরল ঘটনা' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার মতে, অতীতে শপথ অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের বিরত থাকার ঘটনা ঘটেনি।
রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান গত ১১ এপ্রিল অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ১৭ জনকে দু'বছরের জন্য নিয়োগ দেন। বিচারপতি হিসেবে যে ১৫ জন শপথ নিয়েছেন তারা হলেন মোঃ ফারুক (এম ফারুক), মোঃ শওকত হোসেন, এফ আর এম নাজমুল আহসান, কৃষ্ণা দেবনাথ, এ এন এম বশিরউল্লাহ, আবদুর রব, ড. কাজী রেজাউল হক, আবু জাফর সিদ্দিকী, এ কে এম জহিরুল হক, জাহাঙ্গীর হোসেন, শেখ মোঃ জাকির হোসেন, মোঃ হাবিবুল গণি, গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর, শেখ হাসান আরিফ ও জে বি এম হাসান।
শপথের পর সকাল সাড়ে ১১টা থেকে নবনিযুক্তরা সিনিয়র বিচারপতিদের সঙ্গে আদালত কক্ষে বিচারকার্য পরিচালনা করেন। এর আগে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে হাইকোর্টের ১৫ বেঞ্চ পুনর্গঠন করে কয়েকটির বিচারিক এখতিয়ারও পরিবর্তন করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বিভিন্ন আদালত কক্ষে গিয়ে নবনিযুক্ত বিচারপতিদের সংবর্ধনা জানান।
এবার ১৭ বিচারপতি নিয়োগের পর থেকে অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস এবং মোঃ খসরুজ্জামানকে 'বিতর্কিত' দাবি করে তাদের নিয়োগের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির একাংশ। সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন নবনিযুক্ত দু'জনকে শপথ না পড়াতে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান বিচারপতির প্রতি অনুরোধ জানান। যদিও সমিতির সরকারপন্থি আইনজীবীরা এটাকে সভাপতির ব্যক্তিগত দাবি বলে অভিহিত করেন। তাদের মতে, সমিতির সভাপতি দলীয় সংবাদপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে অসত্য, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিচ্ছেন।
কথিত 'বিতর্কিত' আইনজীবীদের অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এক জরুরি সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছিল। সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন কালো পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন। সংশ্লিষ্ট দু'জন শপথ নিলে সমিতির পক্ষ থেকে তাদের সংবর্ধনা না জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এমনই এক পরিস্থিতিতে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শপথ নেওয়ার জন্য অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ খসরুজ্জামানকে শনিবার সুপ্রিম কোর্ট থেকে চিঠি পাঠানো হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর করা চিঠিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত প্রধান বিচারপতি নবনিযুক্ত অতিরিক্ত ১৫ বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন।
শপথ অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা গতকাল কেন উপস্থিত থাকেননি, সে সম্পর্কে জানতে রেজিস্ট্রারের দফতরে যোগাযোগ করে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। যদিও আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে পেশাগত কারণে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন_ এমন কয়েকজন সরকার সমর্থক আইনজীবীর কাছ থেকে জানা গেছে, 'কারও নিয়োগ বাতিল করে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি যাদের নিয়োগ করেছেন, তাদের সবাইকে শপথ পড়ানো প্রধান বিচারপতির সাংবিধানিক দায়িত্ব। অথচ শপথ পরিচালনার প্রশ্নে রাষ্ট্রপতির ইচ্ছাকে প্রাধান্য না দিয়ে প্রধান বিচারপতি ব্যতিক্রম ঘটাতে পারেন কি-না এ নিয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের ভিন্নমত রয়েছে। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এ নিয়ে মতপার্থক্য থাকায় তারা শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।' নতুন নিয়োগ পাওয়া ১৭ বিচারপতির মধ্যে দু'জনকে বাদ দিয়ে ১৫ জনকে শপথ পড়ানোর ঘটনাকে তারা নজিরবিহীন বলে আখ্যায়িত করেন।
অতীতের দৃষ্টান্ত
যদিও এর আগে '৯৪ সালে বিএনপির শাসনামলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা বিচারপতিদের শপথ না পড়ানোর নজির বাংলাদেশে আছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের শপথ না পড়িয়ে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে কারণ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। পরে আইনজীবীদের প্রতিবাদ এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি সে নিয়োগ বাতিল করে নতুন নিয়োগ দিয়েছিলেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতি নিয়োগ প্রদানের পরও পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী ১৯৭১ সালে বঙ্গবল্পুব্দর আহ্বানে সাড়া দিয়ে গভর্নর হিসেবে টিক্কা খানকে শপথ না পড়িয়ে যে নজির সৃষ্টি করেন, তা এ দেশে বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্রের ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী এর মাধ্যমে তার শপথ লঙ্ঘন করেছিলেন বলে আজ পর্যন্ত কেউ দাবি করেননি।
আইনমন্ত্রী যা বলেন
বিকেলে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সমকালকে জানান, দু'জনকে শপথ না পড়ানোর কারণ সম্পর্কে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। মন্ত্রী জানান, প্রধান বিচারপতি যদি কারও বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে তার কারণ জানিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখবেন। এর আগে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্ত কিংবা কারণ সম্পর্কে কিছু জানা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, যে দু'জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে তাদের একজন রাকসুর নির্বাচিত সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৮ সালের একটি হত্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের সময় অন্যান্য নেতার সঙ্গে তিনি নাকি প্রভোস্টের কক্ষে মিটিং করছিলেন। বাইশ বছর আগের এ হত্যা মামলা এখনও অনিষ্পন্ন অবস্থায় পড়ে থাকাই প্রমাণ করে, মামলাটি কতটা রাজনৈতিক। এখনও যাকে অপরাধী হিসেবে আদালত অভিযুক্ত করেননি এবং যার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার হয়ে গেছে, তাকে বিচারপতি নিয়োগে আইনত কোনো বাধাই নেই। অপর একজনকে প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি মারার মামলার আসামি বলা হচ্ছে। কিন্তু যে ছবি সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হচ্ছে, তেমন কোনো দরজার অস্তিত্ব প্রধান বিচারপতির কক্ষের সামনে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাছাড়া এ মামলার এজাহারে কিংবা পুলিশ যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে, তাতে তার নাম নেই। আইনমন্ত্রী বলেন, মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য প্রধান বিচারপতি তাদের শপথ পড়ানোর বিষয়টি মুলতবি রেখেছেন, এমনটাও ধরে নেওয়া যেতে পারে।
অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিক্রিয়া
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ১৭ বিচারপতির মধ্যে দু'জন শপথ নেননি। তাদের নিয়োগের গেজেট বাতিল করা হয়নি। অচিরেই তারা অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে শপথ নেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস বাবুর বিরুদ্ধে খারাপ কোনো অভিযোগ নেই। তিনি ছাত্রজীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার সপক্ষের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। জামায়াত-শিবির তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে। বাবুর মতো দক্ষ আইনজীবীকে বিচারপতির পদ হারাতে হবে, এটা তো হতে পারে না।
জাতীয় আইনজীবী পরিষদ
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে হাইকোর্টে নবনিযুক্ত দুই বিচারপতিকে শপথবাক্য না পড়ানোর ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম এক যৌথ বিবৃতিতে এ ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, প্রধান বিচারপতির অনুমোদনসাপেক্ষ নিয়োগপ্রাপ্ত ১৭ বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করানো প্রধান বিচারপতির সাংবিধানিক দায়িত্ব।

-----------------------------------------------------------------------------------

সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের দূরত্ব বাড়ছে


আহমেদ দীপু | Kalerkantho| ঢাকা, সোমবার, ৬ বৈশাখ ১৪১৭, ৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০১০

হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ এবং বিচারিক আদালতের বিচারকদের পদায়ন ও বদলি নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের দূরত্ব বাড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা প্রকাশ্যে চলে আসছে।
সরকার সম্প্রতি হাইকোর্টে ১৭ জন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পর প্রধান বিচারপতি গতকাল ১৫ জনকে শপথ করিয়েছেন। বিচারিক আদালতের ১০৫ জন কর্মকর্তার প্রেষণ বাতিলের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি গত মাসে আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিলেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর করা হয়নি। বিচারিক আদালতের কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হলে প্রায় সময়ই সুপ্রিম কোর্ট তা নাকচ করে দেওয়ায় নতুন করে প্রস্তাব পাঠাতে হয়। এভাবেই ফাইল চালাচালি হতে থাকে। এ ধরনের ঘটনাগুলো দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দূরত্বের বিষয়টি স্পষ্ট করে তুলেছে।
সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগ দিয়ে থাকেন। একইভাবে বিচারিক আদালতের বিচারকদের নিয়োগ, বদলি এবং পদায়নের বিষয়টিও সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শের মাধ্যমেই করে থাকে আইন মন্ত্রণালয়। কিন্তু রাজনৈতিক সরকার নানা পর্যায়ের তদবিরের চাপে উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগ থেকে শুরু করে বিচারিক আদালতের বিচারকদের বদলি, পদায়ন এবং প্রেষণ বাতিলের ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুনগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করে অনেক সময় কাজ করতে পারে না। এ কারণে সরকার ও উচ্চ আদালতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
তবে এবার নতুন বিচারপতি নিয়োগ, আপিল বিভাগের বিচারপতিদের নতুন বিচারপতিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে না যাওয়া এবং প্রেষণ বাতিলের মতো বড় ঘটনা কাছাকাছি সময়ের মধ্যে ঘটে যাওয়ায় বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধান বিচারপতির সামনে যেসব কর্মকর্তা এ ধরনের ফাইল উপস্থাপন করেন তাঁদের কারণে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ তৈরি হয়। এটা এ দূরত্ব তৈরিতে সহায়তা করে।
গত ১১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ১৭ অতিরিক্ত বিচারককে তাঁদের শপথ গ্রহণের দিন থেকে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের নিয়োগ নিয়ে বিরোধীদলীয় আইনজীবীদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। মো. রুহুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাবস্থায় হত্যার অভিযোগ এবং মো. খসরুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। নতুন বিচারপতিদের নিয়োগসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দুজনের বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়। গতকাল এই দুজনকে বাদ দিয়ে বাকি ১৫ জনের শপথ করান প্রধান বিচারপতি। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও যাননি আপিল বিভাগের বিচারপতিরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিচার বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, এখানে দুটি বিষয় সামনে চলে এসেছে। এক হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেওয়ার পর প্রধান বিচারপতি দুজনকে শপথ করাননি। প্রথম দিন শপথ করাননি মানে কোনো দিন করাবেন না_এমন নয়। পরেও শপথ করাতে পারেন। আবার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেও তিনি দুজনকে শপথ গ্রহণ করানো থেকে বিরত থাকতে পারেন। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, সরকার কিভাবে বিতর্কিত দুজনকে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ দেয়।
এ প্রসঙ্গে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, বিএনপির গত মেয়াদে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ প্রধান বিচারপতি থাকাবস্থায় এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময় নিয়োগপ্রাপ্ত একাধিক বিচারপতির বিষয়ে বার কাউন্সিল থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল। যে কজনের বিষয়ে আপত্তি ছিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের নিয়োগ বাতিল করান এবং বাকিদের নিয়োগসংক্রান্ত নতুন প্রজ্ঞাপন জারির পর তাঁদের শপথ গ্রহণ করান। তিনি বলেন, এ ধরনের একটি রীতি প্রচলিত আছে।
মন্ত্রী বলেন, 'প্রধান বিচারপতি কেন দুজনকে বাদ দিয়ে ১৭ জনের মধ্যে ১৫ জন বিচারপতিকে শপথ করালেন সে বিষয়ে আমি এখন পর্যন্ত কিছুই জানি না। দুই বিচারপতির শপথ গ্রহণ না করানোর বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধান বিচারপতি আলোচনা করেছেন কি না, তাও আমি বলতে পারব না। তবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন না_এটা শুনেছি।'
অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, ১৭ জন অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার আগে এতে প্রধান বিচারপতির সুপারিশ ছিল। তাঁর সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেওয়ার পর তাঁদের শপথ না পড়ানোয় সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের দূরত্ব তৈরি হবে বলে অনেকে মনে করেন। আবার এই নতুন দুই বিচারপতিকে শপথ না পড়ানোয় এ অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা যোগ দেননি_এমনও হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
গত ২৩ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ফজলুল করিম বিচারিক আদালতের ১০৫ কর্মকর্তার প্রেষণ বাতিল করে বিচারকর্মে যোগ দেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন। এই চিঠির সঙ্গে তিনি ১০৫ কর্মকর্তার নামের একটি তালিকাও দেন। স্বাধীন বিচার বিভাগের স্বকীয়তা বজায় রাখা এবং বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি দূর করার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তিনি প্রেষণ বাতিলের চিঠি দেন। বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়, সংসদ সচিবালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার অফিস, বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, আইন কমিশন, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর-অধিদপ্তরে মোট ১০৭ জন কর্মকর্তা প্রেষণে কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিচার বিভাগের সচিব এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে বাদ রেখে বাকি ১০৫ জনের প্রেষণ বাতিল করার কথা প্রধান বিচারপতির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এই চিঠি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়। এ সময় ১০৫ জনের প্রেষণ বাতিল করা হলে কী ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। প্রেষণ বাতিল করা হলে বিচার বিভাগের জন্য নির্ধারিত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা দখল করে নেবেন_এ ধরনের আলোচনাও হয়। কাজেই ঢালাওভাবে ১০৫ জনের প্রেষণ বাতিল না করে যেসব কর্মকর্তা আড়াই বছর যাবৎ এ ধরনের (প্রেষণ) পদে আছেন তাঁদেরটি বাতিল করা যেতে পারে বলে কয়েকজন মত দেন। এতেও বিরোধিতা করেন সভায় উপস্থিত কয়েকজন কর্মকর্তা।
সব শেষে প্রেষণের মেয়াদ তিন বছর হলে তাঁকে বিচারিক কাজে ফিরে যেতে হবে_এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, যাঁদের প্রেষণের মেয়াদ তিন বছর হয়েছে তাঁদের বদলি করা যেতে পারে। সবাইকে একসঙ্গে বদলি করা হলে সুপ্রিম কোর্ট এবং আইন মন্ত্রণালয় উভয় দিকেই কাজের সমস্যা হবে। এই বিবেচনাতেই আইন মন্ত্রণালয় থেকে সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।