বেশ কিছুদিন ধরে পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলগুলোতে সরকারি দলের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে ব্যাপক প্রচার ও প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছিল। হঠাৎ করে মাঝখানে এক মন্ত্রী সাহেব বললেন যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা হবে না বিচার করা হবে মানবতাবিরোধী কাজের। চিন্তায় পড়ে গেলাম ব্যাপার কি যুদ্ধাপরাধীদের যদি বাদ দেয়া হয় তাহলে মানবতাবিরোধী কাজের জন্য কাদের বিচার করা হবে! দু'একদিন পরেই জানতে পারলাম যেটা মামলেট সেটাই ডিমভাজা। অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় তারা যাদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন যুদ্ধাপরাধীর বিচার না করে মানবতাবিরোধী কাজের বিচারের তালিকা থেকে তাদের একজনের নামও বাদ পড়েনি। বরং মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা চার, পাঁচ বছরের ছিল অথবা জন্মেইনি তাদের নামও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এমন কি যারা মুক্তিযুদ্ধে বড় বড় দায়িত্ব পালন করেছিলেন ইসলামী আন্দোলন করার কারণে এখন তারাও রাজাকার। পক্ষান্তরে যারা রাজাকার অথবা পিস কমিটির চেয়ারম্যান ছিল আওয়ামী লীগে যোগ দেবার কারণে তারা এখন মুক্তিযোদ্ধা। একজন রসিক ব্যক্তি রসিকতা করে বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নামে একটি পরশ পাথর আছে যার ছোঁয়া পেলে কঠিন রাজাকারও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায় আর ছোঁয়া না পাওয়ায় মেজর আঃ জলিল মরহুমের মত সেক্টর কমান্ডারও রাজাকার হয়ে যায়। যার ছোঁয়া পেলে নেশাখোর, খুনী, ধর্ষণকারী, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীও মহান নেতায় পরিণত হয় আর ছোঁয়া না পেলে শিক্ষাবিদ জ্ঞানী-গুণী পুতঃ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন জীবনের অধিকারী মহৎ ব্যক্তিরাও জঙ্গি খেতাবে ভূষিত হন।
হ্যাঁ, যে কথা ফেলে এসেছি। বিচারিক বিষয়ের নাম পরিবর্তনের হেতু কি? সরকারের যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ইস্যুটি নিছক রাজনৈতিক মতলব হাসিল ছাড়া কিছু নয়। এটা আন্তর্জাতিক কোন আইনেই পড়ে না। যে কারণে আন্তর্জাতিক কোন সমর্থন মেলেনি। বরং বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট আইনবিশারদগণ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই বিচারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে যে, এ বিচার হবে মানবতাবিরোধী। আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ আইনবিদ ও বিশিষ্টজনের কিছু বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো।
বিচারপতি টিএইচ খান-- বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। ঐ আদালতের সাথে আমাদের দেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য গঠিত আওয়ামী লীগের আদালতের আন্তর্জাতিক শব্দটা ছাড়া আর কোন সম্পর্ক নেই। মূলকথা হচ্ছে কিসে আর কিসে ধানে আর তুষে। জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে দিন আর রাত এবং আকাশ আর পাতালের পার্থক্যের মতো। আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারক নিয়োগ করা হয় সারাবিশ্ব থেকে অভিজ্ঞ ও দক্ষ বিচারকদের সমন্বয়ে। যুগোস্লাভিয়া ও রুয়ান্ডাসহ যেখানেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে তাতে সারাবিশ্ব থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে বিচারক করা হয়েছে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়েছে। যুগোল্লাভিয়ায় নয়টি দেশ থেকে নয় জন বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমি রুয়ান্ডা ট্রায়ালের বিচারক ছিলাম। সেখানে ৬ জন বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। রোমট্রায়াল শুরু হয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৮ জন বিচারককে নিয়ে। আর বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালের অবস্থা হলো আমিই বরের মা-আমিই কনের মা। এখানের অবস্থা হলো তারাই তদন্তকারী তারাই উকিল তারাই বিচারক। তিনি শেরে বাংলার একটি উক্তি এখানে তুলে ধরেন।
একজন নির্দোষ ব্যক্তি যেন সাজা না পায় প্রয়োজনে ১০ জনে দোষী খালাস পেয়ে যাক-- এটাই হলো আইনের মূলনীতি। সেই মূলনীতি এখানে উপেক্ষিত হয়েছে। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হবার আগে কাউকে দোষী বলা যাবে না। এই মূলনীতি উপেক্ষা করে মন্ত্রীরা কারো কারো নাম ধরে বলেছেন তাদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে বিচার কার্যকর করা হবে। মানে রায় আগেই দেয়া হয়ে গেছে। মূল সাক্ষ্য আইনকে এই বিচারিক আইনে কবর দেয়া হয়ে গেছে। পত্রিকার রিপোর্ট ফটো এটাও নাকি সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে। অমুক অপরাধী আমি তার সহযোগী হিসেবে তার সাথে ছিলাম। এমন সাক্ষ্যও গ্রহণ করা হয়েছে। অথচ এই সহযোগী অপরাধী নয়। এ এক অভিনব আইন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাথে এই আইনের তুলনা কোথায় লিভারপুল আর কোথায় হাতিরপুল এর মতই।
গত বছর জুলাইতে '৭৩ এর এ্যাক্টের ওপর যে আইন পাস করা হয়েছে সেটা সংসদের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে। আগে যেখানে ছিল আর্মড ফোর্স, ডিফেন্স ফোর্স এবং অক্সিলারী ফোর্স, এই সংশোধনীর মাধ্যমে তার সাথে যোগ দেয়া হয়েছে ব্যক্তিগত অপরাধকারী এবং অপরাধকারী গ্রুপ। এ সংশোধনীর উদ্দেশ্য হলো যেনতেনভাবে তাদের টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ সাজা দেয়া। এটা হবে বিচারের নামে প্রহসন। অবিচার হলে বা বিচারে সন্তুষ্ট না হলে হাইকোর্টে রিভিউ করারও এখতিয়ার রাখা হয়নি এই আইনে।
সম্মানিত আইনজীবীগণ আপনারা আরো জানুন, বুঝুন। আইনের পোশাক পরে আপনারা কোর্টেও যেতে পারতেন না। কেউ মিথ্যে সাক্ষ্য দিলে আইনের দৃষ্টিতে সে অপরাধী। অথচ এই আইনে তা উপেক্ষা করা হয়েছে। সবমিলিয়ে এটা হলো হাত পা বেঁধে কুরবানীর গরুর জবেহ করার মত কাউকে জোর করে ফাঁসি দেয়া।
বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, আইনটিতে অনেক গলদ রয়েছে। সংবিধানকে এড়িয়ে আইন হলে তা খুবই জঘন্যতম হিসেবে বিবেচিত হবে। এ আইনে জুডিশিয়াল রিভিউর অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে। এটি বিচারপ্রার্থীর একটি মৌলিক অধিকার ও সংবিধানের মৌল ভিত্তি। রাতারাতি আইন করলে যা হয় ১৯৭৩ সালের আইনের ক্ষেত্রে তা রয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক মানদন্ড রক্ষিত হয়নি। স্বাধীনতার পরেও মানবতাবিরোধী অনেক কাজ হয়েছে। এ আইনে আসতে পারে। স্বাধীনতা পরবর্তী রক্ষী-বাহিনীর নির্যাতনকেও মানবতাবিরোধী আইনের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। হাইকোর্টের বিচারপতিকে দিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলে তা আইনসিদ্ধ হবে না। এটি সংবিধানের স্কীম নয়। সংবিধানের মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হলে চলবে না। ১৯৭৩ সালের আইনে ২০০৯ সালে সংশোধন আনা হয়। এটিও বিতর্কিত। প্রহসনের বিচার করলে কেউ রেহাই পাবে না। আর এমন কোন বিচার করবেন না যাতে আপনাদের আবার বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়।
এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন : মরহুম শেখ মুজিবই ১৯৫ জন মূল যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিলুপ্ত করে গেছেন। কাজেই যুদ্ধাপরাধীর সহযোগীদের বিচার করতে হলে ঐ অপরাধে আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবেরই বিচার করতে হবে আগে। এছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের উদ্যোগ যদি নিতেই হয় তাহলে রক্ষীবাহিনী ও তাদের নেতাদের বিচার হতে হবে। তাদের হাতেই হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে দেশের নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছিলেন। কলাবরেটর এ্যাক্টে এমন কোন অপরাধ ছিল না যার বিচার করা যেত না। কিন্তু সেটা কারা বাতিল করেছে তা সময়মত ফাঁস করে দেব। মূল অপরাধীকে ছেড়ে দিয়ে সহযোগীদের বিচার করা দুনিয়ায় কোন নজির নেই। যে আইনে বিচার করা হচ্ছে সেটা কোন সভ্য সমাজের আইন হতে পারে না।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচার করা হলে বাংলাদেশের মানুষ তা প্রতিহত করবে। আইনজীবীরা আইনের শাসনে বিশ্বাসী আইনের শাসন বিরোধী কিছু করা হলে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচারের আয়োজন করলে আমরা ২৬ হাজার আইনজীবীকে সাথে নিয়ে তা প্রতিহত করব। কাজেই সময় আছে সাবধান হোন।
জনাব ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, সিমলা চুক্তির মাধ্যমে ৯৪ থেকে ৯৮ হাজার যুদ্ধবন্দী এবং ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ছেড়ে দেয়ার পর আর এই বিচার চলতে পারে না। এই বিচারের আর প্রয়োজন নেই। তবে বিচার যদি করতে হয় তবে দেশীয় আইন ও সংবিধানের মৌলিক মানবাধিকার বহাল রেখে করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানদন্ডে উন্নীত করতে হবে আইন। যে আইনে বিচার করা হচ্ছে তা মানবাধিকার ও সংবিধান পরিপন্থী। প্রথম কথা হচ্ছে, এ আইনে বিচার করা যাবে না। গায়ের জোরে বিচার করতে গেলে উল্টো বিচারক ও বিচারের উদ্যোক্তাদেরই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কেননা, কোন জংলী কালো আইন দিয়ে বিচার করা আদালতের কাজ নয়। প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন বলেন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে করা হয়েছে বলে মনে হয়।
এ দেশের মানুষ পাকিস্তানী বর্বর বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। কিন্তু আজ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে যেন আমরা কিছু রাজাকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম। বর্তমান প্রজন্মকে আমরা কি এটাই শিখাতে চাচ্ছি? আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলাম। কারা বিরোধিতা করেছে তা আমি দেখেছি। তারা ছিল একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী। হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ জঘন্য অপরাধের সাথে যুক্ত পাকিস্তান আর্মির সদস্যদের কোন কথাই এখানে উচ্চারিত হচ্ছে না। বিচার যদি করতেই হয় তাহলে আগে ক্ষমা করে দেয়া সেই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এরপর সহযোগীদের বিচারের প্রশ্ন আসবে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ আইনের অধীনে বিচার হবে অবৈধ ও অসাংবিধানিক।
এডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, আইনটির প্রবিধানে আন্তর্জাতিক মানদন্ড নিশ্চিত হয়েছে কিনা তা জাতির কাছে পরিষ্কার করতে হবে।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, এমপি বলেন, এ বিচার আরেক ধরনের মানবতাবিরোধী কাজ হবে।
এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন যাতে না হয় সে জন্য এ আইনের সংশোধন জরুরি। ব্যারিস্টার ফাতেমা আনোয়ার বলেন, ১৯৭৩ সালের অনেক ধারাই আন্তর্জাতিক আইনের মানদন্ডের অনেক নিচে। এটি একটি প্রশ্নবিদ্ধ আইন।
ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন বলেন, আইনটিতে কোন গাইড লাইন নেই। কিভাবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে তা সচেতন মহলের বুঝে আসছে না। ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশনের আইনগত মতামতের সার সংক্ষেপ : আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়ক হলো এই আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষণ। আমরা মনে করি এই আইনে স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মানদন্ডের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এই স্বীকৃত মানদন্ডের মূল উপজীব্য নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির ১৪ অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে। এই অনুচ্ছেদের কতিপয় মানদন্ড ১৯৭৩ সালের আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হলেও অনেকগুলো এতে অনুপস্থিত। যা ট্রাইব্যুনালকে সমালোচনার মুখোমুখি করবে।
আমরা নিম্নরূপ সুপারিশ পেশ করছি।
১. ১৯৭৩ সালের আইনের ৬(৫) ধারা সংশোধন করা উচিত যাতে ট্রাইব্যুনালের কোন একজন সদস্য শুনানিতে অংশগ্রহণ না করতে পারলে টাইব্যুনালের কার্য পদ্ধতি মূলতবি করা যায়।
২. এই আইনে একটি প্রবিধান সংযোজন করা উচিত যাতে ট্রাইব্যুনালের গঠন বা এর চেয়ারম্যান অথবা সদস্যের নিয়োগ চ্যালেঞ্জ অধিকার দেয়া থাকবে।
৩. এই আইনের ৮ ধারায় ৫ ও ৭ উপধারা বাতিল করতে হবে। কারণ এগুলো অকার্যকর ও অপ্রয়োজনীয়।
৪. ১১ ধারার ২ উপধারা সংশোধন করতে হবে। যাতে ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত ব্যক্তির নীরবতা থেকে না বোধক অনুমান (Negative Interference) করতে না পারে।
৫. ১৮ ধারা সম্পূর্ণ বাতিল করা উচিত।
৬. অভিযুক্ত ব্যক্তি কিংবা সাক্ষী নিজে অপরাধে সম্পৃক্ত হয়ে এ ধরনের সাক্ষ্যের ব্যাপারে আইনে অধিকার সুস্পষ্টভাবে সংরক্ষণ করা উচিত।
৭. ১০ নং ধারায় অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনজীবীর Opening Statement প্রদানের বিধান সংযুক্ত করা উচিত।
৮. এই আইনের ১২ ধারায় নিম্নরূপ বিধান সংযোজন করা উচিত : ‘‘ কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি আইনী সহায়তা না পেয়ে থাকলে বিচারের যে কোন পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত ব্যক্তির জন্য আইনজীবী নিয়োগের নির্দেশ দিবেন।’’
৯. এই আইনে উল্লেখিত মৃত্যুদন্ডের বিধান বাতিল করতে হবে।
১০. ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আপীল আদালতে (সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ ব্যতীত) দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির আপীল করার অধিকার সম্বলিত বিধান সংযোজন করা উচিত।
১১. ১৯ ধারার ১ উপধারা বিলুপ্ত করতে হবে।
১২. ঐতিহাসিক ঘটনা প্রমাণে সাক্ষ্য-সম্পর্কিত বিধান এই আইনে সংযোজন করা উচিত।
১৩. Rome Statute এর ৫৪ অনুচ্ছেদ এ বর্ণিত প্রসিকিউশনের কর্তব্য ও ক্ষমতাসমূহ এই আইনে সংযোজন করা উচিত।
১৪. Rome Statute এর ৫৫ অনুচ্ছেদ এ সংরক্ষিত তদন্ত চলাকালীন সময়ে প্রযোজ্য সন্দেহভাজন ব্যক্তির অধিকারসমূহ ১৯৭৩ সালের আইনে থাকা উচিত।
The Honourable Michel j Belof QC-কে অনুরোধ করা হয়েছিল সংবিধানের ১ম সংশোধনী আইন ১৯৭৩ এর সাংবিধানিক বৈধতার ওপর তার মতামত দেবার জন্য। উল্লেখ্য, এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ৪৭ (৩) ও ৪৭(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজিত হয়েছিল। সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদ মতে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। অধিকন্তু ৪৭(ক) অনুচ্ছেদের বিধান হলো ১৯৭৩ সালের আইনে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তির মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হতে পারবে না।
২. তিনি মনে করেন Judicial Review বাংলাদেশের সংবিধানের একটি মৌলিক কাঠামো (Basic Structure) ৪৭ (৩) ও ৪৭ক অনুচ্ছেদ এর বিধান হলো ৪৭ (৩) ও ৪৭ ক অনুচ্ছেদসমূহ High Court কর্তৃক সংসদে পাসকৃত আইনের বিচার বিভাগীয় নিরিক্ষার (Judicial Review) এর ক্ষমতা খর্ব করে তা অসাংবিধানিক।
৩. তিনি আরো মনে করেন ১৯৭৩ সালের আইনের ৬ ধারা ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ এ বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ মর্যাদার সদস্যদের পদের মেয়াদের যে নিশ্চয়তা দেয়া আছে তা ট্রাইব্যুনালের সদস্যদের দেয়া হয়নি। সেক্ষেত্রে এটি যথাযথ মানদন্ডে উত্তীর্ণ নয়। পদের মেয়াদের অনিশ্চয়তা সরকারি প্রসিকিউটর-এর প্রতি ট্রাইব্যুনালকে অনুগ্রহশীল করতে পারে।
৪. ট্রাইব্যুনালের গঠনকে চ্যালেঞ্জ করতে না পারার বিধান (১৯৭৩ সালের আইনের ৬ ধারার ৮ উপধারা) ট্রাইব্যুনালকে পক্ষপাতদুষ্ট করতে পারে। (Rome Statute) এর ৪১.১ ও ২ (বি) যদিও ৬ ধারার ৮ উপধারা চ্যালেঞ্জ করার অধিকার প্রসিকিটউর ও অভিযুক্ত উভয়ের জন্যে সমভাবে প্রযোজ্য।
৫. ১৯৭৩ সালের আইনের নির্দোষ অনুমান (Presumption of Innocence) এর কোন সুস্পষ্ট বিধান নেই। সুনির্দিষ্ট বিধানের অনুপস্থিতি আইনটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণাপত্র ও আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত চুক্তির বিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ করেছে।
পরিশেষে বলা যায় ১৯৭৩ সালের আইনে জামিনের কোন বিধান নেই। ১১ ধারার ৫ উপধারায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক রাখার বিধান আছে। বিচার চলাকালীন সময়ে মুক্ত থাকা দন্ডিত হবার আগে নির্দোষ অনুমিত হবার অধিকারের অংশ। অথচ আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত চুক্তির ৯.৩ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সম্পর্কিত ঘোষণাপত্রের ৯. অনুচ্ছেদ জামিনের অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের আইনগত মতামত সংক্ষেপে এখানে পেশ করা হলো: ১৯৭৩ সালের আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী বন্দির বিচার সম্পাদন। ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই সংবিধানের ১ম সংশোধনী আইন পাস হয়। এই সংশোধনী জরুরি ছিল। কারণ ১৯৭৩ সালের আইনের সংবিধানের স্বীকৃত কতিপয় মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী বিধান রয়েছে। ৪৭ (৩) অনুচ্ছেদ ও ৪৭ ক অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তির মৌলিক অধিকার যেমন আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, ৩৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিচার ও দন্ড সম্পর্কিত রক্ষাকবচ, মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ (অনুচ্ছেদ ৪৪) ইত্যাদি খর্ব করাকে সাংবিধানিক বৈধতা দেয়া হয়েছে। এই সংশোধনী অভিযুক্ত ব্যক্তির ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে Judicial Review এর অধিকারও খর্ব করেছে। সুতরাং ৮ম সংশোধনীর মামলা রায়ের আলোকে বলা যায়, এই সংশোধনী Judicial Review এর মত সংবিধানের একটি মৌল কাঠামোকে ধ্বংস করেছে। তাই সংবিধানের নতুন সংযোজিত ৪৭(৩) ও ৪৭ক অসাংবিধানিক। এছাড়া আইনটিতে যে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেয়া হয়েছে তাও আপত্তিকর। এই আইনটিতে নির্দোষিতার অনুমান Presumption of innocence ও জামিনের বিধান না থাকায় তা আন্তর্জাতিক মানদন্ড উত্তীর্ণ নয়। এই আইনের ১৯ (১) ট্রাইব্যুনালকে যে কোন সাক্ষ্য গ্রহণের অনিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালকে মৃত্যুদন্ডসহ যেকোন শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে অথচ কোন গাইড লাইন দেয়া হয়নি। এতে ন্যায়বিচার পরাহত হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। Procedural Safeguards ছাড়া বিধি ও কার্যপদ্ধতি প্রণয়নের একচেটিয়া ক্ষমতা প্রদান ট্রাইব্যুনালকে মুলত Kangaroo Court-এ পরিগণিত করতে পারে। অভিযুক্ত ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই দন্ডিত হবে।
আইন এবং আদালতের প্রয়োজন হয় সমাজের শান্তি-শৃক্মখলা বজায় রাখা, সমাজবাসীর সর্বপ্রকার অধিকার সংরক্ষণ ও কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। কেউ যাতে গায়ের জোরে অন্যের অধিকার হরণ করতে না পারে, প্রত্যেকের জান-মাল ইজ্জ্বত নিরাপদে থাকে। কেউ যদি এমনটি করে তাকে আইনের আওতায় এনে সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে সে দোষী প্রমাণিত হলে তাকে যথাযোগ্য শাস্তির বিধান করা এবং রাষ্ট্র বঞ্চিতের বা নির্যাতিতের হক তাকে পৌঁছিয়ে দেবে। সে কারণেই আইন ও বিচার ব্যবস্থা হতে হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সার্বজনীন। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিশেষের স্বার্থ রক্ষায় আইন এবং আদালত এ দুটো প্রভাবিত হতে পারে না। যদি এ দুটো প্রভাবিত হয় তবে দেশে শান্তি-শৃক্মখলা ও ইনসাফ বলে কিছুই থাকে না। জোর যার মুল্লুক তার নীতির দৌরাত্ম্যে সমাজে মানুষ বাসের অনুপযোগী হয়ে ওঠে। মানুষের জানমাল ইজ্জ্বত দারুণভাবে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে।
আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনি দেশের শান্তি শৃক্মখলা উধাও হয়েছে আর নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্নীতি আর সন্ত্রাস। মানুষের জানমাল ইজ্জ্বত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে নিজেদের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করেছে। আইন-আদালতকে প্রভাবিত করে মিথ্যে মামলা, পুলিশ, যুবলীগ আর ছাত্রলীগ দিয়ে হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষকে নির্মূলের অভিযান চালিয়ে থাকে। আইন আদালতকে কুক্ষিগত করার কারণে বঞ্চিত ও নির্যাতিত জনগণ আইন এবং আদালত থেকে সামান্য সাহায্যও লাভ করতে পারে না। ফলে সরকারি দলের যে কেউ যদি ১০টা খুন এবং ২০টা মেয়ের সম্ভ্রম লুটে নেয় থানায় তাদের কোন কেস নেয় না। বরং অপকর্ম করার সময় পুলিশ Safeguard এর ভূমিকা পালন করে। পক্ষান্তরে প্রতিপক্ষের শীর্ষ নেতাদেরকে মিথ্যে ধানাই পানাই অযুহাতে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিদের নানাভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে। ডক্টর হুমায়ূন আযাদ মরলেন কোথায়, এবং তার লাশ পরীক্ষা করে ডাক্তাররা বলেছিলেন যে বেশী পরিমাণ মদপানে হার্ট এ্যাটাক হয়ে তিনি মারা গেছেন। অথচ বিশ্ববরেণ্য মুফাসসিরে কুরআন যিনি দেশে বিদেশে কয়েক হাজার অমুসলিমকে মুসলমান বানিয়েছেন ড. হুমায়ূন আযাদের মৃত্যুর জন্য তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। যদিও সাঈদী সাহেবের জেলার হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ-খৃস্টান সকলে বলছেন যে তিনি স্বাধীনতা আন্দালনের সময় কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলেন না, এবং কোন অসামাজিক কাজ তিনি করেননি। বরং তিনি দু'বার এমপি হয়েছেন, তার সময়ে আমরা মায়ের কোলে থাকার মত নিরাপদে ছিলাম। তার মত ভাল মানুষ আমরা আর কাউকে দেখিনি। তারপরেও তাকে যুদ্ধাপরাধী বানিয়ে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। আসলে যারা ‘ইসলামের' শত্রু তাদের নিকট ইসলামের মহান ব্যক্তিদের মূল্যায়ন হবে কিভাবে?
যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে যে প্রহসন করা হচ্ছে সবাই বলছে এটা অমানবিক। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যে কোন নাগরিক রাষ্ট্রের পক্ষ নেবে এটাই স্বাভাবিক। রাষ্ট্রের পক্ষে সমর্থন করা, আন্দোলনের সাথে মতপার্থক্য হওয়া আর যুদ্ধাপরাধ এক জিনিস নয়। যুদ্ধের ময়দানে নেমে যারা লোকহত্যা, সম্পদ লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণ করেছে তাদের বাদে আর সকল ধরনের মতপার্থক্যকারী ব্যক্তিকে শেখ সাহেব নিজেই ক্ষমা করে গেছেন। এখন যদি শেখ সাহেবের ক্ষমাকৃত অপরাধে অপরাধীদের নতুন ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হয়, মূলতঃ জাতির পিতাকেই অবমাননা করা হয়। যাদেরকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গ্রেফতার করা হচ্ছে তারা ঐ চার অপরাধে অপরাধী নন। অপরাধী হলে এই ৩৬ বছরে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই থানায় বা কোর্টে মামলা করা হতো। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে জিডি পর্যন্ত নেই কোন থানায়।
সরকারি পক্ষের কেউ কেউ বলেছেন, মৌলবাদ বা ইসলামকে নির্মূল করতে হলে জামায়াতে ইসলামকে নির্মূল করতে হবে। কারণ, জামায়াত ইসলাম যতদিন থাকবে ততদিন মৌলবাদ থাকবে। সে কারণে জামায়াতে ইসলামীকে ঘায়েল করতে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকেই তাদের চাঙ্গা করতে হয়েছে। সরকার মানবতাবিরোধী কাজের বিচার করতে চাচ্ছে। মানবতাবিরোধী কাজের বিচার করতে হলে কোন সময়ের বিচার করা হবে একাত্তরের আগের, ৭১ থেকে পঁচাত্তর, না একাত্তর থেকে ২০১০ পর্যন্ত মানবতাবিরোধী কাজের বিচার করা হবে? বর্তমান থেকে বিচার শুরু হওয়া ন্যায়সংগত। যেসব মানবতাবিরোধী কাজ বর্তমানে ঘটছে, যে সব তাজা ঘটনার সাক্ষী প্রমাণ পর্যাপ্ত পরিমাণে মওজুদ রয়েছে। অথচ সরকার সে সব মানবতাবিরোধী কাজের বিচার করছে না। বরং সরকারি দলের যাদের বিরুদ্ধে যত মানবতাবিরোধী মামলা ছিল সে সবগুলো সরকার ডিসমিস করিয়েছে এবং বর্তমানে সরকারি দলের লোকেরা যেসব মানবতাবিরোধী কাজ করছে সরকার তাদেরওে বিচার করছে না। অথচ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য সাক্ষী প্রমাণহীন ৩৬/৩৭ বছর আগের মানবতাবিরোধী কাজের বিচার করতে নেমেছে। যদি একাত্তর থেকে ২০১০ পর্যন্ত মানবতাবিরোধী কাজের হিসেব নেয়া হয় তবে দেখা যাবে আওয়ামী নেতা কর্মীরাই সর্বযুগে শ্রেষ্ঠত্বের আসন দখল করে বসে আছেন। তাদের মানবতাবিরোধী কাজের যদি তালিকা প্রস্তত করা হয় তাহলে একটি সুবৃহৎ গ্রন্থে পরিণত হবে। প্রবন্ধের কলেবর বৃদ্ধির ভয়ে অতি সংক্ষেপে দু'একটি উদাহরণ পেশ করা হল।
১৯৭১-১৯৭৫ শেখ সাহেব দলের নেতা কর্মীদের প্রতি স্নেহবশত: প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা দেন, ‘এতদিন অন্যেরা খাইছে, এবার আমার লোকেরা খাইবো'। তার দলের লোকদের যারা সমালোচনা করত তাদের উদ্দেশে তিনি কঠোর ভাষায় বলেছিলেন লালঘোড়া দাবড়াইয়া দিমু। এবং তা তিনি দিয়েওছিলেন। নেতা-কর্মীরা ওই আশকারা পেয়ে মাত্রাহীনভাবে জাতীয় সম্পদ লুটপাট করতে শুরু করে, এমনকি জনগণের ব্যক্তিগত সম্পদও জবর দখল শুরু করে দেয়। শেখ সাহেব অতিষ্ঠ হয়ে বলে উঠলেন আমার চারদিকে কেবল চাটার দল সব খেয়ে শেষ করে ফেলল। তিনি রক্ষিবাহিনী গঠন করে সকল আইনের ঊর্ধ্বে তাদের সীমাহীন ক্ষমতা প্রদান করেন। যে কারণে রক্ষিবাহিনীর দ্বারা লাখ লাখ নর-নারী দারুণভাবে নির্যাতিত ও নিগৃহীত হন। কিন্তু রক্ষিবাহিনীর বিরুদ্ধে কোন মামলা করার উপায় ছিল না। তিনি রক্ষিবাহিনী দিয়ে প্রায় ৫০ হাজারের বেশী লোক হত্যা করান এদের মধ্যে বেশ কিছু হিন্দু পরিবারও ছিল। ১৯৯৬-২০০১ শেখ হাসিনার প্রথম শাসন আমলে আইন শৃক্মখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। সরকারি দলের লোকদের দ্বারা দুর্নীতি খুন ধর্ষন জবরদখল বোমা বিস্ফোরণ ইত্যাদি নাশকতামূলক কর্মকান্ডে দেশবাসী অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। কিন্তু বিচার চাওয়ার কোন সুযোগই ছিল না। শেখ হাসিনা যখন বিরোধীদলের নেত্রী ছিলেন তখনও দোতলা বাসে আগুন লাগিয়ে ১১/১২ জন লোক পুড়িয়ে মেরেছিলেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর দিনদুপুরে প্রকাশ্য রাজপথে জামায়াত-শিবিরের ১২/১৪ জন কর্মীকে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মেরে লাশের উপর নর্তন কুর্দন করেছিল তার কর্মীরা। বর্তমানে সে সব হত্যা, ধর্ষণ জবরদখল, টেন্ডারবাজি তার কর্মীরা করে চলেছে, এর কোনটাই মানবতার পক্ষের কাজ নয়। তাই মানবতাবিরোধী কাজের বিচার করতে হলে সকল মানবতাবিরোধী কাজের বিচার করতে হবে। এটাই দেশবাসীর দাবি। মনে রাখতে হবে বিচারের নামে যদি প্রতিপক্ষের ওপরে যুলুম চালানো হয়। তবে আল্লাহর মারের হাত থেকে বাঁচাবার মত কোন শক্তি পৃথিবীতে নেই.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment