Monday, 30 August 2010

বিএনপিপন্থী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন : বাণিজ্য মন্ত্রণালয় : ইপিবিতে আতঙ্ক



আবু হেনা মুহিব
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোকে (ইপিবি) এবার বিরোধী দলমুক্ত করার অভিযান শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লিখিত এক নির্দেশে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া
হয়েছে। হঠাত্ করে সরকারের এ ধরনের নির্দেশে ইপিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সরকারি এ নির্দেশনা জারির পর সুযোগসন্ধানী এবং সরকারপন্থী কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত শত্রুতা উদ্ধারে তত্পর হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সাকিউন নাহার বেগম স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে ইপিবিতে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বিসিএস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত ২৯ আগস্ট এ নির্দেশ দেয়া হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ইপিবিতে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বিসিএস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্মারক নং ২৬.০৪৬.০৭৮.০০.০০১.২০১০-১৫২ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। গত ২৯ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপ-সচিব সাকিউন নাহার বেগম স্বাক্ষরিত এক পত্রে ইপিবিকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশপত্রে ইপিবির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাহাব উল্লাহসহ একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইপিবির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বিগত জোট সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল সন্দেহে ঢালাওভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা, শস্তিমূলক বদলি এবং ওএসডি করা ছাড়াও নতুন করে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ আসায় ভিন্নমতের কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসকেন্দ্রিক বিভিন্ন আলোচনা এবং কর্মসূচিতে চোখে পড়ার মতো তত্পরতা যারা দেখাতে পারেননি তারাই সরকারের নতুন এ তালিকাভুক্ত হয়ে যেতে পারেন।
এছাড়া ইপিবিতে কয়েক মাস ধরে ভিন্নমতের কর্মকর্তা তালিকাভুক্ত হচ্ছেন বলে আলোচনা ওঠে। সরকারের নতুন এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে তা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। সূত্রমতে, ভিন্নমতের কর্মকর্তাদের প্রশাসন থেকে সরিয়ে দেয়ার আগে তালিকা প্রণয়নে ৬টি বিষয়কে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে—ছাত্র অবস্থায় কোন রাজনীতি করত, পরিবারের সদস্যরা কোন দলের সঙ্গে জড়িত, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ও পরিবারের ভূমিকা, বন্ধু-বান্ধব কারা বা কাদের সঙ্গে ওঠাবসা করছেন, বিগত সরকারের সময় কোন পদে ছিলেন, কোনো প্রকাশনা কিংবা লেখালেখি করে থাকলে তার ধরন।
জানা গেছে, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় বেসামরিক প্রশাসনের জন্য সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট ২০১০ নামে একটি নয়া আইন চূড়ান্ত করছে শিগগিরই। এই আইনেই বিরোধী মতের সরকারি কর্মকর্তাদের শায়েস্তা করা হবে। নতুন এ আইন অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতির অভিযোগে দণ্ডিত হলে তিনি আর চাকরি ফিরে পাবেন না। এমনকি উচ্চ আদালতে আপিল করে বেকসুর খালাস পেলেও তিনি আর চাকরিতে ফিরতে পারবেন না। এ বিবেচনায় ভিন্নমতের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঢালাও দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
ইপিবি সূত্র জানিয়েছে, ইপিবি প্রশাসনে এ ধরনের অস্থিরতার কারণে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে নির্দিষ্ট সময়ের পরও দুই মাস সময় লেগে গেছে। বিদেশে বেশিরভাগ মিশন রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/08/31/41889

No comments:

Post a Comment