Friday, 7 January 2011

২০১০ সালে চাকরিচ্যুতির রেকর্ড : বিএসএমএমইউ হাসপাতালে : বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকসহ ২৪ জন চাকরিচ্যুত ২৩৬ জনের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা, শ্লীলতাহানি করেও স্বাচিপ সমর্থিত চিকিত্সক বহাল তবিয়তে

নেসার উদ্দিন আহাম্মদ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে সরকার চাকরিচ্যুতির রেকর্ড গড়েছে ২০১০ সালে। আর এ চাকরিচ্যুতি থেকে অধ্যাপক, সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক, চিকিত্সক কর্মকর্তা, কর্মচারী কেউ বাদ পড়েননি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সামান্য অজুহাতেই তাদের চাকরিচ্যুতির চিঠি ধরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। শুধু চাকরিচ্যুতই নয়, ঘটেছে অনারারি মহিলা চিকিত্সকের শ্লীলতাহানিও। ঘটনার হোতা স্বাচিপ সমর্থিত চিকিত্সক হওয়ার কারণে আজও তার বিচার হয়নি। এমনকি তিনি চাকরিও হারাননি। হাসপাতালে ভাংচুরের ঘটনাও ঘটিয়েছে সরকারদলীয় স্বাচিপ চিকিত্সকরা। কারণ তারা অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাননি। হাসপাতালের প্রাপ্তির মধ্যে রয়েছে ১৬৩ কোটি টাকা মূল্যের জায়গার দখল বুঝে পাওয়া। রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে ১৪৭ জন চিকিত্সক যোগদান। গত বছর বিএসএমএমইউতে আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে ছিল—
ডেন্টালের ৪ সহকারী শিক্ষককে চাকরিচ্যুতির নোটিশ : বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ গত ১৮ সেপ্টেম্বর ডেন্টাল ফ্যাকাল্টির ৪ সহকারী অধ্যাপক কনজারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি অ্যান্ড এন্থোডনটিক্স বিভাগের ডা. এ কে এম বাশার, প্রন্থোডনটিক্স বিভাগের ডা. মাসুদুর রহমান, ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফিসিয়াল সার্জারি বিভাগের ডা. মাহমুদা আখতার ও ডা. সাখাওয়াত্ হোসেনকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১০ সালের মধ্যে এমএস বিষয়ের ডিগ্রি এবং বিএমডিসির স্বীকৃতির কপি জমা দিতে না পারলে ১ অক্টোবর ২০১০ সাল থেকে তাদের চাকরি বাতিল বলে গণ্য হবে। চিঠি পেয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর ওই ৪ সহকারী অধ্যাপক হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রাহমান এবং বিচারপতি সৈয়দা আফসার জাহানের ডিভিশন বেঞ্চে রিট পিটিশন করলে নির্দেশটি ৪ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে শোকজ করা হয়। একই সঙ্গে গত ৩১ আগস্ট ওই ৪ সহকারী অধ্যাপকের বেতন-ভাতা বন্ধের আদেশটিও স্থগিত করা হয়। পরে চাকরি বাতিলের আদেশটি আরও এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।
বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকসহ ২৪ জন চাকরিচ্যুত : গত ২২ ডিসেম্বর বিএসএমএমইউ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকসহ ২৪ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। একই সঙ্গে পদাবনতি দেয়া হয় ১৭ জনকে। চিকিত্সকদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, আদালতের আদেশ অমান্য করে এই চাকরিচ্যুতির নোটিশ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর ওইদিন সকালে চিকিত্সকরা হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন তাদের চাকরি নেই। যাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৩ জন অধ্যাপক, ১৩ জন সহযোগী অধ্যাপক, ৮ জন সহকারী অধ্যাপক এবং ৪ জন কর্মকর্তা। যাদের পদাবনতি দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ৩ জন অধ্যাপক, ৫ জন সহযোগী অধ্যাপক এবং ৫ জন কর্মকর্তা। ওইদিন বিকালে চাকরিচ্যুতি ও পদাবনতির চিঠি পাওয়া চিকিত্সক কর্মকর্তারা জতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান ভিসি অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্তকে অবিলম্বে অপসারণের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে দাবি জানান। একটি রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে বর্তমান ভিসি জোট সরকারের আমলে চাকরি পাওয়া চিকিত্সকদের একের পর এক চাকরিচ্যুত করছে বলে অভিযোগও করা হয়। তবে ভিসি অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, আমি চাকরিচ্যুতির পক্ষে ছিলাম না।
২৩৬ জনের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা : বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ আদালতে পরিপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন না করায় গত ১৪ ডিসেম্বর বিএসএমএমইউ হাসপাতালের ২৩৬ জন চিকিত্সকের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এমনি অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত চিকিত্সকরা। তারা বলেন, রহস্যজনক কারণে মামলার বাদীর আবেদনের সঙ্গে কোনোরকম দ্বিমত পোষণ করেনি বিবাদী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরই প্রতিবাদে গত ২০ ডিসেম্বর বিএসএমএমইউ হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে ক্ষতিগ্রস্ত চিকিত্সক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা মানববন্ধন করে। ওইদিনই চিকিত্সকের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় ৬ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ। চিকিত্সকরা হাইকোর্টের রায় স্থগিতের আবেদন করলে চেম্বার জজ বিচারপতি এসকে ২০ ডিসেম্বর এ আদেশ দেন।
৩৪ জন কর্মচারীকে অব্যাহতি : অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত ভিসি হওয়ার পর হাসপাতালে জোট সরকারের আমলে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া ২৪১ জন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করার পদক্ষেপ নেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন কর্মচারীরা। ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০১০ সালের মার্চ পর্যন্ত ৩৪ জন কর্মচারীকে সামান্য অজুহাতে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, কর্মচারীদের ওই শূন্য পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোকজনকে নিয়োগ দেয়ার জন্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ পদক্ষেপ নেয়। আর গত ৩ মার্চ চাকরি হারানোর দুশ্চিন্তায় হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী মো. হাফিজ উদ্দিন (৩৫) ভবনের ৯ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা যায়।
আ.লীগ সমর্থিত অধ্যাপকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ : আওয়ামী লীগ সমর্থক স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের (স্বাচিপ) বিএসএমএমইউ শাখার প্রভাবশালী নেতা চর্ম ও যৌন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আগা মাসুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত বছর মে মাসে তারই চিকিত্সক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। হাসপাতালের অনারারি চিকিত্সক ওই ছাত্রী অভিযোগ করেন, অধ্যাপক আগা মাসুদ চৌধুরী তাকে কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালান। তিনি কোনোরকমে নিজের ইজ্জত রক্ষা করে কাঁদতে কাঁদতে কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। ওই ছাত্রী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিচার দাবি করেন। প্রাথমিকভাবে ঘটনা সত্য বলে প্রমাণ পাওয়ার পর এ বিষয়ে অধ্যাপক নূরজাহান বেগমকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর কয়েকদিন পরে ৪ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি বাদ দিয়ে নতুন কমিটি করার কথা জানান কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে বিএসএমএমইউর প্রক্টর ডা. এএসএম জাকারিয়া আমার দেশকে জানান, শ্লীলতাহানির ঘটনা তদন্তে সুপ্রিমকোর্টের একটি নির্দেশনা পেয়েছেন তারা।
৩ শিক্ষকের কক্ষে স্বাচিপের হামলা : গত ৩১ মে বিএসএমএমইউর তিন শিক্ষকের কক্ষ ব্যাপক ভাংচুর হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিত্সক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের (স্বাচিপ) একাংশ অর্থাত্ বঞ্চিতরা এ হামলা চালায়। সূত্র জানায়, অ্যাডহক ভিত্তিতে ৪ হাজার চিকিত্সক নিয়োগে তারা কেউ নিয়োগ পাননি। এ তথ্য জানার পর স্বাচিপের ওই গ্রুপটি ওইদিন হাসপাতালে অতর্কিত হামলা চালায়। যাদের কক্ষে হামলা চালানো হয় তারা হলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব ডা. আবদুল আজিজ ও স্বাচিপের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে তুমুল হট্টগোল : গত ২৭ এপ্রিল বিএসএমএমইউতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানস্থলে সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়েন চিকিত্সক, আনসার ও ড্রাইভার। ওই ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে ৪ আনসার ও ২ ড্রাইভারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডা. মিলন হলে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল প্রাকটিশনার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন-২০১০ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠান চলছিল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হক।
১৬ সিসিটিভি স্থাপন : গত ৯ আগস্ট হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি স্থাপনায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) স্থাপন করা হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের জন্য সিসিটিভির পাশাপাশি ওয়াকিটকি সেটেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দাঁত তুলতে গিয়ে রোগীর মৃত্যু : গত ২৯ মে হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগে জরুরি চিকিত্সা ব্যবস্থা না থাকায় দাঁত তুলতে গিয়ে হালিমা বেগম (৪৫) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে নেয়ার ট্রলি না থাকা এবং চিকিত্সকের গাফিলতির কারণে হালিমা বেগম মারা গেছেন। এ অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের পর রোগীর মৃত্যু : গত মে মাসে হাসপাতালের কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করার পর সাফিন (৩২) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়। অপারেশনের সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর তিনি মারা যান। কিডনিদাতা তার ছোট বোন রোকেয়া বেগম (৩০) বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন থাকায় স্বজনরা সাফিনের মৃত্যুর ব্যাপারে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান। হাসপাতাল থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়, যে চিকিত্সক ওই রোগীর কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করেন তার এ বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম বোর্ডে তিনি বাদ পড়েন। কিন্তু সরকার সমর্থক হওয়ায় কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় বোর্ড গঠন করে কোনো প্রতিযোগিতা না রেখে তাকে নিয়োগ দেয়।
চালু হলো অর্থোপেডিকের জরুরি বিভাগ : গত ১ ফেব্রুয়ারি বিএসএমএমইউতে চালু হয় অর্থোপেডিকের জরুরি বিভাগ। হাত-পা ভেঙে যাওয়া রোগীরা সরাসরি বিএসএমএমইউতে চিকিত্সা নিতে পারছেন। এই জরুরি বিভাগ উদ্বোধনকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে দেশের জেলা পর্যায়ের সব হাসপাতালে অর্থোপেডিক চিকিত্সা দেয়ার জন্য যন্ত্রপাতি পাঠানো হবে। যাতে করে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে না হয়। কারণ দেশে বর্তমানে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে গেছে।
নিয়োগ বাতিলে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ : গত এপ্রিলে বিএসএমএমইউর ৩০১ চিকিত্সক ও ১২ কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করেছে জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কিমিটি। শুধু তাই নয়, তাদের যারা চাকরি দিয়েছেন সেই নির্বাচনী বোর্ডের সভাপতি, সদস্য ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়। ওইদিন জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির অষ্টম বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়।
রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম চালু : গত ৬ মার্চে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম চালু করা হয়। এ প্রোগ্রামে ১৪৭ চিকিত্সক যোগদান করেন। রেসিডেন্সি প্রোগ্রামের আওতায় বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হওয়া বেসরকারি চিকিত্সকরা প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা ও সরকারি চিকিত্সকরা প্রতি মাসে পূর্ণ সরকারি বেতন পাবেন বলে ঘোষণা দেন ভিসি অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত।
ওটি টেবিল থেকে রোগী ফেরত : ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি বিএসএমএমইউ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের রোগী হোসনে আরা বেগমের অপারেশন করা হয়নি। তাকে অপারেশন টেবিল থেকে ওয়ার্ডে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। যদিও ২৬ দিন পর তিনি ওই অপারেশনের তারিখ পান। হাসপাতালের ওটি সূত্রমতে, অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের চেয়ারম্যানের নির্দেশে ওই রোগীর অপারেশন হয়নি। এ ব্যাপারে রেজিস্ট্রার বরাবর একটি অভিযোগপত্র দেয়া হয়। রোগীর অপারেশন করতে প্রায় পৌনে ১ ঘণ্টা পর অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের অ্যানেস্থেটিস্ট অপারেশন থিয়েটারে আসেন। তিনি ওটিতে ঢুকে অ্যানেস্থেসিয়া দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। সংশ্লিষ্ট সার্জনও ওটির ড্রেস পরে ওটিতে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক তখন ওটি ইনচার্জ চিকিত্সকদের গিয়ে বলেন, অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের চেয়ারম্যানের নির্দেশে ওটি বন্ধ করে দিয়েছেন। রোগীকে ৪ ঘণ্টা পর ওয়ার্ডে পাঠানো হয়।
কৃত্রিম হাঁটু প্রতিস্থাপন চিকিত্সা : গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিএসএমএমইউ হাসপাতালে কৃত্রিম হাঁটু প্রতিস্থাপন চিকিত্সা শুরু হয়। ওইদিন নূরুল ইসলাম নামে এক রোগীর বাম পায়ের হাঁটুতে কৃত্রিম হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। বিএসএমএমইউতে কৃত্রিম হাঁটু প্রতিস্থাপন এটাই প্রথম বলে অর্থোপেডিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবু জাফর চৌধুরী দাবি করেন।
জায়গার দখল বুঝে পায় বিএসএমএমইউ : গত ৯ ডিসেম্বর বিএসএমএমইউ হাসপাতালের কেবিন ব্লকের উত্তর পাশে সরকারি মূল্যে ১৬৩ কোটি টাকার ৩ দশমিক ৮৩ একর জায়গার বরাদ্দ ও দখল বুঝে পায় বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। সূত্রমতে, রাজধানীর শাহবাগে ওই জায়গাটি বেক্সিমকো গ্রুপের অবৈধ দখলে ছিল। ওইদিন দুপুরে সরকারের পক্ষ থেকে এ জমি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে জমির দখল বুঝিয়ে দেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষে আরডিসি আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান। জায়গা বুঝে পাওয়ায় হাসপাতালকে ১৫০০ শয্যায় উন্নীত করাসহ সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। বিএসএমএমইউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওই জমির বরাদ্দ পেতে সরকার নির্ধারিত মোট মূল্যের ১০ শতাংশ হারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ১৬ কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ৯ টাকা দেয়া হয়।
বিএসএমএমইউতে ভিত্তিপ্রস্তর : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালকে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে রূপান্তরিত করার জন্য উন্নয়ন বাজেট থেকে ৪৮৫ দশমিক ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ উন্নয়ন বাজেটের আওতায় পূর্ণাঙ্গ ইমার্জেন্সি কমপ্লেক্স, আউটডোর কমপ্লেক্স, অপারেশন থিয়েটার (ওটি) কমপ্লেক্স, নার্সিং ইনস্টিটিউট, আন্তর্জাতিক মানসম্মত মেডিকেল কলেজ ও মেডিকেল কনভেনশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। আর মধ্যে ওটি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন ও আউটডোর কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে গত ২৬ ডিসেম্বর বিএসএমএমইউতে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

No comments:

Post a Comment