Sunday 13 June 2010

ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবল ম্যাচ দেখার সহজ উপায়...

শফিক রেহমান

স্থানঃ মতিঝিল কমার্শিয়াল এলাকায় একটি আইপিএস সেলস সেন্টার।
কালঃ ১০ জুন ২০১০ সাউথ আফ্রিকায় ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগের দিন।
চরিত্রঃ আইপিএস সেলসম্যান, ত্রিশ অনূর্ধ্ব যুবক ও যুবতী এবং একটি চেয়ারে বসা ত্রিশোর্ধ্ব হতশ্রী ব্যক্তি।

আইপিএস সেলসম্যানঃ (হাসিমুখে) ওয়েলকাম স্যার। ওয়েলকাম। বলুন, আপনাকে কি সার্ভিস আমরা দিতে পারি।
যুবকঃ ্লামওয়ালেকুম। আপনি নিশ্চয়ই জানেন আগামীকাল থেকে সাউথ আফ্রিকায় জোহানেসবার্গে সকার সিটি স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে ১৯তম ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট। এক মাসজুড়ে এই টুর্নামেন্ট চলবে। শেষ হবে ১১ জুলাইয়ে। ৬৪টি ম্যাচের এই টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচই আমি দেখতে চাই। বলতে পারেন আমি একজন ফুটবল ফ্যানাটিক। (পাশেই দাঁড়ানো যুবতীর দিকে আঙুল দেখিয়ে লাজুক হাসিমুখে) উনি আমার গার্লফ্রেন্ড। উনি জানেন কেমন ফুটবলপাগল আমি। আমাদের বিয়ে হবে ওয়ার্ল্ড কাপের পরে। ইনশাআল্লাহ। ইতিমধ্যে উনি আমাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে ওয়ার্ল্ড কাপ টুর্নামেন্ট দেখার জন্য একটা আইপিএস উপহার দিতে চান। কতো দাম পড়বে একটা আইপিএসের?

সেলসম্যানঃ একুশ ইঞ্চি কালার টিভি দেখা যাবে এমন একটি আইপিএসের দাম পড়বে ২৮,৯৫০ টাকা। টিভির সঙ্গে চারটি টিউবলাইট ও দুটো ফ্যানও চালাতে পারবেন।
যুবকঃ (চিন্তিত মুখে) ২৮,৯৫০ টাকা। ১২,০০০ টাকা দামের একটি একুশ ইঞ্চি কালার টিভি দেখার আইপিএস খরচ ২৮,৯৫০ টাকা। বলেন কি? এ যে দেখছি বারো হাত তেতুলের তের হাত বীচির কারবার।
সেলসম্যানঃ সরি স্যার। টিভি চালানোর জন্য এটিই সবচেয়ে কম দামি আইপিএস।
যুবকঃ বিদুøৎ চলে যাওয়ার পর এই আইপিএসে কতোক্ষণ টিভি দেখা যাবে?
সেলসম্যানঃ দুই ঘণ্টা। এক বছরের ওয়ারেন্টি পাবেন। ওয়ারেন্টির সময়ে দুই মাস অন্তর ফ্রি সার্ভিস পাবেন। তবে...
যুবকঃ তবে কি?
সেলসম্যানঃ তবে গত কয়েক মাসে, বিশেষত গত কয়েক মাসে যেভাবে লোডশেডিং এবং পাওয়ার ফেইলিওর হচ্ছে, তাতে আমাদের ওয়ারেন্টি নিরর্থক হয়ে যাচ্ছে।
যুবকঃ কেন?

সেলসম্যানঃ আইপিএস মূলত ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন কভার করতে পারে। অর্থাৎ হঠাৎ বিদুøৎ চলে গেলে আইপিএস স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে। কিন্তু যখন বিদুøৎ না থাকাটা ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন না হয়ে নরমাল সিচুয়েশন হয়­ তখন সেই পরিস্থিতি আইপিএস সামাল নাও দিতে পারে।
যুবকঃ বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন।
সেলসম্যানঃ আইপিএসের ব্যাটারি চার্জিংয়ে কিছু সময় লাগে।
যুবকঃ কতোক্ষণ?

সেলসম্যানঃ আইপিএস যদি এক ঘণ্টা চালু থাকে এবং তারপর যদি বিদুøৎ এসে যায়, তাহলে ব্যাটারি পুরো রিচার্জ হতে দুই ঘণ্টা লাগতে পারে। এটা গড় হিসাব। তার মানে, আইপিএস দুই ঘণ্টা চালু থাকলে ব্যাটারি পুরো রিচার্জ হতে সময় লাগবে চার ঘণ্টা। মুশকিল হচ্ছে এই যে, এখন এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং হচ্ছে। সুতরাং চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বারো ঘণ্টাই যদি বিদুøৎ না থাকে তাহলে আইপিএস ব্যাটারি ফুলচার্জ সম্ভব হবে না। ক্রমেই আইপিএস ক্ষমতাহীন হয়ে পড়বে।
যুবকঃ তাহলে? তাহলে আইপিএস না কিনে একটা ছোট জেনারেটর কিনলে সমস্যার সমাধান হবে কি?
সেলসম্যানঃ না। সমাধান হবে না।
যুবকঃ কেন?

সেলসম্যানঃ দেখুন, আপনার মেইন পাওয়ার সোর্স-ই যদি ফেল করতে থাকে, তাহলে জেনারেটরেও কোনো কাজ হবে না। কারণ আপনার কেবল অপারেটরও অপারেট করতে পারবে না। তবে বিটিভি যদি ম্যাচগুলো টেলিকাস্ট করে তাহলে একটা এরিয়াল লাগিয়ে আপনি দেখতে পারবেন। এরিয়ালের দাম পড়বে হয়তো শ’পাচেক টাকা। বিটিভি টেলিকাস্ট করতে পারবে, কারণ তাদের নিজস্ব বড় জেনারেটর আছে। কিন্তু রিসিভিং এন্ড-এ আপনার পাওয়ার লাগবে। আইপিএস সেই পাওয়ার দিতে পারবে দুই ঘণ্টা অথবা তার কম। আর ছোট একটা জেনারেটর, যার দাম হতে পারে লাখ খানেক টাকা, তাতে সমস্যার আপাত সমাধান হতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন এসব জেনারেটর বসানোর জায়গা আপনার না-ও থাকতে পারে এবং ভুলে যাবেন না, জেনারেটর প্রচণ্ড আওয়াজ করে। তাছাড়া জেনারেটরের ডিজেল কেনার হাঙ্গামাতো রয়েইছে।
যুবকঃ (বিরক্ত মুখে) এতসব তথ্য আমাকে জানতে হবে কেন? আমার প্রবলেম হলো একটা টিভি কেনা এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে ওয়ার্ল্ড কাপ টুর্নামেন্ট দেখা। দেশের পাওয়ার সাপ্লাই নিরবচ্ছিন্ন রাখার ডিউটি বা প্রবলেম, যাই বলুন না কেন, সেটা হচ্ছে সরকারের। ভোটাররা ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগকে সরকার চালানোর জন্য। এখন সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে দেশজুড়ে ভোটাররা যেন অন্তত আগামী এক মাস খেলার সময়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদুøৎ পায়।

১৯৭৪-এ শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগের আমলে শুধু ফাইনাল ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচার দেখেছিল বাংলাদেশের মানুষ। তারপর ১৯৭৮-এ প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে দুটি সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচার দেখেছিল। ১৯৮২ থেকে জেনারেল এরশাদের আমলে বহু ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার দেখানোর রেওয়াজ শুরু হয় যা পাকাপোক্ত হয় ১৯৮৬ ও ১৯৯০-এ। ১৯৯৪-এ বিএনপি আমলে, ১৯৯৮-এ আওয়ামী লীগ আমলে এবং তারপর ২০০২ ও ২০০৬-এ আবার বিএনপি আমলে বহু ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এখন বাংলাদেশের মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে ওয়ার্ল্ড কাপের প্রায় সব ম্যাচ নিরবচ্ছিন্নভাবে দেখতে। তার প্রমাণ বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র এখন উড়ছে ওয়ার্ল্ড কাপে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর ফ্ল্যাগ। বিশেষত ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ফ্ল্যাগ এবং তার পরে ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানির ও অন্য দেশগুলোর।

ফ্ল্যাগ উড়ছে টিনের বাড়ির ছাদে। টাওয়ার ব্লকের ফ্ল্যাটে। রিকশার হ্যান্ডল বারে। মোটর কারের ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ডে, লঞ্চে, ট্রাকে, চায়ের দোকানে, মুদির দোকানে। বিভিন্ন বেসরকারি অফিসের বাইরে এবং ভেতরে। এসব ফ্ল্যাগ ছোট এ-ফোর সাইজ থেকে শুরু করে শাড়ির মতো লম্বা-চওড়া সাইজের। ছোট ফ্ল্যাগ বিক্রি হচ্ছে একশ বিশ থেকে দেড়শ টাকায়। ফুটবলপাগল মানুষ এসব কিনছে। কষ্ট করে ছাদে উঠে লাগাচ্ছে অথবা বাশের মাথায় উড়িয়ে দিচ্ছে। অতীতে ফ্ল্যাগ ওড়াতে গিয়ে একাধিক মানুষের মৃতুø হয়েছে। এ সবই হচ্ছে অত্যন্ত স্বতঃস্ফুর্তভাবে গোটা বাংলাদেশে। বাংলাদেশের চেহারাই পাল্টে গিয়েছে। সবুজ-নীল-হলুদ ব্রাজিলের ফ্ল্যাগ, আকাশি নীল-শাদা আর্জেন্টিনার ফ্ল্যাগ, লাল-কালো-শাদা জার্মানির ফ্ল্যাগ, নীল-শাদা-লাল ফ্রান্সের ফ্ল্যাগ ইত্যাদি বাংলাদেশকে এমন এক নতুন সাজে সাজিয়েছে যা দেখা যায় প্রতি চার বছর পর।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের জীবনটাই হচ্ছে গভীর দুঃখের কাহিনী। তাদের জীবনে আনন্দের মুহূর্ত বিরল। সেই বিরল মুহূর্তের অন্যতম হচ্ছে ওয়ার্ল্ড কাপ দেখা। তাই মাদারীপুরের পথে আড়িয়াল খা নদের পাড়ে অথবা পুকুরের মধ্যেও উড়ছে ফ্ল্যাগ। বড়লেখা মৌলভীবাজারে ছোট ফ্ল্যাগ কপালে বেধে মানুষ হাটছে। রূপগঞ্জে চলেছে টিভি কেনার ধুম। সেখানে বিক্রেতারা টিভির সঙ্গে গিফট দিচ্ছেন ফ্ল্যাগ। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা খেলার সময়ে উৎপাদন বন্ধ রেখে খেলা দেখার আবেদন জানিয়েছেন মালিকদের কাছে।

ফুটবলপাগলদের উৎসাহ-উদ্দীপনা আরো বেড়েছে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় ওয়ার্ল্ড কাপ বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ এবং বিভিন্ন প্রাইভেট টিভি চ্যানেলে ওয়ার্ল্ড কাপ বিষয়ে টক শো-র জন্য। দেশজুড়ে ফুটবল উত্তেজনা চরমে পৌছেছে।
এখন যদি এই মানুষরা দীর্ঘ চার বছর অপেক্ষার পর হঠাৎ ওয়ার্ল্ড কাপ খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে কি হবে? সরকার যতোই প্রচার করুক না কেন, বিএনপি আমলে বিদুøৎ উৎপাদনে কোনো উন্নতি হয়নি, তখন এই সব মানুষ বলবে, অনুন্নতি সত্ত্বেও আমরা তো ২০০২ ও ২০০৬-এ নিরবচ্ছিন্নভাবে ওয়ার্ল্ড কাপের ম্যাচগুলো দেখেছিলাম। মানুষ প্রশ্ন করবে এখন কেন দেখা সম্ভব হবে না? এর উত্তরে কি সরকার বলতে পারবে যে তারা গত দেড় বছরে হামলা, মামলা, জামিন, রিমান্ড, টিএফআই, ক্রসফায়ার, ফাসি, যুদ্ধাপরাধী শনাক্তকরণ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম বদল নিয়ে মহা ব্যস্ত ছিল।

সেলসম্যানঃ (গলার স্বর কিছুটা নামিয়ে এনে) গত তিন দিনে সারা দেশে গ্যাস সংকট আর লোডশেডিং আরো বেড়েছে। কারণ কুমিল্লায় বাঙ্গুরা গ্যাস ফিল্ডে পাইপলাইন ফেটে গিয়েছে। এটা সারাতে আয়ারল্যান্ড থেকে এক্সপার্টদের একটি টিম বাংলাদেশে আসছে। এখান থেকে দৈনিক ১২ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হতো। তা কমে গিয়ে ৫ কোটি ৬০ লাখ ঘনফুটে নেমে আসে। এখন গ্যাস ফিল্ডটি একেবারেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর তার বিরাট প্রভাব পড়েছে দেশের পাওয়ার সাপ্লাইয়ের ওপর। গতকাল দেশে সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদুøৎ চাহিদা থাকলেও উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩,৮০০ মেগাওয়াট। সাঙ্গুরা গ্যাস ফিল্ড যে কবে নাগাদ চালু হবে সেটা কেউ বলতে পারছে না। তাই ওয়ার্ল্ড কাপ দেখার চান্স অনেকটা কমে এসেছে।

যুবক (রাগান্বিত চেহারায়)ঃ এসব গভর্নমেন্টের প্রবলেম। দিজ আর নট মাই প্রবলেমস। গভর্নমেন্টের উচিত ছিল আগেই প্রপার মেইনটেনান্স এবং নিয়মিত চেকআপের ব্যবস্থা করা। এটা ডিজিটাল সরকার নয়। এটা মামলা-হামলা-মাতাল সরকার। এই সরকারের ফোকাস অন্যখানে। ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবল এদের কাছে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। আর হবেই বা কি করে! চার নারীর এই গভর্নমেন্ট পুরুষদের খেলা বুঝবে কি করে?
সেলসম্যানঃ চার নারীর গভর্নমেন্ট?
যুবকঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমণি। বিষয়টি নিয়ে আমার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে অনেক তর্ক হয়েছে। আমি আগে নারী মুক্তি সমর্থন করতাম। এখন আর করি না।
যুবতী (্লান হাসিমুখে)ঃ ওয়ার্ল্ড কাপ দেখতে না পারলে ও ভয়ঙ্কর কিছু করে ফেলতে পারে। সরকারের বিরুদ্ধে ও যে রকম প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে সেটা জানলে মাহমুদুর রহমানের মতো ওকে ওর অফিস থেকে আজই ধরে বেধে নিয়ে যাবে। তারপর রিমান্ড। তাই ওর খেলা দেখা নিশ্চিত করার জন্য আপনাদের দোকানে এসেছি। প্লিজ, আমাদের হেল্প করুন।

ত্রিশোর্ধ্ব হতশ্রী ব্যক্তি (চেয়ার থেকে উঠে)ঃ কেউ আপনাদের হেল্প করতে পারবে না। আপনার বয়ফ্রেন্ড যেমন ফুটবল ম্যাড, এই সরকার তেমনি মামলা ম্যানিয়াক। গত এক সপ্তাহে এই সরকার কতো জনের বিরুদ্ধে নতুন মামলা ঠুকেছে তা মন্ত্রীরাও হয়তো জানেন না। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নতুন মামলাসহ দৈনিক আমার দেশ-এর শতাধিক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গণমামলা করারও ব্যবস্থা হয়েছে। এই মামলা ম্যানিয়াক সরকারের বিরুদ্ধে আপনি কি করবেন? উকিলের কাছে দৌড়াবেন। থানা-জেল-কোর্টে যাবেন। তারপর একটা মামলায় খালাস পেলে আরেকটা মামলা এরা আনবে। মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা আরো বেড়েছে।
যুবক ও যুবতী (সমস্বরে)ঃ তাহলে আমরা কি করবো? আমরা কি একেবারেই নিরুপায়?
হতশ্রী ব্যক্তিঃ না। একেবারেই যে নিরুপায়- তা নয়। আপনারা ইচ্ছা করলে ওয়ার্ল্ড কাপ চলার সময়ে লোডশেডিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন মাহমুদুর রহমানের মতো আপনাদের বিরুদ্ধে সরকার কেস ঠুকে দিতে পারে। সরকার বলতে পারে আপনারা মতিঝিল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

যুবক (বিস্মিত মুখে)ঃ মতিঝিল ষড়যন্ত্র?
ব্যক্তিঃ হ্যা। এই যে মতিঝিলে আপনি আমাদের সঙ্গে সরকারের সমালোচনায় অংশ নিলেন, বিদুøতের ঘাটতি বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন, এটাই তো মতিঝিল ষড়যন্ত্র নামে আখ্যায়িত হতে পারে- ঠিক উত্তরা ষড়যন্ত্রের মতোই। আর আপনি নিশ্চয়ই মৌলবাদী, ইসলামি জঙ্গি। আপনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আরেকটি মামলা সরকার ঠুকে দিতে পারে আপনার জঙ্গি মনোভাবের জন্য।
যুবকঃ আমি? জঙ্গি? কিভাবে?
ব্যক্তিঃ মাহমুদুর রহমানের লেখায় কোরান-হাদিসের উদ্ধৃতি থাকে। তাই তাকে ইসলামি মৌলবাদী রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে।
যুবকঃ কিন্তু আমি? আমি কি করেছি? আমি তো কোথাও কিছু লিখিনি।
ব্যক্তিঃ লেখেননি। কিন্তু বলেছেন।
যুবকঃ কি বলেছি আমি? কখন?

ব্যক্তিঃ এই দোকানে ঢুকেই আপনি বলেছেন ্লামওয়ালেকুম। তার কিছুক্ষণ পরে বলেছেন, আপনাদের দু’জনার বিয়ে হবে ইনশাআল্লাহ। ্লামওয়ালেকুম আর ইনশাআল্লাহ, এই দুটি শব্দই আপনার ইসলামি মৌলবাদী পরিচয় প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট।
যুবক (চিন্তিত মুখে)ঃ এটা কোন দেশে আমরা বাস করছি? আমাদের সমাবেশের স্বাধীনতা নেই! ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নেই!
ব্যক্তিঃ আপনি আওয়ামী দেশে ডিজিটাল যুগে বাস করছেন। এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে স্বাধীনতাকামী সবাইকে। আর তার সূচনা হতে পারে আগামীকাল ওয়ার্ল্ড কাপ অনুষ্ঠানের সময় থেকে। যদি আপনি এবং আপনার জানাশোনা মানুষরা ওয়ার্ল্ড কাপ না দেখতে পারেন তাহলে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, ইটালির ফ্ল্যাগের পাশেই টাঙ্গিয়ে দেবেন একটি কালো ফ্ল্যাগ। বাংলাদেশের প্রতিটি বঞ্চিত ফুটবল ফ্যান যদি কালো ফ্ল্যাগ শহরে, গ্রামে-গঞ্জে উড়িয়ে দেন তাহলে এই সরকার বুঝতে পারবে মানুষ তাদের ওপর কতোটা ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত। এছাড়া আপনার এলাকার এমপি’র কাছে আপনার প্রতিবাদ লিখে জানান। ঠিকানাঃ জাতীয় সংসদ, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা। আর এসব প্রতিবাদ জানানোর বিষয়টি সকল পত্রিকা অফিসে ফোন করে অথবা এসএমএস-এ পাঠিয়ে দেবেন।

যুবক (সপ্রশংস চোখে)ঃ আপনি কে ভাই? কি করেন?
ব্যক্তিঃ আমিও ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবলপাগল মানুষ। মিডল ইস্টে কাজ করতাম। সম্প্রতি কাজ হারিয়ে ফিরে এসেছি। আমিও একটা আইপিএস কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু দাম আমার কেনার সাধ্যের বাইরে। তাই বুঝতে পারছি না কি করবো।

হঠাৎ বাইরে একটা প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেল।
মানুষের চিৎকার।
হৈ চৈ।
বাইরে চিৎকারঃ আগুন! আগুন!
ট্রান্সফর্মার জ্বলে গেছে।
ফায়ার সার্ভিস ডাকো।
ফায়ার সার্ভিস। আগুন। আগুন।
সেলসম্যান (ব্যগ্র স্বরে)ঃ আপনারা এক্ষনি চলে যান। আমরা দোকান বন্ধ করে দিচ্ছি। নইলে নিমতলীর মতো আগুনে জ্বলেপুড়ে মরতে হতে পারে।
ব্যক্তি (চেয়ারে আবার বসে নির্বিকার মুখে)ঃ না। আমি যাবো না।
যুবক ও যুবতী (সমস্বরে)ঃ প্লিজ, পাগলামি করবেন না। চলুন। আমরা যাই।
পাশের অফিস ভবন থেকে চিৎকারঃ আগুন। আগুন। সবাই পালাও।
আইপিএসের দোকানে পোড়া গন্ধ ভেসে এল।
কালো ধোয়া ঢুকলো।
সেলসম্যান দ্রুত দোকান ছেড়ে বেরিয়ে গেল।

যুবতীঃ প্লিজ উঠুন। প্লিজ। প্লিজ।
ব্যক্তিঃ না। ফুটবল খেলা না দেখতে পারলে আমি হয়তো সুইসাইড বমার হয়ে যাবো। ওদের কাউকে মেরে ফেলবো। তার চেয়ে এখানেই আজ আমার সুইসাইড করা ভালো।
যুবক (দ্রুত ওই ব্যক্তিটির কাছে গিয়ে হাত টেনে)ঃ আপনাকে বের হতেই হবে। জলদি আসুন। প্লিজ।

আগুনের লেলিহান শিখা আইপিএসের দোকানে ঢুকলো ...

No comments:

Post a Comment