Sunday 13 June 2010

আমরা কি আশাবাদী হতে পারি?

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

আমরা আশাবাদী হয়েছি। জেলা প্রশাসক মহোদয় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের জন্য যে ঠুনকো অভিযোগ এনেছিলেন এবং ওই পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করে দিয়েছিলেন তা খামখেয়ালি হিসেবেই প্রতিভাত হয়েছে। উচ্চতর আদালত তার এই খামখেয়ালিপনাকে নাকচ করে দিয়েছেন। সে রায়ের বলে দৈনিকআমার দেশ পত্রিকা শুক্রবার আবার প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা বিচার বিভাগের কাছে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কিছুটা নিশ্চিত হতে চাইছি এবং অনেকখানি ন্যায়বিচার পেয়েছি বলেই দাবি করছি। আমরা বিশ্বাস করতে চাইছি যে, মানুষ ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা পাবে, আদালতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। কখনো কখনো এমন মনে হয়েছে যে, মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছে কি? এ রকম প্রশ্ন উত্থাপিত না হলেই ভালো হতো। আসলে বর্তমান প্রতিহিংসা-তাড়িত সরকার এমন এক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চাইছে যে, আদালত তাদের ইচ্ছানুকূল থাকুক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন মনে হয়েছে যে, আদালত পৃথক হয়েছে বটে, স্বাধীন হয়নি। কারণ নিম্ন আদালত যে মামলায় একজন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড আদেশ মঞ্জুর করেছেন, উচ্চ আদালত একই মামলায় অন্য আসামিদের জামিন দিয়েছেন। এ ঘটনা ঘটা বিচিত্র নয়। এটাই তো স্বাভাবিক যে, নিম্ন আদালতে ন্যায়বিচার হয়নি বলে মানুষ উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। সেখানে বহু ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতের রায় উচ্চ আদালত বাতিল করে দেন। তারা নতুন রায় দেন। এই বিষয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই, বরং এটাই স্বাভাবিক। আমাদের মনে রাখতে হবে, নিম্ন আদালত থেকে উচ্চতর আদালত পর্যন্ত যারা অভিযোগের শুনানি গ্রহণ করেন তারাও মানুষ, এবং তারাও ভুলভ্রান্তির ঊর্ধ্বে নন।

দৈনিক আমার দেশের প্রকাশনা বাতিল হলে বাংলাদেশ এবং গোটা বিশ্বে এর তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ওই পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে পুলিশ গ্রেফতার করে প্রতারণার অভিযোগে। প্রতারণাটা কী? জেলা প্রশাসক বাহাদুরের দৃষ্টিতে প্রতারণাটা হলো এই যে, পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, যিনি প্রকাশক নন, তার নামেই পত্রিকাটি প্রকাশ করে আসছিলেন। প্রায় এক বছর আগে দৈনিকআমার দেশ পত্রিকার কর্তৃপক্ষ সরকারকে অবহিত করেছিল, পত্রিকার প্রকাশক পদত্যাগ করেছেন এবং তার স্থলে নতুন প্রকাশক কে হবেন। এখানে জেলা প্রশাসক সাহেবের দায়িত্ব ছিল পত্রিকা কর্তৃপক্ষের চিঠিটি আমলে নিয়ে জানিয়ে দেয়া যে, আমরা আপনার পত্রিকার নতুন প্রকাশকের খবর জেনেছি। সেটা জেলা প্রশাসক সাহেবের কর্তব্য। তিনি কর্তব্য কাজে অবহেলা করে নিজের দায়িত্ব এড়ানো জন্য আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ওই পত্রিকার প্রকাশক হবেন কি না এবং সেটা অনুমোদন করা যায় কি না সে বিষয়ে অনুমতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। গত এক বছরেও (কিংবা তার চেয়েও কম-বেশি সময়ে) এর কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এখানেআমার দেশ কর্তৃপক্ষ আইনের কোনো ব্যত্যয় করেননি। ১৯৭৩ সালের প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস অ্যাক্ট অনুযায়ীই প্রকাশক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যা যা করা দরকার, তারা তার সব কিছুই করেছিলেন। সরকার যেহেতু প্রথম থেকেই দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পছন্দ করেনি সেহেতু তার যতটুকু সাধ্য আছে সবটুকু দিয়ে আমার দেশকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছে।

আমার দেশ সরকারের এত বড় শত্রু হলো কেন? কারণ তারা সত্য প্রকাশে অকুণ্ঠিত থাকার চেষ্টা করেছে।আমার দেশ এক একটি সত্য প্রকাশ করেছে আর সরকার তার জবাব না দিয়ে আমার দেশের ওপর হামলে পড়েছে। সরকার হয়তো এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের নাম শুনেই ক্ষিপ্ত ছিল। মাহমুদুর রহমানের দোষ তেমন কিছু নয়। বিএনপি সরকারের আমলে তিনি কিছুকাল ওই সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এবং তিনি আমার দেশের সম্পাদক হিসেবে সত্য প্রকাশ করছেন। এই সরকারের কাছে সত্য বড় বিপজ্জনক। ফলে যেভাবেই হোক মাহমুদুর রহমানকে ধরা চাই।

মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো শুধু যে তাকে হয়রানি-নাজেহাল করার জন্য এবং তার মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য সে বিষয়ে এখন আর কোনো সন্দেহ নেই। কারণ রিমান্ডের আগেই জেল হাজতে তার বিরুদ্ধে যে আচরণ করা হয়েছে, সে হিসেবে মানবাধিকার লঙ্ঘন এখন আর কোনো প্রশ্নবিদ্ধ বিষয় নয়। মাহমুদুর রহমান গত ১ জুন গ্রেফতার হওয়ার পর জেল হাজতে ছিলেন। কিন্তু সেখানেই তাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অংশ হিসেবে সরকারি কর্তৃপক্ষ তার প্যান্ট খুলে ফেলে এবং আন্ডাওয়ার ধরে টানাটানি করতে থাকে। অর্থাৎ, একজন মানুষের যে আত্মসম্মান সরকার নিয়ন্ত্রিত বাহিনী তা ভূলুণ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে। এ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানি না। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক সমাজে এই ধরনের ঘটনা কি সরকারের অপরাধমূলক কার্যক্রম নয়?

পাকিস্তান আমলেও আমরা দেখেছি, ভিন্ন ধরনের এক চিত্র। পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছি। পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেল তাদের দিকে নিক্ষেপ করেছি। কিন্তু যখন গ্রেফতার হয়েছি, তখন তাদের কাছ থেকে কোনো দুর্ব্যবহার পাইনি। গ্রেফতার হওয়ার পর যখন আমাদের জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তখন পুলিশ বলেছে, ভাই, আপনারা এ রকম করেন কেন, এ রকম করলে আমরা যে গ্রেফতার না করে পারি না। তারপর চালান দিতে হয়। কোর্টে হাজিরা দিতে হয়। আমাদের তো কিছু করার নেই। অনেক সময় পুলিশের ট্রাকে বসে বলতাম, আপনাদের লজ্জা করে না? আমরা তো সাধারণ মানুষের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য লড়াই করছি। আপনারা সঙ্গী না হয়ে আমাদের গ্রেফতার করেন কেন? তারা বলত, ভাইরে, পুলিশের চাকরি, কী করব?

তাদের সেই অসহায়ত্বের সাথে বর্তমান পুলিশের অসহায়ত্বের সম্ভবত কোনো তুলনা হয় না। কারণ সেই সময়ে বাঙালি পুলিশ এ দেশের স্বাধিকার আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত না হলেও মানসিকভাবে একাত্ম ছিল । ’৬৯-এর অভ্যুত্থানের সময় তারা আমাদের যথাসম্ভব গ্রেফতার না করে তাদের গাড়িতে তুলে নিতেন। তারপর টাঙ্গাইল শহর থেকে মধুপুর জয়দেবপুর কোনো স্থানে ট্রাক থেকে নামিয়ে দিয়ে নিজেরা ফিরে যেতেন। আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। অত রাতে সে সময় এই রুটে বাস চলাচল করত না। শুধু চলত ট্রাক। আমরা হাত দেখিয়ে ট্রাক থামাতাম। ট্রাকওয়ালারাও জানত যে, পুলিশ আমাদের এই খানে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেছে। আমরা ট্রাকের তিরপলে ঢাকা মালামালের ওপর উঠে বসতাম। মধ্যরাতে টাঙ্গাইল নেমে পাঁচ-সাত কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছে যেতাম যে যার গন্তব্যে। পরদিন আবারো মিছিল। আবারো স্বৈরাচারবিরোধী স্লোগান। ’৬৯-এর অভ্যুত্থানে আমি বারবার গ্রেফতার হয়েছি। আমি ১৬-১৭ বছরের তরুণ ছিলাম। তখনকার পুলিশ বাহিনী আমাকে সমীহ করেছে। কেউ আমার প্যান্ট খুলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দেয়ার চেষ্টা করেনি। কিন্তু বাংলাদেশে ৫৭ বছরের প্রবীণ মাহমুদুর রহমানের প্যান্ট খুলে ফেলে শেখ হাসিনার সরকার নিজেদেরই গাত্রবস্ত্র উন্মীলন করে ফেলেছে।

আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সত্য প্রকাশে অকুণ্ঠিত। ব্যক্তিগতভাবে তিনি একজন প্রকৌশলী হলেও তার কলম ক্ষুরধার। সেই কলমের শক্তি সম্পর্কে তিনি নিজেও অভিহিত হয়েছেন অনেক পরে। সম্পাদক হিসেবে তিনি দায়িত্বশীল। তিনি সব সময়ই তার পত্রিকা আমার দেশের রিপোর্টের বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে সচেতন। ফলে সরকারের পক্ষে এ কথা কখনো বলা সম্ভব ছিল না যে, আমার দেশে প্রকাশিত রিপোর্ট মিথ্যা বা ভুল। সেই কারণে মাহমুদুর রহমানকে
শাবাশ দিতেই হয়। তিনি পেশাদার সাংবাদিক
নন, কিন্তু সাংবাদিকতার নীতিমালার
প্রতি তিনি অতিশয় বিশ্বস্ত।

তা হলে সত্যভীতু সরকার কী করবে? তাদের মাহমুদুর রহমানের মতো ব্যক্তিত্ববান সত্যভাষী সম্পাদককে আঘাত করার কোনো বিকল্প থাকে না। অতএব মাহমুদুর রহমান এখন মামলার পর মামলায় জেলে ও রিমান্ডে। কোনো সভ্য সমাজে এটা কল্পনাও করা যায় না যে, একটি বহুল প্রচারিত পত্রিকার সম্পাদককে ইতর সব যুক্তি দেখিয়ে এভাবে গ্রেফতার করা যায়। গত ১ জুন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সেভাবেই সরকার গ্রেফতার করেছে এবং ধারাবাহিক নির্যাতন করে যাচ্ছে। গ্রেফতারের আগে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকার একটি মামলাও দায়ের করতে পারেনি। উত্তরা ষড়যন্ত্র বলে এক ইতর ধুয়া তুলেছিল তৎকালীন পরদেশী পদলেহী সরকারের স্থানীয় প্রতিনিধিরা। বিদেশী প্রভুদের পাচাটা সে সরকার মামলা নিয়ে এক পা-ও অগ্রসর হতে পারেনি। অর্থাৎ, যা ষড়যন্ত্র নয়, তাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে চালানোর চেষ্টা করেছিল ওই ভারবাহী সরকার। সেটা তখন প্রমাণিত হয়নি। শেখ হাসিনা আজম জে চৌধুরী বা নূর আলীর কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন, এমন মামলায় তখন অনেক তুলকালাম হয়ে গেছে এবং এই বাদিরা স্বেচ্ছায় হোক আর বাধ্য হয়েই হোক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তৎকালীন ক্যাঙ্গারু কোর্টে জানিয়েছিলেন যে, তারা শেখ হাসিনাকে ঘুষ দিয়েছেন। কেউ নগদে। কেউ চেকে। প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জ্বালানি উপদেষ্টা ছিলেন। রাষ্ট্রীয় স্বার্থরক্ষায় তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান। ফলে বাংলাদেশে জ্বালানি সম্পদ লুটেরারা মাহমুদুর রহমানের ওপর যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু স্বীকার করতে হবে, জনাব রহমান কোনো আপস করেননি। তিনি বাংলাদেশের জ্বালানি সম্পদ রক্ষায় ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দেন। সেটা পছন্দ করেননি আওয়ামী লীগের পূর্বসূরি সংবিধানবিরোধী স্বৈরাচারী সরকার।

তার ওপর সরকারের বিভিন্ন প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম সম্পর্কে আমার দেশ তথ্যানুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছিল। যাতে ক্রমেই উন্মোচিত হয়ে যাচ্ছিল যে, বিডিআর বিদ্রোহের সাথে সরকার পক্ষের লোকদের কী ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। সব মিলিয়ে আমার দেশ সরকারের জন্য ক্রমেই বিরক্তিকর হয়ে উঠছিল। ধারণা করা হয় যে, এসব কারণেই সরকার মাহমুদুর রহমানকে শিক্ষা দিয়ে দেয়ার জন্য সর্বাত্মক আয়োজন করেছে। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে ও মাহমুদুর রহমানকে কারারুদ্ধ করে সরকার যে নিকৃষ্ট নজির স্থাপন করল, তার নিন্দা হয়েছে সর্বত্র।

সরকার বারবার দাবি করে আসছিল যে, তারা পত্রিকা বন্ধ করেনি। পত্রিকা বন্ধ করেছে জেলা প্রশাসক। হাইকোর্ট যখন পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল অবৈধ করলেন তখন কী বিবেচনায় সরকার চেম্বার জজ আদালতে হাই কোর্টের রায় স্থগিতের জন্য ছুটে গেল, সেটাও বোধগম্য নয়। সরকার তো কোনো দায়িত্ব নেয়নি। তা হলে সরকারের এমন কী দায় পড়ল যে, তারা পত্রিকা যাতে পুনঃপ্রকাশিত না হয় সে ব্যাপারে মরিয়া হয়ে উঠল।

তবু আমরা বলব, আদালত সরকারের খামখেয়ালির বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক রায় দিয়ে জনগণের শেষ ভরসাস্থল হিসেবে তার মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল আদেশ রদ হওয়ার পর সারা দেশে, এমনকি সারা বিশ্বে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন ফোন করে বা ম্যাসেজ পাঠিয়ে তাদের আনন্দের কথা জানান দিতে থাকেন। যারা অনলাইনে পত্রিকা পড়েন তারাও উল্লসিত হয়ে ওঠেন। আদালতের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করতে সর্বত্র মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠতে থাকেন। এই ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, গণতন্ত্রের জন্য, মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এ দেশের সাধারণ মানুষ কতটা উদগ্রীব।

কিন্তু সরকারের কোনো কোনো মহল মনে হয়, আইনের শাসনের প্রতি অত্যন্ত বীতশ্রদ্ধ। তারা যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না যে উচ্চ আদালত কেন সরকারের ইচ্ছানুযায়ী রায় দিলেন না। কেন আমার দেশ পুনঃপ্রকাশিত হবে। ফলে তারা আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা খুলে দেয়ার ব্যাপারে গড়িমসি করছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পত্রিকাটির ছাপাখানা তালাবদ্ধই রেখেছে পুলিশ। সম্ভবত তারা ‘ওপরের’ গ্রিন সিগনালের জন্য অপেক্ষা করছে। কারণ তারা দেখেছে, উচ্চ আদালত কোনো কোনো আসামির জামিন মঞ্জুর করলেও অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস সংশ্লিষ্ট আসামিকে জেল থেকে বের হতে দেয়নি। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের ক্লিয়ারেন্স ছাড়া বন্দীরা মুক্তি পাচ্ছে না। অর্থাৎ অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস হাইকোর্টের ওপরও হাইকোর্ট হয়ে বসেছে। পুলিশ যখন দেখেছে হাইকোর্টের আদেশ অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস বিলম্বিত করে দিতে পারে তখন কেন বিলম্বিত করতে পারবে না আমার দেশ পুনঃপ্রকাশের প্রক্রিয়া। সুতরাং আদালতের আদেশ নয়, সরকারি নির্দেশের অপেক্ষায় পুলিশ। মঈন-ফখর-হাসিনার এই সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে পুলিশ সেটাই দেখেছে ও শিখেছে।

কিন্তু আমরা মনে করি, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আদালতের রায়ের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল হবে। নিম্ন আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে না। উচ্চ আদালতের রায় যা-ই হোক, তারা মেনে নেবে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে। সেটা দেশ ও জাতির জন্য যেমন কল্যাণকর, তেমনি কল্যাণকর সরকারের জন্যও।
লেখকঃ সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
(সুত্র, নয়া দিগন্ত, ১৩/০৬/২০১০)

No comments:

Post a Comment