Saturday 5 June 2010

সত্য হননের এই নষ্ট পথে

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

অগ্রজ সাংবাদিক এবিএম মূসা এক টিভি টকশোতে বলেছিলেন, ‘কোনো সরকার যখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তখন তারা মিডিয়ার ওপর খড়গহস্ত হয়।’ বর্তমান সরকার মাত্র দেড় বছরেই মিডিয়ার ওপর খড়গহস্ত হয়ে প্রমাণ করেছে, তাদের পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে, জনগণের সাথে তারা সম্পূর্ণ সম্পর্কচুøত হয়ে পড়েছে। এরই জের হিসেবে গত ১ জুন সরকার বন্ধ করে দিয়েছে বহুল প্রচারিত ও আদৃত দৈনিক আমার দেশ। সেই সাথে গ্রেফতার করা হয়েছে আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। এর আগে সরকার বন্ধ করে দেয় যমুনা টিভির পরীক্ষামূলক সম্প্রচার। বন্ধ করে দিয়েছে চ্যানেল ওয়ান। এই টিভি দু’টি বন্ধ করে দেয়া ছাড়াও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রোধ করার জন্য সরকার অন্যান্য টিভি চ্যানেলের টকশো নিয়ন্ত্রণের জন্য জারি করেছে বিভিন্ন বাধানিষেধ। সেসব বাধানিষেধ মেনে টকশো প্রচার করতে না পেরে কোনো কোনো টিভি চ্যানেল তাদের জনপ্রিয় টকশো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। এখন টিভির সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোতে আওয়ামী লীগের সমর্থকদেরই জয়জয়কার। ভিন্ন মত নেই বললেই চলে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মিডিয়ার ওপর এই জবরদস্তি পুরোদমে শুরু হয়েছে। মইন-ফখরের দুই বছরের স্বৈরশাসনকালেও মিডিয়া যে সাহসের পরিচয় দিয়েছিল, তা প্রশংসার দাবিদার। যদিও সে সময় কোনো কোনো মিডিয়া ওই অসাংবিধানিক সরকারের অনুকূলে প্রাণপণ কাজ করে গেছে। ওই সরকারও প্রধানত স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলোর ওপর নানা ধরনের খবরদারি চালিয়েছে। তা সত্ত্বেও কোনো কোনো ব্যক্তি সে সময় অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা অটুট রাখার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বেশ কিছু পত্রপত্রিকা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে রাজনীতি ও গণতন্ত্র সংরক্ষণের অনুকূলে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। এবং আমরা দাবি করতে চাই, ওই অসাংবিধানিক সরকারের পিছুহটা ও ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার জন্য মিডিয়াই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

মইন-ফখরের সরকার রাজনীতিকদের চরিত্র হননের জন্য দেশে নিরাজনীতিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছিল। দল-মত নির্বিশেষে রাজনীতিকদের চরিত্র হননের জন্য যখন মইন-ফখর সরকার উন্মত্ত হয়ে পড়েছিল, যখন এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিরোধের কোনো সুযোগ ছিল না, তখন কিছুসংখ্যক মিডিয়াব্যক্তিত্ব তার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন। মিডিয়ার নগণ্য কর্মী হিসেবে সেটাকেই আমরা কৃতিত্ব বলে দাবি করতে চাই। আমরা দেখেছি, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির ঘোর বিরোধী, তারাও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মইন-ফখরের অপপ্রচার রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে মইন-ফখর সরকারের ধারাবাহিক নিকৃষ্ট অপপ্রচার, তাদের চরিত্র হনন, তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্বীকারোক্তি আদায় প্রভৃতি বিষয়ে সোচ্চার ছিল বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে দু-একটি টিভি চ্যানেল। ওই সরকার রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে হেন অপপ্রচার নেই যা করেনি। কিন্তু তার পরও জনমত রাজনীতিকদের অনুকূলে রাখার জন্য মিডিয়া বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিল। শেখ হাসিনাকে যে তারা নির্বাসন দিতে পারেনি, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ যে দাঁড় করাতে পারেনি, তার জন্য মিডিয়ার অবদান ছিল অপরিসীম। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পেয়ে সেই শেখ হাসিনাই মিডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেছেন। একে একে বন্ধ করে দিচ্ছেন টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র।

কিন্তু কী দোষ আমার দেশ ও তার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের? এই পত্রিকা এবং সম্পাদকের অপরাধ হলো, তারা অকুণ্ঠিতভাবে কিছু কিছু সত্য প্রকাশ করছিলেন। সে সত্য কখনো কখনো শাসকগোষ্ঠীর কালিমালিপ্ত মুখ উন্মোচিত করে দিয়েছে এবং সেইটুকু সহ্য করার ক্ষমতা ও মানসিকতা শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে বড় অভাব। সংবাদপত্র সত্য প্রকাশ করে গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য। ন্যায়বিচার সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং সর্বোপরি শাসকগোষ্ঠীকে সংশোধিত হওয়ার জন্য। এখানে ব্যক্তিগত অসূয়াবিদ্বেষ নেই। যদি ব্যক্তিগত অসূয়াবিদ্বেষ প্রকাশিত হয়, তাহলে জনগণই সেই সংবাদপত্রকে প্রত্যাখ্যান করে। যখন সংবাদপত্র সত্য প্রকাশে বিদ্বেষহীন থাকে, তার পাঠকপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়তে থাকে। আবার এই সত্যের পথ থেক্ষে বিচুøত হলে সেই সংবাদপত্র পাঠকপ্রিয়তা হারায়। এই বাংলাদেশেও আমরা দেখেছি যে, সত্যের পথ থেকে বিচুøত হলে একেবারেই শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র পাঠকপ্রিয়তার দিক থেকে সর্বনিØে নেমে এসেছে। আমার দেশ পাঠকপ্রিয়তার দিক থেকে সত্য প্রকাশের কারণে ক্রমেই ঊর্ধµমুখী। অসাংবিধানিক স্বৈরাচারী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেগম খালেদা জিয়া, শেখ হসিনাসহ রাজনীতকদের বিরুদ্ধে যখন কুৎসা প্রচার করা হচ্ছিল, তখন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সেই সব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ উচ্চারণ করেছিলেন। আমরাও ওই অসাংবিধানিক সরকারের রাজনীতিকদের চরিত্রহননের বিরুদ্ধে কলম ধরেছি। জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র পরিবেশে হলেও চেষ্টা করেছি। তার ফলে মইন-ফখরের উচ্চাভিলাষী সরকার শেষ পর্যন্ত লেজ গুটিয়ে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিল।

আমরা ধারণা করেছিলাম, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে মিডিয়ার এই অবদানের কথা তারা মনে রাখবে এবং মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করবেন। কিন্তু সে আশা কুহকে পর্যবসিত হয়েছে। এই সরকার মইন-ফখরের সরকারের মতোই মিডিয়ার ওপর হামলে পড়েছে। নিুমানের কূটকৌশল প্রয়োগ করে এরা একের পর এক বন্ধ করে দিয়েছে টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র। দারুণ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। হাত-পা ঝাড়া দিয়ে তিনি বলেছেন, তথ্য মন্ত্রণালয় কোনো সংবাদপত্র বন্ধ করেনি। অর্থাৎ দৈনিক আমার দেশ বন্ধের দায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের নয়। যেন এই মন্ত্রণালয় সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপ।

কিন্তু মিডিয়ার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যেরই অংশ। ১৯৭২-৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকালেও ঘটেছিল একই ধরনের ঘটনা। শেখ মুজিবুর রহমান তার সারা জীবনের রাজনীতি নিয়োজিত করেছিলেন গণতন্ত্রের জন্য, বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতার জন্য এবং সন্দেহ নেই, সে লড়াইয়ে তিনি শত ভাগ আন্তরিক ছিলেন। কিন্তু ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমান ভিন্ন মত এবং সত্যভীতু হয়ে পড়েছিলেন। তখন বিটিভি ছাড়া আর কোনো টিভি চ্যানেল ছিল না। ছিল কিছু ভিন্ন মতের সংবাদপত্র। এসব সংবাদপত্র সরকারের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অন্যায়-অবিচারের কথা প্রকাশ করে দিচ্ছিল। এবং শেখ মুজিবুর রহমান তার দীর্ঘকালের গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারার ব্যত্যয় ঘটিয়ে সংবাদপত্রের ওপর দলননীতি শুরু করেন। সাংবাদিকদের হতে হয় নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার। তখন বিরোধীদলীয় পত্রিকা গণকণ্ঠ অফিসে প্রতিদিন হামলা চালিয়েছে সরকারের পুলিশ বাহিনী। প্রেসে ঢুকে ভেঙে দিয়েছে পত্রিকার গ্যালি। গ্রেফতার করা হয়েছিল পত্রিকার সম্পাদক কবি আল মাহমুদকে। হামলা করা হয়েছিল মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রকাশিত হক কথার ওপর। গ্রেফতার করা হয়েছিল এর সম্পাদককে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল সাপ্তাহিক মুখপত্র স্পোকসম্যান ও লাল পতাকা। এর সম্পাদকদেরও গ্রেফতার করা হয়েছিল। সাপ্তাহিক হলিডে সম্পাদকের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে যে ইতর বক্তব্য দেয়া হয়েছিল, তা এখনো লজ্জার সাথে স্মরণ করা হয়। হলিডে সম্পাদককে গ্রেফতার করে কারাবন্দী করেছিল শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার। এভাবে সারা দেশে বন্ধ করে দেয়া হয় বিভিন্ন সংবাদপত্র। গ্রেফতার হন সংবাদপত্রের সম্পাদকরা।

এর কারণ ছিল একটাই। সংবাদপত্র সত্য প্রকাশ করছিল। এ ছাড়া সে সময় সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও ছিল দৈনন্দিন বিষয়। তখনো সরকার প্রতিদিন উচ্চৈঃস্বরে নিজেদের সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী বলে ঘোষণা করে যাচ্ছিল। সেখানেও মিথ্যাচারই ছিল প্রধান অবলম্বন। ফলে সাংবাদিক ও সাংবাদিকদের ইউনিয়ন প্রায় বিপন্ন হয়ে পড়ে। ১৯৭৪ সালের মধ্যেই পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। এ জন্য ১৯৭৪ সালের ৬-৮ জুলাই অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। নির্মল সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় গৃহীত প্রস্তাবে সংবাদপত্র দলনে এই মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করা হয়। তাতে দুঃখের সাথে বলা হয় যে, আওয়ামী লীগ সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করলেও এখন সাংবাদিকদের নির্যাতনের পথই তারা বেছে নিয়েছেন। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, ‘এক কালের প্রেস ট্রাস্টের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করলেও আজকের সরকার এই কয়েকটি পত্রিকার সাথে প্রেস ট্রাস্ট-সুলভ আচরণ করছেন। ফলে জনচক্ষে এই পত্রিকাগুলো হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে। তবে আজকের এই পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক। এমন কথাও বলা হচ্ছে যে, দেশে দুই-তিনটির বেশি সংবাদপত্রের অস্তিত্ব থাকবে না। এমনও বলা হচ্ছে, যেকোনো মুহূর্তে সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। অথবা নিউজপ্রিন্ট বা বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করে সংবাদপত্রগুলোকে স্বাভাবিক মৃতুøর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগসহ দেশের সব সরকার-সমর্থক ও বিরোধী দলের প্রতি আমাদের আবেদন, আপনারা পরিস্থিতি অনুধাবন করুন। আপনাদের পূর্বপ্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করেন।’

কিন্তু এসবে কোনো ফল হয়নি। সংবাদপত্র তথা সত্য প্রকাশ ও মত প্রকাশ দলনের ধারা অব্যাহতই ছিল। সরকার স্বাধীন মত প্রকাশ ও সত্যকে কিছুতেই সহ্য করতে পারছিল না। আর তাই শেষ পর্যন্ত ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন মাত্র চারটি সংবাদপত্র সরকারি নিয়ন্ত্রণে রেখে অন্য সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার। সেই থেকে ১৬ জুন সংবাদপত্রে কালো দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এবার ১ জুন আরেক কালো দিবসের সূচনা করল শেখ হাসিনার সরকার।

দৈনিক আমার দেশে প্রকাশিত সত্যকে সত্য দিয়ে মোকাবেলা করার শক্তি এই সরকারের নেই। সে কারণে যমুনা টিভি, চ্যানেল ওয়ান ও আমার দেশ বন্ধ করার ক্ষেত্রে সরকার কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। চ্যানেল ওয়ানের বন্ধকী যন্ত্রপাতি কিনে নেয়ার ক্ষেত্রে ত্রুটি ধরে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে চ্যানেলটি। আমার দেশের ডিক্লারেশন বাতিলের অজুহাতটিও ঠুনকো। আমার দেশ কর্তৃপক্ষ এর প্রকাশক ও সম্পাদক পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা বিষয়টি যথাযথভাবে সরকারকে অবহিতও করে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি সরকারি নথিতে অন্তর্ভুক্ত করার দায়িত্ব আমার দেশ কর্তৃপক্ষের নয়, সরকারের। সরকার সে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করেছে। তার জন্য আমার দেশ বন্ধ হবে কোন যুক্তিতে?

কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন সরকার যুক্তির ধার ধারেনি। সত্য প্রকাশের ভয়ে প্রতিহিংসায় উন্মত্ত হয়ে সরকার আমার দেশের ওপর হামলে পড়েছে। পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে প্রতারণার অভিযোগ। কারণ তিনি পদত্যাগী প্রকাশকের নামে পত্রিকাটি বের করেছেন। সরকার কেন নবনিযুক্ত প্রকাশকের নিযুক্তির বিষয়ে অবহিত হওয়ার তথ্য দিলো না সেটা জানার বিষয়। অথচ মাহমুদুর রহমান যথাসময়েই তা সরকারকে অবহিত করেছিলেন। আদালত এই মামলায় ইতোমধ্যেই তাকে জামিন দিয়েছেন। মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত আরো একটি মামলা দায়ের করেছে সরকার। তা হলো সরকারি কাজে বাধাদান। অর্থাৎ পুলিশ যখন তাকে গ্রেফতার করতে গিয়েছিল, সেটা সরকারি কাজ। তখন পুলিশকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এ মামলায় তিনি আটক আছেন। এই বাধাদানের জন্য আমার দেশ-এর সব সাংবাদিক-কর্মচারীর বিরুদ্ধে পুলিশ আরো একটি মামলা দায়ের করেছে। মজার মামলা! পুলিশ যখন সেখানে হাজির হয়, তখন আমার দেশের সাংবাদিক-কর্মচারীরা ছাড়াও সে অফিসে উপস্থিত ছিলেন শত শত রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবী মানুষ। আমার দেশের ডিক্লারেশন বাতিলে ক্ষুব্ধ ছিলেন তারা। অফিস প্রাঙ্গণে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। তবে কি সরকারি কাজে বাধা দেয়ার জন্য সরকার ১৫ কোটি মানুষের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করবে?
পরিস্থিতি সে রকমই দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, গণতন্ত্র বিকাশের স্বার্থে সংবাদপত্র দলনের এই নষ্ট পথ সরকারের পরিহার করা উচিত। আমরা অবিলম্বে আমার দেশের পুনঃপ্রকাশ ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। সে পথেই গণতন্ত্রের বিকাশ ও সরকারের স্থিতি।
লেখকঃ সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
(সুত্র, নয়া দিগন্ত, ০৫/০৬/২০১০)

No comments:

Post a Comment