Thursday 3 June 2010

দুদক এবার সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে


27/04/2010
জাহেদ চৌধুরী
দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) রাষ্ট্রপতির কাছে জবাবদিহি করা, মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি, সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তাদের জুনিয়র কর্মকর্তা দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ না করা, মিথ্যা অভিযোগ করলে অভিযোগকারীকে ৫ বছরের জেল-জরিমানার বিধানসহ দুদক আইনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া খসড়া আইনে সরকারের পক্ষ থেকে কমিশনের সচিব নিয়োগ করা, সরকারের সম্মতি ছাড়া কোনো সংস্থার সঙ্গে কমিশনের চুক্তি করতে না পারা, জাতীয় স্বার্থে করদাতাদের তথ্য গোপন রাখা, কমিশনের পাশাপাশি পুলিশের মাধ্যমে তদন্ত করা, যে কোন মামলার তদন্ত কাজ ৬০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা ইত্যাদি প্রস্তাবও করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুর্নীতি দমন কমিশন সংশোধন আইন-২০০৪-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদিত দুদক আইনের পরিবর্তন সাস্প্রতিক সময়ে সরকারের প্রচ্ছন্ন নিয়ন্ত্রণে থাকা ‘স্বাধীন’ দুর্নীতি দমন কমিশনকে এবার সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেবে বলে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন। প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সক্রিয় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) তাদের তাত্ক্ষণিক আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় অভিন্ন অভিমত দিয়েছে।
গতকাল আমার দেশ-এর কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় টিআইবি’র সাবেক সভাপতি, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান, টিআইবি’র বর্তমান চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক সাবেক উপদেষ্টা এএসএম শাহজাহান সরকারি সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রায় অভিন্ন অভিমতে বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির কাছে জবাবদিহি আর প্রধানমন্ত্রী কিংবা সরকারের কাছে জবাবদিহি একই কথা। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদককে সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে আগের দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মতো অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে। এই সিদ্ধান্ত সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের সম্পূর্ণ বিপরীত।
আর দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের কাছে গতরাতে টেলিফোনে এ ব্যাপারে আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি হতাশা ব্যক্ত করে কিছু মন্তব্য করেন। তবে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমার বক্তব্য হিসেবে আপনারা লিখতে পারেন। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তগুলো আমি পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখে আমার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাব। তবে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পর বিকালে ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, দেশ চালানোর দায়িত্ব জনগণ দুদককে দেয়নি। দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সরকার ও সংসদকে। সংসদ যেভাবে আইন প্রণয়ন করবে দুদক সে পরিধির মধ্য থেকে দায়িত্ব পালন করবে। তবে শেষ পর্যন্ত যা হবে তা সবার মঙ্গলের জন্যই হবে বলে আশা করি। দেশে দুর্নীতি বাড়ুক তা সরকার, সংসদ, জনগণ কেউই চায় না। দুর্নীতি উত্সাহিত হয় দুদক আইনে এমন কোনো সংশোধনী সংসদে পাস হবে বলে আমি এখনও বিশ্বাস করি না। তিনি বলেন, সরকার চাইলে দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। এজন্য আইন কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের কাছে টেলিফোনে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ের বাইরে এ নিয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।
এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, খসড়া আইনে দুর্নীতি দমন কমিশনে কেউ মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করলে তার বিরুদ্ধে ৫ বছরের জেল ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তিনি জানান, অভিযোগ তদন্তের স্বার্থে দুর্নীতি দমন কমিশন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও অধীন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সহায়তা চাইতে পারবে।
কমিশনকে তার কাজের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে জবাবদিহি করতে হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান। তবে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে কার্যকর ও জবাবদিহি করতে সরকার এ সংশোধনী এনেছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার স্বাধীন, কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক কমিশন প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জবাবদিহি করার বিধানসহ এর আগে গঠিত কেবিনেট কমিটির সুপারিশের আলোকেই মন্ত্রিসভায় দুদক আইনের সংশোধনী আনা হয়েছে। এর আগে কেবিনেট কমিটির সুপারিশকৃত সংশোধনীর ব্যাপারেই দুদক চেয়ারম্যান তার আপত্তির কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, দুদক এমনিতেই একটি দন্তহীন বাঘ। এখন এর নখগুলোও কেটে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আর সম্প্রতি আমার দেশ-এর সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাত্কারে সরকারি দলের নেতাদের দুর্নীতির ব্যাপারে তার মন্তব্য ছিল, ‘সরকারের কারও বিরুদ্ধে হুট করে কিছু করা ঠিক হবে না।’ ২০০৪ সালে দুদক আইনে জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেশকিছু সংশোধনী এনে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার সেগুলো পাস না করে আইনটি পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করে ওই কমিটি ১৯ দফা সুপারিশ করেছিল। যার ৯টিতেই দুদক আপত্তি জানিয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল রাষ্ট্রপতির কাছে জবাবদিহি করা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনার আগে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ।
সূত্র অনুযায়ী, গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুদক স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করবে আমরা চাই। এটি আরও শক্তিশালী ও কার্যকর হবে সেটাও আমরা চাই। তবে স্বাধীনতা মানে এই নয়, তারা ইচ্ছা-খুশিমত চলবে। তাদের একটি কন্ট্রোলিং অথরিটি থাকা উচিত। দুদক রাষ্ট্রপতির কাছে জবাবদিহি করতে চায় না, সংসদ, জনগণ কারও কাছে জবাবদিহি করবে না, তবে কি শুধু আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করবে—এমন মন্তব্যও মন্ত্রিসভায় করা হয়েছে। দুদক যে স্বাধীনতা চায় সেটা দেয়া হলে দেশের মধ্যে আরেক স্বাধীন দেশ হয়ে যাবে বলেও মন্ত্রিসভায় মন্তব্য করা হয়েছে বলে উপস্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে দুদকের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, জুনিয়র কর্মকর্তারা সিনিয়র কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারলে দুদকে মন্ত্রী, সচিব নিয়োগ দিতে হবে। নিয়োগকারী হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে দুদক তার প্রতিবেদন দাখিল করে থাকে। তবে আইনের মধ্যে এটাকে অন্তর্ভুক্ত করায় ভিন্ন অর্থ দাঁড়াবে। আইন ও বিচার ব্যবস্থার কাছে দুদকের এক ধরনের জবাবদিহিতা আছে। কারণ দুদক নিজে কোনো বিচার করে না। তদন্ত এবং প্রসিকিউটরের কাজ করে। এ অবস্থায় দুদকের জবাবদিহিতার প্রশ্ন কেন আসছে তা বোধগম্য নয়। মিথ্যা অভিযোগের ব্যাপারে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। যার ফলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে না। পত্রিকায়ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে খবর কমে যেতে পারে। কমিশনের শীর্ষ পর্যায় থেকে আরো বলা হয়েছে, দুর্নীতির বিশেষ করে সম্পদের হিসাব অনুসন্ধানে ব্যাংক এবং আয়কর বিভাগ আইনগত বাধা দেখিয়ে তথ্য দিতে চায় না। মানি লন্ডারিং আইনের মতো দুদক আইনেও অন্য আইনের ওপরে এর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
দুদক আইন সংশোধনে টিআইবি’র উদ্বেগ : দুর্নীতি দমন কমিশন আইন সংশোধনে মন্ত্রিপরিষদে গতকাল গৃহীত সিদ্ধান্তে তাত্ক্ষণিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এতে বলা হয়, সরকারের দুদক আইন সংশোধন কমিটির প্রস্তাবিত সুপারিশ অনুমোদিত হলে দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা খর্ব ও অকার্যকর হবে বলে মনে করে টিআইবি। তাছাড়া সরকার কর্তৃক গঠিত দুদক আইন সংশোধন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দুদককে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের কার্যাবলির জন্য দায়বদ্ধ রাখার যে বিধান সংযোজন করা হয়েছে তাতে দুদক রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করার সুযোগ হারাবে। কারণ রাষ্ট্রপতি শুধু প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। এর পরিবর্তে দুদকের দায়বদ্ধতা জাতীয় সংসদের একটি বিশেষ কমিটির ওপর ন্যস্ত হতে পারে যাতে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব রাজনৈতিক দলের সমসংখ্যক প্রতিনিধিত্ব থাকবে— বলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। টিআইবি জাতীয় সংসদের সম্মানিত সদস্যদের প্রতি দাবি জানিয়েছে যেন প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের আলোকে বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করে এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মহলের পরামর্শক্রমে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
টিআইবি বলেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের সম্ভাব্য দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের ক্ষেত্রে পূর্বঅনুমতি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা শুধু দুদকের কর্মক্ষমতা সংকুচিত করবে তা-ই নয়, বাস্তবিকপক্ষে দেশের সব নাগরিকের সমান অধিকারের যে সাংবিধানিক বিধান, তারও লঙ্ঘন হবে। কমিশনের সচিবের নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে অর্পিত হলে কমিশন প্রশাসনের প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে। একইসঙ্গে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অন্যতম সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ শাসন ব্যবস্থাসহ গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে এর স্বাধীনতা নিশ্চিত করে একে শক্তিশালী করার পক্ষে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা’ বিষয়ক দ্বিতীয় অগ্রাধিকারভিত্তিক অঙ্গীকারের যথার্থতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
জনগণের প্রত্যাশা একটি স্বাধীন ও কার্যকর দুদক। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে তাদের বক্তব্যে দুদকের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সরকারের সদিচ্ছা এবং জোরালো সমর্থন ছাড়া দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া এবং দুদককে কার্যকর করা কোনোমতেই সম্ভব নয়। সরকারের দুদক আইন সংশোধন কমিটির প্রস্তাবিত সুপারিশ যাচাই সাপেক্ষে সংসদ সদস্যরা এটি পাস করবেন বলে টিআইবির বিশ্বাস।
বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া : অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে জবাবদিহিতা মানে সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহিতা এবং দুদককে সরকারি অনুমতি নিয়ে মামলা করতে গেলে আর তাদের স্বাধীনতা থাকে না। অতীতের দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মতো তারাও এখন অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। জাতিসংঘের কনভেনশন অনুযায়ী দুর্নীতির তথ্যদাতাকে প্রটেকশন দেয়ার আইন সরকারের করা উচিত, সেটা না করে তাদের শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা তারা করছে। অভিযোগের সত্য-মিথ্যা যাচাই করার দায়িত্ব দুদকের, সেটা তারা করবে। সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দুদককে দুর্বল করবে। সরকারের কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ।
টিআইবি চেয়ারম্যান এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেছেন, সরকারি সিদ্ধান্তে কমিশন প্রায় অকার্যকর ও দুর্বল হয়ে পড়বে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি কিংবা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বিভিন্ন সময় এসেছে। সেগুলো তদন্ত করতে অনুমতি লাগবে। দুদক আর কাজ করতে পারবে না। সরকারের উচিত ছিল দুদকের যেসব আইনি বাধা রয়েছে সেগুলো দূর করে তাদের স্বাধীন ও শক্তিশালী হয়ে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করা। কিন্তু সেটা না করে তারা ঠিক উল্টোটি করেছে।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান বলেছেন, এটা হলে দুদকের স্বাধীনতা খর্ব হবে। দুদক আর আগের দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। এ প্রতিষ্ঠানটি সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এএসএম শাহজাহান বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা খর্ব হলে দেশের গণতন্ত্র ও সুশাসন হুমকির মধ্যে পড়বে। সরকারের উচিত হবে দুদকের ক্ষমতা খর্ব না করে একে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া এবং এর সমস্যাগুলো দূর করার উদ্যোগ নেয়া।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের কাছে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ও দুদককে তার কর্মকাণ্ডের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে জবাবদিহি করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।
নির্বাচনী অঙ্গীকারে যা ছিল : আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের ৫টি অগ্রাধিকারের ২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলেছিল : “২. দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা : দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষমতাধরদের বার্ষিক সম্পদ বিবরণ দিতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরের ঘুষ, দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনোপার্জিত আয়, ঋণখেলাপি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালোটাকা ও পেশীশক্তি প্রতিরোধ ও নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতি দফতরে গণঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নাগরিক সনদ উপস্থাপন করা হবে। সরকারি কর্মকাণ্ডের ব্যাপকভাবে কম্পিউটারায়ন করে দুর্নীতির পথ বন্ধ করা হবে।” এ বিষয়ে তাদের ইশতেহারের ভিশন অংশের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে : “দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন : স্বাধীন ও শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশনসহ দুর্নীতি দমনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে আরো কার্যকর করে গড়ে তোলা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। নাগরিক অধিকার সনদ রচনা, তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা এবং সরকারি দলিল দস্তাবেজ কম্পিউটারায়ন এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রায়ন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে দুর্নীতির পথগুলো সম্ভাব্য সকল উপায়ে বন্ধ করা হবে।”
কিন্তু গতকাল মন্ত্রিসভায় যেভাবে দুদক আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে তাতে তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকারের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্রই ফুটে উঠেছে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/27/29362

No comments:

Post a Comment