Saturday 24 April 2010

কেন্দ্র দখল করে প্রহসনের নির্বাচন হলো যেভাবে | বিএনপি এজেন্টদের বের করে দিয়ে ফাঁকা কেন্দ্রে বাক্স ভর্তি : আ’লীগের হামলায় আহত দুই শতাধিক

কেন্দ্র দখল করে প্রহসনের নির্বাচন হলো যেভাবে



সাইফ বাবলু, লালমোহন
সরকার ও ইসির পক্ষ থেকে ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও ভোটগ্রহণ শুরুর আগ থেকেই লালমোহন ও তজুমদ্দিনের ৮৬ কেন্দ্র দখলের মহোত্সবে মেতে উঠে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে সকাল ৮ থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় শেষ হওয়ার কথা; কিন্তু সরকার সমর্থকরা সকাল ৭টা থেকেই লালমোহন ও তজুমদ্দিনের অধিকাংশ কেন্দ্র দখল করে নেয়। কেন্দ্র দখলের পর আওয়ামী ক্যাডাররা বিএনপির নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দেয়। এ সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। অনেক কেন্দ্র দখল করে প্রিসাইডিং অফিসারের সামনে সাধারণ ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করেন আওয়ামী লীগ কর্মীরা। ফলে অনেক ভোটার তাদের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেননি।
গতকাল প্রথমে দখল করা হয় লালমোহন পৌরসভার ৩টি কেন্দ্র। লালমোহন বালক বিদ্যালয়, পাবলিক লাইব্রেরি কেন্দ্র, ওয়েস্টার্নপাড়া মাদ্রাসা কেন্দ্র। এ সময় বিএনপি এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। লালমোহনের ফরাজগঞ্জ, পশ্চিমচর উমেদ, রমাগঞ্জ, লর্ডহার্ডিঞ্জ, দলীগৌরনগর, চরভুতা লালমোহন, বদরপুর কালমা ইউনিয়নের মোট ৫৬ কেন্দ্র ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই দখল করে নেয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। দলীগৌরনগর ইউনিয়নের চতলা বাজার কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে কেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এ সময় বিএনপির এজেন্টদের পিটিয়ে বের করে দেয়া হয়। ওই ইউনিয়নে বিএনপি প্রধান এজেন্ট ফরহাদ মিয়া জানান, ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আওয়ামী লীগ কর্মীরা বিএনপির এজেন্টদের কাছ থেকে ভোটার তালিকা কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। এ সময় এজেন্ট হওয়ার কাগজও কেড়ে নিয়ে মারধর করে তাদের বের করে দেয়া হয়। এ সময় বিএনপির এজেন্ট ফরহাদ একটি কক্ষে অবরুদ্ধ অবস্থায় পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে পাননি। অবরুদ্ধ অবস্থায় তিনি পালিয়ে আসেন। ফরাশগঞ্জ ইউনিয়নের আশ্রাফিয়া কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একেএম নজরুল ইসলাম প্রবেশ করার পরপরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কেন্দ্রের পরিবেশ। তিনি বের হয়ে যাওয়ার পরপরই আওয়ামী ক্যাডাররা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে বেশ কয়েকজনকে আহত করে। এ সময় এজেন্টদের পিটিয়ে বের করে দিয়ে দখল করে নেয় ভোটকেন্দ্র। পরে ইউনিয়নের সব কেন্দ্র দখল করে নিজেদের ইচ্ছামতো ভোট দেয় আওয়ামী ক্যাডাররা। রমাগঞ্জ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা তোফায়েল আহমেদ যাওয়ার পরপরই র্যাবের উপস্থিতিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী ক্যাডাররা। এ সময় বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের একটি কেন্দ্র ছাড়া বাকি সব কেন্দ্র দখল করে নিজেদের ইচ্ছামতো ভোট দেয় আওয়ামী লীগ। এভাবে লালমোহন ও তজুমদ্দিনের ৮৬ কেন্দ্র ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের আসতে না দিয়ে দিনব্যাপী নিজেরা ভোট পরিচালনা করে। প্রিসাইডিং অফিসারের সামনে আওয়ামী লীগ কর্মীরা সরাসরি বুথের মধ্যে অবস্থান করে ভোট নৌকায় দিতে ভোটারদের বাধ্য করে। তজুমদ্দিনেও একইভাবে কেন্দ্র দখলে নিয়ে ভোট দেয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভূমিকায় প্রিজাইডিং অফিসার : ভোলা-৩ আসনের নির্বাচনে নিয়োগ করা অফিসাররা অনেক কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভূমিকা পালন করেছেন। লালমোহন পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডে মধ্য পেশকার হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের অফিসারের দায়িত্বে থাকা ভোলা সদর উপজেলার শিক্ষা অফিসার হারুন অর রশিদ নিজেই নৌকা প্রতীকে সিল মেরে বাক্সে ফেলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত ভোটার আরিফ অভিযোগ করেন, অফিসার নিজেই ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারেন। এছাড়া মহিলা কলেজ কেন্দ্রে অফিসারের দায়িত্বে থাকা পটুয়াখালী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের উপস্থিতিতে বুথের মধ্যে অবৈধভাবে প্রবেশ করে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। ওই কেন্দ্রে অওয়ামী লীগ নেতা তুহিন পঞ্চায়েতের স্ত্রী রিনা বেগম তার সামনে এক ভোটারকে নৌকায় ভোট দিতে বলেন। কিন্তু ওই ভোটার এর প্রতিবাদ করেন। যদিও পরে ওই কেন্দ্রর ভোট বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। এরকম চিত্র লালমোহন ও তজুমদ্দিনের বেশিরভাগ কেন্দ্রে ঘটেছে বলে বিএনপি এজেন্টরা অভিযোগ করেছেন।
সাংবাদিক পরিচয়ে আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের অবাধ বিচরণ : ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে সাংবাদিক পরিচয়ের স্টিকার ব্যবহার করে লালমোহন ও তজুমদ্দিনে শতাধিক আওয়ামী লীগ ক্যাডার অবাধ বিচরণ করে। ঢাকাসহ বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এসব ক্যাডার সাংবাদিক পরিচয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে মহড়া দেয়। যেসব কেন্দ্রে বিএনপির ভোটারদের উপস্থিতি বেশি সেসব কেন্দ্রে ওই সাংবাদিক পরিচয়ধারী তাদের সহযোগীদের পাঠিয়ে দিয়ে ভোটারদের পিটিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দিত। এসব ক্যাডার সাংবাদিক স্টিকার ব্যবহার করা গাড়িতেও ঘুরে বেড়ায়।
অস্ত্র নিয়ে ভোটারদের প্রকাশ্যে হুমকি : ভোটগ্রহণ শুরুর পরপরই লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের ৩০-৩৫ বহিরাগত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে নিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দেয়া শুরু করে বলে বিএনপির স্থানীয় নেতারা অভিযোগ করেন। সকাল ১১টায় সন্ত্রাসীরা বিএনপি-সমর্থিত ভোটারদের অস্ত্র নিয়ে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দিলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ভোটাররা। এসময় পুলিশ ও র্যাবের সহযোগিতা চাওয়া হলেও পাওয়া যায়নি। যেসব ইউনিয়নে বিএনপির ভোটের সংখ্যা বেশি ছিল সেসব ইউনিয়নে এসব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ঘুরে বেড়ালেও এদের আটক করেনি পুলিশ।
ভোট দেয়ার অপরাধে আঙুল কেটে নেয়া হলো : ভোট দেয়ার অপরাধে আঙুল কেটে নেয়া হলো নুরুল ইসলাম নামে এক ভোটারের। নুরুল ইসলামের অপরাধ, ভোট দিতে আওয়ামী লীগ ক্যাডাদের নিষেধ অমান্য করে তিনি ভোট দিয়েছেন। লোমহর্ষক বর্বরোচিত এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে নির্বাচনী এলাকা লালমোহনের পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের ২নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। আঙুল হারিয়ে নুরুল ইসলামের অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক। তাকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
লালমোহন পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের ইলিশা গ্রামের দরিদ্র কালু বেপারীর ছেলে বিএনপি সমর্থক নুরুল ইসলাম। অভাবের তাড়নায় কয়েক বছর আগে বিদেশে পাড়ি দেন তিনি। দেশে নির্বাচন চলছে। ভোট দেয়ার জন্য বিদেশ থেকে চলে আসেন প্রবাসী নুরুল ইসলাম। আগে থেকেই বিএনপিকে ভালোবাসতেন তিনি। বিএনপি সমর্থক হওয়ার কারণে তাকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে নিষেধ করে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা। কেন্দ্রের মধ্যে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা নুরুল ইসলামকে ফলো করে। এসময় আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, কিরে বেটা, তোকে তো বলেছিলাম তোর ভোট দেয়ার দরকার নেই। ঠিক আছে ভোট যখন দিয়েছিস, এখন মর। এভাবে বলার পর তাকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। প্রকাশ্যে হাতের ৩টি আঙুলে কোপ দিলে বাঁ হাতের শাহাদত অঙুল সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার। আরও ২টি আঙুল বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো। পুলিশের সামনেই তার হাতের আঙুল কেটে নেয় ক্যাডাররা।
থমথমে অবস্থায় লালমোহন ও তজুমদ্দিন : ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর নির্বাচনী এলকাজুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিএনপিসহ সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। অনেক ভোটার ও বিএনপির নেতাকর্মী এলাকা ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন। গতকাল বিকালে র্যাবের লাঠিচার্জ শুরু হলে শহরের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। শহরের রাস্তায় সাধারণ মানুষের ওপর এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ শুরু হলে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় মানুষ চারদিকে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। একপর্যায়ে বেশকিছু পথচারী আহত হয়। ভয়ঙ্কর এ পরিবেশ দেখে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা সংবাদকর্মীরা নিবাচর্নী এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/25/29077

----------------------------------------------------------------------
ভোলায় নির্বাচনী তামাশা : শাওনকে বিজয়ী ঘোষণা : বিএনপি এজেন্টদের বের করে দিয়ে ফাঁকা কেন্দ্রে বাক্স ভর্তি : আ’লীগের হামলায় আহত দুই শতাধিক



জি. এম বাবর আলী/কাজী জেবেল, ভোলা থেকে
ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া ও বেশিরভাগ কেন্দ্র থেকে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের জোরপূর্বক বের করে কেন্দ্র দখলে নিয়ে একতরফা জাল ভোট প্রদান, হাঙ্গামা ও মারধরের মধ্য দিয়ে গতকাল ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহায়তায় তামাশার এই উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনকে বিজয়ী করা হয়েছে। ষোল মাস আগে আওয়ামী লীগের ব্যাপক বিজয়ের সাধারণ নির্বাচনে এই আসনে ১৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে মেজর হাফিজ সরকারদলীয় প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু এবার স্থগিত ৯টি কেন্দ্রের মোট ৩১ হাজার ২৭৭ ভোট বাদ দিয়েই ৫০ হাজার ৭১৫ ভোটের ব্যবধানে হাফিজকে পরাজিত দেখানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে ইসির ‘এসিড টেস্ট’ খ্যাত এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পুরো সময় বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়া হয় ভোটার ও বিএনপি নেতাকর্মীদের। চরম অনিয়ম ও গোলযোগের কারণে ৯টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে ইসি। এসব ঘটনায় দু’শতাধিক বিএনপি কর্মী ও সাধারণ ভোটার আহত হয়েছেন। মেজর (অব.) হাফিজের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লাহ আমানের ওপর হামলা করে স্থানীয় যুবলীগ নেতাকর্মীরা। তারা পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে লাঞ্ছিত করে। এছাড়া নির্বাচনের আগের রাতে পুরো নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের ভোটারদের কেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দেয়া হয়।
বিএনপি ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দুই নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছে। নতুন নির্বাচনেরও দাবি জানিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ। বিএনপির পক্ষ থেকে ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবেও নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশে করেছে বিএনপি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস বিদ্যুত্ পানি সঙ্কট, আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে ষোল মাসে সরকারের জনপ্রিয়তা যখন নিম্নমুখী তখন ভোলার উপনির্বাচনের এই ফল অবিশ্বাস্য এবং অগ্রহণযোগ্য বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে ফলাফল মেনে নেয়ার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কোনো আন্দোলনের চেষ্টা হলে আওয়ামী লীগও বসে থাকবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এর আগে বেলা ২টার দিকে নির্বাচন কমিশন ৯টি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করলেও বেসরকারিভাবে দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ৫০ হাজার ৭১৫, এই ৯ কেন্দ্রে ৩১ হাজার ভোটের ব্যবধান হওয়ায় কোনো কেন্দ্রেই আর পুনর্নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে দাবি করে ফলাফল মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল সরেজমিন লালমোহন ও তজুমদ্দিন ঘুরে দেখা যায়, দুই উপজেলার ৮৬টি কেন্দ্রে সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শেষ হয় বিকাল ৪টায় এবং বিএনপির এজেন্টদের অনুপস্থিতিতেই ভোট গণনা করা হয়। সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও দুপুরের পরেই অনেক ভোটকেন্দ্র ফাঁকা হয়ে যায়। দুপুর ১২টার পর ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। বেলা আড়াইটার পর অনেক কেন্দ্র ভোটারশূন্য হয়ে পড়ে। স্থানীয় জনগণ ও সাধারণ ভোটাররা জানান, ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথগুলোর মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয়। তারা নারী ও বিএনপি সমর্থিত পুরুষ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধার সৃষ্টি করে। ভোটের আগের রাতে গ্রামে গ্রামে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়েছে সরকারি দলের ক্যাডাররা। কোথাও কোথাও মাইকিং করেও ধানের শীষে ভোট না দেয়ার জন্য হুমকি দেয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে ভোটার আইডি কার্ড কেড়ে নেয়া হয়েছে। অনুসন্ধানে এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। ভোটগ্রহণের কিছুক্ষণ পর হতে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে দুপুরেই সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, সকাল ১১টার মধ্যে দুই উপজেলার ৮৬টি কেন্দ্রের ৩৬টি থেকে তাদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়েছে সরকারি দলের ক্যাডাররা। তাদের অনেককে মারধর করা হয়। এছাড়া দুপুরের পর কোনো কেন্দ্রেই তাদের কোনো এজেন্ট থাকতে দেয়া হয়নি। এ সুযোগে বেশকিছু কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্টের সহযোগিতায় নেতাকর্মীরা ব্যাপক জালভোট দিয়েছে। পুলিশ ও র্যাব এ সময় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলেও অভিযোগ তাদের।
সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বদরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চটরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, ১০নং পশ্চিম চরটেটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মধ্য বদরপুর সেনের হাওলা কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, কোথাও বিএনপির এজেন্ট ছিল না। এ ইউনিয়নের অপর পাঁচটি কেন্দ্রের চারটিতেও কোনো এজেন্ট ছিল না বলে জানা গেছে। উল্লিখিত তিনটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসাররা জানান, বিএনপির কোনো এজেন্ট দায়িত্ব পালন করতে আসেনি। তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের অব্যাহত হুমকি ও হামলার কারণে তারা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেননি। লালমোহন উপজেলা সদরে অবস্থিত পাবলিক লাইব্রেরি সংলগ্ন কেন্দ্র থেকে বিএনপি এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। সাতানী কেন্দ্রের বিএনপির এজেন্ট পারভীন আক্তার বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদের বের করে দিয়ে ব্যালট পেপারে নৌকা মার্কায় ইচ্ছেমতো সিল মেরেছে। একইভাবে কিশোরগঞ্জ, আশরাফিয়া ও ডা. আজহার স্কুলসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র থেকেও পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। এছাড়া লালমোহন ও তজুমদ্দিনের একাধিক কেন্দ্র ঘুরে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের পাওয়া যায়নি।
নয়টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত : ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি ও সরকারদলীয় পোলিং এজেন্ট এবং নেতাদের তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে দুপুরের পর লালমোহনের ৯টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। কেন্দ্রগুলো হলো ডা. আজহার উদ্দিন রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভেদুরিয়া সেরাজিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (ধলী গৌরনগর), সাতানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সংলগ্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ফরাশগঞ্জ), ডা. আজহার উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (ফরাশগঞ্জ), উত্তর অন্নদা প্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (লর্ড হার্ডিঞ্জ), লর্ড হার্ডিঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (লর্ড হার্ডিঞ্জ), লর্ড হার্ডিঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসা ও সৈয়দাবাদ ফোরকানিয়া মাদ্রাসা।
পথে পথে বাধা ও হামলা : ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত ভোটাররা যাতে ধানের শীষে ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে না পারে সেজন্য প্রস্তুতির কমতি ছিল না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথে পথে বসানো হয় ব্যারিকেড। এছাড়া ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে আওয়ামী লীগ কর্মী ও ক্যাডাররা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়। সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ ভোটকেন্দ্র থেকে বিপুল সংখ্যক ভোটারকে তাড়িয়ে দেয় শাওনের কর্মীরা। এ সময় তাদের হামলায় মনছুর, মোতালেব, নুর নবী, শাহাবুদ্দিন, কানু ও লিটনসহ ৮-১০ জন আহত হন। লালমোহন পৌরসভার দালালবাড়ি ও গাজী বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার মোড়ে আওয়ামী লীগের ৮/১০ জনের একটি দল মহিলাদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়। তাদের বাধার মুখে অনেক মহিলাকে ভোট না দিয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়। তবে নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ভাড়া করা রিকশায় যেসব নারী ভোট দিতে গেছেন তাদের বাধা দেয়নি তারা। আওয়ামী লীগ কর্মীদের বাধায় ভোট দিতে না পারা ঝরনা বেগম জানান, তারা লালমোহন কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সন্ত্রাসীরা ভোট দিতে না দেয়ায় ফিরে যাচ্ছি। ছুটিতে থাকা ওমান প্রবাসী নুরুল ইসলাম সকাল ১০টায় পশ্চিম চরউমেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে আওয়ামী লীগ কর্মীরা তার হাতের দুটি আঙ্গুল কেটে নেয়। সকাল সাড়ে ৯টায় আশরাফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে মোঃ ফারুক, আব্বাস উদ্দিন, আলী আজগর, আবুল কাশেম, জাহাঙ্গীর, খোকনসহ ২০ জনকে আহত করা হয়। ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মোঃ ফারুক অভিযোগ করেন, এ সময় বিএনপি সমর্থক পাঁচ শতাধিক ভোটারকে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। অন্নদা প্রসাদ স্কুল কেন্দ্রে বিএনপি কর্মী সাদেকুর রহমান, নজরুল ইসলাম, নীরব, জামান, তৈয়ব, রহিমা, ইউসুফ ও সাইদুল হককে পিটিয়ে আহত করা হয়। লালমোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবদুল হাই হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, সন্ত্রাসীরা পথে পথে ব্যারিকেড দিয়ে ভোটারদের বাধা দিয়েছে। লালমোহন ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বিএনপি’র এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। এসব বিষয় পুলিশকে জানালেও তারা অ্যাকশনে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে। চরভূতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান টিটো জানান, তার ইউনিয়ন পরিষদের ৬টি কেন্দ্র থেকেই বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে পথে পথে বাধা দেয়া হয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসারকে এ ঘটনাগুলো জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। এছাড়াও লালমোহন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ফিরোজ, হাজীগঞ্জে ফারুক, দক্ষিণ কালমায় আমির হোসেন, উত্তর ফুলবাগিবা বাজারে লিটু, গজারিয়ায় কামাল হোসেন, পাঙ্গাসিয়ায় ইকবালসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়।
তজুমদ্দিন প্রতিনিধি জানান, ভোলা-৩ উপনির্বাচন এলাকা তজুমদ্দিনের ৩০টি কেন্দ্রের সকাল ৮টায় শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছিল। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আ’লীগ কর্মীরা বিএনপি সমর্থকদের পথে পথে বাধা সৃষ্টি করে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকে। প্রথমদিকে পুলিশ ও র্যাবকে বিষয়গুলো অবহিত করলে তারা স্ট্রাইকিং ফোর্সের টহলের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। ভোটকেন্দ্রে আসার পথে বিএনপি সমর্থক মতিন, রহিমা, আঃ সালামকে সকাল ৭টায় আ’লীগ কর্মীরা বাধা দেয়। তারা চাঁদপুর ইউনিয়নের মধ্য চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেয়ার উদ্দেশে কেন্দ্রে আসছিল। চাঁদপুর ইউনিয়নের কাজীকান্দি গ্রামের জামাল, মনির, মিজান কালুসহ বিএনপি সমর্থকদের সকাল ৮টায় বাধা দেয় আ’লীগ কর্মীরা। ৮টার দিকে ঘোষের হাওলা গ্রামে বিএনপি সমর্থক আলমগীর, ইয়াছিন, মফিজকে মারপিট করে তারা। সকাল সাড়ে ৮টায় শম্ভুপুর ইউনিয়নের নতুন হাট বাজারে বিএনপি কর্মী মোস্তাফিজকে মারপিট করে দুটি রিকশা ভাংচুর করে আ’লীগ কর্মীরা। এসব ঘটনায় গোটা তজুমদ্দিনে বিএনপি সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভোটগ্রহণকালে প্রশাসনের তরফ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ায় বিএনপি সমর্থিত ভোটাররা কেন্দ্র থেকে চলে যেতে শুরু করে। ফলে বেলা ১২টা বাজার আগেই উপজেলার ভোটকেন্দ্রগুলো ভোটার শূন্য হয়ে পড়ে। এদিকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর ফলে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টরা ১৫/২০টি কেন্দ্র ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, তজুমদ্দিনের কোনো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়নি।
এদিকে উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর কাওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রে আ’লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ৬ জন আহত হয়। ওই কেন্দ্রে বেলা ১১টায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান মাকসুদুর রহমান ভোট দিতে আসেন। এ সময় আ’লীগ কর্মী নূরনবী তাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় আ’লীগ কর্মী রিপন ও রুবেল অপর আ’লীগ কর্মী নূরনবীকে প্রতিহত করার চেষ্টা করলে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে নূরনবী, বশার মাঝি, নাছির, রিপন, রুবেল নীরবসহ ৬ জন আহত হয়। স্থানীয় সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এদিকে ভোটের আগের রাতে আ’লীগ কর্মীরা রাতভর লাঠিসোটা নিয়ে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে বিএনপির প্রায় ১৫ জন কর্মীকে মারপিট করে। বেলা ১২টার মধ্যেই উপজেলার ভোটকেন্দ্রগুলো ভোটার শূন্য হয়ে পড়ে। এদিকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর ফলে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টরা ১৫/২০টি কেন্দ্র ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, তজুমদ্দিনের কোনো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়নি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভোট গননা চলছে।
এদিকে ভোটের আগের রাতে আ’লীগ কর্মীরা রাতভর লাঠিসোটা নিয়ে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। বিএনপির প্রায় ১৫ জন কর্মীকে মারপিট করে। স্থানীয় সাংবাদিক এমএ হান্নান শিবপুর খাসেরহাট বাজারে গেলে আ’লীগ কর্মী মোবারক, ভুট্টো, জামালসহ ৫/৭ জন তার হামলা চালায়। তাকে আহত অবস্থায় ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভোলার ভোটকেন্দ্র দুপুরেই ফাঁকা : ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলো বেলা ১২টার মধ্যেই ফাঁকা হয়ে যায়। দুপুর ১২টার পর থেকে ভোটারদের ভিড় দেখা যায়নি। বেলা আড়াইটার পর কোনো কোনো কেন্দ্র ভোটারশূন্য হয়ে পড়ে। নির্বাচনী এলাকার লালমোহন-তজুমদ্দিনের ৮৬টি কেন্দ্রের ৫৭৪টি বুথে সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। সকালে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের কিছুটা ভিড় ছিল। কিন্তু বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ভোটার সংখ্যা কমতে থাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভয়ভীতির কারণে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে আসার সাহস করেননি।
লালমোহন-তজুমদ্দিনে ভোটারসংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯২৬। ভোট গ্রহণে সেখানে প্রতি কেন্দ্রে একজন প্রিজাইডিং অফিসার ও ৩৪৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করেন। প্রতি কেন্দ্রে র্যাব-পুলিশের কঠোর নিরাপত্তাবলয়ে চলে ভোট গ্রহণ। কয়েকটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কমিশন বসিয়েছে সিসি ক্যামেরা। প্রতি কেন্দ্রে ১৮ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকছে। আর ঝুঁকিপূর্ণ ৫২টি কেন্দ্রে রয়েছে ২৪ জন করে। ঝুঁকিপূর্ণ প্রতি কেন্দ্রেই একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। র্যাব-পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত স্ট্রাইকিং ফোর্সে ২১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন।
ভোলায় ভোটকেন্দ্রে আমানের ওপর যুবলীগের হামলা : উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়কারী আমানউল্লাহ আমানের ওপর হামলা চালায় যুবলীগ ক্যাডাররা। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তজুমদ্দিন উপজেলার আড়ালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে আমান তজুমদ্দিনের ৭২নং আড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। কেন্দ্রে ঢোকার পথে যুবলীগ নেতা শহীদুল্লাহ কিরণের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ আমানের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ গুলি করার প্রস্তুতি নিলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে হামলাকারীরা।
এরপর তাত্ক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে আমানউল্লাহ আমান বলেন, আড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রবেশের সময় যুবলীগ কর্মীরা তাকে হত্যার চেষ্টায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশ এগিয়ে এলে তিনি প্রাণে রক্ষা পান। পুলিশ-র্যাব হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এদিকে তজুমদ্দিন থানার ওসি খান মোঃ এরফান সাংবাদিকদের জানান, আড়ালিয়া কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। তবে পুলিশ সাহসী ভূমিকা পালন করে। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এতে বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আমান অভিযোগ করেন, নির্বাচনী এলাকায় ৪০টি কেন্দ্র দখল করেছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া বিএনপির ২০০ নেতাকর্মীকে মারধর করেছে। ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাল

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/25/29075

No comments:

Post a Comment