Sunday 18 April 2010

খুলনার জনসমুদ্রে খালেদা জিয়া



ব্যর্থ রাষ্ট্র করার আগেই সরকারকে বিদায় দিতে হবে : আ’লীগের হাতে দেশ ও মা-বোনের সম্ভ্রম নিরাপদ নয় : পিলখানা ট্র্যাজেডির জন্য প্রধানমন্ত্রী, মইন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একদিন কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে : ভোলার নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সরকার ও ইসির বিরুদ্ধে আন্দোলন

আতিয়ার পারভেজ/এহতেশামুল হক শাওন, খুলনা থেকে
বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে জনগণের কাছে দেয়া কোনো ওয়াদা পূরণ করতে পারেনি। তারা কেবল বিদেশিদের কাছে দেয়া ওয়াদা পূরণে ব্যস্ত রয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতকে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ট্রানজিটের নামে তাদের করিডোর দিচ্ছে। টিপাইমুখ বাঁধ দিতে বাংলাদেশেরে আপত্তি নেই বলে দিয়ে এসেছে। সীমান্তে প্রতিনিয়িত মানুষ হত্যা করা হলেও এর প্রতিবাদ পর্যন্ত করছে না। অন্যের বাজার সৃষ্টি করে দেশকে পরনির্ভরশীল করছে। দেশে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না। প্রতিদিন মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে; কিন্তু সরকার নীরব। সর্বত্র ছাত্রলীগ, যুবলীগের টেন্ডারবাজি ও দখলের উত্সব চলছে। বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। একদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর দখল করা হচ্ছে। অন্যদিকে দাড়ি-টুপি দেখলেই জঙ্গি বলা হচ্ছে। সত্য কথা লিখলে, বললেই সাংবাদিকদের হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। মা-বোনের ইজ্জত-সম্ভ্রম কিছুই তাদের দলীয় ক্যাডারদের হাতে নিরাপদ নয়। দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালের বাইরে। বিদুত্-গ্যাস-পানি নেই। মানুষ এ অবস্থার অবসান চায়। এদের হাত থেকে মুক্তি চায়। তিনি বলেন, পিলখানা ট্র্যাজেডির মাধ্যমে সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে দুর্বল করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসারদের চাকরি থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা ভেবেছে দেশকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেবে। তাদের সে স্বপ্ন পূরণ করতে দেয়া হবে না। দেশকে ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্র করার আগেই এ সরকারকে বিদায় দিতে হবে। এজন্য গণঅন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আজকে দেশ টিকে থাকবে কি থাকবে না, তাঁবেদার হবে না স্বাধীন থাকবে, তা সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব আপনাদের। যারা যুদ্ধ করেনি, তারা তাঁবেদার থাকতে চায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, রক্ত দিয়ে হলেও বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা রক্ষা করবে।
বিএনপি আয়োজিত বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গতকাল বিকালে খুলনার বাবরি চত্বরের জনসমুদ্রে খালেদা জিয়া প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টার বক্তৃতায় তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নয়, মইনুদ্দিন ও ফখরুদ্দীনের সঙ্গে আঁতাত করেই মহজোট ক্ষমতায় এসেছে। অবৈধ সরকারের আদলেই তারা দেশ চালাচ্ছে। দেড় বছরে আমরা কোনো হরতাল-ধর্মঘট দেইনি। শুরু থেকেই আমরা সহযোগিতা করার কথা বলে আসছি। কিন্তু সরকার সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মানে দুর্ভিক্ষ। চুয়াত্তরে তারা এদেশে ভাত-কাপড়ের দুর্ভিক্ষ এনেছিল। এবার পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। স্বয়ং অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে এখন দুর্ভিক্ষ চলছে। মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ মন্ত্রী-এমপিরাই তুলছেন। দুর্ভিক্ষ ও লুটপাটের দায় নিয়ে এ সরকারকে বিদায় নিতে হবে। দ্রব্যমূল্য কমানো ও টেন্ডারবাজি বন্ধের দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এসব বিষয়ে জনগণ আপনাদের ওপর অতিষ্ঠ। জনগণের সমস্যা সমাধান করুন, নইলে গদি ছেড়ে দিন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, হামলা-নির্যাতন, টেন্ডারবাজি, ঘুষ, দুর্নীতি তারা করছে আর মামলা দিচ্ছে আমাদের নেতাকর্মীদের নামে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন শেখাচ্ছেন। আমরা শিখছি। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দায়ের করার কথা উল্লেখ করে সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যেসব দুর্নীতি, লুটপাট, অত্যাচার করছেন সবকিছুর তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে আপনাদের নামেও মামলা হবে। তখন আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হবে।
পিলখানার ঘটনায় সরকারি দলের সম্পৃক্ততা ও হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তত্কালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে ভবিষ্যতে তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ঘোষণাও দেন বিরোধীদলীয় নেত্রী। ভোলা-৩ আসনের নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশন মিলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী প্রার্থীকে জয়ী করার অপচেষ্টা করছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করুন। অন্যথায় ভোলা থেকেই কঠোর আন্দোলন শুরু করা হবে। নির্বাচন কমিশনকে আর ছেড়ে দেয়া হবে না বলে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, আমরা এতদিন আন্দোলন করিনি। গত ২৯ মার্চ চট্টগ্রামের জনগণের কষ্টের কথা শুনেছি। আজ খুলনার জনগণের সমস্যা জানলাম। অন্য শহরগুলোতেও যাব। সরকারকে জনগণের চাহিদা পূরণের দাবি জানাব। সরকার মনোযোগী না হলে জনগণকে নিয়ে কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।
খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার গত দেড় বছরে জনগণের কাছে দেয়া একটি ওয়াদাও পূরণ করতে পারেনি। নির্বাচনের আগে তারা বলেছিল ১০ টাকা কেজি চাল, বিনামূল্যে সার ও ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। এখন তারা তাদের ওয়াদার কথা অস্বীকার করছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মানেই দুর্ভিক্ষ। এরা লুটেরা। অতীতে তাদের নেতাই বলেছিলেন, সবাই পায় সোনার খনি, আমি পেলাম চোরের খনি। এদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। বর্তমানে এক নম্বর মন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই লুটপাটে ব্যস্ত।
সাংবাদিক নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার সাংবাদিক নির্যাতনের মাধ্যমে তাদের অপকর্ম ঢেকে রাখতে চায়। এজন্য তারা দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত মাহমুদ, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবিরসহ সারাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা-মামলা চালাচ্ছে।
খুলনা সমাবেশে যোগ দিতে আসার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে আগামীকাল শোক দিবস ও গায়েবানা জানাজা পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় সমাবেশ থেকে।
মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে মহসমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ড. আবদুল মইন খান ও বেগম সারোয়ারী রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বেগম রাজিয়া ফয়েজ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম নূরুল ইসলাম দাদু, অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম, শামসুজ্জামান দুদু, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুক, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, শরিফ শাহ কামাল তাজ, মুক্তিযোদ্ধা দলের অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কবির মুরাদ, আমজাদ হোসেন, বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, সাবিরুল ইসলাম সাবু, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মোজাম্মেল হোসেন, অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম, কেএম ফরিদী, আজিজুল হাসান দুলু, অ্যাডভোকেট বজলার রহমান, মুজিবর রহমান, শেখ সাদী, শামীম কবির প্রমুখ।
সমাবেশে ভিডিও প্রজেক্টরের মাধ্যমে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ১০ টাকা কেজি চাল, বিনামূল্যে সার ও ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার ওয়াদার বিষয়ে দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভার ভাষণ উপস্থিত মানুষকে দেখানো ও শোনানো হয়।
এর আগে দুপুরে বেগম জিয়া খুলনা পৌঁছেন। তিনি খুলনা সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সমাবেশ স্থলে যান। এর আগে তিনি মাগুরা সার্কিট হাউসে যাত্রাবিরতি করেন। সেখানে বেগম জিয়াকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এদিকে খুলনার শিববাড়িতে আয়োজিত বিএনপির মহাসমাবেশে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মী-সমর্থকদের গাড়িবহরে হামলা, ভাংচুর ও বাধা প্রদান করা হয়েছে।
এর আগে সকাল ৮টায় বিরোধীদলীয় নেত্রীর গাড়িবহর ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ জাহাঙ্গীর গেট থেকে খুলনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। খুলনা যাওয়ার পথে মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাগুরা ও যশোরের বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ রাস্তার দুই পাশে সমাবেত হয়ে বেগম জিয়াকে নানা স্লোগানের মাধ্যমে স্বাগত জানান। রাস্তার দুই পাশে নির্মাণ করা হয় কয়েকশ’ তোরণ।

মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গোটা খুলনা নগরী মিছিলের শহরে পরিণত হয়। খুলনা বিভাগের জেলাগুলো থেকে লক্ষাধিক মানুষ শিববাড়ি বাবরি চত্বরে সমাবেশ স্থলে জড়ো হয়। তারা এ সময় ‘গ্যাস নাই, পানি নাই, বিদ্যুত্ নাই এ সরকারের দরকার নাই, এই মুহূর্তে দরকার, খালেদা জিয়ার সরকার, লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাইসহ নানা ধরনের স্লোগান দেয়।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মইনকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে : বিডিআরের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিলে এত দক্ষ অফিসার মারা যেত না উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলেন, এটা শুধু আমার কথা নয়। এখানে তাদের শরিক একজন আছেন। জেনারেল এরশাদ। তিনিও বলেছেন, তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নিলে এদের বাঁচানো যেত। বিডিআর প্রধান সেদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানকে ফোন করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাঁচানোর অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ৪৬ ব্রিগেড পিলখানার সামনে গিয়েছিল, কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেয়ার অনুমতি দেয়া হযনি। এই যে ৫৭ অফিসার হারালাম, এটা কম কথা নয়। বোনদের আমরা কি জবাব দেব? সাহায্য চাইল, কিন্তু সেনাপ্রধান গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে বসে রইলেন। প্রধানমন্ত্রী বেলা দেড়টায় বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন। তিনি তাত্ক্ষণিক নির্দেশ দিলে এদের বাঁচানো যেত। আমাদের সন্দেহ হয়, এরা কোন দেশের লোক? এরা বাংলাদেশের হলে এভাবে হত্যা করতে পারত? তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী, মইন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ জন্য এক সময় বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। নিজে সেনা পরিবারের সদস্য হওয়ায় এ ব্যথা বুঝেন উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, তাদের স্বামী হারানোর ব্যথা আমি বুঝি। শুধু সান্ত্বনা দিয়ে বলতে চাই, আমরা আছি আপনাদের পাশে। ভালো ভালো সেনা অফিসারকে বিদায় করে দেয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকার মনে করে, অভিজ্ঞ অফিসারদের বিদায় করে দিলে তারা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে ক্ষমতায় থাকতে পারবে। আমরা বলতে চাই, জনতার আদালতে এসবের জবাব দিতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, সীমান্ত সম্পূর্ণ অরক্ষিত। পরিকল্পিতভাবে বিডিআরকে ধ্বংস করা হয়েছে। এটা একটি ষড়যন্ত্র, নীলনকশা। সীমান্তে প্রতিনিয়ত ঢুকে বিএসএফ গ্রামবাসীর গরু, ছাগল ও ধান নিয়ে যাচ্ছে। মানুষ হত্যা করছে। কিন্তু এ সরকার তার কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে ওঠাননি। তিনি সাহস পাননি। যে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষ হত্যার প্রতিবাদ করতে পারেননি, তাকে দিয়ে দেশ রক্ষা করা যাবে? খালেদা জিয়ার এ প্রশ্নের জবাবে জনগণ ‘না’ বলে জবাব দেন।

দ্রব্যমূল্য নিয়ে মিথ্যাচার করছে সরকার : খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি সরকারের সময় চালের কেজি ছিল ১৬ থেকে ১৮ টাকা। জরুরি সরকার এসে করেছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আর এ সরকারের সময় এখন মোটা চালের কেজি ৩০ টাকা। ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন আওয়ামী লীগের সরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলছেন মইন-ফখরুদ্দীনের সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল। ফখরুদ্দীনের শপথ অনুষ্ঠানে তারা ছিলেন। আওয়ামী লীগ সবসময় বিশ্বাস ভঙ্গকারী। তাদের বিশ্বাস করা যায় না। গত দেড় বছরে তারা কি কোনো উন্নয়ন করেছে? এ সময় উপস্থিত জনতা সমস্বরে বলে ওঠে—‘না’। আওয়ামী লীগ বলেছিল তারা দ্রব্যমূল্য কমাবে। ১০ টাকায় চাল, ৫ টাকায় কাঁচামরিচ দেবে, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। আমি জানতে চাই, এ সরকারের দেড় বছরে কতজনের চাকরি হয়েছে? এখন তাদের মন্ত্রীরা বলেন, ঘরে ঘরে চাকরি দেয়া সম্ভব নয়।
আজকে দ্রব্যমূল্য যেভাবে বেড়ে চলেছে, মানুষ দিশেহারা। যে ডালের কেজি বিএনপির সময় ছিল ৪৫ টাকা, তা এখন ১২০ টাকা। ডিমের হালি বিএনপির সময় ১২ টাকা ছিল। বর্তমান সরকারে সময় তা ৩২ টাকায় বিকাচ্ছে। ৫৪ টাকা লিটারের সোয়াবিন তেল এখন ১০০ টাকা। তাহলে দেশবাসীকে কত শান্তিতে রেখেছেন আমাদের এ আপাজান? তিনি বলেন, তেলের লিটার ৫৪ টাকা হয়ে যাওয়ায় তখন স্লোগান দেয়া হয়েছিল, খালেদা জিয়ার কাছে জবাব চাওয়া হয়েছিল। এখন কেন ১০০ টাকা হলো? বুবুর কাছে জবাব চাইতে হবে। বেগম জিয়া বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়লেও আমরা ভর্তুকি দিয়ে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতায় রাখতাম। এরপরও তারা সিন্ডিকেট বলে লাফালাফি করত। এখন তাদের একজন বাণিজ্যমন্ত্রী আছেন। তিনি তার এক আত্মীয়কে বাজারের চেয়ে চড়াদামে টিসিবিকে ডাল সরবরাহ করার কাজ দিয়েছেন। আর এ চড়াদামের মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
মন্ত্রীরা বড় চোর উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, একদম এক নম্বর থেকে শেষ নম্বর পর্যন্ত সবাই লুটপাটে ব্যস্ত। মানুষের কাছে দেয়া ওয়াদা পূরণের চিন্তা তাদের নেই। শুধু কোনদিক থেকে টাকা বানানো যাবে তা নিয়েই ব্যস্ত।


বিদ্যুত্ নিয়ে মিথ্যাচার চলছে :
বিরোধীদলীয় নেত্রী ২০০৬ সালের ২৬ নভেম্বর মেঘনাঘাটে ৪৫০ মেগাওয়াট, ২০০৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জে ২১০ মেগাওয়াট, ২০০৫ সালের ২৮ মার্চ টঙ্গীতে ১০৫ মেগাওয়াট, ২০০৬ সালের ৩১ জানুয়ারি বড় পুকুরিয়ায় ২৫০ মেগাওয়াট, একই বছরের ২ জুন আরপিসিএলএ ৭০ মেগাওয়াটসহ তার সরকারের আমলে ১৫০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুত্ উত্পাদনের বিবরণ দিয়ে বলেন, অথচ এক মেগাওয়াট বিদ্যুত্ও জোট সরকার উত্পাদন করেনি বলে বর্তমান সরকার প্রতিনিয়িত মিথ্যাচার করছে। তারা ব্যর্থ হয়ে অন্যের ওপর দোষ চাপাতে চায় আজকে দেশে বিদ্যুতের কি অবস্থা। খুলনা শহরে আপনারা কি বিদ্যুত্ পান? এ প্রশ্নের জবাবে জনতা সমস্বরে বলেন—‘না’। বিদ্যুতের দুর্ভিক্ষ চলছে বলছেন তাদের অর্থমন্ত্রী। আসলে কি জানেন, আওয়ামী লীগ মানেই দুর্ভিক্ষ। চুয়াত্তর সালে এদেশের মানুষ দুর্ভিক্ষ দেখেছেন। ভাতের দুর্ভিক্ষ, কাপড়ের দুর্ভিক্ষ। বাসন্তীরা জাল পরে লজ্জা নিবারণ করেছেন। এ দুর্ভিক্ষ আর দেখতে চায় না জনগণ। তাই এ দুর্ভিক্ষকে বিদায় দেয়া উচিত। আর এ বিদায়ের মাধ্যমেই দুর্ভিক্ষ দূর করতে হবে।


মা-বোনের ইজ্জত হরণ করছে ছাত্রলীগ :
আজকে মা-বোনেরা কোথায় যাবে? বদরুন্নেছা ও ইডেন কলেজের ছাত্রীদের কীভাবে লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগ। আজকে সবাই ইডেন কলেজের নাম বলতে লজ্জা পায়। আনন্দমোহন কলেজে ছাত্রলীগের ছেলেরা মেয়েদের নিয়ে কি করেছে? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরি করেছে। আপনাদের মা-বোন আছে না। এরপরও আপনারা বলতে পারবেন, আওয়ামী লীগের হাতে মা-বোন নিরাপদ? সবাই জবাব দেয়, ‘না’।
আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে আজ সংখ্যালঘুরা প্রশ্ন করছে, নৌকায় ভোট দিয়েই কি ভুল করেছি? হাজার হাজার সংখ্যালঘু ঘুরে বেড়াচ্ছে। সম্ভ্রম হারাচ্ছে। মুসলমানরা দাড়ি-টুপি রাখলেই জঙ্গি হয়ে যাচ্ছে। দাড়ি-টুপি থাকলেই জঙ্গি বলা বাদ দিতে হবে। দেখেছেন, কিছুদিন আগে মসজিদে জুতা নিয়ে ঢুকে কী নির্যাতন করা হয়েছে।


ভারতকে সব দিয়ে এসে বললেন সফর সফল হয়েছে :
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ও চুক্তির সমালোচনা করে বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, তিনি চুক্তি করলেন। তিনি বললেন, তিনি নাকি সফল। আমাদের রাস্তা এবং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে এলেন। এত কিছু দেয়ার পরও আমাদের তিন বিঘা করিডোর আনতে পারলেন না। শুধু ব্যর্থতা। ব্যর্থতা। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে সারাদেশের মানুষ আন্দোলন করছে। এমনকি ভারতের একটি অংশের মানুষও আন্দোলন করছে। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও চাটাররা বলছেন, টিপাইমুখে বাঁধ হলে নাকি আমাদের ক্ষতি হবে না। এ বাঁধ হলে সারা বাংলাদেশ মরুভূমিতে পরিণত হবে। এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। সমাবেশে উপস্থিত যুবতী ও যুবকদের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তারাই আমাদের ভবিষ্যত্। আশা-ভরসা। তারা আগামীতে দেশের নেতৃত্ব দেবে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/19/28152

No comments:

Post a Comment