Saturday 10 April 2010

সাক্ষাত্কারে কানসাট আন্দোলনের নেতা গোলাম রব্বানী : বিদ্যুত্ পরিস্থিতি ২০০৬ সালের চেয়েও ভয়াবহ

আলাউদ্দিন আরিফ ও ইমতিয়ার ফেরদৌস সুইট চাঁপাইনবাবগঞ্জ
বিদ্যুতের দাবিতে ২০০৬ সালে গড়ে ওঠা কানসাট আন্দোলনের নেতা গোলাম রব্বানী বর্তমান বিদ্যুত্ পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ওপর মোটেই সন্তুষ্ট নন। আমার দেশ-এর সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে সরকারের ওপর ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুত্ পরিস্থিতি বর্তমানে ২০০৬ সালের চেয়েও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিদ্যুতের দাবিতে রাজধানী থেকে সুদূর চাঁপাইনবাবগঞ্জে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার ফল ভোগ করছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু এই দলের নেতৃত্বাধীন সরকার বিদ্যুত্ পরিস্থিতির কোনো উন্নতিই করতে পারছে না। ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ মাসে যে অপকর্ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি করেছে, তা বিএনপি জোট সরকারের ৫ বছরের দুর্নীতি অনিয়মের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
তবে সরকারকে আরও সময় দিতে চান গোলাম রব্বানী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার গঠন হয়েছে, ১৬ মাস হয়েছে অথচ এখনও বিদ্যুত্ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে কিছু করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আপনাআপনিই জনতার বিস্ফোরণ ঘটবে। মানুষের ধৈর্যের একটা সীমা থাকে। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে পুলিশ, র্যাব, চিতা, কোবরা, আর্মি, বিডিআর দিয়েও সেই আন্দোলন সামাল দেয়া সম্ভব হবে না।
বিদ্যুতের দাবিতে ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পল্লীবিদ্যুত্ উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তাই ‘কানসাট আন্দোলন’ নামে পরিচিতি পায়। পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে এই আন্দোলনে নেতৃত্বে চলে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম রব্বানী। চারদলীয় জোট সরকার আমলের সামান্য লোডশেডিংকে পুঁজি করে গড়ে ওঠা আন্দোলনের রূপকার বর্তমানের ভয়াবহ বিদ্যুত্ পরিস্থিতি নিয়ে কী ভাবছেন? তা জানার জন্যই মুখোমুখি হলে গোলাম রব্বানী জানান ক্ষোভের কথা।
তিনি বলেন, মানুষ যেভাবে মহাউল্লাসে মহাজোট সরকারকে গত নির্বাচনে বিজয়ী করেছিল, সে অনুযায়ী মানুষের কোনো প্রাপ্তি নেই। এই সরকার নির্বাচনের আগে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নিয়েছিল। কিন্তু কিছু মামলা ও রায় বাস্তবায়ন ছাড়া একটিতেও সফলতা দেখাতে পারেনি। আমি মনে করি, মহাজোট সরকার এখন নির্বাচন করলে তাদের ভরাডুবি হবে। কারণ, ক্ষমতায় আসার পর গত ১৬ মাসে তারা যে অপকর্ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি করেছে তাতেই বিএনপি জোট সরকারের ৫ বছরের দুর্নীতি-অনিয়মের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তার দৃষ্টিতে বিএনপি ও চারদলীয় জোট সরকার ৫ বছরেও এত স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি করেনি।
সরকারের উচিত বিদ্যুত্ খাত ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেয়া। কারণ বিদ্যুতের ওপর কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিত্সা সবকিছু নির্ভরশীল। ভাত, কাপড়, বাসস্থানের মতোই এখন বিদ্যুত্ অপরিহার্য মৌলিক চাহিদা।
তিনি ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে কানসাটের আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, বিদ্যুতের দাবিতে কৃষক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, ছাত্র, যুবক সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানসাটের মানুষের আন্দোলনের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিলেন এবং সবধরনের সহযোগিতা করেছিলেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যক্তিগত কমপক্ষে ৫ বার তার ঘরোয়া বৈঠক হয়েছিল। সুধা সদনে বসেও তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন। তার কাছ থেকে পরামর্শ নেন এবং তাকে পরামর্শ দেন।
গোলাম রব্বানী বলেন, তিনিই শেখ হাসিনাকে আন্দোলন করতে হলে নেতাকর্মীদের লাঠি নিয়ে নামার পরামর্শ দিয়েছেন। তার পরামর্শ মোতাবেক শেখ হাসিনা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর মহাজোট নেতাকর্মীদের লগিবৈঠা নিয়ে রাস্তায় নামতে বলেন।
গোলাম রব্বানী বলেন, কানসাট আন্দোলন যে উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছিল, সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। এই আন্দোলনের সুফল ভোগী বর্তমান সরকারের আমলে আমরা বিদ্যুত্ খাতে কোনো উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছি না। বর্তমান পরিস্থিতি ২০০৬ সালের চেয়েও ভয়াবহ। বর্তমানে কানসাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় দিনে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুত্ থাকে। বাকি সময় থাকে না। ২০০৬ সালে বিদ্যুতের জন্য যে নাভিশ্বাস ছিল, এখনও সেই অবস্থাই বিরাজ করছে।
গোলাম রব্বানী স্থানীয় এমপি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এনামুল হকের উদাহরণ দিয়ে বলেন, কানসাটের মানুষের আন্দোলনের ফলেই তাকে বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী বানানো হয়েছে। এখন তিনি এলাকায় এলে পল্লীবিদ্যুতের রেস্টহাউসে থাকেন। তিনি যতক্ষণ এলাকায় থাকেন ততক্ষণ বিদ্যুত্ও থাকে। তিনি চলে গেলেই লোডশেডিং আবার শুরু হয়।
তিনি বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে আত্মীয়করণের অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, থানায় তার দলের কর্মীরা পালা করে ডিউটি করে। থানার ওসি দারোগারা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কথায় ওঠে বসে। তারা যাকে মামলায় ফাঁসাতে বলে তাকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করে। যেসব মানুষ সরকারি দল বা অন্য কোনোভাবে হয়রানি হামলার শিকার হয় তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করে অর্থ আদায় করা হয়। এলাকার হাট, ঘাট, সেতু, বাজার, অফিস-আদালত সবকিছু এমপি ও তার আত্মীয়স্বজনদের নিয়ন্ত্রণে।
পল্লীবিদ্যুত্ আন্দোলনের এই নেতা বলেন, বর্তমান সরকার কানসাট আন্দোলন যারা সংগঠিত করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি করছে। তিনি বলেন, কানসাট আন্দোলনে যে যারা সমর্থন দিয়েছিল, সেই তারাই এখন আমাদের পেছনে গোয়েন্দা লেলিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, কানসাট আন্দোলনের অন্যতম দাবি ছিল চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমারের টাকা কৃষকের কাছ থেকে আদায় করা যাবে না। তত্কালীন চারদলীয় সরকার এ দাবি বাস্তবায়ন করলেও বর্তমান সরকারের সময় ট্রান্সফরমারের শতভাগ টাকা কৃষকের কাছ থেকেই আদায় করা হচ্ছে। তাহলে আমাদের এই আন্দোলন করে লাভ কী?
কানসাট আন্দোলনের নেতা বর্তমান সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না বলে মনে করেন। তিনি বলেন, সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অনেক কথাই বলেছে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা স্বীকার করেছে, সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য কমানো যায় না। চাল, তেল, ডালের দাম এখন আকাশছোঁয়া। এই সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির রেকর্ড জোট সরকার ও ওয়ান ইলেভেনের সরকারকেও ছাড়িয়ে গেছে। সরকার নির্বাচনের আগে বলেছিল ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়াবে, বিনামূল্যে সার দেবে কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রী বলছেন, আমি তা বলেছি এবার নয়, আগের বার। নানামুখী ব্যর্থতায় এই সরকারের জনপ্রিয়তা এখন শূন্যের কোটায় বলে মনে করেন কানসাট নেতা গোলাম রব্বানী।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/10/26843

No comments:

Post a Comment